alt

আওয়ামী লীগ নেতা ও বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বন উজাড়ের অভিযোগ

শামসুল ইসলাম সহিদ, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) : সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) : বন বিভাগের জমি দখল করে এভাবেই গড়ে উঠছে বাড়ি-সংবাদ

বনের জায়গা দখল করে অবাদে নির্মিত হচ্ছে ঘর বাড়ি। এতে বনের জায়গা কমে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এই চিত্র ফুটে উঠেছে। বন বিভাগের জায়গায় অবাধে ঘর বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা এবং বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

এলাকাবাসী জানান, ইউনিয়নটির বিভিন্ন গ্রামে নতুন ঘর বাড়ি নির্মাণ হলেও চিতেশ্বরী, টেকিপাড়া, আজগানা, হাটখোলা, ভেলকার চালা, জয়নারসিট ও বেলতৈল মধ্যপাড়া এলাকায় সংখ্যায় বেশি রয়েছে। গত প্রায় আট বছরে ইউনিয়নটিতে নতুন করে ২ শতাধিক বাড়ি নির্মিত হয়েছে। এদের মধ্যে স্থানীয়রা ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার আসা লোকজনও রয়েছেন। যাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মীর আব্দুল লতিফ মাহমুদ বন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে যোগসাজশে ঘর তুলে দিয়েছেন। সংখ্যায় কম হলেও একই ধরনের অভিযোগ আজগানা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সিকদার ও তার ভাই সাহাদত সিকদারের বিরুদ্ধেও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আজগানা ইউনিয়নের আজগানা, হাটুভাঙা, কুড়িপাড়া, বেলতৈল ও চিতেশ্বরী এলাকায় বন বিভাগের ২ হাজার ২৯৭ একর জমি রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পূর্বে লোকজন ঘর তুললেও তা আটিয়া অধ্যাদেশের আওতায় রয়েছে। তবে গত কয়েকবছর ধরে ঘর তুলার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, ইউনিয়নটিতে বন বিভাগের প্রায় ৬১৭ একর জমি জবর দখলে রয়েছে। যেখানে আট বছরে নতুন করে ২ শতাধিক বাড়ি করা হয়েছে। এগুলোসহ ইউনিয়নটিতে প্রায় ৪ হাজার বাড়ি জবরদখলকৃত জায়গায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চিতেশ্বরী এলাকায় আধাপাকা দেয়ালের ঘরসহ গত আট বছরে কমপক্ষে ২০টি বাড়ি নির্মিত হয়েছে। সেখানে নতুন চারটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সাহেবের একলা গ্রামের ফিরুজা বেগম জানান, তিনি স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি করেন। তিন বছর আগে সেখানে বাড়ি করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি জায়গায় ফরেস্ট গার্ড আইস্যা ঘর তুইল্যা দিছে।’

রৌমারীর ডাঠিয়ারচর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নুরজাহান বেগম জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় তারা সেখানে বাড়ি করেন। বিয়ে করানোর পর ছেলের জন্য নতুন টিনের ঘর দিচ্ছেন।

টেকিপাড়া এলাকায় আধাপাকা দেয়ালের ঘর নির্মাণ করেছেন রৌমারী উপজেলার নটাকান্দি গ্রামের এরশাদুল ইসলামের স্ত্রী ছালমা আক্তার জানান, বন বিভাগের জায়গায় অনেক ঘর আছে। তারাও ঘর তুলেছেন।

উপজেলার রানাশাল গ্রামের প্রয়াত কদ্দুছ সিকদারের স্ত্রী কামরুন্নাহার জানান, তিনি চারবছর আগে বনের জায়গায় বাড়ি করেছেন। এ কাজে তিনি তার চাচাত ভাইয়ের কাছে টাকা দিয়েছেন। তবে চাচাত ভাই কার কাছে টাকা দিয়েছেন তা জানাননি। তিনি বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান আর মাতাব্বরেরা সহযোগিতা করে বাড়ি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। নতুন করে যারা ঘর তুলছেন তাদের বেশিরভাগই উত্তরাঞ্চলের।

গ্রাম পুলিশ খোরশেদ আলম জানান, পুরো ইউনিয়নটির বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ঘর তুলা হয়েছে। এরমধ্যে আজগানাতে বেশি পরিমান নতুন ঘর রয়েছে।

আজগানা ও হাটখোলা এলাকায় দেখা গেছে, পাহাড়ের ওপরে ও ঢালে টিন ও ইটের দেয়ালে নির্মিত ঘর।

রফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুফিয়া বেগম জানান, বন বিভাগের জায়গায় গত আট বছরে ওই এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি বাড়ি হয়েছে। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মীর আব্দুল লতিফ মাহমুদ সহযোগিতা করেছেন। কি কারণে ও কি ধরনের সহযোগিতা করেছেন তা জানতে চাইলে তিনি নীরব থাকেন।

শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আছমা বেগম জানান, ঘর তুলতে ফরেস্ট গার্ডেরাসহ অনেকেই টাকা নিয়েছেন। কি পরিমাণ টাকা নিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘মোটা টাকা নিছে।’

বেলতৈল মধ্যপাড়া এলাকায় গত এক বছরে নতুন নির্মিত চারটিসহ অন্তত ১৫টি বাড়ি রয়েছে। নূতন ঘর দিচ্ছেন কুড়িগ্রামের রৌমারি উপজেলার সাহেবের একলা গ্রামের জবেদ আলী। তার স্ত্রী রহিমা বেগম জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই সাহাদত সিকদার তাদের সাহায্য করছেন।

মুঠোফোনে সাহাদত সিকদার বলেন, ‘আমি কোন অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত নই। ফরেস্টার সিরাজুল ইসলামের সময় বিভিন্নস্থানে বনের জায়গায় ঘর উঠেছে।’ তবে সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মীর আব্দুল লতিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি এবং বন বিভাগের কাউকে আমার হাত দিয়ে টাকা দেইনি। বনের জায়গায় ঘর তুলার কারণে নিরীহ লোকজনের নামে কিছু মামলা হয়েছিল। আমি তাদের জামিনে ছাড়িয়ে আনতে সহযোগিতা করেছি। এলাকার কিছু খারাপ মানুষ আছে যারা নেশাগ্রস্ত, মাদক ব্যবসা করে তারা আমার নামে কুৎসা রটিয়েছে।’

আজগানা ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম সিকদারের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন আমি সব সময় স্পষ্ট কথা বলে থাকি। বন বিভাগের কারও সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এক শ্রেণি দালাল, যারা বন বিভাগের দালালি করে তারা আমার সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলতে পারে।

হাটুভাঙা বিট কার্যালয়ের বন বিভাগের ফরেস্টার, জাহিদ হোসেন বলেন, বন বিভাগের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ বেআইনী। তিনি এক বছর ধরে এখানে কাজ করছেন। এই সময়ে নতুন করে কেউ ঘর তুলেনি দাবি করে বলেন, ঘর তুলার চেষ্টার অভিযোগ তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে অন্তত ১০টি মামলা করেছেন। এছাড়া তার কার্যালয়ের কেউ কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে উল্লেখ্য করেন।

ছবি

উলিপুরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ছবি

কক্সবাজারে তিন সার্ফারকে ধর্ষণের অভিযোগ

ছবি

শৈলকুপায় চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে মানববন্ধন

ছবি

শেরপুরে ভূমিহীনদের মানববন্ধন কর্মসুচি ও স্মারকলিপি প্রদান

ছবি

চকরিয়া ৫ বছর যাবত বন্ধ বদরখালী পুলিশ ফাঁড়ি বাড়ছে বিভিন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড

ছবি

তিতাসের গ্রামীণ সড়ক সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা-জলে বেহাল

ছবি

দুমকিতে চার বছরেও শুরু হয়নি বাহেরচর-নলুয়া সেতু নির্মাণ কাজ

ছবি

জয়পুরহাটে ওষুধ সরবরাহ হলেও সংকট কাটেনি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে

ছবি

সাংবাদিককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি

ছবি

তারাগঞ্জে ফ্রি গরু ছাগলের চিকিৎসা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

ছবি

মহেশপুরে বিজিবির পৃথক অভিযানে ভারতীয় মদসহ আটক ৬

ছবি

কালীগঞ্জে শখের মাছ শিকারিদের উৎসব

ছবি

কাশিয়ানীতে সড়কে বাস উল্টে নিহত ১, আহত ২৫

ছবি

সুনামগঞ্জে বিশ্ব সাদাছড়ি দিবস পালিত

ছবি

মানিকগঞ্জে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি

ছবি

ফরিদপুরে মা ইলিশ আহরণের দায়ে ২২ জেলের কারাদণ্ড

ছবি

তালায় ওএমএস’র আটা কিনতে দরিদ্র মানুষের দীর্ঘ লাইন

ছবি

পাঁচবিবিতে পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা আলু চাষিরা

ছবি

ব্রহ্মপুত্রের স্রোতে ভেসে আসা কাঠে বদলে যাচ্ছে নদীতীরের মানুষজনের জীবিকা

ছবি

লালন তিরোধান দিবস অনুষ্ঠানের সংবাদ বর্জন করবেন সাংবাদিকরা

ছবি

জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধে হামলা-ভাংচুর, আহত ১

ছবি

পলাশে শীতলক্ষ্যায় মোবাইল কোর্ট ২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ

ছবি

বেগমগঞ্জে পিকআপ ভ্যানের চাপায় নিহত ১, আহত ৩

ছবি

বন্যা ছাড়াই ছয় মাস জলাবদ্ধতা ভোগান্তিতে কুমারভোগবাসী

ছবি

মাধবদীর শিল্পাঞ্চল চারটি রাস্তা বেহাল

ছবি

প্রস্তাবিত ফটিকছড়ি উত্তর উপজেলায় অন্তর্ভুক্ত না করার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

রায়পুরায় তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে বিএনপির মতবিনিময় সভা, জনসমাবেশে পরিণত

ছবি

পণ্য ও সেবারমতো সমাজের মান নিশ্চিত হওয়াও জরুরী -বিভাগীয় কমিশনার

ছবি

আক্কেলপুরে নিম্নমানের বীজ আলুর বিক্রির অভিযোগ

ছবি

ঝালকাঠিতে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই, বাড়ছে মানুষের জীবনের স্বাস্থ্যঝুঁকি

ছবি

মোরেলগঞ্জে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসে বর্ণাঢ্য র‌্যালী, প্রদশর্নী

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে ১৪ হাজার জমির দলিল বিনষ্ট করতে যাচ্ছে সরকার

ছবি

নাসিরনগরে নদীতে গোসল করতে গিয়ে এক ছাত্রীর মৃত্যু

ছবি

লাকসামে ঝুঁকি পূর্ণ রেললাইন বাঁশের খুঁটি আর মাটির বস্তা দিয়ে মেরামত

ছবি

কেউ কথা শোনেনি: গ্রামবাসীর উদ্যোগেই গাজীখালি নদীর উপর হচ্ছে সেতু

ছবি

মানিকগঞ্জে হামলায় যুবদল নেতা আহত, বিএনপি নেতার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

tab

আওয়ামী লীগ নেতা ও বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বন উজাড়ের অভিযোগ

শামসুল ইসলাম সহিদ, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) : বন বিভাগের জমি দখল করে এভাবেই গড়ে উঠছে বাড়ি-সংবাদ

সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯

বনের জায়গা দখল করে অবাদে নির্মিত হচ্ছে ঘর বাড়ি। এতে বনের জায়গা কমে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এই চিত্র ফুটে উঠেছে। বন বিভাগের জায়গায় অবাধে ঘর বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা এবং বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

এলাকাবাসী জানান, ইউনিয়নটির বিভিন্ন গ্রামে নতুন ঘর বাড়ি নির্মাণ হলেও চিতেশ্বরী, টেকিপাড়া, আজগানা, হাটখোলা, ভেলকার চালা, জয়নারসিট ও বেলতৈল মধ্যপাড়া এলাকায় সংখ্যায় বেশি রয়েছে। গত প্রায় আট বছরে ইউনিয়নটিতে নতুন করে ২ শতাধিক বাড়ি নির্মিত হয়েছে। এদের মধ্যে স্থানীয়রা ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার আসা লোকজনও রয়েছেন। যাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মীর আব্দুল লতিফ মাহমুদ বন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে যোগসাজশে ঘর তুলে দিয়েছেন। সংখ্যায় কম হলেও একই ধরনের অভিযোগ আজগানা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সিকদার ও তার ভাই সাহাদত সিকদারের বিরুদ্ধেও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আজগানা ইউনিয়নের আজগানা, হাটুভাঙা, কুড়িপাড়া, বেলতৈল ও চিতেশ্বরী এলাকায় বন বিভাগের ২ হাজার ২৯৭ একর জমি রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পূর্বে লোকজন ঘর তুললেও তা আটিয়া অধ্যাদেশের আওতায় রয়েছে। তবে গত কয়েকবছর ধরে ঘর তুলার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, ইউনিয়নটিতে বন বিভাগের প্রায় ৬১৭ একর জমি জবর দখলে রয়েছে। যেখানে আট বছরে নতুন করে ২ শতাধিক বাড়ি করা হয়েছে। এগুলোসহ ইউনিয়নটিতে প্রায় ৪ হাজার বাড়ি জবরদখলকৃত জায়গায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চিতেশ্বরী এলাকায় আধাপাকা দেয়ালের ঘরসহ গত আট বছরে কমপক্ষে ২০টি বাড়ি নির্মিত হয়েছে। সেখানে নতুন চারটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সাহেবের একলা গ্রামের ফিরুজা বেগম জানান, তিনি স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি করেন। তিন বছর আগে সেখানে বাড়ি করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি জায়গায় ফরেস্ট গার্ড আইস্যা ঘর তুইল্যা দিছে।’

রৌমারীর ডাঠিয়ারচর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নুরজাহান বেগম জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় তারা সেখানে বাড়ি করেন। বিয়ে করানোর পর ছেলের জন্য নতুন টিনের ঘর দিচ্ছেন।

টেকিপাড়া এলাকায় আধাপাকা দেয়ালের ঘর নির্মাণ করেছেন রৌমারী উপজেলার নটাকান্দি গ্রামের এরশাদুল ইসলামের স্ত্রী ছালমা আক্তার জানান, বন বিভাগের জায়গায় অনেক ঘর আছে। তারাও ঘর তুলেছেন।

উপজেলার রানাশাল গ্রামের প্রয়াত কদ্দুছ সিকদারের স্ত্রী কামরুন্নাহার জানান, তিনি চারবছর আগে বনের জায়গায় বাড়ি করেছেন। এ কাজে তিনি তার চাচাত ভাইয়ের কাছে টাকা দিয়েছেন। তবে চাচাত ভাই কার কাছে টাকা দিয়েছেন তা জানাননি। তিনি বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান আর মাতাব্বরেরা সহযোগিতা করে বাড়ি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। নতুন করে যারা ঘর তুলছেন তাদের বেশিরভাগই উত্তরাঞ্চলের।

গ্রাম পুলিশ খোরশেদ আলম জানান, পুরো ইউনিয়নটির বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ঘর তুলা হয়েছে। এরমধ্যে আজগানাতে বেশি পরিমান নতুন ঘর রয়েছে।

আজগানা ও হাটখোলা এলাকায় দেখা গেছে, পাহাড়ের ওপরে ও ঢালে টিন ও ইটের দেয়ালে নির্মিত ঘর।

রফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুফিয়া বেগম জানান, বন বিভাগের জায়গায় গত আট বছরে ওই এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি বাড়ি হয়েছে। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মীর আব্দুল লতিফ মাহমুদ সহযোগিতা করেছেন। কি কারণে ও কি ধরনের সহযোগিতা করেছেন তা জানতে চাইলে তিনি নীরব থাকেন।

শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আছমা বেগম জানান, ঘর তুলতে ফরেস্ট গার্ডেরাসহ অনেকেই টাকা নিয়েছেন। কি পরিমাণ টাকা নিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘মোটা টাকা নিছে।’

বেলতৈল মধ্যপাড়া এলাকায় গত এক বছরে নতুন নির্মিত চারটিসহ অন্তত ১৫টি বাড়ি রয়েছে। নূতন ঘর দিচ্ছেন কুড়িগ্রামের রৌমারি উপজেলার সাহেবের একলা গ্রামের জবেদ আলী। তার স্ত্রী রহিমা বেগম জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই সাহাদত সিকদার তাদের সাহায্য করছেন।

মুঠোফোনে সাহাদত সিকদার বলেন, ‘আমি কোন অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত নই। ফরেস্টার সিরাজুল ইসলামের সময় বিভিন্নস্থানে বনের জায়গায় ঘর উঠেছে।’ তবে সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মীর আব্দুল লতিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি এবং বন বিভাগের কাউকে আমার হাত দিয়ে টাকা দেইনি। বনের জায়গায় ঘর তুলার কারণে নিরীহ লোকজনের নামে কিছু মামলা হয়েছিল। আমি তাদের জামিনে ছাড়িয়ে আনতে সহযোগিতা করেছি। এলাকার কিছু খারাপ মানুষ আছে যারা নেশাগ্রস্ত, মাদক ব্যবসা করে তারা আমার নামে কুৎসা রটিয়েছে।’

আজগানা ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম সিকদারের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন আমি সব সময় স্পষ্ট কথা বলে থাকি। বন বিভাগের কারও সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এক শ্রেণি দালাল, যারা বন বিভাগের দালালি করে তারা আমার সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলতে পারে।

হাটুভাঙা বিট কার্যালয়ের বন বিভাগের ফরেস্টার, জাহিদ হোসেন বলেন, বন বিভাগের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ বেআইনী। তিনি এক বছর ধরে এখানে কাজ করছেন। এই সময়ে নতুন করে কেউ ঘর তুলেনি দাবি করে বলেন, ঘর তুলার চেষ্টার অভিযোগ তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে অন্তত ১০টি মামলা করেছেন। এছাড়া তার কার্যালয়ের কেউ কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে উল্লেখ্য করেন।

back to top