alt

উপ-সম্পাদকীয়

করোনা অতিমারীতে পাবলিক পরীক্ষা

মাছুম বিল্লাহ

: রোববার, ১৮ জুলাই ২০২১
image

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত নানা পরিকল্পনা করা হলেও ২০২০ সালে সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি, পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণীতে প্রমোশন দিতে হয়েছে। প্রমোশন দেওয়া হলেও আগের বছরের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পরবর্তী শ্রেণীতে রিকভারি প্লান ছিল কিন্তু তারও বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২০ সালে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি তবে রেমেডিয়াল প্লান ছিল। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে যে বিষয়গুলো বাদ পড়েছিল সেগুলো এবার পাঠদানের সঙ্গে যুক্ত করার কথা। সেরকম পরিকল্পনাও করা হয়েছিল কিন্তু এবারও যেহেতু বিদ্যালয় খোলা যায়নি তাই পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই একটা লন্ডভন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হাতে গোনা কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা চালিয়ে গেলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কার্যত শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে।

করোনার সংক্রমণ যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে এবার আদৌ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে কিনা সেই সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। চলতি বছরে স্কুল কার্যক্রম না চললে আর আগামী বছরের জানুয়ারিতে স্কুল খোলা গেলে শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ সইতে হবে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর কারিকুলাম একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সাজানো। কোন বয়সে একজন শিক্ষার্থীর কতটুকু আয়ত্ত করার ক্ষমতা আছে, সেই আলোকেই শ্রেণীগুলোর কারিকুলাম তৈরি করা হয়। একটি বর্ষের পাঠ্যবই না পড়ে ওপরের শ্রেণীর পাঠ্যবই পড়লে শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ধারাবাহিকতাও হারিয়ে যায়। অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে ২০২২ শিক্ষাবর্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া চালু করার প্রস্তুতিও এবার নিতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে যে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে স্কুল খোলা হলে একজন শিক্ষার্থী ২০২০, ২০২১ ও ২০২২- এই তিন বছরের কারিকুলামের চাপে পড়তে যাচ্ছে।

২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে নাকি গত বছরের মতো শিক্ষার্থীদের অটোপ্রমোশন হবে- এ বিষয়টিই এখন শিক্ষাঙ্গনে আলোচনার মূল বিষয়। পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে রচনামূলক বা সৃজনশীল প্রশ্ন বাদ দিয়ে কেবল বহুনির্বাচনী প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন কেউ কেউ। সংক্রমণ কমলে নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। আর তা না হলে অ্যাসাইনমেন্ট ও সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ হতে পারে। এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সব বিষয়ে না নিয়ে কেবল বিভাগভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিস্তিতি অনুকূলে এলে পরীক্ষার সময় ও নম্বর কমিয়ে আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। আর বাকি বিষয়গুলোর মূল্যায়ন হবে এসএসসির ক্ষেত্রে এসএসসি এবং এইচএসসির ক্ষেত্রের জেএসসি, এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে। করোনার কারণে যদি পরীক্ষা না নেওয়া যায় তাহলে অ্যাসাইনমেন্ট, সাবজেক্ট ম্যাপিং কিংবা শুধু বিষয় ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে ফল মূল্যায়ন করা হবে। ম্যাপিং হতে পারে গত বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যেভাবে বিষয় ম্যাপিং করে বিভিন্ন বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেই মডেলকে সামনে রেখে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে আবশ্যিক বিষয়গুলোর নম্বর ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

করোনার থাবায় শিক্ষা কার্যক্রম যখন বিধ্বস্ত সেই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রাখার জন্য অ্যাসাইনমেন্ট একটি কার্যকর পদক্ষেপ, তাতে সন্দেহ নেই। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা সরাসরি সম্পৃক্ত হয় তাই এর মাধ্যমে শিখন শেখানো কার্যক্রম অনেক ফলপ্রসূ হয়। অ্যাসাইনমেন্ট করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট থেকেও তথ্য নেয়; যা তাদের জ্ঞানের গভীরতা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এটি পাবলিক পরীক্ষার বিকল্প হতে পারে না। আবার এটিও সত্য যে, অ্যাসাইনমেন্ট বিষয়টি কিন্তু মূলত বয়স্ক শিক্ষার্থী অর্থাৎ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিষয়। শিক্ষার্থীদের ম্যাচিউরিটি ও সৃজনশীলতা, অভ্যাস ও কালচারের সঙ্গে বিষয়টি জড়িত। তবে বিদ্যালয়ে সেটিকে নিয়ে আসা হয়েছে করোনার অতিমারীর কারণে। সেটি নেগেটিভ সমালোচনার বিষয় নয়, তবে তা দিয়ে পাবলিক পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে মূল্যায়ন করার বিপক্ষে শিক্ষাবিদদের মত। এটিও কিন্তু ঠিক যে, সব শিক্ষার্থীই কিন্তু পাঠ্যবই ও নেটের সাহায্যে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করেনি এবং করে না। অনেকেই বরং নোট, গৃহশিক্ষক, বড় ভাই বা বোন এমনকি কোচিং সেন্টারের ওপরও নির্ভর করে তৈরি অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে।

অনেক শিক্ষার্থী আবার ইউটিউব, ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে সরবরাহকৃত অ্যাসাইনমেন্ট হুবহু তুলে নিজেদের খাতায় লিখে দেয়। বলছেন অ্যাসাইনমেন্ট স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের বিকল্প নয়, অন্তত মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে। তাই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ভিত্তিতে প্রয়োজনে সময় কমিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন হলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে নম্বর ও সিলেবাস কমিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। আর অ্যাসাইনমেন্টের জন্য ১০ নম্বর রাখার কথা বলেছেন অনেক শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক; তারা ২৫ কিংবা ৫০ নম্বর রাখার পক্ষে নয়।

তাই মৌলিক বিষয়গুলো এবং একটি বিষয় বুঝার জন্য যেসব জায়গায় ধারণা থাকা দরকার সেই বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও ইন-পারসন পরীক্ষা নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন অনেকেই। বিশ^বিদ্যালয় লেভেলে সাধারণত ৫ থেকে ১০ শতাংশ নম্বর থাকে অ্যাসাইনমেন্টে। সেগুলোও আবার সারাবছর ক্লাসের ভিত্তিতে শিক্ষকরা সেই নম্বর দিয়ে থাকেন। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে তা হলো শিক্ষার্থীরা ষোলো মাস যাবত ক্লাস, শ্রেণী কার্যক্রম, শিক্ষকের সাহচর্য থেকে বঞ্চিত, ক্লাসের ঘণ্টার আওয়াজ তারা শুনছে না ষোলো মাস যাবত। কিছু কিছু বিদ্যালয় মাউসি থেকে প্রদত্ত অ্যাসাইনমেন্টের নমুনা অনুযায়ী নিজেরা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তৈরি করে, নতুন অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে ব্যস্ত রেখেছে। এ ধরনের বিদ্যালয়ের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি। তারা এগুলো করেছেন যাতে শিক্ষার্থীরা বাইরের কোন অ্যাসাইনমেন্ট নিজেদের খাতায় তুলে না দেয়। এটিও চমৎকার পদক্ষেপ, যেসব বিদ্যালয়ের পক্ষে সম্ভব এ উদাহরণটি অনুসরণ হতে পরে।

[লেখক : ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত]

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

করোনা অতিমারীতে পাবলিক পরীক্ষা

মাছুম বিল্লাহ

image

রোববার, ১৮ জুলাই ২০২১

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত নানা পরিকল্পনা করা হলেও ২০২০ সালে সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি, পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণীতে প্রমোশন দিতে হয়েছে। প্রমোশন দেওয়া হলেও আগের বছরের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পরবর্তী শ্রেণীতে রিকভারি প্লান ছিল কিন্তু তারও বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২০ সালে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি তবে রেমেডিয়াল প্লান ছিল। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে যে বিষয়গুলো বাদ পড়েছিল সেগুলো এবার পাঠদানের সঙ্গে যুক্ত করার কথা। সেরকম পরিকল্পনাও করা হয়েছিল কিন্তু এবারও যেহেতু বিদ্যালয় খোলা যায়নি তাই পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই একটা লন্ডভন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হাতে গোনা কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা চালিয়ে গেলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কার্যত শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে।

করোনার সংক্রমণ যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে এবার আদৌ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে কিনা সেই সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। চলতি বছরে স্কুল কার্যক্রম না চললে আর আগামী বছরের জানুয়ারিতে স্কুল খোলা গেলে শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ সইতে হবে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর কারিকুলাম একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সাজানো। কোন বয়সে একজন শিক্ষার্থীর কতটুকু আয়ত্ত করার ক্ষমতা আছে, সেই আলোকেই শ্রেণীগুলোর কারিকুলাম তৈরি করা হয়। একটি বর্ষের পাঠ্যবই না পড়ে ওপরের শ্রেণীর পাঠ্যবই পড়লে শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ধারাবাহিকতাও হারিয়ে যায়। অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে ২০২২ শিক্ষাবর্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া চালু করার প্রস্তুতিও এবার নিতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে যে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে স্কুল খোলা হলে একজন শিক্ষার্থী ২০২০, ২০২১ ও ২০২২- এই তিন বছরের কারিকুলামের চাপে পড়তে যাচ্ছে।

২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে নাকি গত বছরের মতো শিক্ষার্থীদের অটোপ্রমোশন হবে- এ বিষয়টিই এখন শিক্ষাঙ্গনে আলোচনার মূল বিষয়। পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে রচনামূলক বা সৃজনশীল প্রশ্ন বাদ দিয়ে কেবল বহুনির্বাচনী প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন কেউ কেউ। সংক্রমণ কমলে নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। আর তা না হলে অ্যাসাইনমেন্ট ও সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ হতে পারে। এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সব বিষয়ে না নিয়ে কেবল বিভাগভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিস্তিতি অনুকূলে এলে পরীক্ষার সময় ও নম্বর কমিয়ে আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। আর বাকি বিষয়গুলোর মূল্যায়ন হবে এসএসসির ক্ষেত্রে এসএসসি এবং এইচএসসির ক্ষেত্রের জেএসসি, এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে। করোনার কারণে যদি পরীক্ষা না নেওয়া যায় তাহলে অ্যাসাইনমেন্ট, সাবজেক্ট ম্যাপিং কিংবা শুধু বিষয় ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে ফল মূল্যায়ন করা হবে। ম্যাপিং হতে পারে গত বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যেভাবে বিষয় ম্যাপিং করে বিভিন্ন বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেই মডেলকে সামনে রেখে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে আবশ্যিক বিষয়গুলোর নম্বর ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

করোনার থাবায় শিক্ষা কার্যক্রম যখন বিধ্বস্ত সেই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রাখার জন্য অ্যাসাইনমেন্ট একটি কার্যকর পদক্ষেপ, তাতে সন্দেহ নেই। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা সরাসরি সম্পৃক্ত হয় তাই এর মাধ্যমে শিখন শেখানো কার্যক্রম অনেক ফলপ্রসূ হয়। অ্যাসাইনমেন্ট করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট থেকেও তথ্য নেয়; যা তাদের জ্ঞানের গভীরতা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এটি পাবলিক পরীক্ষার বিকল্প হতে পারে না। আবার এটিও সত্য যে, অ্যাসাইনমেন্ট বিষয়টি কিন্তু মূলত বয়স্ক শিক্ষার্থী অর্থাৎ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিষয়। শিক্ষার্থীদের ম্যাচিউরিটি ও সৃজনশীলতা, অভ্যাস ও কালচারের সঙ্গে বিষয়টি জড়িত। তবে বিদ্যালয়ে সেটিকে নিয়ে আসা হয়েছে করোনার অতিমারীর কারণে। সেটি নেগেটিভ সমালোচনার বিষয় নয়, তবে তা দিয়ে পাবলিক পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে মূল্যায়ন করার বিপক্ষে শিক্ষাবিদদের মত। এটিও কিন্তু ঠিক যে, সব শিক্ষার্থীই কিন্তু পাঠ্যবই ও নেটের সাহায্যে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করেনি এবং করে না। অনেকেই বরং নোট, গৃহশিক্ষক, বড় ভাই বা বোন এমনকি কোচিং সেন্টারের ওপরও নির্ভর করে তৈরি অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে।

অনেক শিক্ষার্থী আবার ইউটিউব, ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে সরবরাহকৃত অ্যাসাইনমেন্ট হুবহু তুলে নিজেদের খাতায় লিখে দেয়। বলছেন অ্যাসাইনমেন্ট স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের বিকল্প নয়, অন্তত মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে। তাই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ভিত্তিতে প্রয়োজনে সময় কমিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন হলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে নম্বর ও সিলেবাস কমিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। আর অ্যাসাইনমেন্টের জন্য ১০ নম্বর রাখার কথা বলেছেন অনেক শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক; তারা ২৫ কিংবা ৫০ নম্বর রাখার পক্ষে নয়।

তাই মৌলিক বিষয়গুলো এবং একটি বিষয় বুঝার জন্য যেসব জায়গায় ধারণা থাকা দরকার সেই বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও ইন-পারসন পরীক্ষা নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন অনেকেই। বিশ^বিদ্যালয় লেভেলে সাধারণত ৫ থেকে ১০ শতাংশ নম্বর থাকে অ্যাসাইনমেন্টে। সেগুলোও আবার সারাবছর ক্লাসের ভিত্তিতে শিক্ষকরা সেই নম্বর দিয়ে থাকেন। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে তা হলো শিক্ষার্থীরা ষোলো মাস যাবত ক্লাস, শ্রেণী কার্যক্রম, শিক্ষকের সাহচর্য থেকে বঞ্চিত, ক্লাসের ঘণ্টার আওয়াজ তারা শুনছে না ষোলো মাস যাবত। কিছু কিছু বিদ্যালয় মাউসি থেকে প্রদত্ত অ্যাসাইনমেন্টের নমুনা অনুযায়ী নিজেরা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তৈরি করে, নতুন অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে ব্যস্ত রেখেছে। এ ধরনের বিদ্যালয়ের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি। তারা এগুলো করেছেন যাতে শিক্ষার্থীরা বাইরের কোন অ্যাসাইনমেন্ট নিজেদের খাতায় তুলে না দেয়। এটিও চমৎকার পদক্ষেপ, যেসব বিদ্যালয়ের পক্ষে সম্ভব এ উদাহরণটি অনুসরণ হতে পরে।

[লেখক : ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত]

back to top