বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ১৭৮নং মধ্য গুয়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণকাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। এর ফলে কোমলমতি শিশুরা আজও জড়াজীর্ণ টিনসেট ঝুপড়িঘরে পাঠ নিতে বাধ্য হচ্ছে। দূরাবস্থা ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের কারণে অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা। তারা অবিলম্বে নির্মাণকাজ শেষ করে নতুন ভবন হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন।
মধ্য গুয়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেড় কোটি টাকার নতুন ভবন পাঁচ বছরেও সম্পন্ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আজও ঝুপড়িঘরে মানবেতর পরিবেশে পাঠ নিচ্ছে। অভিভাবকদের অনীহায় স্কুলে উপস্থিতিও কমে যাচ্ছে
দীর্ঘসূত্রতায় থমকে আছে
শিক্ষা কার্যক্রম
সরজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৭ সালে। পরবর্তীতে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে মাঠে ও টিনসেট ঘরে পাঠদান চালিয়ে আসে শিক্ষকরা। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৫ জন। তবে অনুমোদিত চারটি পদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ও দুই সহকারী শিক্ষকসহ মোট তিনটি পদ ২০১৬ সাল থেকে শূন্য রয়েছে। ফলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহামুদা খানম এবং সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক অপূর্ব সাহা- এই দুই শিক্ষকই দীর্ঘদিন ধরে পুরো বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন।
দেড় কোটি টাকার প্রকল্প, তবু ৫ বছরে শেষ হয়নি নির্মাণকাজ
জানা যায়, প্রায় দেড় কোটি ব্যয়ে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি অত্যন্ত শ্লথ। এর ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঝুপড়ি টিনসেট কক্ষে নেই নিরাপদ বসার স্থান; রয়েছে অল্প কয়েকটি ভাঙাচোরা বেঞ্চ। বর্ষা মৌসুমে পানি জমে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়েই ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। আর প্রচণ্ড রোদে সেই টিনঘর রূপ নেয় দহনকুণ্ডে।
দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চম শ্রেণীর ৭ জনের মধ্যে উপস্থিত মাত্র ৩ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ৪ জন এবং তৃতীয় শ্রেণীতে ৩ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। তারা জানায়, ‘এইভাবে আর কত দিন কষ্ট করে ক্লাস করতে হবে? আমরা চাই নতুন ভবনে গিয়ে ক্লাস করতে।’
শিক্ষকদের আর্তি: উপস্থিতি কমছে, পরিবেশ অমানবিক
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহামুদা খানম বলেন, ‘৪-৫ বছর ধরে এমন ঝুপড়িঘরে ক্লাস নিতে হচ্ছে। পরিবেশ এতটাই খারাপ যে অভিভাবকরা আর সন্তানদের পাঠাতে চান না। ফলে উপস্থিতি দিনে দিনে কমছে। বিষয়টি বহুবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হলেও সমাধান হয়নি।’
প্রকৌশল বিভাগ বলছে,
হস্তান্তর শিগগিরই
উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন ভবনের কাজ প্রায় শেষের পথে। মামলাজনিত জটিলতা এবং দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ঠিকাদারকে মালামাল আনতে অত্যন্ত ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে। এ কারণেই কাজ দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে। আগামী ২-১ সপ্তাহের মধ্যেই ভবনটি হস্তান্তর করা হবে।’
শিক্ষা অফিসারের বক্তব্য
উপজেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার মো. শেফা ইনুর আরেফীন বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি, তাই এখনও বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করতে পারিনি। দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’