বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ও গোলগুলিতে দুইজন নিহত, শতাধিক আহত, কেন্দ্র দখল, জালভোট, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং বর্জনের মধ্য দিয়ে সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন শেষ হয়েছে। নিহত দুজনই কক্সবাজারের বাসিন্দা। বিএনপির বর্জনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষহীন এই নির্বাচনে ৪৫ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। এ ছাড়া, বেশিরভাগ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। সকালে মহেশখালীতে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংর্ঘষ ও ব্যাপক গুলিবর্ষণের ঘটনায় ঘটনাস্থলেই আবুল কালাম নামে একজন নিহত হন, গুলিবিদ্ধ হন আরও পাঁচজন।

এদিকে কুতুবদিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নৌকার এজেন্ট আবদুল হালিম নিহত হন। পুলিশের অভিযোগ, ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হালিম ব্যালট পেপার ছিনতাই করতে গেলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ছোড়ে। সংবাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া বেশির ভাগ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, দু-একটি ছাড়া প্রায় সব ইউপিতে নৌকার প্রার্থীরা জয়ের পথে রয়েছেন।

কুতুবদিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত এক

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড়ঘোপ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আবদুল হালিম নামে একজন নৌকার এজেন্ট নিহত হন। ভোটের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আহত হন আরও ৪০ জন।

নিহত আবদুল হালিম বড়ঘোপ ইউনিয়নের গোলদারপাড়া এলাকার মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে, ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বড়ঘোপ আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আবুল কালামের নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে। এই ইউপিতে নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থী আ ন ম শহীদ উদ্দিন ছোটন। স্থানীয় সূত্র বলছে, তিনি জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু লোক ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্যের গুলিতে আবদুল হালিম আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে দুপুরে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম দাখিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শেখ কামাল এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্রপ্রার্থী (চশমা প্রতীক) মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থকদের মধ্যে ভোট জালিয়াতি নিয়ে বাগবিত-া হয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এ সময় আরও পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

এ ছাড়া টেকনাফ ও চকরিয়াতেও নির্বাচনী সহিংসতার খবর পাওয়া যায়। ব্যালট ছিনতাই ও ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়।

সহিংসতা, গোলাগুলি, প্রার্থীদের ভোট বর্জন
বেশ কয়েকটি সহিংস ঘটনা, গোলাগুলি, প্রার্থীদের ভোট বর্জন ও ভোটগ্রহণ স্থগিতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সাতক্ষীরার দুই উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট। নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচনের দিনের সহিংসতায় পুলিশসহ আহত কমপক্ষে ৩০ জন। গুলিবিদ্ধ সুজিত কাগুজি ও দুই পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সরেজমিনে পাটকেলঘাটার হারুন-অর-রশিদ কেন্দ্রে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে সকালে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেননি ভোটাররা। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি বেড়েছে। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, অনিয়মের অভিযোগে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা ইউনিয়ন পরিষদের আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ভোট বর্জন করেছেন। এ ছাড়া একই ইউনিয়নে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই অভিযোগে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আফতাব আহমেদ দুপুর ১টার দিকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।

এদিকে, অনিয়মের অভিযোগে কেড়াগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট স্থগিত করেছে উপজেলা প্রশাসন। অন্যদিকে, তালার জালালপুর ইউনিয়নের ১নং মক্তবকেন্দ্রে বোমা ফেলে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

স্থানীয় একজন জানান, তালার জালালপুর ইউনিয়নের ১নং মক্তব কেন্দ্রের পাশে বোমা বিস্ফোরণ করে কেন্দ্র দখলে নেয়ার চেষ্টা করে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা। এ সময় তারা হাতুড়ি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত হয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় নৌকা প্রতীকের কর্মী আজহার হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া কানাইদিয়া ওয়ার্ডে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সুজিত কাগুজি নামের এক যুবক।

তালা থানার ওসি মেহেদি রাসেল জানান, জালালপুর ইউনিয়নের দোহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিদুল হক লিতুর কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে বাবুল হোসেন ও ইমদাদুল হক নামের দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আটক গুলিবিদ্ধ সুজিত কাগুজিকে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা চলছে বলে জানান ওসি।

এর আগে সকালে শ্রীমন্তকাটি কেন্দ্রের পাশে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া মারপিটে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই কর্মী আহত হয়েছেন।

এদিকে, রাতে কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ও একজন ইউপি সদস্য প্রার্থীসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

অন্যদিকে, অনিয়মের অভিযোগে কলারোয়ার কেড়াগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে উপজেলা প্রশাসন।

কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরী জানান, কেড়াগাছি কেন্দ্রে ভোট অনিয়মের অভিযোগ আসে। সে কারণে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে বাগেরহাটেও ভোটে সহিংসতা ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।