বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়ায় এলাকার আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে হামলা ও সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত এবং ১০-১২টি ঘর ও দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার পর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন থানা পুলিশের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সাবেক উলানিয়া ইউনিয়নকে ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ উলানিয়া নামে পৃথক দুটি ইউনিয়ন করা হয়। আর এ বিভক্তিকরণের বিষয়ে দায়েরকৃত হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নিষ্পপ্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর নির্বাচন স্থগিত ঘোষণার পর পক্ষে বিপক্ষে স্থানীয় একাধিক পক্ষের সৃষ্টি হয় এবং এদের মধ্যে মাঝে মাঝেই ছোটখাট সংঘর্ষ চলে আসছিল।

তারই ধারাবাহিকতায় রোববার ভোররাত ৪টার দিকে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়ার সুলতানী গ্রামে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লিটন মোবাইলে জানান, আনুমানিক রাত ৪টার দিকে কয়েকশ’ লোক একত্রিত হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পূর্ব সুলতানী ও সুলতানী গ্রামে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা ওই এলাকার দোকান ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। ওই এলাকার বাসিন্দারা আত্মরক্ষার্থে প্রতিরোধ করতে গেলে দু’পক্ষের এ ঘটনা জানতে পেরে আশপাশের গ্রামের লোকজন সুলতানী গ্রামে আসে। সে সময় হামলাকারীদের আঘাতে পার্শ্ববর্তী আশা গ্রামের বাসিন্দা মিলন চৌধুরীর চাচাত ভাই শাহিদ চৌধুরী (৩৫) ও রুমা বেগমের সমর্থক সাইফুল ইসলাম সরদার (৩০) নিহত হন এবং কমপক্ষে ১০-১২ জন আহত হয়। হামলাকারীরা উলানিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা জানিয়ে চেয়ারম্যান আরও জানান, সম্প্রতি স্থগিত হওয়া উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দাবি, হামলাকারীরা চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলন চৌধুরীর লোক। নিহত সাইফুল সর্দার আশা গ্রামের আ. জব্বার সর্দারের ছেলে ও দক্ষিণ উলানিয়ার চেয়ারম্যান প্রার্থী রুমা বেগমের সমর্থক বলে তিনি জানান।

তবে সাইফুলের স্ত্রী খাদিজা বেগম সাংবাদিকদের জানান, উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারেক সরদার গ্রুপের সঙ্গে মিলন চৌধুরী, মিজান মোল্লা, নোমান মোল্লাদের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ১০ এপ্রিল শনিবার গভীর রাতেও কালীগঞ্জ বাজার ও আশপাশ এলাকার বাড়িঘরে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সাইফুল ইসলাম নিহত এবং হাবু সরদার, জহিরুল ইসলামসহ ১০/১২ জন আহত হন। এ সময় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় অহিদ ও হাসান আলী নামের দু’জনকে আটকও করে স্থানীয়রা।

মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম জানান, সংঘর্ষ ও হতাহতের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।