রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ, উচ্চ আদালতে আপিলের সিদ্ধান্ত
মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যার ঘটনায় দায়ের করা বহুল আলোচিত মামলায় সাবেক জাতীয় পার্টির সাংসদ গোলাম ফারুক অভিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। প্রায় ২৩ বছর পর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার ২য় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোছা. শাহীনুর আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় অভিকে খালাস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালত।
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মো. আবু জাফর রিজভী। তিনি জানিয়েছেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পর্যালোচনা করে উচ্চ আদালতে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যদিকে, অভির পক্ষে নিযুক্ত রাষ্ট্রীয় আইনজীবী শাহ্ ইলিয়াস রতন বলেছেন, তাঁর মক্কেল ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
২০০২ সালের ১০ নভেম্বর কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলারের পাশে তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। পরদিন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সফি উদ্দিন মামলা করেন।
মামলার তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশের হাতে ছিল। পরে ২৪ নভেম্বর মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি পরিচালনা করেন। শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন সিআইডি পরিদর্শক মোজাম্মেল হক সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভিকে একমাত্র আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, অভির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে তিন্নি তাঁর স্বামীকে তালাক দেন। পরবর্তীতে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানানোর জেরে অভির বিরুদ্ধে তিন্নিকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। তদন্তে উঠে আসে, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যার পর কোনো এক সময় তিন্নিকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে মৈত্রী সেতুর কাছে ফেলে রাখা হয়।
২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত অভির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। অভি মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তিনি কানাডায় অবস্থান করছিলেন এবং ২০০৬ সালে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবায়নের আবেদন করেন। তবে বাংলাদেশ সরকার তাকে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করেনি। ফলে তিনি দেশে ফিরে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেননি।
গতকাল মঙ্গলবার রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। যথাযথ প্রমাণের অভাবে অভিকে খালাস প্রদান করা হলো।
রায় ঘোষণার সময় তিন্নির পরিবারের কোনো সদস্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তবে রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তারা উচ্চ আদালতে আপিলের সিদ্ধান্ত নেবে।
অভি এক চিঠির মাধ্যমে দাবি করেছিলেন, তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাঁর নাম এজাহারে ছিল না। তবে নির্যাতনের আশঙ্কায় তিনি দেশত্যাগ করেন এবং কানাডায় আশ্রয় নেন।
মামলাটির তদন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছেন। এটি বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করেছে। তদন্তে নাম আসার পর থেকে অভি পলাতক ছিলেন।
তিন্নি হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি ছিল দেশের অন্যতম আলোচিত মামলা। প্রমাণ ও সাক্ষীর অভাবে মামলার নিষ্পত্তি হতে দুই দশকেরও বেশি সময় লেগেছে। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, আসামির পলাতক থাকা এবং যথাযথ প্রমাণ সংগ্রহে জটিলতা মামলাটিকে দীর্ঘায়িত করেছে।
রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা মনে করেন, মামলাটি আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে মামলার নতুন মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ, উচ্চ আদালতে আপিলের সিদ্ধান্ত
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যার ঘটনায় দায়ের করা বহুল আলোচিত মামলায় সাবেক জাতীয় পার্টির সাংসদ গোলাম ফারুক অভিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। প্রায় ২৩ বছর পর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার ২য় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোছা. শাহীনুর আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় অভিকে খালাস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালত।
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মো. আবু জাফর রিজভী। তিনি জানিয়েছেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পর্যালোচনা করে উচ্চ আদালতে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যদিকে, অভির পক্ষে নিযুক্ত রাষ্ট্রীয় আইনজীবী শাহ্ ইলিয়াস রতন বলেছেন, তাঁর মক্কেল ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
২০০২ সালের ১০ নভেম্বর কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলারের পাশে তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। পরদিন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সফি উদ্দিন মামলা করেন।
মামলার তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশের হাতে ছিল। পরে ২৪ নভেম্বর মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি পরিচালনা করেন। শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন সিআইডি পরিদর্শক মোজাম্মেল হক সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভিকে একমাত্র আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, অভির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে তিন্নি তাঁর স্বামীকে তালাক দেন। পরবর্তীতে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানানোর জেরে অভির বিরুদ্ধে তিন্নিকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। তদন্তে উঠে আসে, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যার পর কোনো এক সময় তিন্নিকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে মৈত্রী সেতুর কাছে ফেলে রাখা হয়।
২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত অভির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। অভি মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তিনি কানাডায় অবস্থান করছিলেন এবং ২০০৬ সালে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবায়নের আবেদন করেন। তবে বাংলাদেশ সরকার তাকে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করেনি। ফলে তিনি দেশে ফিরে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেননি।
গতকাল মঙ্গলবার রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। যথাযথ প্রমাণের অভাবে অভিকে খালাস প্রদান করা হলো।
রায় ঘোষণার সময় তিন্নির পরিবারের কোনো সদস্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তবে রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তারা উচ্চ আদালতে আপিলের সিদ্ধান্ত নেবে।
অভি এক চিঠির মাধ্যমে দাবি করেছিলেন, তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাঁর নাম এজাহারে ছিল না। তবে নির্যাতনের আশঙ্কায় তিনি দেশত্যাগ করেন এবং কানাডায় আশ্রয় নেন।
মামলাটির তদন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছেন। এটি বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করেছে। তদন্তে নাম আসার পর থেকে অভি পলাতক ছিলেন।
তিন্নি হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি ছিল দেশের অন্যতম আলোচিত মামলা। প্রমাণ ও সাক্ষীর অভাবে মামলার নিষ্পত্তি হতে দুই দশকেরও বেশি সময় লেগেছে। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, আসামির পলাতক থাকা এবং যথাযথ প্রমাণ সংগ্রহে জটিলতা মামলাটিকে দীর্ঘায়িত করেছে।
রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা মনে করেন, মামলাটি আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে মামলার নতুন মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে।