প্রসঙ্গ প্লাবন
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
যদি ভালো হলুদ হ্রদে
নিশি পায় যে ভোর
তীরে ফেরার ঘোর
স্নানে সূর্যতোড়
যদি ভালো শঙ্খমায়ায়
ছায়া তার যে মূল
কাঁকড়ায় কবুল
ফুটছে জবাফুল
যদি ভালো মধুগন্ধে
মৌচাকে যে মন
শুদ্ধ গুঞ্জরণ
প্রসঙ্গ প্লাবন
শূন্য বিছানা
শিহাব সরকার
কে কাকে মধ্যে রেখে না রেখে ঘুরে যাচ্ছে
কী না ঘোরে, সবকিছু ঘোরে
মানুষ পতঙ্গ জন্তু-জীব পাখি জলকণা,
ঘোরে গ্রহতারা, কবে থেকে কেন ঘোরে
আখড়ার উঠানে বসে বৃদ্ধ বাউল দিশাহারা।
দেখি সূর্য ঘোরে, পৃথিবী নিশ্চল
শনি মঙ্গল বুধ সমুদ্রে অস্ত যায় প্রতি সন্ধ্যায়
অথচ মূলকথা পৃথিবী সূর্যের বলয়ে ঘোরে
তবু আজও কারো কারো খটকা
সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ভোর থেকে দিনান্তে
গ্যালিলিকে বনমানুষেরা তাড়িয়ে বেড়ায়
আমাদের অমল ও নীলার ছয় মাস
নতুন সংসার, মিনি-ফ্ল্যাট, বার্নিশে পেইন্টে ভুরভুর
কে কাকে মধ্যে রেখে ঘুরেছে,
এই নিয়ে রাত দুপুরে গ্লাস-ভাঙা, রক্তারক্তি
নৈঃশব্দ্যের বাজনায় নাচছে ব্যালেরিনা।
ভোরে শূন্য বিছানা। অমল পড়ে নীলার চিঠি।
দর্শক
কামাল চৌধুরী
দরজার দিকে যেতে যেতে হাতে উঠে আসছে খোলা বারান্দা
শূন্যতা পেরুতে গিয়ে উঠোন ঢুকে পড়েছে ঘরে
তুমি বলছ অধ্যাস- আমি গান ধরেছি আন্দামানের বন্দির গলায়
পৃথিবীটা বাতাসের অমিতাচারে চুপসে যাচ্ছে
তুমি কড়িকাঠে যা দেখছ, সেখানে একটা গোটা সমুদ্র ঝুলে আছে
তুমি বলছ অধ্যাস- আমি বলছি তিনভাগ জলের পৃথিবী
হাত সাফাইয়ের আগে তোমার আস্তিন আমাকে দেখাও
কবুতর উড়িয়ে দেওয়ার আগে মঞ্চে উঠে আসছে আলাউদ্দিন খিলজির হাতি
কোনো কারণ ছাড়াই একটা মিলনায়তন ভেঙে পড়ছে দেখে
সেখানে সশব্দে ঢুকে পড়ছে অচেনা আকাশ
আমার দশ আঙুলে বেজে উঠছে খোল করতাল
যারা নেচে যাচ্ছে তারা হাতি থেকে রূপান্তরিত হচ্ছে মহিমাময় সন্ধ্যায়
হাততালি দিচ্ছি আমি
তুমি বলছ অধ্যাস- আমি বড়ো পর্দার দর্শক।
স্থান
ফারুক মাহমুদ
(ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদ্বিশতবর্ষ স্মরণে)
জলস্থান যত বেশি স্বচ্ছমুগ্ধ গভীরতা পাবে
অসীম ছন্দের আলো, রেখা-রেখা হাসির উড়াল
ছড়াবে সুরের জ্যোতি। ভাষাহত, আচ্ছাদিত নয়
স্বরূপে, রূপকে দীর্ঘ- যেতে যেতে বহুদূর যাবে
যে থাকে সামান্য হয়ে, চিন্তাসূত্রে রৌদ্র ডেকে আনে
প্রতিটি বৃক্ষের পাশে লিখে রাখে মাতৃ-কোমলতা
বিভ্রম গুরুত্ব পেলে বেড়ে যায় সামাজিক ব্যধি
জীবন শুকিয়ে থাকে, অশ্রুরেখা-সাদা বর্ণ থানে
শূন্যতার আঁচ বেশি। আপসের ঘূর্ণি যদি থাকে
দ্রুত বাড়ে আগাছার ভিড়। কাঁটা, কলুষের জটা
দম্ভের উত্তাপ থেকে শুরু হয় পতনের স্ফীতি
মৌলিক বোধের সিঁড়ি ডুবে যায় অমূল পাঁকে
দাসত্ব আরেক পাপ। উদয়াস্ত হলে অবনত
ঢেকে যায় সূর্যমুখ, স্তরে স্তরে জটিল প্রলাপ
প্রয়োগে বিভ্রাট যদি- শব্দগুলো পাথরের কাঁড়ি
ফুলের স্তবকছলে কখনো কি ঢাকা পড়ে ক্ষত!
কথার পেছনে তবু শুভশুদ্ধ কথা থেকে যায়
মানুষ প্রসন্ন হলে- (শক্ত দাঁড়া) দাঁড়িয়ে দাঁড়ায়
অমোঘ রাত্রির ধ্বনি
আবদুর রাজ্জাক
আমরা সীমাহীন ভালোবাসায় আবদ্ধ আমাদের প্রতিজ্ঞার মিনারে
মানুষের অস্থির প্লাবন হয়ে যায় সেখানে,
মানুষেরা যায় শেফালি ফুলের গন্ধে, রক্তের গন্ধে অনার্য সংকেতে।
তারা নিমীলিত পাহাড় থেকে নেমে আসে নগ্ন পায়ের কাছে।
মানুষের ভাষার ভালোবাসা একাকার হয়ে যায়
মধ্যনিশির প্রবল বন্যায়। সেদিন ভালোবাসার ছেলেরাই
ভালোবেসে গাঙের নদী হয়ে গিয়েছিলো, আমাদের শোক-শ্রদ্ধা-
ভালোবাসা গ্রাম-নদী-শহর পেরিয়ে প্রাচীন এক রৌদ্রগাথায়
গ্রন্থিত হয়ে আছে।
ভালোবাসার হাঁসগুলি, গুলি খেয়ে, বারুদ গন্ধে
ধূসর মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলো।
দ্রাবিড়ার প্রার্থনা, দ্রাবিড়ার অশ্রুপাত, দ্রাবিড়ার দীর্ঘশ্বাস ছিলো
কুমুদকহ্লার মতো।
অ, আ ধ্বনির পবিত্রতার চেয়েও অধিক পবিত্র ছিলো দর্পিত হাঁসেরা।
অৎস্র ধারার এই রক্তাক্ত সুন্দর ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমাদের
আঙুলগুলো মিশে যায় মাটিতে।
রোববার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রসঙ্গ প্লাবন
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
যদি ভালো হলুদ হ্রদে
নিশি পায় যে ভোর
তীরে ফেরার ঘোর
স্নানে সূর্যতোড়
যদি ভালো শঙ্খমায়ায়
ছায়া তার যে মূল
কাঁকড়ায় কবুল
ফুটছে জবাফুল
যদি ভালো মধুগন্ধে
মৌচাকে যে মন
শুদ্ধ গুঞ্জরণ
প্রসঙ্গ প্লাবন
শূন্য বিছানা
শিহাব সরকার
কে কাকে মধ্যে রেখে না রেখে ঘুরে যাচ্ছে
কী না ঘোরে, সবকিছু ঘোরে
মানুষ পতঙ্গ জন্তু-জীব পাখি জলকণা,
ঘোরে গ্রহতারা, কবে থেকে কেন ঘোরে
আখড়ার উঠানে বসে বৃদ্ধ বাউল দিশাহারা।
দেখি সূর্য ঘোরে, পৃথিবী নিশ্চল
শনি মঙ্গল বুধ সমুদ্রে অস্ত যায় প্রতি সন্ধ্যায়
অথচ মূলকথা পৃথিবী সূর্যের বলয়ে ঘোরে
তবু আজও কারো কারো খটকা
সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ভোর থেকে দিনান্তে
গ্যালিলিকে বনমানুষেরা তাড়িয়ে বেড়ায়
আমাদের অমল ও নীলার ছয় মাস
নতুন সংসার, মিনি-ফ্ল্যাট, বার্নিশে পেইন্টে ভুরভুর
কে কাকে মধ্যে রেখে ঘুরেছে,
এই নিয়ে রাত দুপুরে গ্লাস-ভাঙা, রক্তারক্তি
নৈঃশব্দ্যের বাজনায় নাচছে ব্যালেরিনা।
ভোরে শূন্য বিছানা। অমল পড়ে নীলার চিঠি।
দর্শক
কামাল চৌধুরী
দরজার দিকে যেতে যেতে হাতে উঠে আসছে খোলা বারান্দা
শূন্যতা পেরুতে গিয়ে উঠোন ঢুকে পড়েছে ঘরে
তুমি বলছ অধ্যাস- আমি গান ধরেছি আন্দামানের বন্দির গলায়
পৃথিবীটা বাতাসের অমিতাচারে চুপসে যাচ্ছে
তুমি কড়িকাঠে যা দেখছ, সেখানে একটা গোটা সমুদ্র ঝুলে আছে
তুমি বলছ অধ্যাস- আমি বলছি তিনভাগ জলের পৃথিবী
হাত সাফাইয়ের আগে তোমার আস্তিন আমাকে দেখাও
কবুতর উড়িয়ে দেওয়ার আগে মঞ্চে উঠে আসছে আলাউদ্দিন খিলজির হাতি
কোনো কারণ ছাড়াই একটা মিলনায়তন ভেঙে পড়ছে দেখে
সেখানে সশব্দে ঢুকে পড়ছে অচেনা আকাশ
আমার দশ আঙুলে বেজে উঠছে খোল করতাল
যারা নেচে যাচ্ছে তারা হাতি থেকে রূপান্তরিত হচ্ছে মহিমাময় সন্ধ্যায়
হাততালি দিচ্ছি আমি
তুমি বলছ অধ্যাস- আমি বড়ো পর্দার দর্শক।
স্থান
ফারুক মাহমুদ
(ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদ্বিশতবর্ষ স্মরণে)
জলস্থান যত বেশি স্বচ্ছমুগ্ধ গভীরতা পাবে
অসীম ছন্দের আলো, রেখা-রেখা হাসির উড়াল
ছড়াবে সুরের জ্যোতি। ভাষাহত, আচ্ছাদিত নয়
স্বরূপে, রূপকে দীর্ঘ- যেতে যেতে বহুদূর যাবে
যে থাকে সামান্য হয়ে, চিন্তাসূত্রে রৌদ্র ডেকে আনে
প্রতিটি বৃক্ষের পাশে লিখে রাখে মাতৃ-কোমলতা
বিভ্রম গুরুত্ব পেলে বেড়ে যায় সামাজিক ব্যধি
জীবন শুকিয়ে থাকে, অশ্রুরেখা-সাদা বর্ণ থানে
শূন্যতার আঁচ বেশি। আপসের ঘূর্ণি যদি থাকে
দ্রুত বাড়ে আগাছার ভিড়। কাঁটা, কলুষের জটা
দম্ভের উত্তাপ থেকে শুরু হয় পতনের স্ফীতি
মৌলিক বোধের সিঁড়ি ডুবে যায় অমূল পাঁকে
দাসত্ব আরেক পাপ। উদয়াস্ত হলে অবনত
ঢেকে যায় সূর্যমুখ, স্তরে স্তরে জটিল প্রলাপ
প্রয়োগে বিভ্রাট যদি- শব্দগুলো পাথরের কাঁড়ি
ফুলের স্তবকছলে কখনো কি ঢাকা পড়ে ক্ষত!
কথার পেছনে তবু শুভশুদ্ধ কথা থেকে যায়
মানুষ প্রসন্ন হলে- (শক্ত দাঁড়া) দাঁড়িয়ে দাঁড়ায়
অমোঘ রাত্রির ধ্বনি
আবদুর রাজ্জাক
আমরা সীমাহীন ভালোবাসায় আবদ্ধ আমাদের প্রতিজ্ঞার মিনারে
মানুষের অস্থির প্লাবন হয়ে যায় সেখানে,
মানুষেরা যায় শেফালি ফুলের গন্ধে, রক্তের গন্ধে অনার্য সংকেতে।
তারা নিমীলিত পাহাড় থেকে নেমে আসে নগ্ন পায়ের কাছে।
মানুষের ভাষার ভালোবাসা একাকার হয়ে যায়
মধ্যনিশির প্রবল বন্যায়। সেদিন ভালোবাসার ছেলেরাই
ভালোবেসে গাঙের নদী হয়ে গিয়েছিলো, আমাদের শোক-শ্রদ্ধা-
ভালোবাসা গ্রাম-নদী-শহর পেরিয়ে প্রাচীন এক রৌদ্রগাথায়
গ্রন্থিত হয়ে আছে।
ভালোবাসার হাঁসগুলি, গুলি খেয়ে, বারুদ গন্ধে
ধূসর মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলো।
দ্রাবিড়ার প্রার্থনা, দ্রাবিড়ার অশ্রুপাত, দ্রাবিড়ার দীর্ঘশ্বাস ছিলো
কুমুদকহ্লার মতো।
অ, আ ধ্বনির পবিত্রতার চেয়েও অধিক পবিত্র ছিলো দর্পিত হাঁসেরা।
অৎস্র ধারার এই রক্তাক্ত সুন্দর ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমাদের
আঙুলগুলো মিশে যায় মাটিতে।