প্রীতি রাহা
ছোট্ট একটি শব্দ ‘বন্ধু’ কিন্তু এর গভীরতা অনেক। বন্ধু মানে দুঃখের হাসি চিনতে পারা। বন্ধু মানে চোখের ভাষা বুঝতে পারা। বন্ধু মানে না বলা অনেক কথার গদ্য রচনা। বন্ধু মানে এলোমেলো অনেক কথামালা।
আজ ১ আগস্ট; বিশ্ব বন্ধু দিবস। বন্ধু দিবসের পরিকল্পনা ও উৎপত্তি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ১৯১৯ সালে সর্বপ্রথম আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে এই দিনটিকে উদযাপনের লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে কার্ড ও উপহার বিনিময় করতো তারা। এভাবেই বন্ধু দিবসের উৎপত্তি হয়েছিল। অন্য আরেকটি মত আছে আর তা হল, ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এক ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সেই দিনটি ছিল আগস্ট মাসের প্রথম রোববার। তখন থেকেই তার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে মার্কিন কংগ্রেস ১৯৩৫ সালের আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর বেশকিছু দেশ বন্ধু দিবস পালনের সংস্কৃতিকে সাদরে গ্রহণ করে। এভাবেই এ দিবস পালনের পরিসর বাড়তে থাকে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক জীবনে একজন মানুষের সঙ্গে গড়ে ৩৯৬ জনের বন্ধুত্ব হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রতি ১২ জনে একজন টিকে থাকে।
গবেষকদের মতে, বন্ধুরা কাছাকাছি থাকলে মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং তা রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।
শিশুরা হাঁটা ও কথা বলা শেখার আগেই বন্ধুত্বের অনুভূতি টের পেতে পারে। একটি গবেষণায় বন্ধুদের মাঝে নাকি ‘জিনগত মিল’ পাওয়া গেছে!
জানা যায়, সেই গবেষণায় গবেষকরা ১ হাজার ৯৩২ জন মানুষের ওপর জরিপ চালান। আত্মীয়দের বাইরে তাদের বন্ধুবান্ধব ও অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে জিনগত বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণও করা হয়। একই সামাজিক পরিম-লের মানুষের জিনে প্রায় এক শতাংশ মিল পাওয়া যায়। আর অনাত্মীয় বন্ধুদের মধ্যে জিনগত মিল অনেকটা দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের সঙ্গে বিদ্যমান মিলের মতো। প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস সাময়িকীতে এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল।
মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব গড়ে উঠার একটা বয়স থাকে। একটা বয়সের পরে মানুষের জীবনে আর নতুন বন্ধু তৈরি হয় না। মানুষের জীবনে বন্ধুদের গুরুত্ব অপরিসীম। ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘ঙষফ ওং এড়ষফ’। সুতরাং, পুরোনো বন্ধুরা আসলে মানুষের জীবনের আসল বন্ধু। সত্যিকারের বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। একশটা বন্ধু থাকার চেয়ে একটা ভালো বন্ধু থাকা সবচেয়ে শ্রেয়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গানের লাইনগুলো স্মরণে আসে-
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়। / ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়। / আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়। / মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
বন্ধুত্বের কথা আসতেই বেশিরভাগ মানুষের চোখের সামনে ভেসে ওঠে শৈশব স্মৃতি। আমিও তাদের ব্যতিক্রম নই। ছোটবেলার খেলার সাথী কিংবা বিদ্যালয়ের সহপাঠী এবং আপনি-তুমি-তুই। বর্তমানে তিন দশকের কিছু বেশি সময় জীবনে অতিবাহিত হয়েছে। পেছন ফিরে তাকালে এখন মনে হয় অনেকটা সময়, অনেকটা স্মৃতি জমে আছে।
তিন দশকের একটু বেশি সময় চলে গেছে জীবন থেকে। এখন পেছন ফিরে তাকালে চোখে ভেসে ওঠে অনেক জমে থাকা স্মৃতি। ছোটবেলায় স্কুলে যখন ক্লাসের মাঝে হঠাৎ বিরতি এসে যেত আমরা বান্ধবীরা তখন ফুলটোক্কা খেলতাম। আমরা বিকেলের দিকে খেলতাম ইচিং-বিচিং, চোর-পুলিশ, এক্কা-দোক্কা আরও কত কি! আজকালকার বাচ্চাদের কাছে এসবের জায়গায় এসে গেছে স্মার্টফোন। আমরা ব্যাডমিন্টন খেলায় খুব পারদর্শী ছিলাম। এখনো বান্ধবীরা সব এক জায়গায় হলে এমন হাজারো পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়। টিফিন পিরিয়ডে কিংবা স্কুল ছুটির পরে দুই টাকার ঝাল-মুড়ি কিংবা এক টাকার সেই লেমন আইসক্রিম খাওয়ার আনন্দ এখনও সবাইকে নাড়া দিয়ে যায়। ছোটবেলায় আমার মায়ের কাছে আবদার ছিল খুব ছোট্ট; প্রতিদিন মাত্র দুই টাকা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাকা ব্যাগে জমে থাকতো। আরেকটা কথা তো লিখতেই ভুলে যাচ্ছিলাম আমড়া আর কালোজাম ভর্তার কথা! কালোজাম ভর্তা খেতে যেয়ে যদি জামায় লেগে যেত তাহলেই বাসায় মার খেতে হতো সবাইকে। এখনকার ছেলেমেয়েরা কি আর সেই আনন্দ উপভোগ করতে পারবে? তাদের মনের মাঝে তো শুধু চিকেন ফ্রাই, বার্গার আর স্যান্ডউইচের কথা থাকে।
বন্ধুত্ব জিনিসটাই এমন যার বয়স বাড়ে না। বন্ধুরা আসলে মানুষের জীবনে অক্সিজেনের মতো। সত্যিকারের বন্ধুকে মানুষ সব বলতে পারে। সুখের গল্প, দুঃখের গল্প, রাগ কিংবা অভিমানের গল্প। অনেক সময় ভালো বন্ধুত্বও মানুষের চক্ষুকূল হয়। তখন এসব কিছু হিংসুটে আর কতিপয় ছোট মনের মানুষেরা তা নষ্ট করতে চায়। এমন অসুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা আমাদের সমাজে কম নয়। সচেতন থাকতে হবে সবাইকে। আস্থা রাখতে হবে নিজের ওপর। যতœ করতে শিখতে হবে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে। এই ভালোবাসার মূল্যও কিন্তু অনেক, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
প্রীতি রাহা
শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১
ছোট্ট একটি শব্দ ‘বন্ধু’ কিন্তু এর গভীরতা অনেক। বন্ধু মানে দুঃখের হাসি চিনতে পারা। বন্ধু মানে চোখের ভাষা বুঝতে পারা। বন্ধু মানে না বলা অনেক কথার গদ্য রচনা। বন্ধু মানে এলোমেলো অনেক কথামালা।
আজ ১ আগস্ট; বিশ্ব বন্ধু দিবস। বন্ধু দিবসের পরিকল্পনা ও উৎপত্তি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ১৯১৯ সালে সর্বপ্রথম আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে এই দিনটিকে উদযাপনের লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে কার্ড ও উপহার বিনিময় করতো তারা। এভাবেই বন্ধু দিবসের উৎপত্তি হয়েছিল। অন্য আরেকটি মত আছে আর তা হল, ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এক ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সেই দিনটি ছিল আগস্ট মাসের প্রথম রোববার। তখন থেকেই তার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে মার্কিন কংগ্রেস ১৯৩৫ সালের আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর বেশকিছু দেশ বন্ধু দিবস পালনের সংস্কৃতিকে সাদরে গ্রহণ করে। এভাবেই এ দিবস পালনের পরিসর বাড়তে থাকে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক জীবনে একজন মানুষের সঙ্গে গড়ে ৩৯৬ জনের বন্ধুত্ব হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রতি ১২ জনে একজন টিকে থাকে।
গবেষকদের মতে, বন্ধুরা কাছাকাছি থাকলে মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং তা রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।
শিশুরা হাঁটা ও কথা বলা শেখার আগেই বন্ধুত্বের অনুভূতি টের পেতে পারে। একটি গবেষণায় বন্ধুদের মাঝে নাকি ‘জিনগত মিল’ পাওয়া গেছে!
জানা যায়, সেই গবেষণায় গবেষকরা ১ হাজার ৯৩২ জন মানুষের ওপর জরিপ চালান। আত্মীয়দের বাইরে তাদের বন্ধুবান্ধব ও অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে জিনগত বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণও করা হয়। একই সামাজিক পরিম-লের মানুষের জিনে প্রায় এক শতাংশ মিল পাওয়া যায়। আর অনাত্মীয় বন্ধুদের মধ্যে জিনগত মিল অনেকটা দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের সঙ্গে বিদ্যমান মিলের মতো। প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস সাময়িকীতে এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল।
মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব গড়ে উঠার একটা বয়স থাকে। একটা বয়সের পরে মানুষের জীবনে আর নতুন বন্ধু তৈরি হয় না। মানুষের জীবনে বন্ধুদের গুরুত্ব অপরিসীম। ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘ঙষফ ওং এড়ষফ’। সুতরাং, পুরোনো বন্ধুরা আসলে মানুষের জীবনের আসল বন্ধু। সত্যিকারের বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। একশটা বন্ধু থাকার চেয়ে একটা ভালো বন্ধু থাকা সবচেয়ে শ্রেয়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গানের লাইনগুলো স্মরণে আসে-
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়। / ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়। / আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়। / মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
বন্ধুত্বের কথা আসতেই বেশিরভাগ মানুষের চোখের সামনে ভেসে ওঠে শৈশব স্মৃতি। আমিও তাদের ব্যতিক্রম নই। ছোটবেলার খেলার সাথী কিংবা বিদ্যালয়ের সহপাঠী এবং আপনি-তুমি-তুই। বর্তমানে তিন দশকের কিছু বেশি সময় জীবনে অতিবাহিত হয়েছে। পেছন ফিরে তাকালে এখন মনে হয় অনেকটা সময়, অনেকটা স্মৃতি জমে আছে।
তিন দশকের একটু বেশি সময় চলে গেছে জীবন থেকে। এখন পেছন ফিরে তাকালে চোখে ভেসে ওঠে অনেক জমে থাকা স্মৃতি। ছোটবেলায় স্কুলে যখন ক্লাসের মাঝে হঠাৎ বিরতি এসে যেত আমরা বান্ধবীরা তখন ফুলটোক্কা খেলতাম। আমরা বিকেলের দিকে খেলতাম ইচিং-বিচিং, চোর-পুলিশ, এক্কা-দোক্কা আরও কত কি! আজকালকার বাচ্চাদের কাছে এসবের জায়গায় এসে গেছে স্মার্টফোন। আমরা ব্যাডমিন্টন খেলায় খুব পারদর্শী ছিলাম। এখনো বান্ধবীরা সব এক জায়গায় হলে এমন হাজারো পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়। টিফিন পিরিয়ডে কিংবা স্কুল ছুটির পরে দুই টাকার ঝাল-মুড়ি কিংবা এক টাকার সেই লেমন আইসক্রিম খাওয়ার আনন্দ এখনও সবাইকে নাড়া দিয়ে যায়। ছোটবেলায় আমার মায়ের কাছে আবদার ছিল খুব ছোট্ট; প্রতিদিন মাত্র দুই টাকা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাকা ব্যাগে জমে থাকতো। আরেকটা কথা তো লিখতেই ভুলে যাচ্ছিলাম আমড়া আর কালোজাম ভর্তার কথা! কালোজাম ভর্তা খেতে যেয়ে যদি জামায় লেগে যেত তাহলেই বাসায় মার খেতে হতো সবাইকে। এখনকার ছেলেমেয়েরা কি আর সেই আনন্দ উপভোগ করতে পারবে? তাদের মনের মাঝে তো শুধু চিকেন ফ্রাই, বার্গার আর স্যান্ডউইচের কথা থাকে।
বন্ধুত্ব জিনিসটাই এমন যার বয়স বাড়ে না। বন্ধুরা আসলে মানুষের জীবনে অক্সিজেনের মতো। সত্যিকারের বন্ধুকে মানুষ সব বলতে পারে। সুখের গল্প, দুঃখের গল্প, রাগ কিংবা অভিমানের গল্প। অনেক সময় ভালো বন্ধুত্বও মানুষের চক্ষুকূল হয়। তখন এসব কিছু হিংসুটে আর কতিপয় ছোট মনের মানুষেরা তা নষ্ট করতে চায়। এমন অসুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা আমাদের সমাজে কম নয়। সচেতন থাকতে হবে সবাইকে। আস্থা রাখতে হবে নিজের ওপর। যতœ করতে শিখতে হবে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে। এই ভালোবাসার মূল্যও কিন্তু অনেক, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।