alt

ঢাকামুখী মানুষের চাপ সংক্রমণ উচ্চ ঝুঁকিতে

রোজার ঈদে গাফিলতির ফলে বিপর্যয় ও মৃত্যুর রেকর্ড

রাকিব উদ্দিন : রোববার, ০১ আগস্ট ২০২১

নজরুল আমিন নামে একজনের লাশ মুগদা হাসপাতালের বারান্দায় স্ট্রেচারে। তিনি ঢাকার নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা। একদিন আগে করোনার লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রোববার তার মৃত্যু হয়। কিন্তু লাশ নিয়ে যেতে দুপুর পর্যন্তও স্বজনরা কেউ আসেনি-সংবাদ

ঈদুল ফিতরের সময় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষের গ্রামে যাতায়াতের কারণেই এখনও করোনা সংক্রমণ ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে। ওই ঈদ যাত্রায় সংক্রমণের প্রভাবেই গত মাসেই ছয় হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। গত মে মাসের মাঝামাঝিতে ঈদুল ফিতরের ছুটি ছিল।

এ অবস্থায় চলমান ‘কঠোর লকডাউনের’ শিথিলতা শর্তে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করছেন সরকারের কর্তাব্যক্তি ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণার পর থেকেই গত দু’দিন সড়ক-মহাসড়ক ও নৌ-ঘাটগুলোতে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় লেগে যায়। কোথাও ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়নি।

শুধুমাত্র পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরতে ‘লকডাউন’ শিথিল করা হলেও গত ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া প্রায় সবাই-ই ঢাকায় ফিরছেন। পোশাক শ্রমিকদের পাশাপাশি গত দুই দিন সড়ক-মহাসড়ক ও নৌ-ঘাটগুলোতে সাধারণ যাত্রী, ব্যক্তিগত ও ছোট গাড়ির ব্যাপক ভিড় দেখা যায়।

১ আগস্ট থেকে তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা চালুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই ঘোষণা দেয়ার আগের দিন (৩১ জুলাই) সকাল থেকে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ফিরতে শুরু করে মানুষ। গভীর রাত ও রোববার (১ আগস্ট) সারাদিনই যাত্রীদের অস্বাভাবিক ভিড় ছিল বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার গঠিত কোভিডবিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল সংবাদকে বলেছেন, ‘আসলে লকডাউন বলতে যা বোঝায় তা এখানে হয়নি। এগুলো শিথিল হলেও যা, থাকলেও তাই। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আমাদের এখানে সংক্রমণ চলছে, চলবেই। বাড়ছে, বাড়বেই। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, হবেই।’

‘গত রোজার ঈদের সময় মানুষের অবাধ যাতায়াতের কারণেই এখন করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে’ উল্লেখ করে খ্যাতিমান এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘গত দুদিনে মানুষ যেভাবে ঢাকা ফিরেছে, এর খেসারতও দিতে হবে। সংক্রমণ আরও বাড়বে।’ ‘লকডাউন’ উপেক্ষা করে রাজধানীমুখী মানুষের ব্যাপক তৎপরতায় সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়া শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা বরাবরই বলেছি জনসমাবেশ উপেক্ষা করে চলতে। কারণ, এগুলো সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে সহায়তা করে। গণমাধ্যমে দেখিয়েছে আর আমরা সবাই দেখেছি, এতে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।’

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলো স্বাস্থ্য বিভাগের জানা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নতুন কোন উপায় নেই। লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো বা কমানো-এটি নির্ভর করবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নীতিনির্ধারণী মহলে, যারা কাজ করেন তাদের ওপর। আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই, জনস্বাস্থ্য রক্ষা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক চলমান বিধিনিষেধের (লকডাউন) মধ্যে গার্মেন্টস খুলে দেয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আজ থেকে গার্মেন্টস খুলে দেয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু তারা স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। ফলে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে। জীবনের জন্য জীবিকার দরকার হয়। সরকারকে সবকিছুই ভাবতে হয়।’

রোজার ঈদের গাফিলতির ফলেই করোনায় বিপর্যয় ও মৃত্যুর রেকর্ড :
গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দেশে করোনা সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ শুরু হয়। এরপর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণ ‘পিকে’ (চূড়ায় পৌঁছে) উঠে। ওই সময় (৭ এপ্রিল) একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় সাত হাজার ৬২৬ জনের। এরপর নিয়মিত কমতে থাকে শনাক্তের হার। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দৈনিক শনাক্ত দেড় হাজারের নিচে নেমে আসে। মে মাসের মাঝামাঝিতে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শিথিল করা হয় ‘বিধিনিষেধ’। এতে সড়ক-মহাসড়ক ও নৌ-ঘাটগুলোতে গ্রামমুখী মানুষের ভিড় লেগে যায়। মানা হয়নি ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি।

ওই ঈদ যাত্রায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার ফলেই করোনা সংক্রমণ আর নিচের দিকে নামেনি, যা বারবার রেকর্ড ভেঙে এখনও বাড়তির দিকেই রয়েছে। গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে করোনা সংক্রমণ কমেনি।

ওই সময় ঈদের ছুটিতে ১৫ মে একদিনে সবচেয়ে কম আড়াই শতাধিক রোগী শনাক্ত হয়। এরপর খুব দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। এর মধ্যে গত ২৮ জুলাই একদিনে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

আর বিদায়ী জুলাই মাসে করোনায় রেকর্ড ছয় হাজার ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মাসে শনাক্তেও নয়া মাইলফলক তৈরি হয়েছে। জুলাইয়ে রেকর্ড তিন লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

টানা আট দিন মৃত্যু দুই শতাধিক :
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৩১ জন মারা গেছেন। গত ২৫ জুলাই থেকে দৈনিক মৃত্যু ২০০ এর নিচে নামেনি। এর আগে ২৪ জুলাই ১৯৫ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুসহ দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২০ হাজার ৯১৬ জনে।

২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার প্রায় ৩০ শতাংশ:
দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৮৪৪ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জনে। আগের দিন ৯ হাজার ৩৬৯ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৯ হাজার ৫২৯টি। দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৭৭ লাখ ৯০ হাজার ৪২৩টি।

এই ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৬৫ শতাংশ।

গত একদিনে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৫৪ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন দশ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৬ জন। শনাক্ত অনুপাতে মোট সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

গত একদিনে মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৩৯ জন ও নারী ৯২ জন। আর দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ১৪২ জন এবং নারী ছিলেন ছয় হাজার ৭৭৪ জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে একজনের বয়স ছিল ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে। অন্যদের মধ্যে ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে নয়জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪৫ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৯ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং দুই জনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একদিনে মৃত্যু হওয়া ২৩১ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৭ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৩ জন, রাজশাহী বিভাগের ১৩ জন, খুলনা বিভাগের ৪৪ জন, বরিশাল বিভাগের ছয়জন, সিলেট বিভাগের নয়জন, রংপুর বিভাগের ১৮ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৬৮ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৪৯ জন ও বাড়িতে মারা গেছেন ১৩ জন। আর হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয় একজনকে।

শনাক্ত বেশি ঢাকায় :
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে আট হাজার ৩৫৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় ছয় হাজার ২০২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

অন্য বিভাগের মধ্যে ময়মনসিংহে ৫৯১ জন, চট্টগ্রামে এক হাজার ৮৫০ জন, রাজশাহীতে ৮০৮ জন, রংপুরে ৬৭৯ জন, খুলনায় ৮৮০ জন, বরিশালে ৬৮৫ জন ও সিলেট বিভাগে ৯৯৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ছবি

রাজধানীতে গভীর রাতে সড়কে নারীর মৃত্যু

ছবি

ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় মায়ের লাশ দেখতে না দেয়ায় সংঘর্ষ, নিহত ১

ছবি

জেনে-বুঝে সংগ্রাম জারি রাখতে হবে, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুব সম্মেলনে বক্তারা

ছবি

দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত দিলো বিএসএফ

ছবি

নিম্নচাপে রূপ নিলো লঘুচাপ, ১ নম্বর সতর্কতা

ছবি

‘বৈষম্যের শিকার’ বিসিএস ২৫ ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দাবি

ছবি

তিস্তা সেতুর তলদেশ এখন গো-চারণ ভূমি

ছবি

সালমান শাহ হত্যা মামলা: আসামিদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ‘ইমিগ্রেশনে’ পুলিশের চিঠি

ছবি

ভাঙন আতঙ্কে মাতামুহুরী তীরের বাসিন্দারা, টেকসই শাসন সংরক্ষণের দাবি

ছবি

ভোলায় উচ্ছেদ অভিযানে সংঘর্ষ: তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ১৫

ছবি

দামুড়হুদায় শীতের আগমনে লেপ তৈরীর কারিগরদের ব্যস্ততা

ছবি

তিন ছেলে থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধা মায়ের ঠাঁই হলো গোয়ালঘরে

ছবি

মহেশপুর ভৈরবা বাজারে ঐতিহ্যবাহী ‘ঝাঁপান খেলা’ অনুষ্ঠিত

ছবি

নগেশ্বরীতে বউ-শাশুড়ী মেলা

ছবি

শেরপুরে মিনি রাতারগুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধতা খুঁজছেন শত শত পর্যটক

ছবি

বেনাপোল-পেট্রাপোলে সন্ধ্যা ৬টার পর আমদানি-রপ্তানি বন্ধ, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

ছবি

সুবর্ণচরে পাচারকালে ৩০০ বস্তা ইউরিয়া সার জব্দ

ছবি

টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের সহায়তায় হাফিজ ফিরে পেল একমাত্র জীবিকার অবলম্বন

ছবি

বিএনপিতে ফিরলেন গঙ্গাচড়ার সাবেক চেয়ারম্যান সুজন

ছবি

শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতুতে বিনা রশিদে টোল আদায়

ছবি

দশমিনায় দেশি প্রজাতির মাছের উৎপাদন কম

ছবি

ইবিতে লোডশেডিং হলেই বন্ধ হয় মোবাইল নেটওয়ার্ক-ইন্টারনেট

ছবি

স্বাস্থ্যসেবায় রংপুর বিভাগে দ্বিতীয় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ছবি

অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ, যুবক আলমগীরের ‘জীবন এখন শিকলবন্দি’

ছবি

ডিমলার ধুম নদীর বিধ্বস্ত ব্রিজ যেন মরণ ফাঁদ

ছবি

সিরাজগঞ্জের কৃষকরা এখন শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত

ছবি

নোয়াখালীতে ইয়াবাসহ বাসের সুপারভাইজার গ্রেপ্তার

ছবি

চৌগাছায় ট্রলির সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুই কিশোর নিহত

ছবি

বোয়ালমারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত, আহত ৫

মোহনগঞ্জে যাত্রাপথে আনন্দ গান মেঠোসুর পরিষদের কর্মশালা

ছবি

বেগমগঞ্জে গাঁজাসহ মাদক কারবারী গ্রেপ্তার

ছবি

যশোরে ফেনসিডিলের মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন

ছবি

গরু চুরির সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ১,আহত ৩

ছবি

যশোরের রং ও কেমিক্যাল দিয়ে আইসক্রিম তৈরি, জরিমানা

ছবি

নড়াইলে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি

ছবি

উলিপুরে বিরোধের জেরে অবরুদ্ধ এক পরিবার

tab

ঢাকামুখী মানুষের চাপ সংক্রমণ উচ্চ ঝুঁকিতে

রোজার ঈদে গাফিলতির ফলে বিপর্যয় ও মৃত্যুর রেকর্ড

রাকিব উদ্দিন

নজরুল আমিন নামে একজনের লাশ মুগদা হাসপাতালের বারান্দায় স্ট্রেচারে। তিনি ঢাকার নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা। একদিন আগে করোনার লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রোববার তার মৃত্যু হয়। কিন্তু লাশ নিয়ে যেতে দুপুর পর্যন্তও স্বজনরা কেউ আসেনি-সংবাদ

রোববার, ০১ আগস্ট ২০২১

ঈদুল ফিতরের সময় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষের গ্রামে যাতায়াতের কারণেই এখনও করোনা সংক্রমণ ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে। ওই ঈদ যাত্রায় সংক্রমণের প্রভাবেই গত মাসেই ছয় হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। গত মে মাসের মাঝামাঝিতে ঈদুল ফিতরের ছুটি ছিল।

এ অবস্থায় চলমান ‘কঠোর লকডাউনের’ শিথিলতা শর্তে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করছেন সরকারের কর্তাব্যক্তি ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণার পর থেকেই গত দু’দিন সড়ক-মহাসড়ক ও নৌ-ঘাটগুলোতে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় লেগে যায়। কোথাও ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়নি।

শুধুমাত্র পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরতে ‘লকডাউন’ শিথিল করা হলেও গত ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া প্রায় সবাই-ই ঢাকায় ফিরছেন। পোশাক শ্রমিকদের পাশাপাশি গত দুই দিন সড়ক-মহাসড়ক ও নৌ-ঘাটগুলোতে সাধারণ যাত্রী, ব্যক্তিগত ও ছোট গাড়ির ব্যাপক ভিড় দেখা যায়।

১ আগস্ট থেকে তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা চালুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই ঘোষণা দেয়ার আগের দিন (৩১ জুলাই) সকাল থেকে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ফিরতে শুরু করে মানুষ। গভীর রাত ও রোববার (১ আগস্ট) সারাদিনই যাত্রীদের অস্বাভাবিক ভিড় ছিল বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার গঠিত কোভিডবিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল সংবাদকে বলেছেন, ‘আসলে লকডাউন বলতে যা বোঝায় তা এখানে হয়নি। এগুলো শিথিল হলেও যা, থাকলেও তাই। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আমাদের এখানে সংক্রমণ চলছে, চলবেই। বাড়ছে, বাড়বেই। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, হবেই।’

‘গত রোজার ঈদের সময় মানুষের অবাধ যাতায়াতের কারণেই এখন করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে’ উল্লেখ করে খ্যাতিমান এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘গত দুদিনে মানুষ যেভাবে ঢাকা ফিরেছে, এর খেসারতও দিতে হবে। সংক্রমণ আরও বাড়বে।’ ‘লকডাউন’ উপেক্ষা করে রাজধানীমুখী মানুষের ব্যাপক তৎপরতায় সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়া শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা বরাবরই বলেছি জনসমাবেশ উপেক্ষা করে চলতে। কারণ, এগুলো সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে সহায়তা করে। গণমাধ্যমে দেখিয়েছে আর আমরা সবাই দেখেছি, এতে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।’

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলো স্বাস্থ্য বিভাগের জানা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নতুন কোন উপায় নেই। লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো বা কমানো-এটি নির্ভর করবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নীতিনির্ধারণী মহলে, যারা কাজ করেন তাদের ওপর। আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই, জনস্বাস্থ্য রক্ষা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক চলমান বিধিনিষেধের (লকডাউন) মধ্যে গার্মেন্টস খুলে দেয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আজ থেকে গার্মেন্টস খুলে দেয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু তারা স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। ফলে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে। জীবনের জন্য জীবিকার দরকার হয়। সরকারকে সবকিছুই ভাবতে হয়।’

রোজার ঈদের গাফিলতির ফলেই করোনায় বিপর্যয় ও মৃত্যুর রেকর্ড :
গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দেশে করোনা সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ শুরু হয়। এরপর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণ ‘পিকে’ (চূড়ায় পৌঁছে) উঠে। ওই সময় (৭ এপ্রিল) একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় সাত হাজার ৬২৬ জনের। এরপর নিয়মিত কমতে থাকে শনাক্তের হার। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দৈনিক শনাক্ত দেড় হাজারের নিচে নেমে আসে। মে মাসের মাঝামাঝিতে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শিথিল করা হয় ‘বিধিনিষেধ’। এতে সড়ক-মহাসড়ক ও নৌ-ঘাটগুলোতে গ্রামমুখী মানুষের ভিড় লেগে যায়। মানা হয়নি ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি।

ওই ঈদ যাত্রায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার ফলেই করোনা সংক্রমণ আর নিচের দিকে নামেনি, যা বারবার রেকর্ড ভেঙে এখনও বাড়তির দিকেই রয়েছে। গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে করোনা সংক্রমণ কমেনি।

ওই সময় ঈদের ছুটিতে ১৫ মে একদিনে সবচেয়ে কম আড়াই শতাধিক রোগী শনাক্ত হয়। এরপর খুব দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। এর মধ্যে গত ২৮ জুলাই একদিনে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

আর বিদায়ী জুলাই মাসে করোনায় রেকর্ড ছয় হাজার ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মাসে শনাক্তেও নয়া মাইলফলক তৈরি হয়েছে। জুলাইয়ে রেকর্ড তিন লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

টানা আট দিন মৃত্যু দুই শতাধিক :
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৩১ জন মারা গেছেন। গত ২৫ জুলাই থেকে দৈনিক মৃত্যু ২০০ এর নিচে নামেনি। এর আগে ২৪ জুলাই ১৯৫ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুসহ দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২০ হাজার ৯১৬ জনে।

২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার প্রায় ৩০ শতাংশ:
দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৮৪৪ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জনে। আগের দিন ৯ হাজার ৩৬৯ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৯ হাজার ৫২৯টি। দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৭৭ লাখ ৯০ হাজার ৪২৩টি।

এই ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৬৫ শতাংশ।

গত একদিনে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৫৪ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন দশ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৬ জন। শনাক্ত অনুপাতে মোট সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

গত একদিনে মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৩৯ জন ও নারী ৯২ জন। আর দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ১৪২ জন এবং নারী ছিলেন ছয় হাজার ৭৭৪ জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে একজনের বয়স ছিল ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে। অন্যদের মধ্যে ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে নয়জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪৫ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৯ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং দুই জনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একদিনে মৃত্যু হওয়া ২৩১ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৭ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৩ জন, রাজশাহী বিভাগের ১৩ জন, খুলনা বিভাগের ৪৪ জন, বরিশাল বিভাগের ছয়জন, সিলেট বিভাগের নয়জন, রংপুর বিভাগের ১৮ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৬৮ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৪৯ জন ও বাড়িতে মারা গেছেন ১৩ জন। আর হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয় একজনকে।

শনাক্ত বেশি ঢাকায় :
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে আট হাজার ৩৫৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় ছয় হাজার ২০২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

অন্য বিভাগের মধ্যে ময়মনসিংহে ৫৯১ জন, চট্টগ্রামে এক হাজার ৮৫০ জন, রাজশাহীতে ৮০৮ জন, রংপুরে ৬৭৯ জন, খুলনায় ৮৮০ জন, বরিশালে ৬৮৫ জন ও সিলেট বিভাগে ৯৯৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

back to top