টেররিস্টদের থাবা থেকে
বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর
ঘুমের মধ্যে আমি লুকিয়ে যেতে পারি,
চারপাশে টেররিস্টরা
আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায় ভালোবাসা
সবকিছু লাগাম পরিয়ে তারা ঘোড়ার মতো টানে,
আমার ভালোবাসা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি
দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়াই
টেররিস্টদের থাবা থেকে,
কোথাও কোন আশ্চর্য ঘটে না
পাথর পাথরের মতো নদী নদীর মতো
সুখ আর নেই,
একটা স্যুটকেসে আমার পার্থিব সম্পদ
হৃদয়ে ভালোবাসা
আর চোখে পাখির আকুতি,
সংবিধান চুরি করছে টেররিস্টরা
তবু টেররিস্টদের থাবা থেকে মাথা তুলছে মানুষ,
আমার বুকটা ঝন ঝন করে
ওলির কদর্য শব্দের ভেতর
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সরোদ বাজনার মতো,
রাস্তায় রাস্তায় দেখি
বিদ্রোহের জন্যে ভালোবাসা মানুষের কী অসীম।
কল্যাণমহিমা
মহাদেব সাহা
শিশু কোলে নারী, পৃথিবীর এই মহৎ সুন্দরের দিকে চেয়ে
এখনো আমার মাঝে মাঝে বাঁচতে ইচ্ছা করে;
আর সবই ভুল শিল্প, ভুল চোখ, পরাজিত মলিন পাতক
এই শিল্পমহিমা অপরূপ অদৃশ্য আলোকচ্ছটা
সেদিকে তাকিয়ে বলি, সুখি হও তোমরা মানুষ, সুখি হোক
সমাজ সংসার,
এত হিংসা সংহারের মাঝে তুমি বেঁচে থাকো, সুখি হও।
শিশু কোলে এই যে মাতৃস্নেহ, এই যে স্বর্গীয় ছায়া, এই যে সঙ্গীত
এখানেই নারী পুণ্য পবিত্র পীযূষধারা, সৃষ্টিময়ী মাতা,
এখানেই সে জোয়ান অব আর্ক, মাদার তেরেজা, কুন্তী, সীতা,
অম্লান দ্রৌপদী
এখানেই নারী স্নেহপরায়ণা শকুন্তলা, মীরা বাঈ, লতার ভজন
এখানেই নারী সেই আদিশিল্প, আদিস্লোক, শান্তিবচন;
অন্যখানে নারী খুবই ঊরুভুরু রোমের নর্তকী শিল্পহীন,
স্থূল শরীরসর্বস্ব,
এখানেই নারী কল্যাণদাত্রী গৃহলক্ষ্মী বধূ, মাতা, ভগিনী
আমি এই ধরিত্রীর শিশু, সর্বংসহা ধরিত্রীমাতা, ধরিত্রীনারী,
করি তোমাকে প্রণাম।
জয় বাংলা
মতিন রায়হান
তোমাকে না পাওয়ার শঙ্কা এইমাত্র দূর হয়ে গেল!
আমি দীপ্ত আলোয় দেখতে পাচ্ছি
তোমার চিরসবুজ মুখ
শিমুলে-পলাশে কী রাঙা হয়ে উঠেছে!
তুমি জিরাফের মতো মাথা তুলে দেখে নিচ্ছো
দেখে নিচ্ছো
দেখে নিচ্ছো
একটি তর্জনী কী করে জনসমুদ্রে
তুলেছে উত্তাল ঢেউ!
তাই ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখেছো এক অদ্ভুত
পরিতৃপ্তির হাসি
অনাগত ভবিষ্যৎকে ঠিক দেখতে পাচ্ছো
একজন ভবিষ্যদ্রষ্টার মতো!
তুমি বিস্ফারিত চোখে সবিস্ময়ে দেখলে...
একজন মহাকবি কী দৃপ্ত পদে এলেন মঞ্চে
মুক্তছন্দে শোনালেন তাঁর অজর কবিতাখানি!
মাত্র তো আঠারো মিনিট!
মনে হলো তোমার চলাচল থেমে আছে
আঠারো বছর
কী অদ্ভুত শব্দে-ছন্দে জ্বালালেন তিনি
অগণন বহ্নিশিখা
পুড়ে ভস্ম হলো রক্তচক্ষু শোষকের দর্পিত মসনদ
দেখতে দেখতে লাঙল-জোয়াল কাঁধে ছুটে এলো
মাঠের কৃষক
হাপর নাড়াতে নাড়াতে তেজোদীপ্ত গাঁয়ের কামার
জেলে তার জাল ফেলে ধরা দিলো কথার জালে
মাটি কামড়ে কুমারেরা গড়ে তুললো অচ্ছেদ্য দুর্গ!
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’
বজ্রকণ্ঠের এই দীপ্ত আহ্বান ছড়িয়ে পড়লো
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া
জাফলং থেকে সুন্দরবন
তুমুল ঢেউয়ের তোড়ে দুলে উঠলো পদ্মা-মেঘনা
আর ধু-ধু বঙ্গোপসাগর
হাজার নদীর কল-কল্লোলে
লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে বেজে উঠলো
বিজয়ের ধ্বনি : জয় বাংলা!
গন্তব্য তাঁর রমনার মাঠ
গৌতম রায়
বত্রিশ নম্বরের সামনের লেকে সকাল থেকেই
সাঁতার দিচ্ছে একঝাঁক দুধ সাদা হাঁস।
বকের পাখায় ভর করে যেন উড়ে উড়ে তিনি এলেন।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি বিন্দুতে জাগছে ধুয়ো ওঠা
পাইপকে শক্ত মুঠিতে ধরে রাখা সেই হাতটি,
সেই হাতের বজ্রমুষ্টির কাছে হার মানছে জলপাইরাঙা পোশাক
হার মানছে রিকোয়েললেস রাইফেল।
সে হাতের টানেই উথাল পাতাল মেঘনার বুকে
দাঁড় বাইছে সাগির আলি।
মুছে যাওয়া সিঁদুরের রেখায় জীবনের গান ধরেছে হরিদাসী-
মিডফোর্ডে ঝাজড়া কলজেটাকে উপড়ে দিয়ে
জীবনটাকে রঙিন করছে মতলব মিয়া।
যে সোপান আমার পিতার রক্তে রেঙেও মরতে দিল না আমাকে
তারই স্বপ্নে ভর করে ফুল ধরেছে হাস্নুহানাতে।
তরুলতার ঝোপের নিচে দাঁড়িয়ে দশ বছরের শিশুটির শেষ মোনাজাতে
আমার ভাঙা বুকে নাচন জাগাতে ওই তো হাতের মুঠোতে শক্ত করে
পাইপটা ধরে সিঁড়ি বেয়ে তিনি নেমে আসছেন-
গন্তব্য তাঁর রমনার মাঠ
গন্তব্য তাঁর সাধের ছাপ্পান্ন হাজারের প্রতিটি বিন্দু।
মঙ্গলবার্তা
মোহাম্মদ নাদিম
আমি জানি আবার জাগবে মানুষ!
ভোর না হতেই পত্রিকা নিয়ে দুয়ারে দাঁড়াবে হকার ,
ছুটির দিনে খুব সকালে ডোরবেল বাজিয়ে
ঘুমের বারোটা বাজাবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
আমি জানি আবার হাঁটবে মানুষ!
রমনার উদ্যান আর ধানম-ির লেকে
পাখির কিচিরমিচিরের সঙ্গে গুঞ্জরিত হবে
মানুষেরই কলরব!
স্কুল ইউনিফর্ম পরা শিশুদের নিয়ে ছুটবে গাড়ি,
নয়টার অফিস ধরতে হন্তদন্ত হয়ে রাস্তায় নামবে অফিসার-কেরানি,
তারও আগে সার বেধে দ্রুতপায়ে হেঁটে কারখানায় যাবে পোশাক শ্রমিক
বাসের পাদানিতে বাদুরঝোলা হয়ে ক্যাম্পাসে যাবে শিক্ষার্থী
দিনভর গুলতানিতে জমে উঠবে টিএসসি
মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হবে মধুর ক্যান্টিন কলাভবন!
আমি জানি, বসুন্ধরা শপিংমল আর যমুনা ফিউচার পার্ক
আবারও উপচে পড়বে ক্রেতাদের ভিড়ে।
বিকেল হলেই হাতিরঝিলে বসবে তারুণ্যের মেলা
সন্ধ্যা হলেই আড্ডা জমবে মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে!
আমি জানি-
আসছে বৈশাখে রমনার বটমূলে আবার বসবে প্রাণের মেলা
করোনাকে কাঁপিয়ে দিয়ে দিকে দিকে ছুটবে মঙ্গল শোভাযাত্রা!
আলো অন্ধকার
মামুন অপু
আসুন রোদ্র নিয়ে খেলি
এক চামুচ আলো বেটে মিশিয়ে দেন অন্ধকারের মুখে
চোখ খুলুন এবং দেখুন অন্ধকার
সেখান থেকে এক বাটি অন্ধকার গিলে ফেলুন
অন্ধকারের সাথে সাগুর মত গিলে ফেলুন কিছু নক্ষত্র
ভয় পাচ্ছেন! ভয়কে এলাচির মত দাঁতের চাপে রাখুন
হাত বাড়ান, কিছু বোধ হয়? নরম অথবা গরম?
নরম অনেক কিছুই গরম হতে পারে যেমন লোহা।
লোহার মত এক বুক নরম নিয়ে সঁপে দেয় যে
তাঁকে কখনো শুঁকে দেখেছেন!
শুঁকে দেখুন এবং বলুন হৃদয় নামের পাখিটা কতটা নিশাচর
কতটা বনের নিভৃতে উড়তে পেরেছে
উড়তে উড়তে মুখ থুবড়ে পড়েছে কি লোবানের স্রোতে!
মায়া
আদিত্য নজরুল
মন এক লাল ঘোড়া...
দাদীমার কাছ থেকে শোনা
রূপকথার রাজপুত্রের ভালোবাসাগুলো
সংসারে এসে দেখি
আইসক্রিমের মতো গলে যাচ্ছে।
অথচ বুকের তলায় এসে
দাদীমার গল্পের আসর বকুল তলার সাথে
মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
দাদীর গল্পের আসরের
লাল টুকটুকে ঘোড়াকে
মনে বেঁধে রেখে পোষ মানাতে চাইছি।
বুকে লাল ঘোড়াদের আস্তাবল
লাল রঘোড়াটাকে ছেড়ে দেই
বেঁধে রাখি। বুকের ভেতর
সংসারে এলে যদি ভালোবাসা গলে যায়।
প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তি সংবাদ
শেলী সেনগুপ্তা
বড়শীগেলা মাছ যেন
ঘাঁই দিচ্ছে বুকের ভেতর,
চোখের কিনারা ছুঁয়ে
বয়ে যাচ্ছে লু হাওয়া,
প্রেম নাকি ঘৃণা
বোঝার আগেই
বুঝেছি,
ফুল নয়
যত্নের বাগানে পাথর ফলেছে,
ফসল নয়
গোলায় তুলেছি ফণাতোলা সাপ-
বিপন্ন সময়ের বিন¤্র বিশ্বাস
এখন
কাগজের মালা পরে
জীবনের হাড়কাঠে...
নাচার অন্দর
মালা মিত্র
যাযাবরী মন, পৃথিবীর দিক পাল্টায়,
চোখ, চুল, বর্ণ, উচ্চতা, বারে বার বদলায়।
নাচার অন্তর, পুরোনো ভাবনা বইতে নারাজ,
সব ফেলে পরিযায়ী বাসনা, নব দৃশ্যপট খোঁজে,
ডানা ঝাপটায়, মলম লাগায় পুরোনো ক্ষতে।
পিঞ্জরে আবদ্ধ নদী মুক্তি পেতে চায়,
বয়ে চলে অচেনা ভাবনায়,
বৃথা চেষ্টা, সাবেকি সোহাগী বাতাস,
না গেলে, না উগরায়!
মন, বল একি বিপর্যয়!!!
ভবঘুরে সূর্য ও মা’র আপ্যায়ন
মহসিন খোন্দকার
মা’র বোরোভাতের ঘ্রাণের কাছে
ঘুরঘুর করে ভবঘুরে সূর্য, সবুজে মুখ ধোয়া শেষ হলে
ডাহুক ডানা বিছিয়ে দেয়, তারপর ঠোঁটে তুলে নেয়
শিশিরের শিঞ্জন, তার ডানপাশে দোয়েলের শিস্
আর বাম পাশে সুখমাচা ওখানে একটি কাকভোর
ক্রমাগত লেজ নাচায়
মা জানে ভবঘুরেটা আবার আসবে নিদাঘ দুপুরে,
নৈঃশব্দ্যে ঠেস দিয়ে বসবে কিছুক্ষণ, ঠোঁটে তুলে দিলে
নির্জনতার নির্যাস খেতে খেতে চলে যাবে,
তবু এখানেই গেঁথে রেখে যাবে তার ছায়ার শেকড়
ইতিবৃত্ত
আলমগীর কবীর আলম
যখন আমি আর আমার ছায়া হাত ধরে হাঁটি
নিখিল কুঞ্জের বাগিচায়, আড়ষ্টতার দৃষ্টিতে
আমাকে তাকিয়ে দেখে হু হু করে বয়ে চলা নদী।
ঘুঘুদের স্নানোৎসবে যাহা কিছু দৃশ্যমান, সব
হাওয়া বিষয়ক পাতাদের উড়ন্ত মর্মর ধ্বনি।
দুপুর অঙ্কণে মত্ত থাকা জারুল গাছের পাতা
অনুবাদ করে সেই সব কূট প্রশ্নের অর্থাবলী-
সব শ্লোক, স্তুতির বিচ্যুতি ঘটে কুয়োর নিকট।
কতজনের পৃথিবী ডুবে গিয়ে আর পায়নি খুঁজে
মহিমাগঞ্জের রাস্তা। পারিজাত পুষ্পের নিকটে
পড়ে থাকবে দীর্ঘ হাহাকার, পথ কুক্কুরের স্বর।
প্রত্যেকের চোখ সমতল জুড়ে বালির পাহাড়।
প্রত্যেকের পিছে লেগে আছে অজগর-সম নিন্দা।
শৌখিন চাঁদের আলো ঘিরে রয় সার্কাস, ক্লাউন-
অমৃত সমান
নীহার মোশারফ
তারুণ্যের স্রোতে ভেসে ভেসে দূরে
পথের গুচ্ছলতায় রুপোলি আকাশ
সম্পর্কের টানে কারা যেন
ফসল ছোঁয়
সাঁওতাল কন্যার ছোট ছোট ভাষায়
নূপুরপরা পায়ে অগ্রসর মাটি।
ভাটির টানে নন্দি বসাক
বাঁচার ইচ্ছে খোঁজে
ভেতরের নান্দনিক চোখ তুলে আনে
হরিণীর অবয়ব
বাইরে মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ জীবন
সর্বত্র দূষিত ধুলো
উচ্ছের কেজি পঞ্চাশ টাকা হলে
মানতে চায় না কেউ।
বাজারে সবই আছে। তেল চাল ডালের দামে
নিত্য আগুন
ফাগুন হয়েছে গত। চৈত্রের খরতাপে
একটি ডাবের পানি অমৃত সমান।
প্রিয় স্বাধীনতা পঞ্চাশে এলো বলে
ভিন্ন আয়োজন
মানুষ শান্তিতে ঘুমোলে
উপমারা পরিব্রাজক হয়ে নতুন বিশ্ব দেখে
গণতন্ত্রের মানে অধিকার যার যার
নারীরা নিশ্চিন্তে বহুদূর হাঁটে...
ভালোবাসা দিনের কবিতা
নাইমুল করিম
ধরো একঘেয়ে জীবনযাপনে প্রযুক্তি
একদিন ধৈর্যচ্যুত হ’য়ে
পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে
দ্রুত চলে গেলো অন্য কোনো গ্রহে
সাথে সাথে আমরাও আধুনিকীকরণ থেকে
চিঠিপত্র যুগে ফিরতে থাকলে
পুরোনো কোনো স্মৃতি রোমন্থন
যদি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে
ফের তুমি কি লিখবে?
ইয়ুথ কালি পাইলট কলমে
গাছের পাতা সবুজ ফুল লাল
আমার তোমার হৃদয়গ্রাহী ভালোবাসা
থাকবে অনাদিকাল
কী দ্যাখো বন্ধু অমন করে
মমতাজ রোজ কলি
কী দ্যাখো বন্ধু অমন করে?
চশমার ফাঁক দিয়ে- বাংলার মহান স্থপতি!
কি দ্যাখো! ঐ অনাবৃত উন্মুক্ত চোখ দু’টি দিয়ে-
আঠারো কোটি জনতার ভিড়ে-
পদ্মাসেতু-বঙ্গবন্ধু টানেল-লালন শাহ সেতু
পেরিয়ে সুমুদ্র সীমায়।
দেশ রক্ষায় উন্নয়নে-সৃষ্টিশীল
কর্মউদ্যমে বীর সেনাদল
খাদ্যে উদ্বৃত্ত উন্নয়নের ছোঁয়ায় হাঁটছে দেশ।
দ্যাখো, দ্যাখো চেয়ে তোমার নামে স্যাটেলাইট।
তলা বিহীন ঝুড়ি নয়-
অভাব গুটিয়ে ভাণ্ডারে সঞ্চিত জড়োয়া সম্ভার।
কর্ম-উদ্দীপনায় জেগে থাকে তোমার বাঙালি
তোমার বাংলা কেন্দ্রবিন্দু বাণিজ্যে বহুদেশের।
কী দ্যাখো অমন করে? সোনার বাংলার রূপকার!
বাংলা তোমার আশ্রিতা নয়; আশ্রয় দাতা বিহারী-রোহিঙ্গার।
এবার বিমূর্ষ চোখে বিষণ্নতা নয়; নিমজ্জিত চোখে
হাচু মায়ের চোখে চোখ রেখে-প্রাপ্তির হাঁসিতে হাঁসো
তোমার প্রিয় বাঙালি বিশ্ববিবেককে করে বিস্মিত।
জ্যামিতিক কম্পাস ও এক বৃত্ত
পারভেজ আহসান
রক্তে ভেজা এ উজ্জ্বল সৌধের প্রতিটি বাহু
ত্রিমাত্রিক ত্রিভুজের মতন মিলিত হয় একই শীর্ষবিন্দুতে
এই শীর্ষ কণা কেবলি এভারেস্টের মতন আকাশ ফোঁড়ে
স্বপ্ন বোনে মেঘদের ডানা ছিঁড়ে
তথাপিও এক অদ্ভুত নিয়মে এ মানুষগুলো
সরল রেখার দুটো প্রান্ত বিন্দু হয়ে উল্টো পথ ধরে হাঁটে
তারা বেমালুম ভুলে যায়
জ্যামিতিক কম্পাসের মত স্থির পায়ে ভর করে বৃত্ত আঁকার
এক মর্মন্তুদ দীপ্ত ইতিহাস।
বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১
টেররিস্টদের থাবা থেকে
বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর
ঘুমের মধ্যে আমি লুকিয়ে যেতে পারি,
চারপাশে টেররিস্টরা
আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায় ভালোবাসা
সবকিছু লাগাম পরিয়ে তারা ঘোড়ার মতো টানে,
আমার ভালোবাসা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি
দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়াই
টেররিস্টদের থাবা থেকে,
কোথাও কোন আশ্চর্য ঘটে না
পাথর পাথরের মতো নদী নদীর মতো
সুখ আর নেই,
একটা স্যুটকেসে আমার পার্থিব সম্পদ
হৃদয়ে ভালোবাসা
আর চোখে পাখির আকুতি,
সংবিধান চুরি করছে টেররিস্টরা
তবু টেররিস্টদের থাবা থেকে মাথা তুলছে মানুষ,
আমার বুকটা ঝন ঝন করে
ওলির কদর্য শব্দের ভেতর
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সরোদ বাজনার মতো,
রাস্তায় রাস্তায় দেখি
বিদ্রোহের জন্যে ভালোবাসা মানুষের কী অসীম।
কল্যাণমহিমা
মহাদেব সাহা
শিশু কোলে নারী, পৃথিবীর এই মহৎ সুন্দরের দিকে চেয়ে
এখনো আমার মাঝে মাঝে বাঁচতে ইচ্ছা করে;
আর সবই ভুল শিল্প, ভুল চোখ, পরাজিত মলিন পাতক
এই শিল্পমহিমা অপরূপ অদৃশ্য আলোকচ্ছটা
সেদিকে তাকিয়ে বলি, সুখি হও তোমরা মানুষ, সুখি হোক
সমাজ সংসার,
এত হিংসা সংহারের মাঝে তুমি বেঁচে থাকো, সুখি হও।
শিশু কোলে এই যে মাতৃস্নেহ, এই যে স্বর্গীয় ছায়া, এই যে সঙ্গীত
এখানেই নারী পুণ্য পবিত্র পীযূষধারা, সৃষ্টিময়ী মাতা,
এখানেই সে জোয়ান অব আর্ক, মাদার তেরেজা, কুন্তী, সীতা,
অম্লান দ্রৌপদী
এখানেই নারী স্নেহপরায়ণা শকুন্তলা, মীরা বাঈ, লতার ভজন
এখানেই নারী সেই আদিশিল্প, আদিস্লোক, শান্তিবচন;
অন্যখানে নারী খুবই ঊরুভুরু রোমের নর্তকী শিল্পহীন,
স্থূল শরীরসর্বস্ব,
এখানেই নারী কল্যাণদাত্রী গৃহলক্ষ্মী বধূ, মাতা, ভগিনী
আমি এই ধরিত্রীর শিশু, সর্বংসহা ধরিত্রীমাতা, ধরিত্রীনারী,
করি তোমাকে প্রণাম।
জয় বাংলা
মতিন রায়হান
তোমাকে না পাওয়ার শঙ্কা এইমাত্র দূর হয়ে গেল!
আমি দীপ্ত আলোয় দেখতে পাচ্ছি
তোমার চিরসবুজ মুখ
শিমুলে-পলাশে কী রাঙা হয়ে উঠেছে!
তুমি জিরাফের মতো মাথা তুলে দেখে নিচ্ছো
দেখে নিচ্ছো
দেখে নিচ্ছো
একটি তর্জনী কী করে জনসমুদ্রে
তুলেছে উত্তাল ঢেউ!
তাই ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখেছো এক অদ্ভুত
পরিতৃপ্তির হাসি
অনাগত ভবিষ্যৎকে ঠিক দেখতে পাচ্ছো
একজন ভবিষ্যদ্রষ্টার মতো!
তুমি বিস্ফারিত চোখে সবিস্ময়ে দেখলে...
একজন মহাকবি কী দৃপ্ত পদে এলেন মঞ্চে
মুক্তছন্দে শোনালেন তাঁর অজর কবিতাখানি!
মাত্র তো আঠারো মিনিট!
মনে হলো তোমার চলাচল থেমে আছে
আঠারো বছর
কী অদ্ভুত শব্দে-ছন্দে জ্বালালেন তিনি
অগণন বহ্নিশিখা
পুড়ে ভস্ম হলো রক্তচক্ষু শোষকের দর্পিত মসনদ
দেখতে দেখতে লাঙল-জোয়াল কাঁধে ছুটে এলো
মাঠের কৃষক
হাপর নাড়াতে নাড়াতে তেজোদীপ্ত গাঁয়ের কামার
জেলে তার জাল ফেলে ধরা দিলো কথার জালে
মাটি কামড়ে কুমারেরা গড়ে তুললো অচ্ছেদ্য দুর্গ!
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’
বজ্রকণ্ঠের এই দীপ্ত আহ্বান ছড়িয়ে পড়লো
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া
জাফলং থেকে সুন্দরবন
তুমুল ঢেউয়ের তোড়ে দুলে উঠলো পদ্মা-মেঘনা
আর ধু-ধু বঙ্গোপসাগর
হাজার নদীর কল-কল্লোলে
লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে বেজে উঠলো
বিজয়ের ধ্বনি : জয় বাংলা!
গন্তব্য তাঁর রমনার মাঠ
গৌতম রায়
বত্রিশ নম্বরের সামনের লেকে সকাল থেকেই
সাঁতার দিচ্ছে একঝাঁক দুধ সাদা হাঁস।
বকের পাখায় ভর করে যেন উড়ে উড়ে তিনি এলেন।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি বিন্দুতে জাগছে ধুয়ো ওঠা
পাইপকে শক্ত মুঠিতে ধরে রাখা সেই হাতটি,
সেই হাতের বজ্রমুষ্টির কাছে হার মানছে জলপাইরাঙা পোশাক
হার মানছে রিকোয়েললেস রাইফেল।
সে হাতের টানেই উথাল পাতাল মেঘনার বুকে
দাঁড় বাইছে সাগির আলি।
মুছে যাওয়া সিঁদুরের রেখায় জীবনের গান ধরেছে হরিদাসী-
মিডফোর্ডে ঝাজড়া কলজেটাকে উপড়ে দিয়ে
জীবনটাকে রঙিন করছে মতলব মিয়া।
যে সোপান আমার পিতার রক্তে রেঙেও মরতে দিল না আমাকে
তারই স্বপ্নে ভর করে ফুল ধরেছে হাস্নুহানাতে।
তরুলতার ঝোপের নিচে দাঁড়িয়ে দশ বছরের শিশুটির শেষ মোনাজাতে
আমার ভাঙা বুকে নাচন জাগাতে ওই তো হাতের মুঠোতে শক্ত করে
পাইপটা ধরে সিঁড়ি বেয়ে তিনি নেমে আসছেন-
গন্তব্য তাঁর রমনার মাঠ
গন্তব্য তাঁর সাধের ছাপ্পান্ন হাজারের প্রতিটি বিন্দু।
মঙ্গলবার্তা
মোহাম্মদ নাদিম
আমি জানি আবার জাগবে মানুষ!
ভোর না হতেই পত্রিকা নিয়ে দুয়ারে দাঁড়াবে হকার ,
ছুটির দিনে খুব সকালে ডোরবেল বাজিয়ে
ঘুমের বারোটা বাজাবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
আমি জানি আবার হাঁটবে মানুষ!
রমনার উদ্যান আর ধানম-ির লেকে
পাখির কিচিরমিচিরের সঙ্গে গুঞ্জরিত হবে
মানুষেরই কলরব!
স্কুল ইউনিফর্ম পরা শিশুদের নিয়ে ছুটবে গাড়ি,
নয়টার অফিস ধরতে হন্তদন্ত হয়ে রাস্তায় নামবে অফিসার-কেরানি,
তারও আগে সার বেধে দ্রুতপায়ে হেঁটে কারখানায় যাবে পোশাক শ্রমিক
বাসের পাদানিতে বাদুরঝোলা হয়ে ক্যাম্পাসে যাবে শিক্ষার্থী
দিনভর গুলতানিতে জমে উঠবে টিএসসি
মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হবে মধুর ক্যান্টিন কলাভবন!
আমি জানি, বসুন্ধরা শপিংমল আর যমুনা ফিউচার পার্ক
আবারও উপচে পড়বে ক্রেতাদের ভিড়ে।
বিকেল হলেই হাতিরঝিলে বসবে তারুণ্যের মেলা
সন্ধ্যা হলেই আড্ডা জমবে মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে!
আমি জানি-
আসছে বৈশাখে রমনার বটমূলে আবার বসবে প্রাণের মেলা
করোনাকে কাঁপিয়ে দিয়ে দিকে দিকে ছুটবে মঙ্গল শোভাযাত্রা!
আলো অন্ধকার
মামুন অপু
আসুন রোদ্র নিয়ে খেলি
এক চামুচ আলো বেটে মিশিয়ে দেন অন্ধকারের মুখে
চোখ খুলুন এবং দেখুন অন্ধকার
সেখান থেকে এক বাটি অন্ধকার গিলে ফেলুন
অন্ধকারের সাথে সাগুর মত গিলে ফেলুন কিছু নক্ষত্র
ভয় পাচ্ছেন! ভয়কে এলাচির মত দাঁতের চাপে রাখুন
হাত বাড়ান, কিছু বোধ হয়? নরম অথবা গরম?
নরম অনেক কিছুই গরম হতে পারে যেমন লোহা।
লোহার মত এক বুক নরম নিয়ে সঁপে দেয় যে
তাঁকে কখনো শুঁকে দেখেছেন!
শুঁকে দেখুন এবং বলুন হৃদয় নামের পাখিটা কতটা নিশাচর
কতটা বনের নিভৃতে উড়তে পেরেছে
উড়তে উড়তে মুখ থুবড়ে পড়েছে কি লোবানের স্রোতে!
মায়া
আদিত্য নজরুল
মন এক লাল ঘোড়া...
দাদীমার কাছ থেকে শোনা
রূপকথার রাজপুত্রের ভালোবাসাগুলো
সংসারে এসে দেখি
আইসক্রিমের মতো গলে যাচ্ছে।
অথচ বুকের তলায় এসে
দাদীমার গল্পের আসর বকুল তলার সাথে
মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
দাদীর গল্পের আসরের
লাল টুকটুকে ঘোড়াকে
মনে বেঁধে রেখে পোষ মানাতে চাইছি।
বুকে লাল ঘোড়াদের আস্তাবল
লাল রঘোড়াটাকে ছেড়ে দেই
বেঁধে রাখি। বুকের ভেতর
সংসারে এলে যদি ভালোবাসা গলে যায়।
প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তি সংবাদ
শেলী সেনগুপ্তা
বড়শীগেলা মাছ যেন
ঘাঁই দিচ্ছে বুকের ভেতর,
চোখের কিনারা ছুঁয়ে
বয়ে যাচ্ছে লু হাওয়া,
প্রেম নাকি ঘৃণা
বোঝার আগেই
বুঝেছি,
ফুল নয়
যত্নের বাগানে পাথর ফলেছে,
ফসল নয়
গোলায় তুলেছি ফণাতোলা সাপ-
বিপন্ন সময়ের বিন¤্র বিশ্বাস
এখন
কাগজের মালা পরে
জীবনের হাড়কাঠে...
নাচার অন্দর
মালা মিত্র
যাযাবরী মন, পৃথিবীর দিক পাল্টায়,
চোখ, চুল, বর্ণ, উচ্চতা, বারে বার বদলায়।
নাচার অন্তর, পুরোনো ভাবনা বইতে নারাজ,
সব ফেলে পরিযায়ী বাসনা, নব দৃশ্যপট খোঁজে,
ডানা ঝাপটায়, মলম লাগায় পুরোনো ক্ষতে।
পিঞ্জরে আবদ্ধ নদী মুক্তি পেতে চায়,
বয়ে চলে অচেনা ভাবনায়,
বৃথা চেষ্টা, সাবেকি সোহাগী বাতাস,
না গেলে, না উগরায়!
মন, বল একি বিপর্যয়!!!
ভবঘুরে সূর্য ও মা’র আপ্যায়ন
মহসিন খোন্দকার
মা’র বোরোভাতের ঘ্রাণের কাছে
ঘুরঘুর করে ভবঘুরে সূর্য, সবুজে মুখ ধোয়া শেষ হলে
ডাহুক ডানা বিছিয়ে দেয়, তারপর ঠোঁটে তুলে নেয়
শিশিরের শিঞ্জন, তার ডানপাশে দোয়েলের শিস্
আর বাম পাশে সুখমাচা ওখানে একটি কাকভোর
ক্রমাগত লেজ নাচায়
মা জানে ভবঘুরেটা আবার আসবে নিদাঘ দুপুরে,
নৈঃশব্দ্যে ঠেস দিয়ে বসবে কিছুক্ষণ, ঠোঁটে তুলে দিলে
নির্জনতার নির্যাস খেতে খেতে চলে যাবে,
তবু এখানেই গেঁথে রেখে যাবে তার ছায়ার শেকড়
ইতিবৃত্ত
আলমগীর কবীর আলম
যখন আমি আর আমার ছায়া হাত ধরে হাঁটি
নিখিল কুঞ্জের বাগিচায়, আড়ষ্টতার দৃষ্টিতে
আমাকে তাকিয়ে দেখে হু হু করে বয়ে চলা নদী।
ঘুঘুদের স্নানোৎসবে যাহা কিছু দৃশ্যমান, সব
হাওয়া বিষয়ক পাতাদের উড়ন্ত মর্মর ধ্বনি।
দুপুর অঙ্কণে মত্ত থাকা জারুল গাছের পাতা
অনুবাদ করে সেই সব কূট প্রশ্নের অর্থাবলী-
সব শ্লোক, স্তুতির বিচ্যুতি ঘটে কুয়োর নিকট।
কতজনের পৃথিবী ডুবে গিয়ে আর পায়নি খুঁজে
মহিমাগঞ্জের রাস্তা। পারিজাত পুষ্পের নিকটে
পড়ে থাকবে দীর্ঘ হাহাকার, পথ কুক্কুরের স্বর।
প্রত্যেকের চোখ সমতল জুড়ে বালির পাহাড়।
প্রত্যেকের পিছে লেগে আছে অজগর-সম নিন্দা।
শৌখিন চাঁদের আলো ঘিরে রয় সার্কাস, ক্লাউন-
অমৃত সমান
নীহার মোশারফ
তারুণ্যের স্রোতে ভেসে ভেসে দূরে
পথের গুচ্ছলতায় রুপোলি আকাশ
সম্পর্কের টানে কারা যেন
ফসল ছোঁয়
সাঁওতাল কন্যার ছোট ছোট ভাষায়
নূপুরপরা পায়ে অগ্রসর মাটি।
ভাটির টানে নন্দি বসাক
বাঁচার ইচ্ছে খোঁজে
ভেতরের নান্দনিক চোখ তুলে আনে
হরিণীর অবয়ব
বাইরে মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ জীবন
সর্বত্র দূষিত ধুলো
উচ্ছের কেজি পঞ্চাশ টাকা হলে
মানতে চায় না কেউ।
বাজারে সবই আছে। তেল চাল ডালের দামে
নিত্য আগুন
ফাগুন হয়েছে গত। চৈত্রের খরতাপে
একটি ডাবের পানি অমৃত সমান।
প্রিয় স্বাধীনতা পঞ্চাশে এলো বলে
ভিন্ন আয়োজন
মানুষ শান্তিতে ঘুমোলে
উপমারা পরিব্রাজক হয়ে নতুন বিশ্ব দেখে
গণতন্ত্রের মানে অধিকার যার যার
নারীরা নিশ্চিন্তে বহুদূর হাঁটে...
ভালোবাসা দিনের কবিতা
নাইমুল করিম
ধরো একঘেয়ে জীবনযাপনে প্রযুক্তি
একদিন ধৈর্যচ্যুত হ’য়ে
পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে
দ্রুত চলে গেলো অন্য কোনো গ্রহে
সাথে সাথে আমরাও আধুনিকীকরণ থেকে
চিঠিপত্র যুগে ফিরতে থাকলে
পুরোনো কোনো স্মৃতি রোমন্থন
যদি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে
ফের তুমি কি লিখবে?
ইয়ুথ কালি পাইলট কলমে
গাছের পাতা সবুজ ফুল লাল
আমার তোমার হৃদয়গ্রাহী ভালোবাসা
থাকবে অনাদিকাল
কী দ্যাখো বন্ধু অমন করে
মমতাজ রোজ কলি
কী দ্যাখো বন্ধু অমন করে?
চশমার ফাঁক দিয়ে- বাংলার মহান স্থপতি!
কি দ্যাখো! ঐ অনাবৃত উন্মুক্ত চোখ দু’টি দিয়ে-
আঠারো কোটি জনতার ভিড়ে-
পদ্মাসেতু-বঙ্গবন্ধু টানেল-লালন শাহ সেতু
পেরিয়ে সুমুদ্র সীমায়।
দেশ রক্ষায় উন্নয়নে-সৃষ্টিশীল
কর্মউদ্যমে বীর সেনাদল
খাদ্যে উদ্বৃত্ত উন্নয়নের ছোঁয়ায় হাঁটছে দেশ।
দ্যাখো, দ্যাখো চেয়ে তোমার নামে স্যাটেলাইট।
তলা বিহীন ঝুড়ি নয়-
অভাব গুটিয়ে ভাণ্ডারে সঞ্চিত জড়োয়া সম্ভার।
কর্ম-উদ্দীপনায় জেগে থাকে তোমার বাঙালি
তোমার বাংলা কেন্দ্রবিন্দু বাণিজ্যে বহুদেশের।
কী দ্যাখো অমন করে? সোনার বাংলার রূপকার!
বাংলা তোমার আশ্রিতা নয়; আশ্রয় দাতা বিহারী-রোহিঙ্গার।
এবার বিমূর্ষ চোখে বিষণ্নতা নয়; নিমজ্জিত চোখে
হাচু মায়ের চোখে চোখ রেখে-প্রাপ্তির হাঁসিতে হাঁসো
তোমার প্রিয় বাঙালি বিশ্ববিবেককে করে বিস্মিত।
জ্যামিতিক কম্পাস ও এক বৃত্ত
পারভেজ আহসান
রক্তে ভেজা এ উজ্জ্বল সৌধের প্রতিটি বাহু
ত্রিমাত্রিক ত্রিভুজের মতন মিলিত হয় একই শীর্ষবিন্দুতে
এই শীর্ষ কণা কেবলি এভারেস্টের মতন আকাশ ফোঁড়ে
স্বপ্ন বোনে মেঘদের ডানা ছিঁড়ে
তথাপিও এক অদ্ভুত নিয়মে এ মানুষগুলো
সরল রেখার দুটো প্রান্ত বিন্দু হয়ে উল্টো পথ ধরে হাঁটে
তারা বেমালুম ভুলে যায়
জ্যামিতিক কম্পাসের মত স্থির পায়ে ভর করে বৃত্ত আঁকার
এক মর্মন্তুদ দীপ্ত ইতিহাস।