alt

লকডাউন আরও কঠোর করে এক সপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধের) মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবার (১৯ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিবদের সভায় এই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে, প্রথম দিকে কড়াকড়ি থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ ষষ্ঠ দিনে সোমবার ঢাকার রাস্তা-ঘাটে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল আরও বেশি ছিল।

সোমবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকার সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানোর সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা করছে।

অন্যদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সাইন্টিফিক্যালি তো ১৪ বা ১৫ দিন লকডাউন না হলে সংক্রমণের চেইনটা পুরোপুরি ভাঙা সম্ভব হয় না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আগের শর্ত মেনে লকডাউন কন্টিনিউ (অব্যাহত) করবে। এ সময়ে আগের সপ্তাহের মতো একই বিধি-নিষেধ থাকবে। এই লকডাউন আরও কঠোর হবে। আগের যে ১৩ দফা শর্ত ছিল তা চালু রেখেই এ লকডাউন বাস্তবায়ন হবে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

তিনি বলেন, ঈদের আগে এ লকডাউন শেষে ব্যবসায়ীদের জন্যও সুখবর আসতে পারে। তবে সেটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ ম্যানেজ করা আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা মনে করছি, আরও সাতদিন দিলে সংক্রমণটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ব্যবসায়ীরা যাতে ঈদের ব্যবসা করতে পারে সেটা মাথায় রেখেই এখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি কী হয় সেটা বিবেচনা করেই পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

গত ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউনের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়। ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল সেই লকডাউন শেষ হওয়ার কথা।

করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এর আগে গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত লকডাউন ছিল।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদের আগে লকডাউন শিথিল করা হতে পারে। তবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।

সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে আগামী ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আগের শর্ত মেনে লকডাউনের সময় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠক শেষে দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার।

প্রধান তথ্য কর্মকর্তা বলেন, সরকার ঘোষিত চলমান ‘লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। এক সপ্তাহ বলতে ২২ তারিখ থেকে আরও ৭ দিন অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ‘লকডাউন’ কার্যকর থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অন্যদিকে, ১৮ এপ্রিল রোববার রাতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩১তম সভা থেকে লকডাউন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে দুই সপ্তাহের কম লকডাউনে কার্যকর ফলাফল আশা করা যায় না। দেশের অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে শিল্প-কলকারখানা খোলা রাখার বিষয়টি কমিটি উপলব্ধি করে। তবে বেসরকারি দপ্তর, ব্যাংক খোলা রাখা, ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল, ইফতার বাজারে অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ভিড় লকডাউনের সাফল্যকে অনিশ্চিত করে।

লকডাউনের সময় স্বাস্থ্যসেবা, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। খোলা রাখা যাবে এমন জরুরি সেবার তালিকা প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে কমিটি। এছাড়া কাঁচাবাজার আবারও উন্মুক্ত স্থানে বসানোর প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় কমিটি। এ বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ তীব্র হয়েছে।

সারাদেশে কোভিড-১৯ এর উচ্চ সংক্রমণ ও ক্রমবর্ধমান মৃত্যুতে উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন সুপারিশ করেছিল। সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করায় কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করে।

অন্যদিকে, লকডাউনের’ ষষ্ঠ দিনে সোমবার ঢাকার রাস্তাঘাটে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল আরও বেড়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিকশা, অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে দেদারছে। ফুটপাতেও বেড়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল। সকালে কাকরাইল, বিজয় নগর, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্যই। তবে সরকারি নির্দেশনা মেনে বন্ধ রয়েছে শপিংমল-বিপণিবিতানগুলো। কাঁচাবাজার সংলগ্ন দোকানপাট ছাড়া বন্ধ রয়েছে অন্যান্য দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। এছাড়া সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যদের তৎপর থাকতে দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি ক্রমেই ঝিমিয়ে আসে। যার ফলে এক সময় পুরো ফাঁকা হয়ে পড়ে চেকপোস্টগুলো। পুলিশ সদস্যরা চেকপোস্টের পাশেই অবস্থান করলেও তাদের চেকিং ছিল না। গত ৫ দিন বিধিনিষেধ কার্যকরে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বেশ সক্রিয় দেখা গেছে পুলিশকে। তবে সোমবার সড়কে পুলিশের অবস্থান বেশ নমনীয় দেখা গেছে। এমনকি যেসব জায়গায় প্রতিদিন চেকিং চলতো সেখানেও কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এই কয়দিন এসব পয়েন্টে সাধারণ মানুষ বাধার সম্মুখীন এবং জেরার মুখে পড়লেও সোমবার কাল তা ছিল না।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে গত কয়েক দিনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেলের পরিমাণ অনেক বেশি দেখা গেছে। সঙ্গে অপ্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়া মানুষের আনাগোনাও বেড়েছে। কিন্তু পুলিশ চেকপোস্টগুলোতে কড়াকড়ি কমেছে অনেকখানি। তাছাড়া ধানমন্ডি আবাহনী মাঠের কোণায় এবং মানিক মিয়া এভিনিউতে চেকপোস্টের কার্যক্রম দেখা গেছে। ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে ট্রাফিক বক্সের কোণায় চলমান বিধিনিষেধের প্রথম ৫ দিন যথেষ্ট চেকিং দেখা গেলেও সোমবার তা নীরব। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, চেকপোস্টে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সোমবার কিছুটা শিথিল ছিল। সরকারের বিধিনিষেধ সত্ত্বেও মানুষ অপ্রয়োজনেও বাইরে যাচ্ছে। তাদের কাছে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কিংবা মুভমেন্ট পাস দেখাতে বললেও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এআইজি সোহেল রানা বলেন, জনগণকে সচেতন করতে মাঠে রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াও থানা পুলিশ নিজস্বভাবে তাদের চেকপোস্ট পরিচালনা করছে।

ছবি

মোরেলগঞ্জে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা, সফল উদ্যোক্তা বাশার

ছবি

আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪২৮ জন

ছবি

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সিলেট, শঙ্কা প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির

ছবি

নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাট বাসা থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী

নাইক্ষ্যংছড়িতে রাবার বাগানের গাছ থেকে শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বাড়ছে নদীর পানি, সিলেটে বন্যার আভাস

সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকের শরীর টিপে না দেয়ায় ছাত্রকে আটক রেখে নির্যাতন

ফ্যানে ঝুলছিলেন যুবক, খাটে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ, আর্থিক দুরাবস্থায় ছিল পরিবারটি

ছবি

বিরামপুরে কুকুরে কামড়ানো সগাভীর মাংস বিক্রির চেষ্টা

ছবি

রায়পুরায় ভিডব্লিউবি উপকার ভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ

ছবি

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নতুন ঘর পেলেন মোজাম্মেল-জহুরা দম্পতি

ছবি

আদমদীঘিতে তিন মাদক ব্যবসায়ি আটক

ছবি

রাঙাছড়া সেতু যেন মরণ ফাঁদ

ছবি

বাঁশবোঝাই ট্রাকে বাসের ধাক্কা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ৩

ছবি

উদ্বোধনের দিনই বিকল বেরোবি ভাড়া বাস

ছবি

কেন্দুয়া থেকে তিন নারীকে চীনে পাচারের চেষ্টা, আটক ২

ছবি

সারিয়াকান্দিতে বিনা মূল্যে গরু বিতরণ

ছবি

পূর্বধলায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা

ছবি

কেশবপুর-কলাগাছি সড়ক বেহাল, ঘটছে দুর্ঘটনা

ছবি

মধুপুরে লাল মাটিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের পেঁপে চাষে লাভবান কৃষক

ছবি

গোবিপ্রবি ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদককে দুই সেমিস্টার বহিষ্কার

ছবি

বর্ষা মৌসুমেও দেশীয় মাছের আকাল

ছবি

পদ্মার ভাঙনে চর ছাড়ছেন বাসিন্দারা মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার শঙ্কা

ছবি

নদী খননের মাটি মজুদ রাখা নিয়ে উত্তেজনা

ছবি

রংপুরে প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে প্রেজেনটেশনে শেখ মুজিব ও হাসিনার ছবি

ছবি

আড়াইহাজারে ছাত্রলীগ নেতা রবিন গ্রেপ্তার

ছবি

রায়পুরায় ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা

ছবি

সামাজিক বনায়নের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি

গৌরনদীর হাট-বাজার সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি

ছবি

বাগেরহাটে অটো চালকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

নুরাল পাগলের মরদেহের ওপর তেল ছিটানো ব্যক্তি গ্রেপ্তার

ছবি

ভোলাহাটে ক্যানসার সচেতনতা সভা

ছবি

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি

সিরাজগঞ্জে বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলের মৃত্যুদন্ড

ছবি

তারাগঞ্জে নিজের শিশুকে গলা কেটে হত্যা করল মা!

tab

news » bangladesh

লকডাউন আরও কঠোর করে এক সপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধের) মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবার (১৯ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিবদের সভায় এই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে, প্রথম দিকে কড়াকড়ি থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ ষষ্ঠ দিনে সোমবার ঢাকার রাস্তা-ঘাটে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল আরও বেশি ছিল।

সোমবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকার সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানোর সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা করছে।

অন্যদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সাইন্টিফিক্যালি তো ১৪ বা ১৫ দিন লকডাউন না হলে সংক্রমণের চেইনটা পুরোপুরি ভাঙা সম্ভব হয় না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আগের শর্ত মেনে লকডাউন কন্টিনিউ (অব্যাহত) করবে। এ সময়ে আগের সপ্তাহের মতো একই বিধি-নিষেধ থাকবে। এই লকডাউন আরও কঠোর হবে। আগের যে ১৩ দফা শর্ত ছিল তা চালু রেখেই এ লকডাউন বাস্তবায়ন হবে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

তিনি বলেন, ঈদের আগে এ লকডাউন শেষে ব্যবসায়ীদের জন্যও সুখবর আসতে পারে। তবে সেটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ ম্যানেজ করা আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা মনে করছি, আরও সাতদিন দিলে সংক্রমণটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ব্যবসায়ীরা যাতে ঈদের ব্যবসা করতে পারে সেটা মাথায় রেখেই এখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি কী হয় সেটা বিবেচনা করেই পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

গত ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউনের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়। ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল সেই লকডাউন শেষ হওয়ার কথা।

করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এর আগে গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত লকডাউন ছিল।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদের আগে লকডাউন শিথিল করা হতে পারে। তবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।

সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে আগামী ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আগের শর্ত মেনে লকডাউনের সময় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠক শেষে দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার।

প্রধান তথ্য কর্মকর্তা বলেন, সরকার ঘোষিত চলমান ‘লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। এক সপ্তাহ বলতে ২২ তারিখ থেকে আরও ৭ দিন অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ‘লকডাউন’ কার্যকর থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অন্যদিকে, ১৮ এপ্রিল রোববার রাতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩১তম সভা থেকে লকডাউন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে দুই সপ্তাহের কম লকডাউনে কার্যকর ফলাফল আশা করা যায় না। দেশের অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে শিল্প-কলকারখানা খোলা রাখার বিষয়টি কমিটি উপলব্ধি করে। তবে বেসরকারি দপ্তর, ব্যাংক খোলা রাখা, ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল, ইফতার বাজারে অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ভিড় লকডাউনের সাফল্যকে অনিশ্চিত করে।

লকডাউনের সময় স্বাস্থ্যসেবা, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। খোলা রাখা যাবে এমন জরুরি সেবার তালিকা প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে কমিটি। এছাড়া কাঁচাবাজার আবারও উন্মুক্ত স্থানে বসানোর প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় কমিটি। এ বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ তীব্র হয়েছে।

সারাদেশে কোভিড-১৯ এর উচ্চ সংক্রমণ ও ক্রমবর্ধমান মৃত্যুতে উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন সুপারিশ করেছিল। সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করায় কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করে।

অন্যদিকে, লকডাউনের’ ষষ্ঠ দিনে সোমবার ঢাকার রাস্তাঘাটে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল আরও বেড়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিকশা, অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে দেদারছে। ফুটপাতেও বেড়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল। সকালে কাকরাইল, বিজয় নগর, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্যই। তবে সরকারি নির্দেশনা মেনে বন্ধ রয়েছে শপিংমল-বিপণিবিতানগুলো। কাঁচাবাজার সংলগ্ন দোকানপাট ছাড়া বন্ধ রয়েছে অন্যান্য দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। এছাড়া সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যদের তৎপর থাকতে দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি ক্রমেই ঝিমিয়ে আসে। যার ফলে এক সময় পুরো ফাঁকা হয়ে পড়ে চেকপোস্টগুলো। পুলিশ সদস্যরা চেকপোস্টের পাশেই অবস্থান করলেও তাদের চেকিং ছিল না। গত ৫ দিন বিধিনিষেধ কার্যকরে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বেশ সক্রিয় দেখা গেছে পুলিশকে। তবে সোমবার সড়কে পুলিশের অবস্থান বেশ নমনীয় দেখা গেছে। এমনকি যেসব জায়গায় প্রতিদিন চেকিং চলতো সেখানেও কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এই কয়দিন এসব পয়েন্টে সাধারণ মানুষ বাধার সম্মুখীন এবং জেরার মুখে পড়লেও সোমবার কাল তা ছিল না।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে গত কয়েক দিনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেলের পরিমাণ অনেক বেশি দেখা গেছে। সঙ্গে অপ্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়া মানুষের আনাগোনাও বেড়েছে। কিন্তু পুলিশ চেকপোস্টগুলোতে কড়াকড়ি কমেছে অনেকখানি। তাছাড়া ধানমন্ডি আবাহনী মাঠের কোণায় এবং মানিক মিয়া এভিনিউতে চেকপোস্টের কার্যক্রম দেখা গেছে। ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে ট্রাফিক বক্সের কোণায় চলমান বিধিনিষেধের প্রথম ৫ দিন যথেষ্ট চেকিং দেখা গেলেও সোমবার তা নীরব। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, চেকপোস্টে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সোমবার কিছুটা শিথিল ছিল। সরকারের বিধিনিষেধ সত্ত্বেও মানুষ অপ্রয়োজনেও বাইরে যাচ্ছে। তাদের কাছে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কিংবা মুভমেন্ট পাস দেখাতে বললেও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এআইজি সোহেল রানা বলেন, জনগণকে সচেতন করতে মাঠে রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াও থানা পুলিশ নিজস্বভাবে তাদের চেকপোস্ট পরিচালনা করছে।

back to top