চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় আবু সুফিয়ান (২২) নামের এক তরুণকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, এই হামলায় তার দুই হাত ও এক পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
গত বুধবার শিবগঞ্জের উমরপুর ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত আবু সুফিয়ান একই উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে। গুরুতর অবস্থায় তাকে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে।
আহত সুফিয়ানের মা সুফিয়া বেগমের অভিযোগ, এক স্বজন কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করার জেরেই তার ছেলেকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের স্থানীয় কর্মীরা মারধর ও কুপিয়ে জখম করেছে। তার মতে, তাদের এক কিশোরী স্বজনকে এক যুবক অপহরণ করেছিলেন, সে মামলায় পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার ও যুবককে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বেরিয়েই যুবকটি আবার মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। এ ঘটনায় গত বুধবার বিকেলে সুফিয়ান উমরপুর ঘাটে ওই যুবককে নিষেধ করলে স্থানীয় আবদুর রাজ্জাক, শাহ আলমসহ জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা যুবকের পক্ষ নিয়ে সুফিয়ানকে মারতে শুরু করেন এবং শেষে রাজ্জাকের দোকানের সামনের বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে তাকে কুপিয়ে জখম করেন।
সুফিয়া বেগম দাবি করেন, তার ছেলে মার খাওয়ার সময় হাতজোড় করে বলেছিল যে সে দোষী নয়, প্রমাণ নিয়ে তারপর শাস্তি দিতে, কিন্তু হামলাকারীরা তার কথা শুনেনি।
আহত আবু সুফিয়ানও একই ঘটনার কথা জানিয়েছেন। তার ভাষ্য, তিনি জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে একটি ছেলে তার কিশোরী স্বজনকে উত্ত্যক্ত করছে, কিন্তু তারা কোনো কথা না শুনে তাকে খুঁটিতে বেঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত-পা কেটে দেন।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে সুফিয়ানের বাবা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ ও ১২ থেকে ১৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে শিবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে শাহ আলম (২২) ও তার ভাই আবদুর রাজ্জাক (২৩) নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। গ্রেপ্তার এ দুজনের বাড়ি শ্যামপুর খোচপাড়া গ্রামে। জানা গেছে, রাজ্জাক একটি মাদ্রাসার শিক্ষক এবং উমরপুর ঘাটে তার একটি ওষুধের দোকান রয়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির সাদিকুল ইসলাম এই অভিযোগ নাকচ করে দাবি করেছেন, শাহ আলম ও আবদুর রাজ্জাক জামায়াতের কর্মী হলেও তারা এ ঘটনায় জড়িত নন। তার মতে, নির্বাচনের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাতের অন্ধকারে এ ঘটনা ঘটিয়ে জামায়াতের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এ সন্ত্রাসী ঘটনার প্রতিবাদে এলাকার মানুষ শুক্রবার মানববন্ধন করেছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, সুফিয়ানের দুই হাত ও এক পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে আরও অস্ত্রোপচার প্রয়োজন ছিল বলে জানালেও, সুফিয়ানকে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসককে না জানিয়েই ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে, আহতের মা সুফিয়া বেগমের বক্তব্য, রাজশাহী মেডিকেলের চিকিৎসকরা নিজেদের কিছু করার নেই বলে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রক্তের জোগাড় না থাকায় ঢাকায় অস্ত্রোপচার করতে পরের দিন বিকেল হয়ে গেছে।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
অপরাধ ও দুর্নীতি: বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ময়মনসিংহের যুবলীগ নেতা আটক