alt

উপ-সম্পাদকীয়

প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে চাই সামাজিক সচেতনতা

জাহিদুল ইসলাম ও আকরাম হোসেন

: সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩

আজ ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিশ্বব্যাপী এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘বিট প্লাস্টিক পলিউশন’ অর্থাৎ ‘প্লাস্টিক দূষণকে পরাজিত করুন’। বিশ্বব্যাপী যেভাবে প্লাস্টিক ও পাস্টিক পণ্যের ব্যবহার যেভাবে বেড়ে চলছে; এই প্রতিপাদ্য তারই প্রতিফলন। প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার সীমিত না করলে আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে এই পণ্যটি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ ১২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক পরিবেশে জমা হবে। প্রতি বছর ১৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে জমা হচ্ছে। সমুদ্র যে ধরনের বর্জ্য রয়েছে, তার শতকরা ৮০ ভাগই প্লাস্টিক বর্জ্য। প্লাস্টিকের দূষণ এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাত সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের উপস্থিতি বেড়ে যাবে।

প্লাস্টিক দূষণ

প্লাস্টিক দূষণ হলো নির্দিষ্ট স্থানে পলিথিন ও সিন্থেটিক প্লাস্টিক পণ্যের জমে থাকা। চারপাশে প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক পণ্যের সিঙ্গেল ব্যবহারের ফলে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের বেশির ভাগই পুনরায় ব্যবহার করা হয় না। এগুলোকে সাধারণত একবার (সিঙ্গেল ইউজ) ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। পরবর্তীতে এগুলো পরিবেশে থেকে বর্জ্যরে আকার ধারণ করে। প্লাস্টিক এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যা স্বাভাবিক পরিবেশে পচতে অথবা কারখানায় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করতে প্রায় ৪ শত বছরের বের্শি সময় লাগে। তাই একে ‘অপচ্য পদার্থ’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এতে বন্যপ্রাণী এবং তাদের আবাসস্থলের পাশাপাশি মানুষের জন্য বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে।

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে কয়েকটি গবেষণা থেকে খুবই উদ্বেগজনক ফলাফল পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ৮০ শতাংশ মানুষের রক্তেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় যে বিষয়টি উদ্ঘাটিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, মাইক্রোপ্লাস্টিক রক্তের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে চলাচল করতে পারে। শরীরের কোনো অঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক জমতে পারে। গবেষণাগারে পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের কোষের ক্ষতি করে। ২০২২ সালে মায়ের বুকের দুধে প্রথমবারের মতো মাইক্রোপ্লাস্টিক (অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা) শনাক্ত করেছেন ইতালীয় বিজ্ঞানীরা। মায়ের বুকের দুধে যেসব মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তার মধ্যে আছে- পলিথিন, পিভিসি এবং পলিপ্রোপিলিন। এর আগে ২০২০ সালে ইতালীয় বিজ্ঞানীদের এ দলটিই মানুষের গর্ভফুলে প্লাস্টিক কণা শনাক্ত করেছিলেন। ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল ঞযব ংবধঃঃষবং ঞরসব (দ্য সিটলস টাইম) নামক দৈনিকে একটি খবর খুব সাড়া দেয়। সিটল সমুদ্রসৈকতে মৃত পড়ে থাকতে দেখা যায় একটি বিশাল তিমিকে। পরে যখন সেই তিমির মৃত্যুর কারণ নিয়ে গবেষণা করা হয়, তখন দেখা যায় তিমির পাকস্থলীতে পাওয়া গিয়েছে বহু প্লাস্টিক পদার্থ। সেসব প্লাস্টিককেই সেই তিমির মৃত্যুর কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। উপরোক্ত গবেষণার ফলাফল আমাদের কাছে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা ও এর ব্যাপকতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

প্লাস্টিক দূষণ ও বাংলাদেশ

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হলেও, বর্তমানে কার্যকর প্রয়োগের অভাবে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের ২০২০ সালের সমীক্ষা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে গত ১৫ বছরে (২০০৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে) প্লাস্টিকের ব্যবহার ৩ গুণ বেড়েছে। ২০২০ সালে ৯ লাখ ৭৭ হাজার টন প্লাস্টিকের ব্যবহার হলেও তার মধ্যে মাত্র ৩১ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে। বাকিগুলো ভাগাড়, নদী, খাল, ড্রেন ও যত্রতত্র ফেলা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ টন প্লাস্টিক বাংলাদেশ থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। যার ফলে আমাদের বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশের কারণে শুধু সামুদ্রিক জীবন নয়, মানবস্বাস্থ্যের ওপরও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশে শীত মৌসুমে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি অনেক দূর দূরান্ত থেকে আসে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দিনকে দিন এসব অভিবাসী পাখির সংখ্যা মারাত্মক হারে কমে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ পাখি প্লাস্টিক দূষণের শিকার হচ্ছে। এখনই এসব পরিযায়ী পাখির প্রায় ৯০% এর পাকস্থলীতেই পাওয়া যাচ্ছে প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাত এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৯৯% এ, যা এসব পাখির অস্তিত্বের পথে বড় বাধা।

বাংলাদেশ বিশে^র কাছে জলবায়ু কূটনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও সেই দেশেই অবাদে প্লাস্টিক, পলিথিনের ব্যবহার হচ্ছে। প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমাতে কোন কার্যকর পদক্ষেপও নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। আমরা মনে করি, আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে প্লাস্টিকের অবৈধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, দূষণ-কর ব্যবস্থাও চালু করা যেতে পারে। ‘দূষণ কর’ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ভালোভাবে প্রয়োগ করা শুরু করেছে। কলকাতায় কোন শপিং সেন্টারে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিতে গেছে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে।

প্লাস্টিক দূষণ ও ঢাকা

গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। আমাদের এ প্রিয় শহরে আমরা ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে অবচেতন মনে অন্যান্য বর্জ্যরে সঙ্গে ফেলে দিচ্ছি। একশর বেশি ফ্যাক্টরিতে এসব পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয়। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে দেশে আইন হয়েছে এক দশকের বেশি আগে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আইনের প্রয়োগের অভাব। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার পর গত এক দশকে ঢাকা শহরে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়েছে তিনগুণ।

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ

পরিবেশকে বিপন্নকারী পৃথিবীর শতকরা ৫১ ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে শুধু এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ হচ্ছে, যা সব ধরনের বর্জ্যরে শতকরা ৮ ভাগ।

প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ

যদিও এটা মনে হতে পারে যে, প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা সমাধান করা রিসাইক্লিং বা খালি বোতল পরিষ্কার করার মতোই সহজ। কিন্তু সত্য হলো যে, প্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করে তা বড় বা ছোট হতে পারে। প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণগুলো হলো- প্লাস্টিক প্রায় সর্বত্র ব্যবহৃত হয় এবং সহজ লভ্য, নগরায়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে চাহিদা বেশি, প্লাস্টিক সস্তা এবং উৎপাদন সাশ্রয়ী মূল্যের, প্লাস্টিক এবং আবর্জনা পরিষ্কার করা সহজ, ধীর পচন হার, মাছ ধরার জাল তৈরি এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব প্লাস্টিক একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়।

প্রতিকারে আইন কী বলে?

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর শুরুতে ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আইন অনুসারে ‘ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য হলো, যে কোন বর্জ্য যাহা নিজস্ব ভৌত বা রাসায়নিক গুণগত কারণে অথবা অন্য কোন বর্জ্য বা পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে বিষক্রিয়া, জীবাণুসংক্রমণ, দহন, বিষ্ফোরণ ক্রিয়া, তেজষ্ক্রিয়া, ক্ষয়ক্রিয়া বা অন্য কোন ক্ষতিকর ক্রিয়া দ্বারা পরিবেশের ক্ষতিসাধনে সক্ষম। এই সংজ্ঞা অনুসারে পলিথিন, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাতগুলো ক্ষতিকর বর্জ্যের অন্তর্ভুক্ত।’ আইনের ৬ এর ‘গ’ ধারা অনুসারে অপরাধ হিসেবে এসব বর্জ্য পদার্থ তথা ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য উৎপাদন, আমদানি, মজুদকরণ, বোঝাইকরণ, পরিবহন, ইত্যাদিসংক্রান্ত বাধা-নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিবেশের ক্ষতিরোধকল্পে সরকার, অন্যান্য আইনের বিধান সাপেক্ষে, বিধি দ্বারা ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, ধারণ, মজুদকরণ, বোঝাইকরণ, সরবরাহ, পরিবহণ, আমদানি, রপ্তানি, পরিত্যাগকরণ ডাম্পিং ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

এছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশের সুরক্ষার জন্য এবং দূষণমুক্ত রাখার জন্য বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭, ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৪, পরিবেশ আদালত আইন-২০১০, বাংলাদেশ জীবন নিরাপত্তা বিধিমালা-২০১২, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন ২০১৭, জাতীয় পরিবেশ নীতি-২০১৮, ঝুঁকিপূর্ণ ই বর্জ্য বিধিমালা-২০২১, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২১। তবে শঙ্কার কথা হলো এসব নীতিমালা মহান সংসদে পাশ হলেও এটি প্রয়োগে কর্তৃপক্ষের যথাযথ তৎপরতা দেখা যায়নি। ফলে বন্ধ করা যায়নি অবাদে পলিথিন ও প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের ব্যবহার।

যেসব পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে

প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার রোধে দূষণ ‘কর’ প্রয়োগ করতে হবে। বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ, প্রয়োজনে বিদ্যমান আইন সংস্কার করে শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং তার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অনুকরণযোগ্য ইতিবাচক অবদানের জন্য পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক পর্যায়ে প্লাস্টিকদূষণ ব্যবস্থাপনা প্রণীত আইন ও নীতিমালাকে হালনাগাদ করতে হবে। যদিও আমাদের জীবনে প্লাস্টিকের দ্রব্যের ভূমিকা স্বীকার্য, তবে তা ব্যবহারে সতর্কতা এবং পরিমিতি আবশ্যক। প্লাস্টিকের দ্রব্যকে বারবার ব্যবহার ও পুনর্চক্রায়ণকে (রিসাইক্লিং) উৎসাহিত করতে হবে। প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সব অংশীজনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কমিউনিটিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে হবে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে সরকার ও বেসরকারি খাত কর্তৃক বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোতে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ/সীমিত করতে হবে এবং প্লাস্টিকের পরিবেশবান্ধব বিকল্প উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৪-এর অর্জন নিশ্চিতে সমুদ্রদূষণ রোধের পাশাপাশি সমুদ্রসম্পদের সংরক্ষণ নিশ্চিতে নিয়মিত তদারকি এবং দূষণ আইনের ব্যবহারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তা নিতে হবে। ‘প্যারিস চুক্তি’ বাস্তবায়নে সবাই শিল্পোন্নত দেশের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশে সহজে পচনশীল (বায়োডিগ্রেডেবল) প্লাস্টিকের ব্যবহারকে উৎসাহিতকরণ এবং পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ ও অন্যান্য পাটজাত দ্রব্যকে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারে প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য প্রতিশ্রুত তহবিল দ্রুত ও সহজতর পদ্ধতিতে ছাড় করতে হবে।

পরিবেশ সুরক্ষা নীতি ও প্লাস্টিকদূষণ নীতিমালাকে সমন্বয় করে আধুনিক জ্ঞানের ভিত্তিতে তা হালনাগাদ করতে হবে।

মানুষের অসচেতনতাই ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঠিক পদক্ষেপের অভাব প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ।

[লেখক: জাহিদুল ইসলাম- সাবেক সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। আকরাম হোসেন- অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

ধর্মীয় স্বাধীনতা ও কঠিন চীবরদান

ছবি

দুর্গাপূজার মর্মবাণী

মানুষ মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা পাবে কীভাবে

গুজব ও মিথ্যা তথ্য : সমাজের এক ভয়াবহ ব্যাধি

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন

পুরাতত্ত্বের ধারায় সনাতনী সমাজের দুর্গাপূজা

জীবন-মৃত্যু কী?

নাসা : বিজ্ঞানের পীঠস্থান

শিক্ষা সংস্কারে প্রথাগত চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

সাংঘাতিক ভাই, সাংঘাতিক...

প্রযুক্তির মায়াজালে বন্দি মানুষ

ছবি

এসএম সুলতান : সংস্কৃতি সত্তার সত্যপাঠ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

তরুণ সমাজ ও প্রযুক্তি নির্ভরতা : সামাজিক সম্পর্কের পরিবর্তন ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

বগুড়ার তাঁতপল্লী

অটিজম কোনো রোগ নয়

জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কি আইনসম্মত

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে কতদিন সহায়তা দেয়া হবে?

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য বয়সবৈষম্য দূর করুন

আসন্ন বোরো উৎপাদন ও কিছু শঙ্কা

ছবি

আইন পেশার জানা-অজানা কথা

ছবি

ব্যাংক খাতের সংকট

একাকিত্ব ও মানসিক অশান্তি

বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষক সমাজ

ব্রি: কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর

ক্রেতা ঠকে গেলে তার আইনগত প্রতিকার

ঢাকার যানজট : কিছু প্রস্তাব

রম্যগদ্য : দারিদ্র্য যাবে জাদুঘরে

গার্মেন্টস খাতে সংকট

সরকারি হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থাপনায় করুণ দশা

ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কী

শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার বাড়াতে

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির দুর্বলতা

ইরানের কেন কৌশলগত পরিবর্তন

শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন একে অন্যের পরিপূরক

রামু ট্র্যাজেডির এক যুগ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে চাই সামাজিক সচেতনতা

জাহিদুল ইসলাম ও আকরাম হোসেন

সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩

আজ ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিশ্বব্যাপী এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘বিট প্লাস্টিক পলিউশন’ অর্থাৎ ‘প্লাস্টিক দূষণকে পরাজিত করুন’। বিশ্বব্যাপী যেভাবে প্লাস্টিক ও পাস্টিক পণ্যের ব্যবহার যেভাবে বেড়ে চলছে; এই প্রতিপাদ্য তারই প্রতিফলন। প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার সীমিত না করলে আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে এই পণ্যটি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ ১২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক পরিবেশে জমা হবে। প্রতি বছর ১৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে জমা হচ্ছে। সমুদ্র যে ধরনের বর্জ্য রয়েছে, তার শতকরা ৮০ ভাগই প্লাস্টিক বর্জ্য। প্লাস্টিকের দূষণ এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাত সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের উপস্থিতি বেড়ে যাবে।

প্লাস্টিক দূষণ

প্লাস্টিক দূষণ হলো নির্দিষ্ট স্থানে পলিথিন ও সিন্থেটিক প্লাস্টিক পণ্যের জমে থাকা। চারপাশে প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক পণ্যের সিঙ্গেল ব্যবহারের ফলে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের বেশির ভাগই পুনরায় ব্যবহার করা হয় না। এগুলোকে সাধারণত একবার (সিঙ্গেল ইউজ) ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। পরবর্তীতে এগুলো পরিবেশে থেকে বর্জ্যরে আকার ধারণ করে। প্লাস্টিক এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যা স্বাভাবিক পরিবেশে পচতে অথবা কারখানায় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করতে প্রায় ৪ শত বছরের বের্শি সময় লাগে। তাই একে ‘অপচ্য পদার্থ’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এতে বন্যপ্রাণী এবং তাদের আবাসস্থলের পাশাপাশি মানুষের জন্য বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে।

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে কয়েকটি গবেষণা থেকে খুবই উদ্বেগজনক ফলাফল পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ৮০ শতাংশ মানুষের রক্তেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় যে বিষয়টি উদ্ঘাটিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, মাইক্রোপ্লাস্টিক রক্তের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে চলাচল করতে পারে। শরীরের কোনো অঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক জমতে পারে। গবেষণাগারে পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের কোষের ক্ষতি করে। ২০২২ সালে মায়ের বুকের দুধে প্রথমবারের মতো মাইক্রোপ্লাস্টিক (অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা) শনাক্ত করেছেন ইতালীয় বিজ্ঞানীরা। মায়ের বুকের দুধে যেসব মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তার মধ্যে আছে- পলিথিন, পিভিসি এবং পলিপ্রোপিলিন। এর আগে ২০২০ সালে ইতালীয় বিজ্ঞানীদের এ দলটিই মানুষের গর্ভফুলে প্লাস্টিক কণা শনাক্ত করেছিলেন। ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল ঞযব ংবধঃঃষবং ঞরসব (দ্য সিটলস টাইম) নামক দৈনিকে একটি খবর খুব সাড়া দেয়। সিটল সমুদ্রসৈকতে মৃত পড়ে থাকতে দেখা যায় একটি বিশাল তিমিকে। পরে যখন সেই তিমির মৃত্যুর কারণ নিয়ে গবেষণা করা হয়, তখন দেখা যায় তিমির পাকস্থলীতে পাওয়া গিয়েছে বহু প্লাস্টিক পদার্থ। সেসব প্লাস্টিককেই সেই তিমির মৃত্যুর কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। উপরোক্ত গবেষণার ফলাফল আমাদের কাছে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা ও এর ব্যাপকতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

প্লাস্টিক দূষণ ও বাংলাদেশ

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হলেও, বর্তমানে কার্যকর প্রয়োগের অভাবে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের ২০২০ সালের সমীক্ষা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে গত ১৫ বছরে (২০০৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে) প্লাস্টিকের ব্যবহার ৩ গুণ বেড়েছে। ২০২০ সালে ৯ লাখ ৭৭ হাজার টন প্লাস্টিকের ব্যবহার হলেও তার মধ্যে মাত্র ৩১ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে। বাকিগুলো ভাগাড়, নদী, খাল, ড্রেন ও যত্রতত্র ফেলা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ টন প্লাস্টিক বাংলাদেশ থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। যার ফলে আমাদের বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশের কারণে শুধু সামুদ্রিক জীবন নয়, মানবস্বাস্থ্যের ওপরও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশে শীত মৌসুমে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি অনেক দূর দূরান্ত থেকে আসে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দিনকে দিন এসব অভিবাসী পাখির সংখ্যা মারাত্মক হারে কমে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ পাখি প্লাস্টিক দূষণের শিকার হচ্ছে। এখনই এসব পরিযায়ী পাখির প্রায় ৯০% এর পাকস্থলীতেই পাওয়া যাচ্ছে প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাত এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৯৯% এ, যা এসব পাখির অস্তিত্বের পথে বড় বাধা।

বাংলাদেশ বিশে^র কাছে জলবায়ু কূটনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও সেই দেশেই অবাদে প্লাস্টিক, পলিথিনের ব্যবহার হচ্ছে। প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমাতে কোন কার্যকর পদক্ষেপও নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। আমরা মনে করি, আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে প্লাস্টিকের অবৈধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, দূষণ-কর ব্যবস্থাও চালু করা যেতে পারে। ‘দূষণ কর’ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ভালোভাবে প্রয়োগ করা শুরু করেছে। কলকাতায় কোন শপিং সেন্টারে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিতে গেছে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে।

প্লাস্টিক দূষণ ও ঢাকা

গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। আমাদের এ প্রিয় শহরে আমরা ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে অবচেতন মনে অন্যান্য বর্জ্যরে সঙ্গে ফেলে দিচ্ছি। একশর বেশি ফ্যাক্টরিতে এসব পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয়। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে দেশে আইন হয়েছে এক দশকের বেশি আগে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আইনের প্রয়োগের অভাব। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার পর গত এক দশকে ঢাকা শহরে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়েছে তিনগুণ।

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ

পরিবেশকে বিপন্নকারী পৃথিবীর শতকরা ৫১ ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে শুধু এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ হচ্ছে, যা সব ধরনের বর্জ্যরে শতকরা ৮ ভাগ।

প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ

যদিও এটা মনে হতে পারে যে, প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা সমাধান করা রিসাইক্লিং বা খালি বোতল পরিষ্কার করার মতোই সহজ। কিন্তু সত্য হলো যে, প্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করে তা বড় বা ছোট হতে পারে। প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণগুলো হলো- প্লাস্টিক প্রায় সর্বত্র ব্যবহৃত হয় এবং সহজ লভ্য, নগরায়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে চাহিদা বেশি, প্লাস্টিক সস্তা এবং উৎপাদন সাশ্রয়ী মূল্যের, প্লাস্টিক এবং আবর্জনা পরিষ্কার করা সহজ, ধীর পচন হার, মাছ ধরার জাল তৈরি এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব প্লাস্টিক একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়।

প্রতিকারে আইন কী বলে?

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর শুরুতে ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আইন অনুসারে ‘ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য হলো, যে কোন বর্জ্য যাহা নিজস্ব ভৌত বা রাসায়নিক গুণগত কারণে অথবা অন্য কোন বর্জ্য বা পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে বিষক্রিয়া, জীবাণুসংক্রমণ, দহন, বিষ্ফোরণ ক্রিয়া, তেজষ্ক্রিয়া, ক্ষয়ক্রিয়া বা অন্য কোন ক্ষতিকর ক্রিয়া দ্বারা পরিবেশের ক্ষতিসাধনে সক্ষম। এই সংজ্ঞা অনুসারে পলিথিন, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাতগুলো ক্ষতিকর বর্জ্যের অন্তর্ভুক্ত।’ আইনের ৬ এর ‘গ’ ধারা অনুসারে অপরাধ হিসেবে এসব বর্জ্য পদার্থ তথা ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য উৎপাদন, আমদানি, মজুদকরণ, বোঝাইকরণ, পরিবহন, ইত্যাদিসংক্রান্ত বাধা-নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিবেশের ক্ষতিরোধকল্পে সরকার, অন্যান্য আইনের বিধান সাপেক্ষে, বিধি দ্বারা ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, ধারণ, মজুদকরণ, বোঝাইকরণ, সরবরাহ, পরিবহণ, আমদানি, রপ্তানি, পরিত্যাগকরণ ডাম্পিং ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

এছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশের সুরক্ষার জন্য এবং দূষণমুক্ত রাখার জন্য বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭, ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৪, পরিবেশ আদালত আইন-২০১০, বাংলাদেশ জীবন নিরাপত্তা বিধিমালা-২০১২, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন ২০১৭, জাতীয় পরিবেশ নীতি-২০১৮, ঝুঁকিপূর্ণ ই বর্জ্য বিধিমালা-২০২১, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২১। তবে শঙ্কার কথা হলো এসব নীতিমালা মহান সংসদে পাশ হলেও এটি প্রয়োগে কর্তৃপক্ষের যথাযথ তৎপরতা দেখা যায়নি। ফলে বন্ধ করা যায়নি অবাদে পলিথিন ও প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের ব্যবহার।

যেসব পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে

প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার রোধে দূষণ ‘কর’ প্রয়োগ করতে হবে। বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ, প্রয়োজনে বিদ্যমান আইন সংস্কার করে শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং তার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অনুকরণযোগ্য ইতিবাচক অবদানের জন্য পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক পর্যায়ে প্লাস্টিকদূষণ ব্যবস্থাপনা প্রণীত আইন ও নীতিমালাকে হালনাগাদ করতে হবে। যদিও আমাদের জীবনে প্লাস্টিকের দ্রব্যের ভূমিকা স্বীকার্য, তবে তা ব্যবহারে সতর্কতা এবং পরিমিতি আবশ্যক। প্লাস্টিকের দ্রব্যকে বারবার ব্যবহার ও পুনর্চক্রায়ণকে (রিসাইক্লিং) উৎসাহিত করতে হবে। প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সব অংশীজনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কমিউনিটিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে হবে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে সরকার ও বেসরকারি খাত কর্তৃক বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোতে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ/সীমিত করতে হবে এবং প্লাস্টিকের পরিবেশবান্ধব বিকল্প উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৪-এর অর্জন নিশ্চিতে সমুদ্রদূষণ রোধের পাশাপাশি সমুদ্রসম্পদের সংরক্ষণ নিশ্চিতে নিয়মিত তদারকি এবং দূষণ আইনের ব্যবহারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তা নিতে হবে। ‘প্যারিস চুক্তি’ বাস্তবায়নে সবাই শিল্পোন্নত দেশের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশে সহজে পচনশীল (বায়োডিগ্রেডেবল) প্লাস্টিকের ব্যবহারকে উৎসাহিতকরণ এবং পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ ও অন্যান্য পাটজাত দ্রব্যকে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারে প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য প্রতিশ্রুত তহবিল দ্রুত ও সহজতর পদ্ধতিতে ছাড় করতে হবে।

পরিবেশ সুরক্ষা নীতি ও প্লাস্টিকদূষণ নীতিমালাকে সমন্বয় করে আধুনিক জ্ঞানের ভিত্তিতে তা হালনাগাদ করতে হবে।

মানুষের অসচেতনতাই ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঠিক পদক্ষেপের অভাব প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ।

[লেখক: জাহিদুল ইসলাম- সাবেক সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। আকরাম হোসেন- অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top