alt

লকডাউনের চতুর্থ দিনও ঢিলেঢালা

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে চলছে ৭ দিনের সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন। বিগত কয়েকদিন রাস্তায় মানুষ খুব একটা চলাচল না করলেও বিধিনিষেধের চতুর্থ দিনে শনিবার (১৭ এপ্রিল) রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ। খুব বেশি মানুষের জটলা দেখা না গেলেও পাড়া-মহল্লায় অবাধে চলছে যানবাহন। পাইকারি বাজার, কাঁচাবাজারসহ পাড়া-মহল্লায় সব ধরনের দোকান-পাটও খোলা। অবাধে চলাচল করছেন মানুষ। দুপুর গড়ালেই অলি-গলিগুলো হয়ে উঠছে ভরা হাটবাজার। শুধু মানুষ আর মানুষ। গত কয়েকদিনের মতো পুলিশকেও আর আগের মতো সক্রিয় দেখা যায়নি।

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন ও অফিসও। তবে নির্দেশনা উপেক্ষা করে কারণে-অকারণে মানুষ শহরের রাস্তায় বের হচ্ছেন। অনেকে আবার পুলিশি ঝামেলা এড়াতে কেনাকাটা না করলেও বাজারের ব্যাগ সঙ্গে রাখছেন। মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই ভিড় করে রাস্তায় আড্ডা ও ঘোরাফেরা করছেন মানুষ। তাছাড়া সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে সব গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জরুরি প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হয়েছেন তারা পড়েছেন ভোগান্তিতে। তাছাড়া দ্বিতীয় দফায় ‘লকডাউন’ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুলিশকে রীতিমতো বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এমনকি অযথাই ঘরের বাইরে বেরোনো মানুষ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় জনগণ নিজে থেকে সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে; আর সেটি সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে না বলে জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। মিরপুর, শেওড়াপাড়া, পাইকপাড়া, ৬০ ফিট এলাকার বিভিন্ন গলি ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। যে যার মতো অবাধে চলাফেরা করছেন। মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব নেই। গলিগুলোতে অবাধে চলাচল করছেন মানুষজন। জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন পাড়ার তরুণ, যুবক ও বয়স্করাও।

রাসেল আহমেদ, আহমেদ শফিক, মিজানুর ও সবুজ মিয়া ৬০ ফিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তারা জানান, সারাদিন বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না বলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ক্ষণিকের জন্য বাইরে বের হয়েছেন। এখন কলেজও বন্ধ, পড়াশোনার চাপ নেই। বিকেল পর্যন্ত সবাই একসঙ্গে ঘুরবেন। সন্ধ্যায় ইফতারের আগে বাসায় ফিরবেন।

মুখে মাস্ক না পরে রাস্তায় আনারস বিক্রি করছিলেন বাদল মিয়া। তিনি বলেন, ‘মাস্ক পইরা কী হইব? করোনা হওয়ার থাকলে এমনিতেই হইব। আল্লাহ যেদিন নিবে, হেইদিন চইলা যাইতে হইব। এসব সামাজিক দূরত্ব দিয়া কিছু হইব না।’

নজরুল ইসলাম মাস্ক পরেই বের হয়েছেন। তবে তার সংশয় তিনি একা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী করবেন? তিনি বলেন, ‘আশপাশে কেউই তো মানছেন না। সবাই মিলে সচেতন না হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে না। কাজে বের হয়েছি কিন্তু রাস্তায় দেখি মানুষ আর মানুষ। একটা জিনিস কিনতে গেলে আরও তিনজন এসে গায়ে পড়ে। এ অবস্থায় কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলব?

থুতনির নিচে মাস্ক পরা ফলবিক্রেতা আফজাল বলেন, ‘মানুষকে ভিড় করতে নিষেধ করলেও শোনে না। বিশেষ করে বিকেল বেলায় প্রচন্ড ভিড় বেড়ে যায়। মানুষের মাথা মানুষ খায়- এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। কারণ ইফতারের আগ মুহূর্তে সবাই একযোগে কেনাকাটা করতে বের হন। সবাই নিজের জায়গা থেকে সচেতন না হলে কেউ একা করোনা ঠেকাতে পারবে না। যতই সরকার লকডাউন দিক না কেন।’

এদিকে, গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফলে যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এখন রিকশা ও খেপের মোটরসাইকেল। অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ও রাস্তায় মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে রিকশার। এতে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রীদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন। অন্যদিকে রিকশাচালকরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে যাত্রী আনা-নেয়া করায় কিছুটা বেশি ভাড়া চেয়ে নিচ্ছেন তারা।

রিকশার পাশাপাশি আজ সড়কে দেখা গেছে, খেপের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করছেন মোটরসাইকেল চালকরা। সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বন্ধ থাকলেও খেপের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে কিন্তু তুলনামূলক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে।

খেপে যাত্রী নিতে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় অপেক্ষা করছিলেন আমান উল্লাহ নামের একজন। তিনি বলেন, আমি রাইড শেয়ারিং করেই সংসার চালাই। লকডাউনে কীভাবে বাসায় থাকি? প্রথম তিনদিন বের হইনি, আজ বের হলাম। যাত্রী বহন করছি। চেকিং দেখলে দূরেই যাত্রী নামিয়ে দেই। যাত্রীকে বলি আপনি এইটুকু হেঁটে যান, চেকিং পার হয়ে ওঠেন। এভাবেই চুপেচাপে চলছি। আমার পরিচিত অনেকেই এভাবে যাত্রী পরিবহন করছে আজ। যদিও যাত্রীর তুলনায় মোটরসাইকেল কম থাকায় অনেকেই ভাড়া কিছুটা বেশি নিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কেউ বাজারে যাচ্ছেন, কেউ হাসপাতালে, কেউ আত্মীয়কে দেখতে, কেউ বন্ধুর বাসায় আবার কেউ ঘুরতে বের হয়েছেন। তবে ঘুরতে বের হওয়া বেশ কয়েকজনকে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ। এদের বেশিরভাগেরই মুভমেন্ট পাস ছিল না।’

অলি-গলিতে মানুষের জটলা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাঁচাবাজারের জিনিসপত্র বিক্রির নির্দেশনা আছে। এ সময় কিছুটা মানুষের উপস্থিতি দেখা যেতে পারে। তবুও যাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। সবসময় মাইকিংসহ টহল দিচ্ছে।’

উল্লেখ্য, হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলতি বছরের প্রথম লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। সেই সাতদিনের লকডাউনে জনগণের উদাসীনতা দেখেই ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।

ছবি

সরকারি হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশে নতুন নিয়ম

ছবি

মাতামুহুরী নদী ভরাট ও বিষ দিয়ে নিধনকাণ্ডে বিপন্ন হচ্ছে দেশীয় মাছ

ছবি

‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বলে হেনস্থা, পশ্চিমবঙ্গের অনেক মানুষ বিপাকে

ছবি

এবার আগারগাঁওয়ে ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের মিছিল, আটক দুই

ছবি

১১ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ‘৮৬ হাজারের বেশি’

ছবি

পীরগঞ্জ সরকারী আব্দুর রউফ কলেজে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তোলপাড়

ছবি

দুমকি প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল, সম্পাদক সাইদুর

ছবি

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি প্রত্যাহার

ছবি

ভালুকায় দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১৫

ছবি

বোয়ালখালীতে গৃহবধূর মৃত্যু

ছবি

ভুটভুটির ধাক্কায় সাইকেল আরোহী নিহত

ছবি

ডিমলা থানা পুলিশের কার্যক্রম চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে

ছবি

জয়পুরহাটে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা

ছবি

চাঁদপুরে জেলা প্রশাসক কাপ সাঁতার প্রতিযোগিতা

ছবি

বাল্কহেড চলাচলে ধলেশ্বরীর দুই তীরে ভাঙন

ছবি

শেরপুরে অটোরিকশা চালক আবু বক্কর হত্যার রহস্য উন্মোচন

ছবি

রায়গঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের কর্মবিরতি, গ্রাহকদের ভোগান্তি

ছবি

রাজবাড়ীতে শুরু হয়েছে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল অলিম্পিয়াড সিজন ২

ছবি

ঝিনাইগাতীতে কৃষকের কাকরুল গাছ কেটে ফেলল প্রতিপক্ষরা

ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনায় আওয়ামীলীগের ঝটিকা মিছিল

ছবি

রাণীনগরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ

ছবি

শেরপুরে চাঁদা না দেওয়ায় ইমামকে হত্যাচেষ্টা, বিচারের দাবীতে মানববন্ধন

ছবি

শেরপুরে দুর্নীতির অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে রাতের আঁধারে কৃষকের আখ কর্তন ও চুরি

ছবি

সুন্দরগঞ্জে সেতু আছে সংযোগ সড়ক নেই

ছবি

কেশবপুরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পলি অপসারণ শুরু

ছবি

বাঁশের সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার

ছবি

কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে ‘সরকারবিরোধী’ মিছিল: ছাত্রলীগের দুই কর্মীসহ চারজন গ্রেপ্তার

ছবি

নিহত নারীর মাথা উদ্ধার

ছবি

৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করলেন বিএনপি নেতা শাহাফুজ আলম

ছবি

শারদীয় দুর্গোৎসব মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ

ছবি

ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় আলোকিত মওলানা ভাসানী সেতু

ছবি

দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে

ছবি

মোরেলগঞ্জে রাস্তার বেহালদশা ৮ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

ভৈরবে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে দুই পরিবারের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ছবি

সুনামগঞ্জ কার মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ নিহত ২

tab

news » bangladesh

লকডাউনের চতুর্থ দিনও ঢিলেঢালা

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে চলছে ৭ দিনের সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন। বিগত কয়েকদিন রাস্তায় মানুষ খুব একটা চলাচল না করলেও বিধিনিষেধের চতুর্থ দিনে শনিবার (১৭ এপ্রিল) রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ। খুব বেশি মানুষের জটলা দেখা না গেলেও পাড়া-মহল্লায় অবাধে চলছে যানবাহন। পাইকারি বাজার, কাঁচাবাজারসহ পাড়া-মহল্লায় সব ধরনের দোকান-পাটও খোলা। অবাধে চলাচল করছেন মানুষ। দুপুর গড়ালেই অলি-গলিগুলো হয়ে উঠছে ভরা হাটবাজার। শুধু মানুষ আর মানুষ। গত কয়েকদিনের মতো পুলিশকেও আর আগের মতো সক্রিয় দেখা যায়নি।

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন ও অফিসও। তবে নির্দেশনা উপেক্ষা করে কারণে-অকারণে মানুষ শহরের রাস্তায় বের হচ্ছেন। অনেকে আবার পুলিশি ঝামেলা এড়াতে কেনাকাটা না করলেও বাজারের ব্যাগ সঙ্গে রাখছেন। মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই ভিড় করে রাস্তায় আড্ডা ও ঘোরাফেরা করছেন মানুষ। তাছাড়া সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে সব গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জরুরি প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হয়েছেন তারা পড়েছেন ভোগান্তিতে। তাছাড়া দ্বিতীয় দফায় ‘লকডাউন’ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুলিশকে রীতিমতো বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এমনকি অযথাই ঘরের বাইরে বেরোনো মানুষ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় জনগণ নিজে থেকে সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে; আর সেটি সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে না বলে জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। মিরপুর, শেওড়াপাড়া, পাইকপাড়া, ৬০ ফিট এলাকার বিভিন্ন গলি ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। যে যার মতো অবাধে চলাফেরা করছেন। মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব নেই। গলিগুলোতে অবাধে চলাচল করছেন মানুষজন। জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন পাড়ার তরুণ, যুবক ও বয়স্করাও।

রাসেল আহমেদ, আহমেদ শফিক, মিজানুর ও সবুজ মিয়া ৬০ ফিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তারা জানান, সারাদিন বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না বলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ক্ষণিকের জন্য বাইরে বের হয়েছেন। এখন কলেজও বন্ধ, পড়াশোনার চাপ নেই। বিকেল পর্যন্ত সবাই একসঙ্গে ঘুরবেন। সন্ধ্যায় ইফতারের আগে বাসায় ফিরবেন।

মুখে মাস্ক না পরে রাস্তায় আনারস বিক্রি করছিলেন বাদল মিয়া। তিনি বলেন, ‘মাস্ক পইরা কী হইব? করোনা হওয়ার থাকলে এমনিতেই হইব। আল্লাহ যেদিন নিবে, হেইদিন চইলা যাইতে হইব। এসব সামাজিক দূরত্ব দিয়া কিছু হইব না।’

নজরুল ইসলাম মাস্ক পরেই বের হয়েছেন। তবে তার সংশয় তিনি একা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী করবেন? তিনি বলেন, ‘আশপাশে কেউই তো মানছেন না। সবাই মিলে সচেতন না হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে না। কাজে বের হয়েছি কিন্তু রাস্তায় দেখি মানুষ আর মানুষ। একটা জিনিস কিনতে গেলে আরও তিনজন এসে গায়ে পড়ে। এ অবস্থায় কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলব?

থুতনির নিচে মাস্ক পরা ফলবিক্রেতা আফজাল বলেন, ‘মানুষকে ভিড় করতে নিষেধ করলেও শোনে না। বিশেষ করে বিকেল বেলায় প্রচন্ড ভিড় বেড়ে যায়। মানুষের মাথা মানুষ খায়- এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। কারণ ইফতারের আগ মুহূর্তে সবাই একযোগে কেনাকাটা করতে বের হন। সবাই নিজের জায়গা থেকে সচেতন না হলে কেউ একা করোনা ঠেকাতে পারবে না। যতই সরকার লকডাউন দিক না কেন।’

এদিকে, গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফলে যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এখন রিকশা ও খেপের মোটরসাইকেল। অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ও রাস্তায় মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে রিকশার। এতে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রীদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন। অন্যদিকে রিকশাচালকরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে যাত্রী আনা-নেয়া করায় কিছুটা বেশি ভাড়া চেয়ে নিচ্ছেন তারা।

রিকশার পাশাপাশি আজ সড়কে দেখা গেছে, খেপের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করছেন মোটরসাইকেল চালকরা। সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বন্ধ থাকলেও খেপের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে কিন্তু তুলনামূলক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে।

খেপে যাত্রী নিতে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় অপেক্ষা করছিলেন আমান উল্লাহ নামের একজন। তিনি বলেন, আমি রাইড শেয়ারিং করেই সংসার চালাই। লকডাউনে কীভাবে বাসায় থাকি? প্রথম তিনদিন বের হইনি, আজ বের হলাম। যাত্রী বহন করছি। চেকিং দেখলে দূরেই যাত্রী নামিয়ে দেই। যাত্রীকে বলি আপনি এইটুকু হেঁটে যান, চেকিং পার হয়ে ওঠেন। এভাবেই চুপেচাপে চলছি। আমার পরিচিত অনেকেই এভাবে যাত্রী পরিবহন করছে আজ। যদিও যাত্রীর তুলনায় মোটরসাইকেল কম থাকায় অনেকেই ভাড়া কিছুটা বেশি নিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কেউ বাজারে যাচ্ছেন, কেউ হাসপাতালে, কেউ আত্মীয়কে দেখতে, কেউ বন্ধুর বাসায় আবার কেউ ঘুরতে বের হয়েছেন। তবে ঘুরতে বের হওয়া বেশ কয়েকজনকে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ। এদের বেশিরভাগেরই মুভমেন্ট পাস ছিল না।’

অলি-গলিতে মানুষের জটলা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাঁচাবাজারের জিনিসপত্র বিক্রির নির্দেশনা আছে। এ সময় কিছুটা মানুষের উপস্থিতি দেখা যেতে পারে। তবুও যাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। সবসময় মাইকিংসহ টহল দিচ্ছে।’

উল্লেখ্য, হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলতি বছরের প্রথম লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। সেই সাতদিনের লকডাউনে জনগণের উদাসীনতা দেখেই ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।

back to top