মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের শীতের আগমনের সাথে সাথেই লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত সময়পার করছেন কারিগররা। গত কদিন ধরেই সন্ধ্যার পরেই শীত পরতে শুরু করছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ভাল ভাবে টের পাওয়া যাবে শীতের আভাস। লেপ-তোষক ও কম্বলের পাশাপাশি শীতের তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়ে গেছে। গ্রামাঞ্ছলের বাড়িতে বাড়িতে কদর বেড়েছে লেপ তোষকের। ঘরে বন্দি করে রাখা পুরনো লেপ তোষকের পাশাপাশি কাপর চোপর রোদে দিয়ে পরিপাটি করছেন গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ। বিকেল হলেই শীতের কাপড় পরিধান করে লোকজন বের হয়ে পরে। ঋতু পরিবর্তনের পরে চারিদিকে অনুভুতি হচ্ছে শীতের আমেজ। শীত নিবারণে মধ্যবিত্ত স্বচ্ছল ও উচ্চ বিত্তরা ভীর করছেন লেপ-তোষকের দোকানগুলোতে।
উপজেলার ঘিওর, পয়লা, সিংজুরী , বানিয়াজুরী, বালিয়াখোড়া ও নালী ইউনিয়নের হাট বাজারের দোকানগুলোতে নতুনের পাশাপাশি পুরাতন দোকানগুলোতে লেপ- তোষকের মেরামতের কাজ করতে দেখা গেছে। গভীর রাত পর্যন্ত কারিগররা লেপ তোষক তৈরি করছে। শীত পরার সাথে সাথেই লেপ তোষকের দোকানগুলোতে ক্রেতারা নতুন লেপ করতে ছুটে আসছেন। ছেড়া লেপ তোষক মেরামত করছেন অনেক পরিবার। আবার অনেক পরিবার শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই নতুন লেপ তোষক তৈরি করছেন। আবার ভাসমান ব্যবসায়ীরা গ্রামগঞ্জে ফেরি করে লোপ তোষক ও কম্বল বাড়ি বাড়ি গিয়ে হরহামেশ বিক্রি করছে। কেই চুক্তিতে তৈরি করে দিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা কেউ দোকানে কেউ কারখানাতে লেপ তোশক তৈরি করছেন। তুলা পরিস্কার করা, মেশিনে জোস জাড়ানো, ধুনন করা, কাপড়ে মোড়ানো আর সেলাই নিয়ে তারা শীতের মৌসুমে কর্মব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছেন। নভেম্বরের শুরুতেই লেপ তোমক তৈরির কাজে ব্যস্ততা বেড়ে যায় কারিগরদের। জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের পুরেপুরি মৌসমী কেনাবেচা চলে।
ঘিওর মোন্তাজ মার্কেটে লেপ-তোষক দোকানদার ধুনকার আলী হোসেন বলেন, দীর্ঘ প্রায় ২৩/৩০ বছর যাবৎ তিনি লোপ-তোষক তৈরির কাজ করছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে কোনমত জীবন যাপন করছেন। তিনি বলেন,লেপ-তোষক তৈরির উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের লাভের অংশ অনেকটায় কমে গেছে। আগের মতো লেপ-তোষকের চাহিদা নেই। শীত মৌসুমে কিছু বেচাকেনা হয়। বছর জুরেই লেপ তোষক ও বালিশ, জাজিম তৈরি কাজ করেন। চলতি মৌসুমে তুলা ও কাপরের দাম বেশি। লেপের কাপরের দাম প্রতি গজ ৫৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকা, তোষকের কাপড় ৬০ টাকা থেকে ১২০ টাকার গার্মেন্স তুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকার স্থলে ১৬০ টাকা, শিমুল তুলা ৪০০। লেপ বানানো মজুরি ৩০০ ৪০০ টাকা তোষক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এত কিছুর পরেও আগের মত লাভ থাকে না। তিনি আরো বলেন নতুন লেপ বানানোর চেয়ে অনেকেই পুরাতন লেপ খুলে তুলা ভাঙ্গিয়ে নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন। খরচ কম পরায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এই পথেই ঝুঁকছেন। গোলাপ নগর গ্রামের আরেজ বলেন পুরাতন তোষক ভেঙ্গে তুলা ফোম দিয়ে নতুন করে তোশক বানিয়ে নিলাম। এতে খরচ কম। আর কাজও সুন্দর হয়েছে। লেপ তৈরি করতে আসা গোলাপনগর গ্রামের হারেজ বলেন, ভাল তুলা দিয়ে ৪ হাত ৫হাত সাইজের লেপ ২২শ’ টাকা দিয়ে তৈরি করলাম। দোকানগুলোতে ভীর আগের চেয়ে অনেক বেশি। বর কনে বিদায়ের সময়ে মেয়ের বাড়ি থেকে লেপ-তোষক বালিশ সাথে না দিলে শ^শুর বাড়ির লোকজনের কাছে খোটা শুনতে হয়। শুধু শীতে নয় বিয়ের সময়ে কনে বিদায়ের সময়ে নতুন লেপ-তোষক, বালিশ দেওয়ার রেওয়াজবাংলা অতি পুরানো রীতি ও রেওয়াজ হিসাবে এখনও প্রচলিত আছে।
লেপ তোষক ব্যবসায়ী নাদিম বলেন, বর্তমানে বাজারে লেপ তোষকের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তুলার দাম ও কর্মচারিদের বেতন বেড়েছে। তাই অনেক ক্রেতারা রেপ তোষকের বদলে বাজার থেকে কম্বল ব্যবহার করছে। বিশেষ করে কিছু চায়না কম্বল বাজারে পাওয়া যায় এগুলোর দাম অনেক কম। এই জন্য এলাকার দরিদ্র লোকজন এগলো কিনে নিয়ে যায়। শীত নিবারণের প্রয়োজনীয়তা বাড়ার সাথে সাথেই পাল্লা দিয়ে তীর ধনুকদের ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথেই পুরাতন কাপড় ছোপর হাটায় প্রতি বছরে হাজার হাজার মানুষ কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পরে।
এক সপ্তাহ ধরে ভোরে হালকা কুয়শায় শীতের আমেজ একটু বেশি। এর কারনে এবার কাজের চাহিদা বেশি। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোপুরি কেনাবেচা চলবে। একটি লেপ ১৮০০ থেকে ২৫০০ এবং তোষক ১৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।