alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

সম্পদে হিন্দু নারীর অধিকার প্রসঙ্গে

সিরাজ প্রামাণিক

: সোমবার, ০২ আগস্ট ২০২১

১৯৩৭ সালের হিন্দু আইন অনুযায়ী মেয়েরা কোন সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নয়। তবে বিধবা হওয়ার পর সন্তান নাবালক থাকা অবস্থায় শুধু বসতি বাড়ির অধিকারী হয়। দীর্ঘ ৮৪ বছরেও হিন্দু আইনে আর কোন পরিবর্তন হয়নি। ২০২০ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে রায় ঘোষণা করেছে যে, হিন্দু বিধবারা স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে, তবে প্রাপ্ত সম্পত্তি কোন ধরনের বিক্রি, হস্তান্তরযোগ্য নয়। শুধু ভোগদখলকৃত বলে গণ্য হবে।

আইন পেশার সুবাদে হিন্দু নারী পূজা বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় বছর পাঁচেক আগে। হিন্দু শাস্ত্রমতে বিয়ের নিয়ম ও প্রথা মেনে পূজার বাবা মেয়ের সুখের জন্য নগদ টাকা, ব্যবহার্য আসবাবপত্র ও স্বর্ণালঙ্কার যৌতুক বা স্ত্রীধন হিসেবে প্রদান করেন। কিন্তু বিধিবাম! বিয়ের কয়েক বছর পর পূজার স্বামী উধাও হয়ে যায়। এরই মধ্যে পূজার বাবাও মারা যান। ভাইয়ের সংসারে বেশিদিন থাকা হয়নি পূজা বিশ্বাসের। বাবা এলাকার সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পূজা বিশ্বাস বাবার সম্পত্তির কিছুই পায়নি। অবশেষে বিয়ের সময় পাওয়া দু’একটা গয়না বিক্রি করে জীবন সংগ্রামে নেমেছেন পূজা বিশ্বাস। তার আকুতি একই বাবা-মায়ের সন্তান, অথচ নারী-পুরুষের মধ্যে ধর্ম নামক বিধি রেখা টেনে দিয়েছে।

আইনের এই অসমতাকে দূর করতে সম্পত্তিতে হিন্দু নারী ও পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ‘খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন-২০২০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী যদি কারও পুত্রসন্তান থাকে, তাহলে কন্যা সন্তানরা তাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি পায় না। যদিও নারীর অর্জিত সম্পত্তির অংশ তার পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ঠিকই পেয়ে থাকেন। অবশ্য হিন্দু নারীর যদি কোন ভাই না থাকে, তাহলে বাবার সম্পত্তির কিছুটা ভাগ শুধু তারাই পেতে পারেন, যাদের কোন পুত্রসন্তান আছে অথবা পুত্রসন্তান লাভের সম্ভাবনা আছে।

পুত্রসন্তান না থাকলে কোন হিন্দু নারী সম্পত্তির কিছুই পাবেন না। এর অন্য মানে হলো সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার জন্য পুত্রসন্তানের জন্মকে উৎসাহিত করা এবং কন্যাসন্তানকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা। আরও পরিষ্কার করে বললে, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী কোন পুরুষ মারা গেলে তার সম্পত্তির ওপর প্রথমে পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র এবং বিধবার অগ্রাধিকার। এদের অনুপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে কন্যা, দৌহিত্র, পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্ররা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন। কিন্তু কোন মহিলা মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের দুটি নিয়ম রয়েছে। ১) কোন মহিলা যদি উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পত্তির মালিক হন তাহলে তার মৃত্যুর পর সেই সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে যার নিকট হতে পেয়েছিলেন তার নিকট আত্মীয়দের নিকট ফিরে যাবে। ২) উত্তরাধিকার ব্যতীত অন্য কোনভাবে যদি কোন সম্পত্তির মালিক হন তাহলে সেই সম্পত্তি মালিকানার ধরন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারদের মধ্য বণ্টিত হবে।

পুত্রসন্তান না থাকলে কোন হিন্দু নারী সম্পত্তির কিছুই পাবেন না। এর অন্য মানে হলো সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার জন্য পুত্রসন্তানের জন্মকে উৎসাহিত করা এবং কন্যাসন্তানকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা

ভারত ১৯৫৬ সালে ‘হিন্দু সাকসেশন অ্যাক্ট’ পাস করেছে এবং এই আইনের মাধ্যমে হিন্দু নারী ও পুরুষের উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান অংশ নিশ্চিত করেছে এবং পরবর্তীতে ২০০৫ ও ২০০৭ সালে তারা আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরও যুগোপযোগী করেছে। অথচ আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। শুধু সম্পত্তিতে নয়, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে হিন্দু নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কারণ মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী, নারীদের বিবাহবিচ্ছেদের যেমন অধিকার আছে, হিন্দুদের বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তেমন কোন আইন নাই। অথচ হিন্দু আইনে একজন পুরুষ যত ইচ্ছা বিয়ে করতে পারেন কিন্তু স্ত্রী চাইলেও বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন না। মূলত এ জাতীয় সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য দরকার সার্বজনীন পারিবারিক আইন।

ফৌজদারি কোন অপরাধ যেমন- চুরি, মারামারি কিংবা খুনের জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র ভেদে কোনরকম বৈষম্য প্রদর্শন করা না হয় তবে কেন উত্তরাধিকার ও বিয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বৈষম্য মেয়েদের মেনে নিতে হবে। পারিবারিক বৈষম্য বন্ধে এখনই উপযুুক্ত সময় একটি ‘ইউনিফরম ফ্যামিলি কোড’ প্রণয়নের।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

seraj.pramanik@gmail.com

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বামঘরানার বাটখারা...

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

সম্পদে হিন্দু নারীর অধিকার প্রসঙ্গে

সিরাজ প্রামাণিক

সোমবার, ০২ আগস্ট ২০২১

১৯৩৭ সালের হিন্দু আইন অনুযায়ী মেয়েরা কোন সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নয়। তবে বিধবা হওয়ার পর সন্তান নাবালক থাকা অবস্থায় শুধু বসতি বাড়ির অধিকারী হয়। দীর্ঘ ৮৪ বছরেও হিন্দু আইনে আর কোন পরিবর্তন হয়নি। ২০২০ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে রায় ঘোষণা করেছে যে, হিন্দু বিধবারা স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে, তবে প্রাপ্ত সম্পত্তি কোন ধরনের বিক্রি, হস্তান্তরযোগ্য নয়। শুধু ভোগদখলকৃত বলে গণ্য হবে।

আইন পেশার সুবাদে হিন্দু নারী পূজা বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় বছর পাঁচেক আগে। হিন্দু শাস্ত্রমতে বিয়ের নিয়ম ও প্রথা মেনে পূজার বাবা মেয়ের সুখের জন্য নগদ টাকা, ব্যবহার্য আসবাবপত্র ও স্বর্ণালঙ্কার যৌতুক বা স্ত্রীধন হিসেবে প্রদান করেন। কিন্তু বিধিবাম! বিয়ের কয়েক বছর পর পূজার স্বামী উধাও হয়ে যায়। এরই মধ্যে পূজার বাবাও মারা যান। ভাইয়ের সংসারে বেশিদিন থাকা হয়নি পূজা বিশ্বাসের। বাবা এলাকার সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পূজা বিশ্বাস বাবার সম্পত্তির কিছুই পায়নি। অবশেষে বিয়ের সময় পাওয়া দু’একটা গয়না বিক্রি করে জীবন সংগ্রামে নেমেছেন পূজা বিশ্বাস। তার আকুতি একই বাবা-মায়ের সন্তান, অথচ নারী-পুরুষের মধ্যে ধর্ম নামক বিধি রেখা টেনে দিয়েছে।

আইনের এই অসমতাকে দূর করতে সম্পত্তিতে হিন্দু নারী ও পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ‘খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন-২০২০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী যদি কারও পুত্রসন্তান থাকে, তাহলে কন্যা সন্তানরা তাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি পায় না। যদিও নারীর অর্জিত সম্পত্তির অংশ তার পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ঠিকই পেয়ে থাকেন। অবশ্য হিন্দু নারীর যদি কোন ভাই না থাকে, তাহলে বাবার সম্পত্তির কিছুটা ভাগ শুধু তারাই পেতে পারেন, যাদের কোন পুত্রসন্তান আছে অথবা পুত্রসন্তান লাভের সম্ভাবনা আছে।

পুত্রসন্তান না থাকলে কোন হিন্দু নারী সম্পত্তির কিছুই পাবেন না। এর অন্য মানে হলো সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার জন্য পুত্রসন্তানের জন্মকে উৎসাহিত করা এবং কন্যাসন্তানকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা। আরও পরিষ্কার করে বললে, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী কোন পুরুষ মারা গেলে তার সম্পত্তির ওপর প্রথমে পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র এবং বিধবার অগ্রাধিকার। এদের অনুপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে কন্যা, দৌহিত্র, পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্ররা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন। কিন্তু কোন মহিলা মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের দুটি নিয়ম রয়েছে। ১) কোন মহিলা যদি উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পত্তির মালিক হন তাহলে তার মৃত্যুর পর সেই সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে যার নিকট হতে পেয়েছিলেন তার নিকট আত্মীয়দের নিকট ফিরে যাবে। ২) উত্তরাধিকার ব্যতীত অন্য কোনভাবে যদি কোন সম্পত্তির মালিক হন তাহলে সেই সম্পত্তি মালিকানার ধরন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারদের মধ্য বণ্টিত হবে।

পুত্রসন্তান না থাকলে কোন হিন্দু নারী সম্পত্তির কিছুই পাবেন না। এর অন্য মানে হলো সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার জন্য পুত্রসন্তানের জন্মকে উৎসাহিত করা এবং কন্যাসন্তানকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা

ভারত ১৯৫৬ সালে ‘হিন্দু সাকসেশন অ্যাক্ট’ পাস করেছে এবং এই আইনের মাধ্যমে হিন্দু নারী ও পুরুষের উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান অংশ নিশ্চিত করেছে এবং পরবর্তীতে ২০০৫ ও ২০০৭ সালে তারা আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরও যুগোপযোগী করেছে। অথচ আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। শুধু সম্পত্তিতে নয়, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে হিন্দু নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কারণ মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী, নারীদের বিবাহবিচ্ছেদের যেমন অধিকার আছে, হিন্দুদের বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তেমন কোন আইন নাই। অথচ হিন্দু আইনে একজন পুরুষ যত ইচ্ছা বিয়ে করতে পারেন কিন্তু স্ত্রী চাইলেও বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন না। মূলত এ জাতীয় সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য দরকার সার্বজনীন পারিবারিক আইন।

ফৌজদারি কোন অপরাধ যেমন- চুরি, মারামারি কিংবা খুনের জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র ভেদে কোনরকম বৈষম্য প্রদর্শন করা না হয় তবে কেন উত্তরাধিকার ও বিয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বৈষম্য মেয়েদের মেনে নিতে হবে। পারিবারিক বৈষম্য বন্ধে এখনই উপযুুক্ত সময় একটি ‘ইউনিফরম ফ্যামিলি কোড’ প্রণয়নের।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

seraj.pramanik@gmail.com

back to top