alt

উপ-সম্পাদকীয়

একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি

সিরাজ প্রামাণিক

: শুক্রবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রতারণামূলকভাবে একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করলে উক্ত জমিতে কে অগ্রাধিকার পাবে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন-১৮৮২ এর ৪৮ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে। এ ধারায় হস্তান্তর বা সম্পত্তি বিক্রি দ্বারা সৃষ্ট অধিকারের অগ্রাধিকার নীতির অর্থ হলো- সময়ের দিক হতে যিনি প্রথম হবেন, আইনের দিক হতে তিনি অধিকার লাভ করবেন। কোন সম্পত্তির আইনসঙ্গত মালিক যদি একই সম্পত্তি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেন তাহলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা নিরসন করার জন্য এই ধারায় বিধান রাখা হয়েছে। যিনি প্রথম হস্তান্তর গ্রহণ করবেন তিনি সম্পত্তিটি পাবেন। তবে প্রথম হস্তান্তর আইনানুগ বৈধ না হলে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪৮ ধারা অনুসারে পরবর্তী হস্তান্তরের ওপর তা প্রাধান্য পাবে না।

কারণ এই নীতির অর্থ হলো- সময়ের দিক হতে যিনি প্রথম হবেন আইনের দিক থেকে তিনি সুবিধা পাবেন। জমি বিক্রেতা একবার বিক্রয়ের মাধ্যমে ওই জমির সব অধিকার হারায়। আইনে প্রবাদ রয়েছে, যার যে স্বত্ব আছে তার চেয়ে উত্তম স্বত্ব সে অন্যকে দিতে পারে না। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

ছাব্বির সাহেব তার কুষ্টিয়া মৌজার ১২২৫নং দাগের জমি বিগত ১২/১০/২০১৯ তারিখে রহিম মিয়ার কাছে বিক্রি করে নিঃস্বত্ববান হন। পরবর্তীতে একই জমি অমিত হাসানের কাছে বিগত ২৫/৯/২০২০ তারিখে বিক্রয় করেন।

সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪৮ ধারা অনুসারে ১২/১০/২০১৯ তারিখে রহিম মিয়ার কাছে হস্তান্তর অবশ্যই অমিত হাসানের কাছে বিগত ২৫/৯/২০২০ তারিখে বিক্রয়ের ওপর প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ রহিম মিয়ার কাছে বিক্রয় কার্যকর হবে। তবে এ অগ্রাধিকার নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন-

একই সম্পত্তির ওপর হস্তান্তরের মাধ্যমে অধিকারসমূহ সৃষ্টি করতে হবে;

হস্তান্তরগুলো ভিন্ন ভিন্ন তারিখে হতে হবে। একই সঙ্গে একই দলিলে হলে চলবে না;

হস্তান্তর আইনগতভাবে বৈধ ও পরিপূর্ণ হতে হবে:

হস্তান্তরগুলো পরস্পরের সাথে সংঘাতময় হতে হবে;

বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করা না হলে তা পরবর্তী রেজিস্ট্রেশন দলিলের ওপর প্রাধান্য পাবে না, বিশেষ করে ২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে জমির যেকোনো হস্তান্তরযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে;

বিপরীত মর্মে কোন চুক্তি থাকলে অগ্রাধিকারের বিধান কার্যকর নয়;

হস্তান্তরিত সম্পত্তিটি স্থাবর সম্পত্তি হবে। এই শর্তসমূহ পূরণ হলেই কেবল অগ্রাধিকারের নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

আর আপনি যদি জমি কিনে এ ধরনের প্রতারণার শিকার হন তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করে প্রতিকার পেতে পারেন। আরেকটি বিষয় জেনে রাখা দরকার যে, রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮ এর ধারা-৪৭ অনুসারে, দলিল কার্যকর হয় দলিল সম্পাদনের তারিখ থেকেই। অর্থাৎ যে তারিখে দলিলটি সম্পন্ন করা হয়েছে, সেই তারিখ থেকে, দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ থেকে নয়। বাংলাদেশের বাইরে দলিল সম্পাদন করা হলে দলিলটি যেদিন বাংলাদেশে পৌঁছাবে, সেই তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি করাতে হবে।

১৯০৮ এর ২৩ ধারা অনুসারে, সম্পাদনের তারিখ থেকে ৩ (তিন) মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য দলিলটি রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হয়। অবশ্য ওই আইনের ২৫ ধারা বিধান মোতাবেক জেলা রেজিস্ট্রার প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন ফি এর ১০ (দশ) গুণ পর্যন্ত জরিমানা আদায় করে সাব-রেজিস্ট্রারকে দলিলটি রেজিস্ট্রির জন্য আদেশ দিতে পারেন। উইল/অছিয়ত দলিল সম্পাদনের পর যেকোন সময়ে রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করা যায়।

রেজিস্ট্রেশন আইনের ১৭(এ) ধারা অনুসারে, বায়নাপত্র সম্পাদনের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হয়। আর ‘হেবার ঘোষণাপত্র’ বা ‘দানের ঘোষণাপত্র’ দলিলের ক্ষেত্রে কোন সম্পত্তির দাতা মৌখিকভাবে গ্রহীতার অনুকূলে সম্পত্তি দান এবং গ্রহীতা কর্তৃক দখল অর্পণ হলেই চলবে। গ্রহীতার অনুকূলে সম্পাদিত দলিলটি যে তারিখেই রেজিস্ট্রি হোক না কেন, মৌখিকভাবে দানের তারিখেই দান কার্যকর হবে।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

seraj.pramanik@gmail.com

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি

সিরাজ প্রামাণিক

শুক্রবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রতারণামূলকভাবে একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করলে উক্ত জমিতে কে অগ্রাধিকার পাবে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন-১৮৮২ এর ৪৮ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে। এ ধারায় হস্তান্তর বা সম্পত্তি বিক্রি দ্বারা সৃষ্ট অধিকারের অগ্রাধিকার নীতির অর্থ হলো- সময়ের দিক হতে যিনি প্রথম হবেন, আইনের দিক হতে তিনি অধিকার লাভ করবেন। কোন সম্পত্তির আইনসঙ্গত মালিক যদি একই সম্পত্তি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেন তাহলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা নিরসন করার জন্য এই ধারায় বিধান রাখা হয়েছে। যিনি প্রথম হস্তান্তর গ্রহণ করবেন তিনি সম্পত্তিটি পাবেন। তবে প্রথম হস্তান্তর আইনানুগ বৈধ না হলে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪৮ ধারা অনুসারে পরবর্তী হস্তান্তরের ওপর তা প্রাধান্য পাবে না।

কারণ এই নীতির অর্থ হলো- সময়ের দিক হতে যিনি প্রথম হবেন আইনের দিক থেকে তিনি সুবিধা পাবেন। জমি বিক্রেতা একবার বিক্রয়ের মাধ্যমে ওই জমির সব অধিকার হারায়। আইনে প্রবাদ রয়েছে, যার যে স্বত্ব আছে তার চেয়ে উত্তম স্বত্ব সে অন্যকে দিতে পারে না। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

ছাব্বির সাহেব তার কুষ্টিয়া মৌজার ১২২৫নং দাগের জমি বিগত ১২/১০/২০১৯ তারিখে রহিম মিয়ার কাছে বিক্রি করে নিঃস্বত্ববান হন। পরবর্তীতে একই জমি অমিত হাসানের কাছে বিগত ২৫/৯/২০২০ তারিখে বিক্রয় করেন।

সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪৮ ধারা অনুসারে ১২/১০/২০১৯ তারিখে রহিম মিয়ার কাছে হস্তান্তর অবশ্যই অমিত হাসানের কাছে বিগত ২৫/৯/২০২০ তারিখে বিক্রয়ের ওপর প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ রহিম মিয়ার কাছে বিক্রয় কার্যকর হবে। তবে এ অগ্রাধিকার নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন-

একই সম্পত্তির ওপর হস্তান্তরের মাধ্যমে অধিকারসমূহ সৃষ্টি করতে হবে;

হস্তান্তরগুলো ভিন্ন ভিন্ন তারিখে হতে হবে। একই সঙ্গে একই দলিলে হলে চলবে না;

হস্তান্তর আইনগতভাবে বৈধ ও পরিপূর্ণ হতে হবে:

হস্তান্তরগুলো পরস্পরের সাথে সংঘাতময় হতে হবে;

বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করা না হলে তা পরবর্তী রেজিস্ট্রেশন দলিলের ওপর প্রাধান্য পাবে না, বিশেষ করে ২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে জমির যেকোনো হস্তান্তরযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে;

বিপরীত মর্মে কোন চুক্তি থাকলে অগ্রাধিকারের বিধান কার্যকর নয়;

হস্তান্তরিত সম্পত্তিটি স্থাবর সম্পত্তি হবে। এই শর্তসমূহ পূরণ হলেই কেবল অগ্রাধিকারের নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

আর আপনি যদি জমি কিনে এ ধরনের প্রতারণার শিকার হন তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করে প্রতিকার পেতে পারেন। আরেকটি বিষয় জেনে রাখা দরকার যে, রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮ এর ধারা-৪৭ অনুসারে, দলিল কার্যকর হয় দলিল সম্পাদনের তারিখ থেকেই। অর্থাৎ যে তারিখে দলিলটি সম্পন্ন করা হয়েছে, সেই তারিখ থেকে, দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ থেকে নয়। বাংলাদেশের বাইরে দলিল সম্পাদন করা হলে দলিলটি যেদিন বাংলাদেশে পৌঁছাবে, সেই তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি করাতে হবে।

১৯০৮ এর ২৩ ধারা অনুসারে, সম্পাদনের তারিখ থেকে ৩ (তিন) মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য দলিলটি রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হয়। অবশ্য ওই আইনের ২৫ ধারা বিধান মোতাবেক জেলা রেজিস্ট্রার প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন ফি এর ১০ (দশ) গুণ পর্যন্ত জরিমানা আদায় করে সাব-রেজিস্ট্রারকে দলিলটি রেজিস্ট্রির জন্য আদেশ দিতে পারেন। উইল/অছিয়ত দলিল সম্পাদনের পর যেকোন সময়ে রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করা যায়।

রেজিস্ট্রেশন আইনের ১৭(এ) ধারা অনুসারে, বায়নাপত্র সম্পাদনের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হয়। আর ‘হেবার ঘোষণাপত্র’ বা ‘দানের ঘোষণাপত্র’ দলিলের ক্ষেত্রে কোন সম্পত্তির দাতা মৌখিকভাবে গ্রহীতার অনুকূলে সম্পত্তি দান এবং গ্রহীতা কর্তৃক দখল অর্পণ হলেই চলবে। গ্রহীতার অনুকূলে সম্পাদিত দলিলটি যে তারিখেই রেজিস্ট্রি হোক না কেন, মৌখিকভাবে দানের তারিখেই দান কার্যকর হবে।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

seraj.pramanik@gmail.com

back to top