রি এজেন্টে নতুন তারিখ দিয়ে বিক্রি হতো এসব কিট, তিন প্রতিষ্ঠানের ৯ জন গ্রেপ্তার
অননুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস আমদানি, নকল করোনা টেস্টিং কিটসহ বিভিন্ন ধরনের ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিকেল টেস্টিং কিট এবং রি-এজেন্টে জালিয়াতির মাধ্যমে নতুন করে মেয়াদ বসিয়ে বাজারজাতকরণের অভিযোগে রাজধানীর ৩টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ ঘটনায় চার ট্রাক অননুমোদিত, মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ভেজাল মেডিকেল টেস্ট কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার লালমাটিয়ায় বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বনানী এলাকায় অবস্থিত এক্সন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস ও হাইটেক হেলথকেয়ার নামে ৩টি প্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউজে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় অভিযান চালায়। এ সময় ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শামীম মোল্লা (৪০), ম্যানেজার শহীদুল আলম (৪২), এক্সন টেকনলজিস অ্যান্ড সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হাসান (৪০), হাইটেক হেলথ কেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মোস্তফা কামাল (৪৮), বায়োল্যাবের টেকনিশিয়ান আবদুল্লাহ আল বাকী ছাব্বির (২৪), জিয়াউর রহমান (৩৫), সুমন (৩৫), জাহিদুল আমিন পুলক (২৭) ও সোহেল রানা (২৮)।
র্যাব জানায়, প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ এবং সহসা মেয়াদোত্তীর্ণ হবে এরূপ টেস্ট কিট ও রি-এজন্টেসমূহ দেশি-বিদেশি আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের নিকট হতে অতি স্বল্পমূল্যে সংগ্রহ করে পুনরায় তাতে বর্ধিত মেয়াদের তারিখ বিশেষ মুদ্রণ যন্ত্রের সাহায্যে মুদ্রণ বা টেম্পারিং করে এসব টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টসমূহ বাজারজাত করে আসছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্টও তারা নিয়মিতভাবে সরবরাহ করে আসছিল, যেমন-জন্ডিস, ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, করোনা, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগসহ অন্যান্য প্যাথলোজিক্যাল টেস্টের জন্য যেসব কিট ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এমনকি ‘এইডস’ রোগ নির্ণয়ের জন্য নির্ধারিত প্যাথলোজিক্যাল টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টও রয়েছে এই তালিকায়, যা তাদের সংরক্ষণে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়।
গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টায় র্যাব-২ এর কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে ওই ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, চক্রটি ২০১০ সাল থেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে বিদেশ থেকে বিভিন্ন রোগের কিট এনে তা টেম্পারিং করে মেয়াদ বাড়াতো। এই তিন প্রতিষ্ঠান করোনা, ক্যান্সার, এইডস, জ-িস, ডায়াবেটিস ও নিউমোনিয়া রোগের টেস্ট কিটের মেয়াদ বাড়িয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করতো। র্যাব গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, কিছু অসাধু ব্যক্তি অননুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস আমদানিকরণ, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ করোনার টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টসহ অন্যান্য রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন রোগের টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্ট মজুদ ও বাজারজাত করে আসছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে দেখা যায়, ওই তিন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশেষ ধরনের প্রিন্টিং মেশিনের সাহায্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার খুব অল্প সময় রয়েছে, এমন বিভিন্ন টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর কাজ চলছে। পরবর্তীতে তাদের ওয়্যারহাউজগুলোতে তল্লাশির সময় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সেখানে মজুদকৃত বেশিরভাগ মেডিকেল ডিভাইস অননুমোদিত, প্রায় সকল প্রকার টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্টের ব্যবহারের মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা দ্রুতই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।
জিজ্ঞাসাবাদে এই তিন প্রতিষ্ঠানের গ্রেফতারকৃতরা জানায়, ২০১০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক নামে পারস্পরিক যোগসাজশে, অবৈধভাবে ও অসৎ পন্থায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে কোন অনুমোদন ছাড়াই মানহীন ও স্বল্প মেয়াদি টেস্ট কিট ও রি-এজেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি, সংরক্ষণ ও দেশব্যাপী বাজারজাতকরণ করতো। যা সরবরাহ করার পর্যায়েই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যেত। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, ‘তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই কিটগুলো সরবরাহ করতো। তদন্তে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম বের হয়ে আসবে। বিদেশ থেকে আমদানি-রফতানি চ্যানেলের মাধ্যমে তারা এসব সামগ্রী আনত। এছাড়া জার্মানি ও ইউরোপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকেও এসব সামগ্রী আনতো। প্রতিষ্ঠানগুলো একটিও স্বনামধন্য নয়। তাদের এই কিট ও মেডিকেল সরঞ্জাম আমদানির কোন অনুমোদন ছিল না।