alt

বিদেশি বিনিয়োগের খরা কাটছেই না

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ২৪ জুলাই ২০২১

বিদেশি বিনিয়োগ আগে থেকেই কম ছিল বাংলাদেশে। এর মধ্যে এলো করোনার প্রভাব। এতে বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমে গেছে। ২০২০ সালে মোট ৩৩৭ কোটি ৮৫ লাখ (৩.৩৭ বিলিয়ন) ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে বাংলাদেশে। এই অঙ্ক ২০১৯ সালের চেয়ে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি ঋণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের চেয়ে কম প্রায় ২৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে ৩৯৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে এসেছিল ৪৫৪ কোটি ৬২ লাখ ডলার যা একক বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ। ওই বছরে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে জাপানের কোম্পানি জাপান টোব্যাকো। আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা কেনা বাবদ প্রায় ১৫০ কোটি (১.৫ বিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ করেছিল তারা। ২০২০ সালে নিট এফডিআই কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। ২০২০ সালে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ২৫৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। ২০১৯ ও ২০১৮ সালে নিট এফডিআইয়ের অঙ্ক ছিল যথাক্রমে ২৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ও ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।

প্রতিবেদনে বিদেশি বিনিয়োগে এই ধসের জন্য করোনাভাইরাস মহামারীকে দায়ী করে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। তার প্রভাব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগে পড়েছে।’ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশে আগের মতোই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে প্রতিবেদনে আশা করা হয়েছে।

গত ২১ জুন জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড ‘বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন ২০২১’- প্রকাশ করেছে। তাতেও বাংলাদেশে এফডিআই কমার তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, মহামারীর ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই বিনিয়োগ প্রবাহ আগের অবস্থায় আসতে সময় লাগবে। ২০২০ সালে মোট ২৫৬ কোটি ৪০ লাখ (২.৫৬ বিলিয়ন) ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পেয়েছে বাংলাদেশে। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ কম। ২০১৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৮৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ ২০২০ সালে বাংলাদেশে যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে এফডিআইয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে আঙ্কটাড।

আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলো তিনভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। মূলধন হিসাবে নগদ বা শিল্পের যন্ত্রপাতি হিসাবে, বাংলাদেশে ব্যবসা করে অর্জিত মুনাফা বিদেশে না নিয়ে পুনবিনিয়োগ করে এবং এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। এ তিন পদ্ধতির যে কোনভাবে দেশে বিনিয়োগ আসলে তা এফডিআই হিসাবে গণ্য করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক বছরের এফডিআইয়ের যে তথ্য প্রকাশ করে তাতে বিদেশি বিনিয়োগে এখনও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, ৩০ জুলাই শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে (২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ মে) মোট ৩২২ কোটি ৭০ লাখ ডলার এফডিআই পেয়েছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। এই ১১ মাসে নিট এফডিআইয়ের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১২৬ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে মোট ২৯৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার এসেছিল।

নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ১১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট অঙ্ককে নিট এফডিআই বলা হয়। ২০২০ সালে বিদেশ থেকে মূল পুঁজি আনা ও কোম্পানিগুলোর অর্জিত মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ সামান্য বেড়েছে। কিন্তু বিদেশি এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ ব্যাপকভাবে কমেছে। এ কারণে সার্বিকভাবে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মূল পুঁজি বিনিয়োগ বেড়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। কোম্পানিগুলোর অর্জিত মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ বেড়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ কমেছে ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ। মূলত মূল পুঁজি ও অর্জিত মুনাফা থেকে বিনিয়োগ বেশি হারে না বাড়ায় এবং এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় সার্বিকভাবে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে গেছে। ২০১৯ সালে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি ২৯ লাখ ডলার। গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৫২ লাখ ডলারে। ২০২০ সালে মোট বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ, ব্যাংকিং খাতে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, টেক্সটাইলে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, টেলিকমিউনিকেশনে ১০ দশমিক ১ শতাংশ, খাদ্যে ১৩ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে। গত বছর দেশে আসা মোট এফডিআইয়ের মধ্যে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ মূল পুঁজি, ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ এবং ৬ শতাংশ এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে দেশে মোট ২ হাজার ৫৫০ কোটি ৮৫ লাখ ডলার এফডিআই এসেছে। এর মধ্যে মূল পুঁজি এসেছে ৯১২ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ৩৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মুনাফা থেকে ও ঋণ থেকে বিনিয়োগ হয়েছে বাকি ৬৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ মূল বিনিয়োগ মাত্র এক তৃতীয়াংশ। এই সময়ে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা মোট বিনিয়োগের ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সিঙ্গাপুর। তারা মোট বিনিয়োগের ১৬ দশমিক ১ শতাংশ করেছে। তৃতীয় অবস্থানে নেদারল্যান্ডের বিনিয়োগ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, চীনের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, মিশরের ৬ দশমিক ২ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ৬ দশমিক ১ শতাংশ, হংকংয়ের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশগুলোর ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ রয়েছে।

ছবি

সবজির দাম সামান্য কমেছে, অন্য নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে

ছবি

দেশে কার্ডভিত্তিক লেনদেন দ্রুত বাড়ছে

ছবি

২০ শ্রমিকের সম্মতিতেও করা যাবে ট্রেড ইউনিয়ন

ছবি

এক বছরে বাংলাদেশের ৩৬ কারখানা পেল আন্তর্জাতিক ‘সবুজ’ সনদ

ছবি

প্রবাসী করদাতাদের জন্য ই-রিটার্ন দাখিল সহজ হল

ছবি

ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ৪৮৫০ কোটি টাকা

ছবি

চালু হলো প্যাসিফিকের সাত কারখানা

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে টেকনো’র নতুন স্মার্টফোন স্পার্ক ৪০ ফাইভজি

ছবি

দেশে ‘চামচা পুঁজিবাদী’ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে: সিলেটে ড. দেবপ্রিয়

ছবি

দেশের বাজারে শাওমি ব্ল্যাকশার্ক ব্র্যান্ডের প্যাড ৭ নিয়ে এলো টেকটাইম

ছবি

জুলাই-সেপ্টেম্বরে শুল্ক-কর আদায়ে ঘাটতি ৯ হাজার কোটি টাকা

ছবি

তিন দেশ থেকে এক লাখ মেট্রিক টন সার কিনবে সরকার

ছবি

টানা রেকর্ডের পর কমলো স্বর্ণ-রুপার দাম

ছবি

আল-আরাফাহ্ ব্যাংক ও সমাধান সার্ভিসেসের চুক্তি

ছবি

শিশুখাদ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিনের শর্ত শিথিল

ছবি

পুঁজিবাজারে গুজব ছড়াতে দেয়া যাবে না: আনিসুজ্জামান চৌধুরী

ছবি

রিজার্ভ ছাড়ালো ৩২ বিলিয়ন ডলার

ছবি

আইসিসিবিতে বাংলাদেশ-চীন গ্রিন টেক্সটাইল এক্সপো শুরু

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংক করতে চায় প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স

ছবি

বেড়েছে ডলারের দাম

ছবি

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর ৪১৮তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

চার মাস পর ফের ৩০০ কোটি টাকার ঘরে শেয়ারবাজারের লেনদেন

ছবি

পুঁজিবাজারে শিবলী-রিয়াজ আজীবন নিষিদ্ধ

ছবি

দরপত্র ছাড়া ২৮ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনবে সরকার

ছবি

সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ ও জেনারেল হাসপাতালে ব্যবহার হচ্ছে ওয়ালটনের স্মার্ট ইনভার্টার চিলার

ছবি

বিনিয়োগ ঝুঁকি ও সহনশীলতা সূচকে ১৯৩ তম অবস্থানে বাংলাদেশ: হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে এডিপি বাস্তবায়ন ৫ শতাংশ

ছবি

এলআর গ্লোবালের রিয়াজ ইসলাম শেয়ারবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ

ছবি

আমদানি পণ্য ছাড় স্বাভাবিক হয়নি, ব্যবসায়ীরা কষছেন ক্ষতির হিসাব

ছবি

করাচি থেকে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে: খাদ্য উপদেষ্টা

ছবি

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন, চাল আমদানির অনুমতি সীমিত রাখার সুপারিশ

ছবি

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার : বিডা চেয়ারম্যান

ছবি

দেশে একমাত্র মুনাফাকারী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক: বিটিএমএ সভাপতি

ছবি

নোভার্টিসের ওষুধ উৎপাদন শুরু করল নেভিয়ান

ছবি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গঠন হচ্ছে শরিয়াহ উপদেষ্টা পর্ষদ

ছবি

কারচুপি নয়, পরিসংখ্যানে পরোক্ষ অপব্যবহার হয়: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

tab

বিদেশি বিনিয়োগের খরা কাটছেই না

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শনিবার, ২৪ জুলাই ২০২১

বিদেশি বিনিয়োগ আগে থেকেই কম ছিল বাংলাদেশে। এর মধ্যে এলো করোনার প্রভাব। এতে বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমে গেছে। ২০২০ সালে মোট ৩৩৭ কোটি ৮৫ লাখ (৩.৩৭ বিলিয়ন) ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে বাংলাদেশে। এই অঙ্ক ২০১৯ সালের চেয়ে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি ঋণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের চেয়ে কম প্রায় ২৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে ৩৯৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে এসেছিল ৪৫৪ কোটি ৬২ লাখ ডলার যা একক বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ। ওই বছরে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে জাপানের কোম্পানি জাপান টোব্যাকো। আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা কেনা বাবদ প্রায় ১৫০ কোটি (১.৫ বিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ করেছিল তারা। ২০২০ সালে নিট এফডিআই কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। ২০২০ সালে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ২৫৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। ২০১৯ ও ২০১৮ সালে নিট এফডিআইয়ের অঙ্ক ছিল যথাক্রমে ২৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ও ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।

প্রতিবেদনে বিদেশি বিনিয়োগে এই ধসের জন্য করোনাভাইরাস মহামারীকে দায়ী করে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। তার প্রভাব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগে পড়েছে।’ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশে আগের মতোই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে প্রতিবেদনে আশা করা হয়েছে।

গত ২১ জুন জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড ‘বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন ২০২১’- প্রকাশ করেছে। তাতেও বাংলাদেশে এফডিআই কমার তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, মহামারীর ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই বিনিয়োগ প্রবাহ আগের অবস্থায় আসতে সময় লাগবে। ২০২০ সালে মোট ২৫৬ কোটি ৪০ লাখ (২.৫৬ বিলিয়ন) ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পেয়েছে বাংলাদেশে। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ কম। ২০১৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৮৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ ২০২০ সালে বাংলাদেশে যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে এফডিআইয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে আঙ্কটাড।

আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলো তিনভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। মূলধন হিসাবে নগদ বা শিল্পের যন্ত্রপাতি হিসাবে, বাংলাদেশে ব্যবসা করে অর্জিত মুনাফা বিদেশে না নিয়ে পুনবিনিয়োগ করে এবং এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। এ তিন পদ্ধতির যে কোনভাবে দেশে বিনিয়োগ আসলে তা এফডিআই হিসাবে গণ্য করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক বছরের এফডিআইয়ের যে তথ্য প্রকাশ করে তাতে বিদেশি বিনিয়োগে এখনও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, ৩০ জুলাই শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে (২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ মে) মোট ৩২২ কোটি ৭০ লাখ ডলার এফডিআই পেয়েছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। এই ১১ মাসে নিট এফডিআইয়ের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১২৬ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে মোট ২৯৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার এসেছিল।

নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ১১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট অঙ্ককে নিট এফডিআই বলা হয়। ২০২০ সালে বিদেশ থেকে মূল পুঁজি আনা ও কোম্পানিগুলোর অর্জিত মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ সামান্য বেড়েছে। কিন্তু বিদেশি এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ ব্যাপকভাবে কমেছে। এ কারণে সার্বিকভাবে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মূল পুঁজি বিনিয়োগ বেড়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। কোম্পানিগুলোর অর্জিত মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ বেড়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ কমেছে ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ। মূলত মূল পুঁজি ও অর্জিত মুনাফা থেকে বিনিয়োগ বেশি হারে না বাড়ায় এবং এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় সার্বিকভাবে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে গেছে। ২০১৯ সালে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি ২৯ লাখ ডলার। গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৫২ লাখ ডলারে। ২০২০ সালে মোট বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ, ব্যাংকিং খাতে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, টেক্সটাইলে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, টেলিকমিউনিকেশনে ১০ দশমিক ১ শতাংশ, খাদ্যে ১৩ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে। গত বছর দেশে আসা মোট এফডিআইয়ের মধ্যে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ মূল পুঁজি, ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ এবং ৬ শতাংশ এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে দেশে মোট ২ হাজার ৫৫০ কোটি ৮৫ লাখ ডলার এফডিআই এসেছে। এর মধ্যে মূল পুঁজি এসেছে ৯১২ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ৩৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মুনাফা থেকে ও ঋণ থেকে বিনিয়োগ হয়েছে বাকি ৬৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ মূল বিনিয়োগ মাত্র এক তৃতীয়াংশ। এই সময়ে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা মোট বিনিয়োগের ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সিঙ্গাপুর। তারা মোট বিনিয়োগের ১৬ দশমিক ১ শতাংশ করেছে। তৃতীয় অবস্থানে নেদারল্যান্ডের বিনিয়োগ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, চীনের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, মিশরের ৬ দশমিক ২ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ৬ দশমিক ১ শতাংশ, হংকংয়ের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশগুলোর ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ রয়েছে।

back to top