শামসুজ্জামান খান
বাংলাদেশকে বলা হয় ‘বারো মাসে তেরো পার্বণে’র দেশ। এ থেকে এ কথা কিন্তু বোঝায় না যে বাংলাদেশে উৎসব-অনুষ্ঠান লেগেই আছে। তা নয় মোটেই। কারণ উৎসব আর পার্বণের মধ্যে মূলগত পার্থক্য আছে। ‘উৎসব’ মূলত সার্বজনীন- অর্থাৎ সকলে মিলে উদ্যাপন করার একটি বিষয়। সে দিক থেকে দেখলে উৎসব চরিত্রগতভাবে সেক্যুলার (Sacular)। উৎসবে ধর্ম-সম্পৃক্ততা নেই এমন নয়- তবে তার দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য। এক. ধর্মীয় উৎসব হলে তাতে ধর্মীয় আচার ও রীতিনীতি বা করণক্রিয়া থাকতেই পারে। যেমন মুসলিম-বাঙালির ঈদ উৎসব আবার সর্বজনীন (Universal)। এতে ধর্মীয় করণক্রিয়াটুকু (Rituals) কেন্দ্রীয় (Central) বিষয়, কিন্তু এর আনুষঙ্গিকতাও (Periphery) আছে। এবং মজার ব্যাপার বৃহৎ উৎসবে সামাজিক ও আন্তঃধর্ম সম্প্রদায়গত অংশগ্রহণগত চাপও এতটা বৃদ্ধি পায় যে উৎসবে কেন্দ্রীয় বিষয় আর মুখ্য ও আধিপত্যবাদী অবস্থানে থাকে না। ঢাকার বাঙালি মুসলমানের ঈদোৎসব এবং কলকাতার বাঙালি হিন্দুর সার্বজনীন দুর্গাপূজায় এমনটি যে ঘটে গেছে, সাম্প্রতিককালের ইতিহাস তার সাক্ষী। এজন্য পার্বণ কিন্তু মূলতই ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা করণক্রিয়ার জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এর মধ্যে সাধারণ সামাজিক বা আন্তঃসম্প্রদায়গত কোনও সম্পৃক্তির চাপ থাকে না। পার্বণ ছোট, সীমাবদ্ধ ধর্মীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ। এবং রূপান্তর বা সামাজিক সম্প্রসারণ নেই। কারণ পার্বণ সার্বজনীন নয়- বহুলাংশে ধর্মসম্প্রদায়ের পারিবারিক অনুষ্ঠান। পারিবারিক এই পার্বণ আবার পরিবারের সবাই সর্বক্ষেত্রে মিলিতভাবে করে এমনও নয়। পরিবারের নিষ্ঠাবান বয়স্ক ধার্মিকরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ পার্বণ উদ্যাপন করে থাকেন। গোটা পরিবারের বিশেষ করে তরুণদের অংশগ্রহণ না থাকায় তাই বহু পার্বণের বিলুপ্তি ঘটেছে। কিন্তু কোনও কোনও উৎসবের
ভেতরগত অন্তঃসারের মধ্যে সামাজিক সংহতি বা আন্তঃধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমবেতভাবে উদ্যাপনের উপাদান থাকায় তার বিপুল বিস্তার এবং গুণমানগত উন্নয়ন ঘটেছে। এর নানা রকম চমৎকারিত্ব, শক্তিমত্তা ও সামাজিক সংহতির উদাহরণ পেশ করা যায়। একটু আগেই ঈদোৎসব এবং দুর্গাপূজার কথা বলেছি। অন্যদিকে আমাদের কিছু প্রাচীন পার্বণ এবং উৎসবও যে বিশালভাবে রূপান্তরিত হয়ে জাতীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ বা সেক্যুলাররূপ পরিগ্রহ করেছে তা তো আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। আর একটু ইতিহাস-অনুরাগী বা অনুসন্ধানপ্রবণ মনের অধিকারী হলে তো কথাই নেই। ইতিহাস বিশ্লেষণ করেই নানা উৎসবের লক্ষণ, উদ্দেশ্য, রূপান্তর প্রক্রিয়া এবং ধর্মীয় উপাদানের প্রতি নিষ্পৃহতা এবং সমাজ সংহতি ও মানবিক মিথস্ক্রিয়ার প্রতি গুরুত্বারোপের প্রয়াস লক্ষ্য করি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ধর্মীয় উপাদান ছেঁটে ফেলে তাকে পরিশীলিত এবং সংস্কৃতির ঐতিহাসিক ধারার মধ্যে নবরূপে বিন্যস্ত করার প্রয়াস লক্ষ্য করি।
এবার বাংলাদেশের কয়েকটি প্রাচীন ও দু-একটি নবীন উৎসবের ইতিহাস-চর্চা আমাদের উপরের বক্তব্যকে আলোকিত করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। কৃষি সমাজের বাংলায় কোনও কোনও অঞ্চলের প্রাচীন পার্বণ বা পারিবারিক উৎসব ছিল ‘আমানী’। আমানী কথাটির অর্থ হলো ‘অম্ল পার্বণ।’ এটি ছিল পারিবারিক অনুষ্ঠান। একে পার্বণও বলা হতো। তবে এতে ধর্মীয় অন্তঃসার তেমন ছিল না। জাদুবিশ্বাসজাত উপাদান ছিল বলে ধরে নেয়া যায়। আড়ম্বরহীন এই মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান বা পার্বণস্থানিক অনুষ্ঠান হলেও ব্যাপকভাবে ঘরে ঘরে এ অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হতো। এ অনুষ্ঠানটি ছিল এ রকম : চৈত্র সংক্রান্তির দিনের শেষে বা দিনগত রাতে কৃষাণী গৃহকর্ত্রী এক ঘটি পানিতে স্বল্প পরিমাণ অপক্ব চাল ছেড়ে দিয়ে সারারাত ভিজতে দিতেন এবং তার মধ্যে একটি আমের কচি ডাল গুঁজে দিতেন। নববর্ষের ভোরে সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠে গৃহকর্ত্রী সকলকে খেতে দিতেন। অন্যদিকে ঘটিতে পুঁতে রাখা আমের কচি পাতাওয়ালা ডালটি বের করে তা দিয়ে ঘটির পানি বাড়ির সবার গায়ে ছিটিয়ে দিতেন। লোকবিশ্বাস ছিল এতে সারা বছর বাড়ির সবার মঙ্গল হবে। গৃহে ও তাদের পরিপার্শ্ব ও বিশ্বজগতে ফিরে আসবে সুখ ও শান্তি। এ অনুষ্ঠানটির এখন প্রায় বিলুপ্তি ঘটেছে। তবে এ ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের প্রভাব যে আমাদের বাংলা নববর্ষ বা ১ বৈশাখ উদ্যাপনে একেবারে পড়েনি তা বলা যায় না। চারুকলা অনুষ্ঠানের মঙ্গল শোভাযাত্রায় এর অন্তঃসারকে (Essence) গ্রহণ করা হয়েছে এবং জাদুবিশ্বাসজাত এ অনুষ্ঠানকে এখন সামাজিক শ্রেয়োচেতনা এবং অমঙ্গলের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় শক্তিকে মিছিলের দ্রোহচেতনা এবং পূর্বকালের লোক ও জাদুবিশ্বাসজাত অমঙ্গলের প্রতীক প্রাণীর প্রতিকৃতি এবং মুখোশের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তা সংস্কৃতির ঐতিহ্যিক উপাদানকে উদ্ভাবনাময় এবং সমাজ ও রাজনীতি ক্ষেত্রের অপশক্তিকে চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় সদাসতর্ক লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছে। এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অসাধারণ। অন্যদিকে ধনীর দুলালদের পান্তা-ইলিশের ভোজন-উৎসব শুধু ঐতিহ্যের বিকৃতি নয়, প্রাচীন লোক-উৎসবের গভীর তাৎপর্য ও মানবিক প্রত্যাশাকে বুঝতে না পারার অজ্ঞতাও। আর তাই তা ইতিহাস ও সমাজ চেতনাকে উপেক্ষা করে প্রাচীন মানুষের ঐতিহ্যিক বোধ ও মঙ্গলকামনায় মস্করা করার নামান্তর।
নবান্নও বাঙালির প্রাচীন ধর্মীয় উৎসব ছিল। কেউ কেউ বলেন, আগে অগ্রহায়ণ মাসে নববর্ষ হতো। অগ্রহায়ণ ফসলের মাস। তাই তখন নবান্ন উৎসব করে নববর্ষ পালন করা হতো। এ ছিল কৃষকের ফসলপ্রাপ্তির জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের হৈমন্তিক অনুষ্ঠান। তবে মূলে ছিল হিন্দু সমাজের অনুষ্ঠান। পূর্বপুরুষের পারলৌকিক শান্তিকামনায় নতুন ফসলের পায়েস ভাত এবং নানা ব্যঞ্জন নদীতীরে এবং পাখপাখালির জন্য নিবেদন করা হতো। এ ছিল এক প্রাচীন আচার। লোকবিশ্বাস ছিল, এতে মৃত পূর্বপুরুষরা খুশি হন এবং তাদের আত্মা শান্তি পায়। এখন মুসলমানরা এর পুরনো ক্রিয়াকরণ এবং বিশ্বাসকে বাদ দিয়ে ঐতিহ্যিক উৎসবকে নব আঙ্গিক ও ভিন্নতর তাৎপর্যে বিন্যস্ত করেছে।
বাংলাদেশে উৎসব নতুন ধরন ও নব তাৎপর্য লাভ করেছে। ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক জীবনবোধ ও জীবনজিজ্ঞাসার নানা প্রতীকী অর্থ ও উদ্ভাবনাময় ব্যঞ্জনা। বাংলা নববর্ষ, একুশে ফেব্রুয়ারি হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় উৎসব। জাতীয় সংহতি ও ঐতিহ্যের বিস্তার ও নবায়নে উৎসবের গুরুত্ব তাই অসামান্য।
‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা’
সরকার আবদুল মান্নান
newsimage
এক. উৎসব একটি সর্বমানবীয় বিষয়। কবে থেকে মানুষ উৎসবের আয়োজন করেছে তার কোনো
প্রাণে প্রাণ মেলানোর উৎসব
হাফিজ রশিদ খান
newsimage
ফরাসি দেশের এক দার্শনিক, জাক লাকাঁ তাঁর নাম, বলেছিলেন : বড় শামিয়ানার
শিয়রে করোনাক্রান্তি, বরণে ১৪২৮
দেবাহুতি চক্রবর্তী
newsimage
বছর আসে, বছর যায়। আসা-যাওয়ার মাঝে জড়ানো জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সম্পদ-সংকট, হাসি-কান্না।
শূন্যতায় ঢিল
নাসরীন জাহান
newsimage
আমার আত্মা হরনিয়া সুমনদা, আগাগোড়া এমনই ভেবে এসেছে টুনিবেবি। এখন যা বয়স
আহা বৈশাখ এলো বৈশাখ
জামিরুল শরীফ
newsimage
উদ্ধৃত কবিতার পংক্তিমালায় চমৎকার মিলের অকৃত্রিম উপলব্ধির ধ্বনিতরঙ্গে শত শত বছর ধরে
বাংলা নববর্ষ : চিরনতুনের ডাক
শামীমা নাসরীন
newsimage
বসন্ত বিদায়। সমাগত নতুন বছর- আর নববর্ষ সময়ের নতুন উদ্বোধন। নতুন মানেই
তোমাদের যাহাদের সাথে
জাহিদুল হক
তোমাদের যাহাদের সাথে দেখা হয়েছিলো : ঘরে কি বাইরে, স্মৃতিদের মতো ট্রেনেÑ
শুধু নেই সে
শিহাব সরকার
দ্যাখো ঐ যে ফাঁকা চেয়ার। আজ ছুটিদিন সকলে আছে আড্ডায়, সুখী-দুঃখী সকলে, সাতদিনে একদিন
বৈশাখের পঙ্ক্তিমালা
ধূলিপথ আমারও ইচ্ছে করেছিল আবদুর রাজ্জাক তুমি ডাহুক,
শামসুজ্জামান খান
বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১
বাংলাদেশকে বলা হয় ‘বারো মাসে তেরো পার্বণে’র দেশ। এ থেকে এ কথা কিন্তু বোঝায় না যে বাংলাদেশে উৎসব-অনুষ্ঠান লেগেই আছে। তা নয় মোটেই। কারণ উৎসব আর পার্বণের মধ্যে মূলগত পার্থক্য আছে। ‘উৎসব’ মূলত সার্বজনীন- অর্থাৎ সকলে মিলে উদ্যাপন করার একটি বিষয়। সে দিক থেকে দেখলে উৎসব চরিত্রগতভাবে সেক্যুলার (Sacular)। উৎসবে ধর্ম-সম্পৃক্ততা নেই এমন নয়- তবে তার দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য। এক. ধর্মীয় উৎসব হলে তাতে ধর্মীয় আচার ও রীতিনীতি বা করণক্রিয়া থাকতেই পারে। যেমন মুসলিম-বাঙালির ঈদ উৎসব আবার সর্বজনীন (Universal)। এতে ধর্মীয় করণক্রিয়াটুকু (Rituals) কেন্দ্রীয় (Central) বিষয়, কিন্তু এর আনুষঙ্গিকতাও (Periphery) আছে। এবং মজার ব্যাপার বৃহৎ উৎসবে সামাজিক ও আন্তঃধর্ম সম্প্রদায়গত অংশগ্রহণগত চাপও এতটা বৃদ্ধি পায় যে উৎসবে কেন্দ্রীয় বিষয় আর মুখ্য ও আধিপত্যবাদী অবস্থানে থাকে না। ঢাকার বাঙালি মুসলমানের ঈদোৎসব এবং কলকাতার বাঙালি হিন্দুর সার্বজনীন দুর্গাপূজায় এমনটি যে ঘটে গেছে, সাম্প্রতিককালের ইতিহাস তার সাক্ষী। এজন্য পার্বণ কিন্তু মূলতই ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা করণক্রিয়ার জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এর মধ্যে সাধারণ সামাজিক বা আন্তঃসম্প্রদায়গত কোনও সম্পৃক্তির চাপ থাকে না। পার্বণ ছোট, সীমাবদ্ধ ধর্মীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ। এবং রূপান্তর বা সামাজিক সম্প্রসারণ নেই। কারণ পার্বণ সার্বজনীন নয়- বহুলাংশে ধর্মসম্প্রদায়ের পারিবারিক অনুষ্ঠান। পারিবারিক এই পার্বণ আবার পরিবারের সবাই সর্বক্ষেত্রে মিলিতভাবে করে এমনও নয়। পরিবারের নিষ্ঠাবান বয়স্ক ধার্মিকরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ পার্বণ উদ্যাপন করে থাকেন। গোটা পরিবারের বিশেষ করে তরুণদের অংশগ্রহণ না থাকায় তাই বহু পার্বণের বিলুপ্তি ঘটেছে। কিন্তু কোনও কোনও উৎসবের
ভেতরগত অন্তঃসারের মধ্যে সামাজিক সংহতি বা আন্তঃধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমবেতভাবে উদ্যাপনের উপাদান থাকায় তার বিপুল বিস্তার এবং গুণমানগত উন্নয়ন ঘটেছে। এর নানা রকম চমৎকারিত্ব, শক্তিমত্তা ও সামাজিক সংহতির উদাহরণ পেশ করা যায়। একটু আগেই ঈদোৎসব এবং দুর্গাপূজার কথা বলেছি। অন্যদিকে আমাদের কিছু প্রাচীন পার্বণ এবং উৎসবও যে বিশালভাবে রূপান্তরিত হয়ে জাতীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ বা সেক্যুলাররূপ পরিগ্রহ করেছে তা তো আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। আর একটু ইতিহাস-অনুরাগী বা অনুসন্ধানপ্রবণ মনের অধিকারী হলে তো কথাই নেই। ইতিহাস বিশ্লেষণ করেই নানা উৎসবের লক্ষণ, উদ্দেশ্য, রূপান্তর প্রক্রিয়া এবং ধর্মীয় উপাদানের প্রতি নিষ্পৃহতা এবং সমাজ সংহতি ও মানবিক মিথস্ক্রিয়ার প্রতি গুরুত্বারোপের প্রয়াস লক্ষ্য করি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ধর্মীয় উপাদান ছেঁটে ফেলে তাকে পরিশীলিত এবং সংস্কৃতির ঐতিহাসিক ধারার মধ্যে নবরূপে বিন্যস্ত করার প্রয়াস লক্ষ্য করি।
এবার বাংলাদেশের কয়েকটি প্রাচীন ও দু-একটি নবীন উৎসবের ইতিহাস-চর্চা আমাদের উপরের বক্তব্যকে আলোকিত করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। কৃষি সমাজের বাংলায় কোনও কোনও অঞ্চলের প্রাচীন পার্বণ বা পারিবারিক উৎসব ছিল ‘আমানী’। আমানী কথাটির অর্থ হলো ‘অম্ল পার্বণ।’ এটি ছিল পারিবারিক অনুষ্ঠান। একে পার্বণও বলা হতো। তবে এতে ধর্মীয় অন্তঃসার তেমন ছিল না। জাদুবিশ্বাসজাত উপাদান ছিল বলে ধরে নেয়া যায়। আড়ম্বরহীন এই মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান বা পার্বণস্থানিক অনুষ্ঠান হলেও ব্যাপকভাবে ঘরে ঘরে এ অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হতো। এ অনুষ্ঠানটি ছিল এ রকম : চৈত্র সংক্রান্তির দিনের শেষে বা দিনগত রাতে কৃষাণী গৃহকর্ত্রী এক ঘটি পানিতে স্বল্প পরিমাণ অপক্ব চাল ছেড়ে দিয়ে সারারাত ভিজতে দিতেন এবং তার মধ্যে একটি আমের কচি ডাল গুঁজে দিতেন। নববর্ষের ভোরে সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠে গৃহকর্ত্রী সকলকে খেতে দিতেন। অন্যদিকে ঘটিতে পুঁতে রাখা আমের কচি পাতাওয়ালা ডালটি বের করে তা দিয়ে ঘটির পানি বাড়ির সবার গায়ে ছিটিয়ে দিতেন। লোকবিশ্বাস ছিল এতে সারা বছর বাড়ির সবার মঙ্গল হবে। গৃহে ও তাদের পরিপার্শ্ব ও বিশ্বজগতে ফিরে আসবে সুখ ও শান্তি। এ অনুষ্ঠানটির এখন প্রায় বিলুপ্তি ঘটেছে। তবে এ ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের প্রভাব যে আমাদের বাংলা নববর্ষ বা ১ বৈশাখ উদ্যাপনে একেবারে পড়েনি তা বলা যায় না। চারুকলা অনুষ্ঠানের মঙ্গল শোভাযাত্রায় এর অন্তঃসারকে (Essence) গ্রহণ করা হয়েছে এবং জাদুবিশ্বাসজাত এ অনুষ্ঠানকে এখন সামাজিক শ্রেয়োচেতনা এবং অমঙ্গলের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় শক্তিকে মিছিলের দ্রোহচেতনা এবং পূর্বকালের লোক ও জাদুবিশ্বাসজাত অমঙ্গলের প্রতীক প্রাণীর প্রতিকৃতি এবং মুখোশের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তা সংস্কৃতির ঐতিহ্যিক উপাদানকে উদ্ভাবনাময় এবং সমাজ ও রাজনীতি ক্ষেত্রের অপশক্তিকে চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় সদাসতর্ক লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছে। এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অসাধারণ। অন্যদিকে ধনীর দুলালদের পান্তা-ইলিশের ভোজন-উৎসব শুধু ঐতিহ্যের বিকৃতি নয়, প্রাচীন লোক-উৎসবের গভীর তাৎপর্য ও মানবিক প্রত্যাশাকে বুঝতে না পারার অজ্ঞতাও। আর তাই তা ইতিহাস ও সমাজ চেতনাকে উপেক্ষা করে প্রাচীন মানুষের ঐতিহ্যিক বোধ ও মঙ্গলকামনায় মস্করা করার নামান্তর।
নবান্নও বাঙালির প্রাচীন ধর্মীয় উৎসব ছিল। কেউ কেউ বলেন, আগে অগ্রহায়ণ মাসে নববর্ষ হতো। অগ্রহায়ণ ফসলের মাস। তাই তখন নবান্ন উৎসব করে নববর্ষ পালন করা হতো। এ ছিল কৃষকের ফসলপ্রাপ্তির জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের হৈমন্তিক অনুষ্ঠান। তবে মূলে ছিল হিন্দু সমাজের অনুষ্ঠান। পূর্বপুরুষের পারলৌকিক শান্তিকামনায় নতুন ফসলের পায়েস ভাত এবং নানা ব্যঞ্জন নদীতীরে এবং পাখপাখালির জন্য নিবেদন করা হতো। এ ছিল এক প্রাচীন আচার। লোকবিশ্বাস ছিল, এতে মৃত পূর্বপুরুষরা খুশি হন এবং তাদের আত্মা শান্তি পায়। এখন মুসলমানরা এর পুরনো ক্রিয়াকরণ এবং বিশ্বাসকে বাদ দিয়ে ঐতিহ্যিক উৎসবকে নব আঙ্গিক ও ভিন্নতর তাৎপর্যে বিন্যস্ত করেছে।
বাংলাদেশে উৎসব নতুন ধরন ও নব তাৎপর্য লাভ করেছে। ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক জীবনবোধ ও জীবনজিজ্ঞাসার নানা প্রতীকী অর্থ ও উদ্ভাবনাময় ব্যঞ্জনা। বাংলা নববর্ষ, একুশে ফেব্রুয়ারি হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় উৎসব। জাতীয় সংহতি ও ঐতিহ্যের বিস্তার ও নবায়নে উৎসবের গুরুত্ব তাই অসামান্য।
‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা’
সরকার আবদুল মান্নান
newsimage
এক. উৎসব একটি সর্বমানবীয় বিষয়। কবে থেকে মানুষ উৎসবের আয়োজন করেছে তার কোনো
প্রাণে প্রাণ মেলানোর উৎসব
হাফিজ রশিদ খান
newsimage
ফরাসি দেশের এক দার্শনিক, জাক লাকাঁ তাঁর নাম, বলেছিলেন : বড় শামিয়ানার
শিয়রে করোনাক্রান্তি, বরণে ১৪২৮
দেবাহুতি চক্রবর্তী
newsimage
বছর আসে, বছর যায়। আসা-যাওয়ার মাঝে জড়ানো জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সম্পদ-সংকট, হাসি-কান্না।
শূন্যতায় ঢিল
নাসরীন জাহান
newsimage
আমার আত্মা হরনিয়া সুমনদা, আগাগোড়া এমনই ভেবে এসেছে টুনিবেবি। এখন যা বয়স
আহা বৈশাখ এলো বৈশাখ
জামিরুল শরীফ
newsimage
উদ্ধৃত কবিতার পংক্তিমালায় চমৎকার মিলের অকৃত্রিম উপলব্ধির ধ্বনিতরঙ্গে শত শত বছর ধরে
বাংলা নববর্ষ : চিরনতুনের ডাক
শামীমা নাসরীন
newsimage
বসন্ত বিদায়। সমাগত নতুন বছর- আর নববর্ষ সময়ের নতুন উদ্বোধন। নতুন মানেই
তোমাদের যাহাদের সাথে
জাহিদুল হক
তোমাদের যাহাদের সাথে দেখা হয়েছিলো : ঘরে কি বাইরে, স্মৃতিদের মতো ট্রেনেÑ
শুধু নেই সে
শিহাব সরকার
দ্যাখো ঐ যে ফাঁকা চেয়ার। আজ ছুটিদিন সকলে আছে আড্ডায়, সুখী-দুঃখী সকলে, সাতদিনে একদিন
বৈশাখের পঙ্ক্তিমালা
ধূলিপথ আমারও ইচ্ছে করেছিল আবদুর রাজ্জাক তুমি ডাহুক,