এক দশক পেরিয়েও তদন্তে গতি নেই, বিচারের দাবি সাংবাদিক মহলের
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও সাবেক ডিএমপি কর্মকর্তা মশিউর রহমানকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদ এ সংক্রান্ত নির্দেশ দেন। তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ আবেদনে জানায়, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া করা ফ্ল্যাটে সাগর-রুনিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তখন তাদের সাড়ে চার বছরের সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিল। ঘটনার পর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার পরপরই তদন্ত শুরু করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। চার দিন পর এটি হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)। রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থতার পর ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্তভার যায় র্যাবের হাতে। পরবর্তীতে র্যাব বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্ট মামলার তদন্তের দায়িত্ব র্যাব থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি টাস্কফোর্সে ন্যস্ত করে। নির্দেশে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।
র্যাবের তদন্ত চলাকালে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন আলামত। তবে, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনেও সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করা যায়নি।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তদন্তের স্বার্থে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও মশিউর রহমানকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক জানিয়েছেন, এই দুজন ওই সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তাদের ভূমিকা ও সংযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তদন্তে নতুন তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তদন্তে বারবার সময় নেওয়ার ফলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ১১৪ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় পিছিয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
হাইকোর্ট আরও নির্দেশ দেয়, তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ও আলামত হারিয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুত তদন্ত শেষ করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয় আদালত।
জিয়াউল আহসান আগে র্যাবের এডিজি (অপারেশন) এবং মশিউর রহমান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি ছিলেন। পরবর্তীতে মশিউর অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেলেও অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বরখাস্ত করা হয়। জিয়াউল আহসানকেও সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মশিউর রহমান বর্তমানে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। অন্যদিকে, জিয়াউল আহসান বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ দুজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য থাকার প্রেক্ষিতেই জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হয়।
সাংবাদিক মহল দীর্ঘদিন ধরে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি জানিয়ে আসছে। ডিইউজে, বিএফইউজে, ও ডিআরইউসহ বিভিন্ন সংগঠন ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছে। তারা অভিযোগ করে, দীর্ঘসূত্রতার ফলে মামলার প্রকৃত রহস্য ধামাচাপা পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। বরং সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত প্রক্রিয়া জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকার নতুন করে টাস্কফোর্স গঠন করে। নতুন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি পূরণ না করা হলে তারা জনগণের কাছে দায়ী থাকবেন।
এই তদন্তের বর্তমান অগ্রগতির ফলে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। পিবিআই জানায়, মামলার তদন্তে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২০২৫ সালের ২৭ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে।
এক দশক পেরিয়েও তদন্তে গতি নেই, বিচারের দাবি সাংবাদিক মহলের
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও সাবেক ডিএমপি কর্মকর্তা মশিউর রহমানকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদ এ সংক্রান্ত নির্দেশ দেন। তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ আবেদনে জানায়, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া করা ফ্ল্যাটে সাগর-রুনিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তখন তাদের সাড়ে চার বছরের সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিল। ঘটনার পর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার পরপরই তদন্ত শুরু করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। চার দিন পর এটি হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)। রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থতার পর ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্তভার যায় র্যাবের হাতে। পরবর্তীতে র্যাব বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্ট মামলার তদন্তের দায়িত্ব র্যাব থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি টাস্কফোর্সে ন্যস্ত করে। নির্দেশে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।
র্যাবের তদন্ত চলাকালে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন আলামত। তবে, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনেও সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করা যায়নি।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তদন্তের স্বার্থে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও মশিউর রহমানকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক জানিয়েছেন, এই দুজন ওই সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তাদের ভূমিকা ও সংযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তদন্তে নতুন তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তদন্তে বারবার সময় নেওয়ার ফলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ১১৪ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় পিছিয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
হাইকোর্ট আরও নির্দেশ দেয়, তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ও আলামত হারিয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুত তদন্ত শেষ করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয় আদালত।
জিয়াউল আহসান আগে র্যাবের এডিজি (অপারেশন) এবং মশিউর রহমান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি ছিলেন। পরবর্তীতে মশিউর অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেলেও অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বরখাস্ত করা হয়। জিয়াউল আহসানকেও সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মশিউর রহমান বর্তমানে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। অন্যদিকে, জিয়াউল আহসান বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ দুজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য থাকার প্রেক্ষিতেই জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হয়।
সাংবাদিক মহল দীর্ঘদিন ধরে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি জানিয়ে আসছে। ডিইউজে, বিএফইউজে, ও ডিআরইউসহ বিভিন্ন সংগঠন ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছে। তারা অভিযোগ করে, দীর্ঘসূত্রতার ফলে মামলার প্রকৃত রহস্য ধামাচাপা পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। বরং সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত প্রক্রিয়া জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকার নতুন করে টাস্কফোর্স গঠন করে। নতুন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি পূরণ না করা হলে তারা জনগণের কাছে দায়ী থাকবেন।
এই তদন্তের বর্তমান অগ্রগতির ফলে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। পিবিআই জানায়, মামলার তদন্তে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২০২৫ সালের ২৭ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে।