বন্যপ্রাণী ও ফসল দুটোই রক্ষা পাক

কক্সবাজারের রামু উপজেলার ধোয়াপালং গ্রামের একটি ধানক্ষেতে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে একটি বন্যহাতিকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করার পর হাতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে মাটিকে পুঁতে ফেলা হয়। স্থানীয় কাঠুরিয়ারা হাতির বিচ্ছিন্ন মাথা ও পা মাটিচাপা দিতে দেখে বন বিভাগকে জানান।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এক কৃষককে আটক করেছে পুলিশ। পরিকল্পিতভাবে হাতি হত্যা করায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

হাতি বা এমন অনেক বন্যপ্রাণী খাবারের সন্ধানে বন থেকে লোকালয়ে আসে। অনেক সময় তারা কৃষকের ফসলহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কৃষকরা ফসল রক্ষা করতে চাইবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রামুতে বন্যহাতির কবল থেকে ফসল রক্ষা করতে তারা যে বর্বর পথ বেছে নিয়েছে সেটা কোনমতেই সমর্থনযোগ্য নয়।

হাতিটিকে তারা হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি সেটাকে কেটে টুকরো টুকরো করে গুম করার অপচেষ্টাও চালিয়েছে। জানা যায়, নিহত হাতিটি মহাবিপন্ন এশিয়ান মা হাতি। তার সাথে বাচ্চাসহ আরও কয়েকটি হাতি ছিল। সেসব হাতিও কৃষকদের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে একই পরিণতি বরণ করতে পারত।

গত তিন বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের অঞ্চলে অন্তত ১৬টি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’। এর মধ্যে বেশির ভাগ হাতির মৃত্যু হয়েছিল গুলি ও বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে।

কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলে রেললাইন, রোহিঙ্গা বসতি, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পসহ অবৈধ জবরদখল চলছে। বন নিধনের কারণে বন্যপ্রাণীর খাদ্য চক্র দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে। খাদ্যসংকট দেখা দেয় বলেই হাতি লোকালয়ে প্রবেশ করে এবং মানুষের নিষ্ঠুরতার বলি হয়। এর দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।

বন্য পশু-পাখির হাত থেকে ফল-ফসল রক্ষা করার অনেক পদ্ধতি আছে। সেগুলো কৃষকরা জানে কিনা- বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। দেশের অনেক এলাকার কৃষক ফসল রক্ষায় বিদ্যুতের ফাদ তৈরির মতো বিপজ্জনক পদ্ধতি অবলম্বন করে। সেই ফাঁদে যে শুধু পশু-পাখি হতাহত হয় তা নয়; অনেক সময় কৃষকের হতাহতের ঘটনাও ঘটে।

আবার দেশীয় অস্ত্র ও কৌশল ব্যবহার করে লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতিকে মেরে ফেলার নজিরও রয়েছে। কৃষকদের ফসল রক্ষা বা বন্যপ্রাণী তাড়ানোর আধুনিক কৌশল বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হলে কৃষকের ফসলও যেমন রক্ষা পাবে, বন্যপ্রাণীও প্রাণে বাঁচবে।

‘সম্পাদকীয়’ : আরও খবর

» সেচযন্ত্র চুরি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

» শীতজনিত রোগ: চাই সমন্বিত পদক্ষেপ

» সারের কৃত্রিম সংকট: দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন

» প্রান্তিক আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

» দুস্থ নারীদের অধিকার নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য কাম্য নয়

» দুমকিতে প্রাণিসম্পদ সেবার সংকট: দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি

» চুনারুঘাটে প্রশাসনিক শূন্যতা: ব্যবস্থা নিন

» এক খ্রিস্টান পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা: ব্যবস্থা নিন

» অবৈধ ইটভাটা: প্রশাসন কী করছে

» পথ হারাচ্ছে রেলপথে পণ্যপরিবহন

» মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের আন্দোলন: আলোচনায় সমাধান খুঁজতে হবে

» জয়ন্তীপুর ঘাটে সেতু নির্মাণে বিলম্ব কাম্য নয়

সম্প্রতি