নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে তবাবধায়ক, ঠিকাদার, স্বাচিবসহ ৯ জনের যোগসাজসে ক্রয় বিক্রয়ে মহা সাগর পরিমাণ চুরির অভিযোগ উঠেছে। নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের (আমাউমেক) নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী খানের সরবরাহ করা এক টেবিলের দাম চার লাখ ৯০ হাজার টাকায় সরবরাহ মূল্য ধরা হলেও বাস্তবে এর আনুমানিক বাজারমূল্য ২০-২৫ হাজার টাকা।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের এক তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎসহ এ খাতে তত্বাবধায়ক সহ ঠিকাদার ও একটি সিন্ডিকেটের সাগরচুরির প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
যে কারনে নোয়াখালী দুদকের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ ডা. ফজলে এলাহী খানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দাখিল করলেও অজ্ঞাত কারণে ৪ বছরেও মামলা রুজু হয়নি।
অভিযুক্ত নোয়াখালী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও আমাউমেকের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী খানকে ওএসডি করে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রোগ্রাম ম্যানেজার-১ হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তরা হলেন হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. এএইচএম মোসলেহ উদ্দিন (৬৫), মালামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাক্টওয়েল টেকনোলজি (বিডি) লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসরিন চৌধুরী (৪৫), তার স্বামী ব্যবস্থাপনা পরিচালক জায়েদুল করিম চৌধুরী ওরফে পলাশ চৌধুরী (৪৯), মেসার্স শাহজাহান চৌধুরীর মালিক মো. শাহজাহান চৌধুরী (৬৬), সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. এ কে এম ফজলুর রহমান ওরফে ফজলুর রহমান মানিক (৪৯), আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. মহিউদ্দিন হুমায়ুন কবির চৌধুরী (৪৬), একই কলেজের আরেক সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. কামরুল হোসেন (৪৩)।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। এতে ১০টি আইসিইউ বেডসহ মোট আটটি আইটেম সরবরাহ না করেই সরকারের দুই কোটি ৪০ লাখ ৭৫ হাজার ৮০৪ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এদিকে এসব পণ্য ক্রয়ে যথাযথ নিয়মে দরপত্র আহ্বান করা হয়নি বলেও তদন্তে প্রতিয়মান হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে মালামাল ক্রয়ের জন্য ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট তিনটি দরপত্র জমা পড়ে। এগুলো হলো- অ্যাক্টওয়েল টেকনোলজি (বিডি), মেসার্স পলাশ চৌধুরী ও মেসার্স শাহজাহান চৌধুরী।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনটি দরপত্রের মধ্যে দুটি দরপত্রই নন-রেসপনসিভ ছিল এবং অ্যাক্টওয়েল টেকনোলজি (বিডি) লিমিটেডের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্বেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের সার্ভে কমিটিতে ছিলেন ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, ডা. মহিউদ্দিন হুমায়ুন কবির চৌধুরী ও ডা. সৈয়দ মো. কামরুল হোসেন। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সার্ভে কমিটিতে ছিলেন, ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, ডা. ফজলে এলাহী খান ও ডা. এ কে এম ফজলুর রহমান ওরফে ফজলুর রহমান মানিক।
২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরাসহ সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেও অ্যাক্টওয়েল টেকনোলজি (বিডি) লিমিটেডের সরবরাহ করা পণ্যের মডেল ও ব্র্যান্ড ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় পণ্য শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের উপপরিচালক (সিএমএসডি) ডা. মো. নিজাম উদ্দীন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-৪) ডা. মো. আহসানুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম, মহাখালী নিমিউ অ্যান্ড টিসির সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রনিক্স) এমএন নাশিদ রহমান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) ডা. সুরজিৎ দত্ত।
তদন্ত কর্মকর্তা নোয়াখালী দুদকের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ জানান, ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (সজেকা) ৮২৯ নম্বর স্মারকমূলে আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে ৯ জনকে অভিযুক্ত করে সরকারি টাকা আত্মসাতের মামলার সুপারিশ করে ২০২০ সালের শেষের দিকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. ফজলে এলাহী খান বলেন, দুদকের তদন্তের বিরুদ্ধে আমরা পুনঃতদন্তের আবেদন করেছি।
দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) প্রথমে ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে প্রতিবেদনের কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে বলার পর তিনি বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ এইচ এম মোসলেহ উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় এবং বাকি অভিযুক্তরা মোবাইল ফোন পরিবর্তন করে গা-ঢাকা দেওয়ায় অনেক চেষ্টা করে ও তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। এদিকে এ রিপোর্ট এর তথ্য সংগ্রহ করা হলে অপরিচিত নাম্বার থেকে এ সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করে বলা হয়, এ মামলা গায়েব হয়ে গেছে অযথা রিপোর্ট করে কেন বিপদ ডেকে আনছেন? এ বলে হুমকিও দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক: ইউক্রেনীয় বাহিনীতে পলাতক-অনুপস্থিত প্রায় ৩ লাখ
আন্তর্জাতিক: কী কারণে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘাত
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: বাংলাদেশে টিসিএল ব্র্যান্ডের আনুষ্ঠানিক যাত্রা
সারাদেশ: মোরেলগঞ্জে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম