ছয় বছরে বিআরটিএ কর্মকর্তার সম্পদের পাহাড়, মামলা দুদকের

বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নোয়াখালী সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. ফারহানুল ইসলামের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ তার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. রফিকুজ্জামান। দুদকের গণমাধ্যম শাখায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, চাকরিতে যোগ দেয়ার ছয় বছরেই বিআরটিএ নোয়াখালী সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. ফারহানুল ইসলাম অবৈধ উপায়ে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে ১৩ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। মো. ফারহানুল ইসলাম নিজের, তার ভাই মো. রায়হানুল ইসলাম, মা লুৎফুন নাহারের নামে মোট চারটি ব্যাংক হিসাব এবং দুইটি ক্রেডিট কার্ডের হিসাব খুলে ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জিত টাকা বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় অপরাধ করেছেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, বিআরটিএর এ কর্মকর্তা ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এবং আইডিএলসিতে সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব ও ক্রেডিট কার্ড হিসাবসহ মোট ১০টি হিসাব তার মা ও ভাইয়ের নামে পরিচালনা করেন। মো. ফারহানুল ইসলাম ইউসিবিএল এবং সোনালী ব্যাংক ব্যতীত ৬টি হিসাবে ঘুষ, দুর্নীতি ও অবৈধভাবে অর্জিত ১২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা লেনদেন করেন। তিনি ২০১২ থেকে ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর আট মাসে ছয়টি ব্যাংক হিসাব খোলেন। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান শাখার সঞ্চয়ী হিসাবেই জমা করেন ছয় কোটি ৯২ লাখ টাকা।

এছাড়া একই শাখার চলতি হিসাবে ১৪ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ভিসা ক্রেডটি কার্ডের হিসাবে ১৮ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মাস্টার ক্রেডিট কার্ড হিসাবে ২৮ লাখ টাকা ও তার আপন ভাই মো. রায়হানুল ইসলামের নামে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাবে এক কোটি ১৩ লাখ টাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংক বসুন্ধরা শাখার একটি সঞ্চয়ী হিসাবে ১১ লাখ টাকা লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক কর্মকর্তারা। মা লুৎফুন নাহারের নামে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের মিরপুর-১০ সার্কেল শাখার একটি সঞ্চয়ী হিসাবে এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের গৃহঋণ হিসাবে চার কোটি আট লাখ টাকা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

এদিকে ৭ কোটি ২৪ লাখ ৯৫ হাজার ২৫০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা নজরুল ইসলাম ও তার ছেলে মির্জা অনিক ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোনায়েম হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, মির্জা নজরুল ইসলাম ও তার ছেলে মির্জা অনিক ইসলাম তাদের অর্জিত অবৈধ আয়কে বৈধ করার উদ্দেশ্যে পারস্পরিক সহয়োগিতায় স্থানান্তরের ও রূপান্তরের মাধ্যমে আয়বহির্ভূত ৭ কোটি ২৪ লাখ ৯৫ হাজার ২৫০ টাকার অবস্থান গোপন করায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে তাদের বিরুদ্ধ মামলা করা হয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পড়ে উপ-পরিচালক মোনায়েম হোসেনের ওপর। তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হলে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আসামিরা সম্পদ বিবরণী জমার নোটিশ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তারা সমন্বিতভাবে মার্চে দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন। বিবরণীতে তারা দুই কোটি ৬৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৮২ টাকার সম্পদের তথ্য দুদককে জানান। তবে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তফসিলি চারটি ব্যাংকের ৭টি হিসাবে ৭ কোটি ৩১ লাখ ৬৪ হাজার ১৮২ টাকা জমা ও ৭ কোটি ২৪ লাখ ৯৫ হাজার ২৫০ টাকার সম্পদ উত্তোলনের উৎস ও অবস্থান গোপন করেন। মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, কমিশনের দাখিলি সম্পদ বিবরণীতে সম্পদের তথ্য গোপন করায় তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে তাদের বিরুদ্ধ মামলা করা হয়েছে।

‘অপরাধ ও দুর্নীতি’ : আরও খবর

সম্প্রতি