দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। মানুষ যথাসম্ভব ঘরে থাকার চেষ্টা করছে। রাস্তায় শুধু রিক্সা ও জরুরি সেবার বাহন চলার অনুমতি দেয়া আছে। এ অবস্থায় কাজ হারিয়ে বেকার অনেক মধ্যবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।
এরই মধ্যে নি¤œ আয়ের অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেলেও মধ্যবিত্তরা পড়েছেন বিপাকে। তারা যেমন গ্রামে ফিরতে পারছেন না তেমনি পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় থাকাও কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। পার করছেন মানবেতর জীবন।
এমনি একজন আব্দুর রাজ্জাক। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে আট বছর মভপড় ঢাকায় আসেন বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী নিয়ে। ঢাকায় এসে প্রথম ৬ বছর স্ত্রী সন্তান নিয়ে কখোনই কোনো আর্থিক সমস্যায় পড়েন নি।
কিন্তু মহামারীর শুরুতেই তার জীবনে নেমে আসে অমানিশা। করোনার প্রথম আঘাত পড়ে রাজ্জাকের চাকরীতে। ২০২০ সালের মে মাসে তার চাকরী চলে যায়। বউ বাচ্চাকে নিয়ে যে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাবেন তারও উপায় নাই।
এমন পরিস্থিতিতে জমানো টাকা আর বউয়ের গয়না বেচে একটা মোটর সাইকেল কিনে উবার এ দিয়ে সংসার চালানো শুরু করেন। দিনে কম করে হলেও হাজার টাকা আয়। নতুন পেশা হলেও বেশ ভালোই চলছিল। চাকরী হারানোর কষ্ট ভুলে ছিলেন।
কিন্তু বিপত্তি শুরু হয় লকডাউনে।
গণ পরিবহণ বন্ধ থাকায় বিশেষ কাজে বের হওয়া মানুষের ভরসা তারাই। যাত্রী কম হলেও ট্রিপ পাওয়া যায়। কিন্তু লকডাউনে সকল রাইড শেয়ার বন্ধ। কিন্তু এ নিয়েও সমস্যা না, সমস্যা হলো পুলিশ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে চলতে হয়। ধরা পড়লেই জরিমানা গুনতে হবে। দেবে মামলা।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন বলে জানান রাজ্জাক। তারপরও পুলিশের চোখ এড়িয়ে দুই একটা ট্রিপ দিচ্ছেন। ক্ষোভের সাথে রাজ্জাক বলেন,‘একই যাত্রী কম তার উপর পুলিশী হয়রানির ভয়। বের না হয়ে কি করবো। বাসা ভাড়া, বউ বাচ্চার ভরণপোষণ করবো কিভাবে। চাকরী নাই। ধার করে কতোদিন সংসার চালানো যায়। সবই চলে। যতো সমস্যা আমাদের মধ্যবিত্তদের।’
মিরপুর রংধনু শপিং কমপ্লেক্সে কালেকশন কসমেটিকস দোকানের ম্যানেজার সোহাগ আলম বলেন, ‘আমরা শেষ। আমাদের ব্যবসা শেষ।’ এমন লকডাউন দিয়ে করোনা কমানো সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন ‘যারা বড়লোক টাকা আছে তাদের সমস্য নাই আবার যারা একেবারে নি¤œবিত্ত তারা হাত পাততে পারে। মাঝখান থেকে আমরা যারা মধ্যবিত্ত তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ছে।’
একটা প্রতিষ্ঠিত মার্চেন্ডাইজিং প্রতিষ্ঠানে লাখ টাকার ওপর বেতন পেতেন আলবার্ট সরকার। করোনার ঘায়ে তারও চাকরী চলে যায়। চাকরী চলে যাওয়াতে আলবার্ট ভেঙে না পড়ে, ঘরে বসে কি করা যায় সেই ভাবনা থেকেই শুরু করেন নার্সারী। নিজের বাড়ী। সামনে বেশ খানকিটা জায়গা, বেসমেন্ট আর সাথেই ফুটপাথ সব মিলিয়ে শুরু করে দেন নার্সারীর কাজ।
আগে থেকেই বাগান ফুল গাছ তার প্রিয়। এই প্রিয় বিষয়টিকেই তিনি পেশা হিসেবে নিলেন। আলবার্ট বলেন, ‘করোনার মধ্যে অনেকেই বারান্দায়, ছাদে বাগান করা শুরু করেন।’ মানুষের বাগান করার সখ তাকে সফলতার মুখ দেখালেও লকডাউনে তা আবার মুখ থুবড়ে পড়ে।
তিনি বলেন, ‘মাঝে চারা বিক্রি বেড়ে গেলেও এখন ধুপ করে তা কমে গেছে। লকডাউনের আগে গাছের চারা, মাটি, টব, সার বিক্রি করে সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হতো। এ সপ্তাহে তা অর্ধেকের নীচে নেমে গেছে।’ এ অবস্থা চলতে থাকলে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সমস্যা হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন আলবার্ট।
বুধবার, ০৭ জুলাই ২০২১
দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। মানুষ যথাসম্ভব ঘরে থাকার চেষ্টা করছে। রাস্তায় শুধু রিক্সা ও জরুরি সেবার বাহন চলার অনুমতি দেয়া আছে। এ অবস্থায় কাজ হারিয়ে বেকার অনেক মধ্যবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।
এরই মধ্যে নি¤œ আয়ের অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেলেও মধ্যবিত্তরা পড়েছেন বিপাকে। তারা যেমন গ্রামে ফিরতে পারছেন না তেমনি পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় থাকাও কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। পার করছেন মানবেতর জীবন।
এমনি একজন আব্দুর রাজ্জাক। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে আট বছর মভপড় ঢাকায় আসেন বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী নিয়ে। ঢাকায় এসে প্রথম ৬ বছর স্ত্রী সন্তান নিয়ে কখোনই কোনো আর্থিক সমস্যায় পড়েন নি।
কিন্তু মহামারীর শুরুতেই তার জীবনে নেমে আসে অমানিশা। করোনার প্রথম আঘাত পড়ে রাজ্জাকের চাকরীতে। ২০২০ সালের মে মাসে তার চাকরী চলে যায়। বউ বাচ্চাকে নিয়ে যে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাবেন তারও উপায় নাই।
এমন পরিস্থিতিতে জমানো টাকা আর বউয়ের গয়না বেচে একটা মোটর সাইকেল কিনে উবার এ দিয়ে সংসার চালানো শুরু করেন। দিনে কম করে হলেও হাজার টাকা আয়। নতুন পেশা হলেও বেশ ভালোই চলছিল। চাকরী হারানোর কষ্ট ভুলে ছিলেন।
কিন্তু বিপত্তি শুরু হয় লকডাউনে।
গণ পরিবহণ বন্ধ থাকায় বিশেষ কাজে বের হওয়া মানুষের ভরসা তারাই। যাত্রী কম হলেও ট্রিপ পাওয়া যায়। কিন্তু লকডাউনে সকল রাইড শেয়ার বন্ধ। কিন্তু এ নিয়েও সমস্যা না, সমস্যা হলো পুলিশ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে চলতে হয়। ধরা পড়লেই জরিমানা গুনতে হবে। দেবে মামলা।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন বলে জানান রাজ্জাক। তারপরও পুলিশের চোখ এড়িয়ে দুই একটা ট্রিপ দিচ্ছেন। ক্ষোভের সাথে রাজ্জাক বলেন,‘একই যাত্রী কম তার উপর পুলিশী হয়রানির ভয়। বের না হয়ে কি করবো। বাসা ভাড়া, বউ বাচ্চার ভরণপোষণ করবো কিভাবে। চাকরী নাই। ধার করে কতোদিন সংসার চালানো যায়। সবই চলে। যতো সমস্যা আমাদের মধ্যবিত্তদের।’
মিরপুর রংধনু শপিং কমপ্লেক্সে কালেকশন কসমেটিকস দোকানের ম্যানেজার সোহাগ আলম বলেন, ‘আমরা শেষ। আমাদের ব্যবসা শেষ।’ এমন লকডাউন দিয়ে করোনা কমানো সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন ‘যারা বড়লোক টাকা আছে তাদের সমস্য নাই আবার যারা একেবারে নি¤œবিত্ত তারা হাত পাততে পারে। মাঝখান থেকে আমরা যারা মধ্যবিত্ত তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ছে।’
একটা প্রতিষ্ঠিত মার্চেন্ডাইজিং প্রতিষ্ঠানে লাখ টাকার ওপর বেতন পেতেন আলবার্ট সরকার। করোনার ঘায়ে তারও চাকরী চলে যায়। চাকরী চলে যাওয়াতে আলবার্ট ভেঙে না পড়ে, ঘরে বসে কি করা যায় সেই ভাবনা থেকেই শুরু করেন নার্সারী। নিজের বাড়ী। সামনে বেশ খানকিটা জায়গা, বেসমেন্ট আর সাথেই ফুটপাথ সব মিলিয়ে শুরু করে দেন নার্সারীর কাজ।
আগে থেকেই বাগান ফুল গাছ তার প্রিয়। এই প্রিয় বিষয়টিকেই তিনি পেশা হিসেবে নিলেন। আলবার্ট বলেন, ‘করোনার মধ্যে অনেকেই বারান্দায়, ছাদে বাগান করা শুরু করেন।’ মানুষের বাগান করার সখ তাকে সফলতার মুখ দেখালেও লকডাউনে তা আবার মুখ থুবড়ে পড়ে।
তিনি বলেন, ‘মাঝে চারা বিক্রি বেড়ে গেলেও এখন ধুপ করে তা কমে গেছে। লকডাউনের আগে গাছের চারা, মাটি, টব, সার বিক্রি করে সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হতো। এ সপ্তাহে তা অর্ধেকের নীচে নেমে গেছে।’ এ অবস্থা চলতে থাকলে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সমস্যা হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন আলবার্ট।