alt

ঝুমন দাসের জামিন আদেশ বৃহস্পতিবার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমন দাসের জামিনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) তার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের জন্য দিন ধার্য করে দেন।

আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, নাহিদ সুলাতানা যুথি ও মো. আশরাফ আলী। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান।

সুনামগঞ্জের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিন না হওয়ায় ঝুমনের আইনজীবীরা জজ আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও জামিন আবেদন নাকচ হয়ে গেলে গত ২২ অগাস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়। আইনজীবী জেড আই খান পান্না জানান, এটা কোন মামলাই হতে পারে না। মামলা যাদের বিরুদ্ধে হওয়ার কথা, তাদের বিরুদ্ধে না হয়ে মামলা করা হয়েছে ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে। ঝুমন দাসের মা যা-ও একটা মামলা করেছে, সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করার পর জামিনে ছাড়া পেয়ে গেছে।

চলতি বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শানে রিসালাত সম্মেলন নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন। ওই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন দিরাইয়ের পার্শ্ববর্তী উপজেলা শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস। তিনি স্ট্যাটাসে মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন। তবে এ সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় অপপ্রচার চালাতে থাকে মামুনুলের অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

কিন্তু পরের দিন কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে গ্রামের সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামের প্রায় ৯০টি বাড়ি ও মন্দিরে ভাঙচুর-লুটপাট করে। হামলার ঘটনায় শাল্লা থানায় অজ্ঞাত পরিচয়সহ মোট দেড় হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাদের মধ্যে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও সবাই এরই মধ্যে জামিনে রয়েছেন। ওই ঘটনায় গত ২২ মার্চ ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। এই মামলায় কয়েক দফায় জামিন আবেদন খারিজের পর ঝুমন দাসের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়।

ঝুমন দাসের পরিবারের আকুতি

ঝুমন দাসকে বিনাবিচারে দীর্ঘদিন আটকে রেখে তার পরিবারকে অন্ধকারে ফেলে রাখা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীরা জামিন পেলেও ঝুমন দাস এখনও জামিন পাননি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি দীর্ঘদিন জেলে থাকায় দরিদ্র ঝুমন দাসের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ বিষয়ে তারা বিচার বিভাগের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন যেন তার প্রতি কোন অবিচার করা না হয়। নওয়াগাঁও গ্রামের লিটন দাস বলেন, ‘ঝুমন কোন অপরাধ করেনি। সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়ে বিনা অপরাধে কারাবরণ করছে। আর প্রকৃত অপরাধীরা জামিনে মুক্ত হয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, যারা শত শত বাড়িঘরে হামলা ও মন্দির ভাঙচুর করেছে, তারা মুক্ত হয়েছে। ঝুমন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার অপরাধে জেলে রয়েছে। এর ফলে ঝুমনকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ঝুমনের মুক্তি দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি বিবেচনাবোধ থেকে ঝুমনের অসহায় পরিবারটির দিকে তাকিয়ে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করে দিন।’ সেখানকার অভিজিৎ দাস নামে একজন বলেন, ‘সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ঝুমন। ঝুমন জেলে থাকার কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছে পরিবারটি। অন্যের কাছ থেকে দেনা করে কোনরকম সংসার চালাচ্ছে। আমরা ঝুমনের মুক্তি দাবি করছি।

ঝুমন দাস জেলে থাকার কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রানী দাস বলেন, ‘আমার কথা বলার ভাষা নেই। একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি দীর্ঘদিন জেলে আটক থাকার কারণে আমার এক বছরের শিশু পুত্র সৌম্য দাস ইশানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে।’ তিনি তার স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি চাওয়ার পাশাপাশি জীবন নিয়েও সংকিত। তিনি তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন। ঝুমন দাসের মা নিভা রানী দাস বলেন, ‘আমার ছেলে কোন অপরাধ করেনি। আমার পুত্রের দ্রুত মুক্তি চাই।’ যারা আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করেছে, তারা জামিন পেলেও ঝুমন দাসের জীবন কাটছে জেলে বলেও দাবি নিভা রানীর।

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০১৮-এর ২৫ (১)ক, ৩১ ও ৩৫ ধারায় (অপরাধ সংঘটনের সহায়তার দন্ড) মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনে ২৫ ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য। সে অনুযায়ী ঝুমনের জামিন মঞ্জুর হওয়ারই বিধান রয়েছে। আবার ৩১ ধারার অপরাধ আইনে জামিন অযোগ্য বলা হয়েছে। এ ধরনের প্রেক্ষাপটেও জামিন দেয়ার এখতিয়ার আদালতের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এজাহারের বর্ণনায় সংশ্লিষ্ট ধারায় আসামির দায় কীভাবে রয়েছে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড, দন্ডনীয় অপরাধ মর্মে বিশ্বাস করার যুক্তসঙ্গত কারণ রয়েছে কি না, বিবেচনায় নেওয়া হয়। তাছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তি পালিয়ে যাবে কি না বা সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সাক্ষ্য জালিয়াতি করবে কি না ইত্যাদিও বিবেচ্য। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে সবটাই ঝুমন দাসের পক্ষেই যায়। ফলে, তার জামিন হওয়া যৌক্তিক মনে করেন আইনজীবীরা।

আইনজীবীরা আরও জানিয়েছেন, মামলা ও ঘটনার প্রেক্ষাপট পর্যালোচনায় দেখা যায়- প্রথমত, ঝুমন দাসকে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ হেফাজতে দেয়া হয় এবং হেফাজতে নেওয়ার প্রায় ১ সপ্তাহ পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঝুমন নিজেই ভিক্টিম। দ্বিতীয়ত, জামিন অযোগ্য ৩১ ধারার বর্ণনা ঝুমনের বিরুদ্ধে অকার্যকর। মূলত নোয়াগাঁয়ে একটি মৌলবাদিগোষ্ঠী হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে, যার দায় ঝুমন দাসের নয়, এটি পূর্বপরিকল্পিত অপরাধকর্ম। বসতিতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় অভিযুক্তরাও জামিনে মুক্ত। আর যদি ৩১ ধারার অপরাধ বিবেচনায় নিতেই হয় তাহলে তা হবে যারা দীর্ঘদিন ধরে সারাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে। তৃতীয়ত, ঝুমনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধ নয় কিংবা ঝুমনের পলাতক হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা, এটি স্বীকৃত যে, তার পরিবারের সদস্যরাই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। চতুর্থত, সাক্ষ্য জালিয়াতির সামর্থ ঝুমনদের থাকে না। এমনকি আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের ব্যর্থতাও দৃশ্যমান। ফলে সবকিছুই জামিন পাওয়ার উপযুক্ত ক্ষেত্র হওয়া সত্ত্বেও ঝুমন দাসের জামিন না হওয়া একটি দুঃখজনক ঘটনা বলে মনে করেন আইনজীবীরা।

ঝুমনের মুক্তির জন্য শুধু ওই গ্রামের মানুষ নয়, সারা দেশজুড়ে তার মুক্তির দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিবাদকারীরা তাকে মুক্তি না দেয়ার কারণ জানতে চায়। ইতোমধ্যে, ঝুমন দাসের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক। ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, সুলতানা কামাল, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ডা. সারওয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, ডা. ফওজিয়া মোসলেম, এস এম এ সবুর, রানা দাসগুপ্ত, জাহিদুল বারী, নুর মোহাম্মদ তালুকদার, খুশী কবির, রোকেয়া কবির, এম এম আকাশ, রোবায়েত ফেরদৌস, সালেহ আহমেদ, মো. জাহাঙ্গীর, পারভেজ হাসেম, মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, দীপায়ন খীসা, জীবনানন্দ জয়ন্ত, সেলু বাসিত, অলক দাসগুপ্ত, এ কে আজাদ ও গৌতম শীল।

ছবি

গাজীপুরে কাশিমপুর শ্মশান মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর

ছবি

শাহজালালে যাত্রীর পাকস্থলী থেকে উদ্ধার ১ হাজার ইয়াবা

ছবি

নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে গুলিতে নিহত ১

ছবি

দুর্গাপূজায় তিন স্তরে নিরাপত্তা, প্রয়োজনে ৯৯৯

ছবি

১৭ বিয়ের অভিযোগ ওঠা আলোচিত বন কর্মকর্তা সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

জুলাই শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ছবি

না’গঞ্জে ইজিবাইক চালক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ, আহত ১২

ছবি

চোখ রাঙানি বাড়ছেই এডিসের, কমছে না ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

ছবি

দুবাইয়ে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি, আটকে আছেন ১৭৮ যাত্রী

ছবি

বিআরটিসি বাস চালকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ছবি

দাফনের পূর্বে শিশুর নড়াচড়া, হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় আটক

ছবি

পাঙ্গাস মাছের পায়েস, দুই ভাই ভাইরাল

ছবি

অফিস-কমিটি-মাঠ সবই আছে, নেই শুধু খেলার আয়োজন

ছবি

সরকারি মতিলাল ডিগ্রি কলেজে খণ্ডকালীন দিয়ে চলছে পাঠদান

ছবি

অনুপস্থিত থেকেও নিচ্ছেন বেতন-ভাতা

ছবি

নির্মাণের ১৪ মাসেও চালু হয়নি বরুড়ায় ২০ শয্যার হাসপাতাল

ছবি

দুমকিতে দূর্গোৎসব উপলক্ষে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

ছবি

পটিয়ায় অস্ত্রের মুখে মুরগি ব্যবসায়ী অপহরণের দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার

ছবি

সখীপুরে ৮ মাসে ২৪০ জনকে সর্প দংশন, হাসপাতালে নেই অ্যান্টিভেনম

ছবি

শারদীয় দুর্গোৎসবে শ্রীমঙ্গলে জমজমাট পোশাকের বাজার

ছবি

বাক প্রতিবন্ধী মাসুম জীবনযুদ্ধে জয়ী, যা সবার অনুকরনীয়

ছবি

রাজশাহীতে ডাকাতির লুণ্ঠিত মালামালসহ আটক ৮

ছবি

জগন্নাথপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনা খরচে মিলছে ডেলিভারি সেবা

ছবি

গোপালগঞ্জে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় চালকের সহকারী নিহত

ছবি

বাগেরহাটে মহাসড়কে প্রাণ গেল স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার

ছবি

চুনারুঘাটে ধর্ষণের অভিযোগে দুই কিশোর আটক

ছবি

সিরাজগঞ্জে বাবাকে হত্যায় ছেলের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

আদমদীঘিতে ১ বছর ধরে বেতন বন্ধ খন্ডকালিন ৫ শিক্ষক-কর্মচারির

ছবি

অবৈধভাবে ভারত থেকে ফেরার পথে ৩ বাংলাদেশি আটক

ছবি

ঈশ্বরদীতে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু

ছবি

শিবগঞ্জে মা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

সিরাজদিখানে সড়ক পাকা করার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

দোয়ারাবাজার সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ভারতীয় গরু জব্দ

ছবি

ডিমলায় হিসাবরক্ষণ অফিসে সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তি

ছবি

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে জামাতের প্রার্থীর ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ

ছবি

কালিগঙ্গায় বালু লুট থামছে না

tab

ঝুমন দাসের জামিন আদেশ বৃহস্পতিবার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমন দাসের জামিনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) তার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের জন্য দিন ধার্য করে দেন।

আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, নাহিদ সুলাতানা যুথি ও মো. আশরাফ আলী। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান।

সুনামগঞ্জের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিন না হওয়ায় ঝুমনের আইনজীবীরা জজ আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও জামিন আবেদন নাকচ হয়ে গেলে গত ২২ অগাস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়। আইনজীবী জেড আই খান পান্না জানান, এটা কোন মামলাই হতে পারে না। মামলা যাদের বিরুদ্ধে হওয়ার কথা, তাদের বিরুদ্ধে না হয়ে মামলা করা হয়েছে ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে। ঝুমন দাসের মা যা-ও একটা মামলা করেছে, সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করার পর জামিনে ছাড়া পেয়ে গেছে।

চলতি বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শানে রিসালাত সম্মেলন নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন। ওই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন দিরাইয়ের পার্শ্ববর্তী উপজেলা শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস। তিনি স্ট্যাটাসে মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন। তবে এ সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় অপপ্রচার চালাতে থাকে মামুনুলের অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

কিন্তু পরের দিন কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে গ্রামের সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামের প্রায় ৯০টি বাড়ি ও মন্দিরে ভাঙচুর-লুটপাট করে। হামলার ঘটনায় শাল্লা থানায় অজ্ঞাত পরিচয়সহ মোট দেড় হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাদের মধ্যে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও সবাই এরই মধ্যে জামিনে রয়েছেন। ওই ঘটনায় গত ২২ মার্চ ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। এই মামলায় কয়েক দফায় জামিন আবেদন খারিজের পর ঝুমন দাসের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়।

ঝুমন দাসের পরিবারের আকুতি

ঝুমন দাসকে বিনাবিচারে দীর্ঘদিন আটকে রেখে তার পরিবারকে অন্ধকারে ফেলে রাখা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীরা জামিন পেলেও ঝুমন দাস এখনও জামিন পাননি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি দীর্ঘদিন জেলে থাকায় দরিদ্র ঝুমন দাসের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ বিষয়ে তারা বিচার বিভাগের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন যেন তার প্রতি কোন অবিচার করা না হয়। নওয়াগাঁও গ্রামের লিটন দাস বলেন, ‘ঝুমন কোন অপরাধ করেনি। সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়ে বিনা অপরাধে কারাবরণ করছে। আর প্রকৃত অপরাধীরা জামিনে মুক্ত হয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, যারা শত শত বাড়িঘরে হামলা ও মন্দির ভাঙচুর করেছে, তারা মুক্ত হয়েছে। ঝুমন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার অপরাধে জেলে রয়েছে। এর ফলে ঝুমনকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ঝুমনের মুক্তি দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি বিবেচনাবোধ থেকে ঝুমনের অসহায় পরিবারটির দিকে তাকিয়ে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করে দিন।’ সেখানকার অভিজিৎ দাস নামে একজন বলেন, ‘সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ঝুমন। ঝুমন জেলে থাকার কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছে পরিবারটি। অন্যের কাছ থেকে দেনা করে কোনরকম সংসার চালাচ্ছে। আমরা ঝুমনের মুক্তি দাবি করছি।

ঝুমন দাস জেলে থাকার কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রানী দাস বলেন, ‘আমার কথা বলার ভাষা নেই। একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি দীর্ঘদিন জেলে আটক থাকার কারণে আমার এক বছরের শিশু পুত্র সৌম্য দাস ইশানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে।’ তিনি তার স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি চাওয়ার পাশাপাশি জীবন নিয়েও সংকিত। তিনি তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন। ঝুমন দাসের মা নিভা রানী দাস বলেন, ‘আমার ছেলে কোন অপরাধ করেনি। আমার পুত্রের দ্রুত মুক্তি চাই।’ যারা আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করেছে, তারা জামিন পেলেও ঝুমন দাসের জীবন কাটছে জেলে বলেও দাবি নিভা রানীর।

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০১৮-এর ২৫ (১)ক, ৩১ ও ৩৫ ধারায় (অপরাধ সংঘটনের সহায়তার দন্ড) মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনে ২৫ ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য। সে অনুযায়ী ঝুমনের জামিন মঞ্জুর হওয়ারই বিধান রয়েছে। আবার ৩১ ধারার অপরাধ আইনে জামিন অযোগ্য বলা হয়েছে। এ ধরনের প্রেক্ষাপটেও জামিন দেয়ার এখতিয়ার আদালতের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এজাহারের বর্ণনায় সংশ্লিষ্ট ধারায় আসামির দায় কীভাবে রয়েছে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড, দন্ডনীয় অপরাধ মর্মে বিশ্বাস করার যুক্তসঙ্গত কারণ রয়েছে কি না, বিবেচনায় নেওয়া হয়। তাছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তি পালিয়ে যাবে কি না বা সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সাক্ষ্য জালিয়াতি করবে কি না ইত্যাদিও বিবেচ্য। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে সবটাই ঝুমন দাসের পক্ষেই যায়। ফলে, তার জামিন হওয়া যৌক্তিক মনে করেন আইনজীবীরা।

আইনজীবীরা আরও জানিয়েছেন, মামলা ও ঘটনার প্রেক্ষাপট পর্যালোচনায় দেখা যায়- প্রথমত, ঝুমন দাসকে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ হেফাজতে দেয়া হয় এবং হেফাজতে নেওয়ার প্রায় ১ সপ্তাহ পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঝুমন নিজেই ভিক্টিম। দ্বিতীয়ত, জামিন অযোগ্য ৩১ ধারার বর্ণনা ঝুমনের বিরুদ্ধে অকার্যকর। মূলত নোয়াগাঁয়ে একটি মৌলবাদিগোষ্ঠী হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে, যার দায় ঝুমন দাসের নয়, এটি পূর্বপরিকল্পিত অপরাধকর্ম। বসতিতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় অভিযুক্তরাও জামিনে মুক্ত। আর যদি ৩১ ধারার অপরাধ বিবেচনায় নিতেই হয় তাহলে তা হবে যারা দীর্ঘদিন ধরে সারাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে। তৃতীয়ত, ঝুমনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধ নয় কিংবা ঝুমনের পলাতক হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা, এটি স্বীকৃত যে, তার পরিবারের সদস্যরাই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। চতুর্থত, সাক্ষ্য জালিয়াতির সামর্থ ঝুমনদের থাকে না। এমনকি আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের ব্যর্থতাও দৃশ্যমান। ফলে সবকিছুই জামিন পাওয়ার উপযুক্ত ক্ষেত্র হওয়া সত্ত্বেও ঝুমন দাসের জামিন না হওয়া একটি দুঃখজনক ঘটনা বলে মনে করেন আইনজীবীরা।

ঝুমনের মুক্তির জন্য শুধু ওই গ্রামের মানুষ নয়, সারা দেশজুড়ে তার মুক্তির দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিবাদকারীরা তাকে মুক্তি না দেয়ার কারণ জানতে চায়। ইতোমধ্যে, ঝুমন দাসের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক। ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, সুলতানা কামাল, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ডা. সারওয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, ডা. ফওজিয়া মোসলেম, এস এম এ সবুর, রানা দাসগুপ্ত, জাহিদুল বারী, নুর মোহাম্মদ তালুকদার, খুশী কবির, রোকেয়া কবির, এম এম আকাশ, রোবায়েত ফেরদৌস, সালেহ আহমেদ, মো. জাহাঙ্গীর, পারভেজ হাসেম, মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, দীপায়ন খীসা, জীবনানন্দ জয়ন্ত, সেলু বাসিত, অলক দাসগুপ্ত, এ কে আজাদ ও গৌতম শীল।

back to top