alt

opinion » post-editorial

লং কোভিড : ঝুঁকি ও প্রতিকার

নাজমুল হুদা খান

: রোববার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
image

কোভিড-১৯ এর হিংস্র থাবা আজ সারা বিশ্বে বিস্তৃত। উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু সর্বত্র প্রতিটি মানুষ করোনাভাইরাসের ভয়ে সন্ত্রস্ত। বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২২ কোটি, প্রাণ নিয়েছে ৪৫ লাখের ওপর। প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও প্রয়োগের পরও স্বস্তিতে নেই বিশ্বের কোন প্রান্তের মানুষ। করোনাভাইরাস পাল্লা দিয়ে আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা, ল্যামডা, কাপ্পা, ডেল্টা প্লাস এবং মিউ এর মতো একের পর এক ধরন পাল্টিয়ে সংক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে এ সার্স কোভিড-২ ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে প্রয়োজনে মনোক্লোনাল এন্টিবডি বা সুপার এন্টিবডির মাধ্যমে চিকিৎসার কথা ভাবছে বিজ্ঞানীরা।

তারপরও যেন মুক্তি নেই। আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও এ ভাইরাসের প্রকোপ থেকে যাচ্ছে অনেক রোগীর দেহে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছেন পোস্ট কোভিড সিন্ড্রোম বা ক্রনিক কোভিড সিন্ড্রোম, অনেকে বলছেন লং হল কোভিড। তবে সবচেয়ে জনশ্রুত নাম হচ্ছে লং কোভিড। নামেই যায় চেনা; অর্থাৎ সাধারণভাবে দীর্ঘ সময় ধরে কোভিডের প্রকোপ দেহে অবস্থানকেই বলা হচ্ছে লং কোভিড। কতটা সময় ধরে কোভিডের এ কালো মেঘ দেহে অবস্থানের সময়কে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার এক্সেলেন্স (ঘওঈঊ) তিন ধাপে ভাগ করেছে। যথা : সংক্রমণ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত, ৪-১২ সপ্তাহ এবং ১২ সপ্তাহের ঊর্ধ্বে। তবে বিভিন্ন দেশে কোভিড রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদের প্রকোপ দেখা যায়। চীনের উহান সিটিতে প্রায় ৬ মাস, অনেক দেশে ৩৫ সপ্তাহ পর্যন্ত লং কোভিড রোগ শনাক্ত হয়েছে। সাধারণত কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর শতকরা প্রায় ৩০ ভাগের মধ্যে লং কোভিডের উপসর্গ পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যে এর সংখ্যা প্রায় ৩১%, ইন্দোনেশিয়ায় ৬৩% এবং চীনের উহানে ৪৯%। লং কোভিডে মৃত্যুর ঝুঁকিও আশঙ্কাজনক। নেচার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে ৮৭,০০০ লং কোভিড রোগীদের মধ্যে গবেষণালব্ধ ফলে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের চেয়ে মৃত্যুর হার হাজারে প্রায় ৩০ জন বেশি।

লং কোভিড রোগীদের দেহে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। প্রায় ৩ সহস্রাধিক রোগীর মধ্যে গবেষণায় পঞ্চাশের অধিক উপসর্গ শনাক্ত করা হয়। যাদের মধ্যে অবসাদগ্রস্ততা, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, পেশীর দুর্বলতা, মৃদু জ্বর থাকা, স্বাদ ও গন্ধ কমে যাওয়া, গলা ব্যথা, বুকে ব্যথা, এসিডিটি, বুক ধরফর করা, কাজে মনোযোগহীনতা, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, হতাশা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্ত চাপ, চর্ম রোগ, কিডনি রোগ এবং রক্ত জমাট বাঁধা অন্যতম।

এ ভাইরাস দেহের সব অঙ্গ ও তন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে থাকে। তবে শ্বাসতন্ত্র, রক্তসংবহনতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র, হরমোন ও গ্রন্থিতন্ত্র, রেচনতন্ত্র, চর্ম বা আচ্ছাদনতন্ত্র এবং পেশী ও হাড়জোড় তন্ত্রসমূহ প্রধান লক্ষ্যস্থল।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের উদ্রেক হয়, কোভিড-১৯ এর লং কোভিডের কারণ কি? বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, মূলত ৪টি কারণে এ রোগের উদ্ভব। প্রথমত, করোনাভাইরাস কর্তৃক ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত। দ্বিতীয়ত, ভাইরাসকে দমন করতে দেহের প্রতিরোধী কোষসমূহের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। তৃতীয়ত, ভাইরাস কর্তৃক দেহের রক্তনালীসমূহে ক্ষত ও রক্ত জমাট বাঁধা ব্যাহতকরণ এবং চতুর্থত, করোনাভাইরাস কর্তৃক কিডনির পরিস্রাবন প্রক্রিয়ায় জটিলতা প্রভৃতি।

মানুষের দেহে এতসব ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা লং কোভিড নিয়ে চিন্তিত। বিশেষ করে বয়স্ক, স্থূলকায়, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হাঁপানিসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে লং কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেশি। মহিলাদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় এ পর্যন্ত অধিক হারে এ রোগ শনাক্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে। এ কারণে উন্নত বিশ্বের প্রায় সব দেশে; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশসমূহের বিভিন্ন জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা লং কোভিড শনাক্ত, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যে এ রোগের জন্য পৃথক বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় এ রোগের ব্যবস্থাপনায় গাইডলাইন প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ লং কোভিড শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের ধরন ও প্রকৃতি শনাক্তকরণ, প্রতিকারে ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও প্রয়োগসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়নের পরও বিশ্ব থেকে একে নিশ্চিহ্ন কবে নাগাদ করা যাবে, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ না সব জায়গায় করোনা সংক্রমণ না কমে, ততদিন অতিমারি চলবে’।

এমতাবস্থায় করোনার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব লং কোভিডের প্রভাব সময়মতো প্রতিরোধ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে না আসতে পারলে মানুষের শারীরিক সুস্থতা, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে এতে সন্দেহ নেই।

লং কোভিড মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে গবেষণা, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার কর্মপরিধি ও কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এতে এ রোগ নির্ণয় পদ্ধতি, রেফার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার চার্ট সুপারিশ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর ব্যবস্থাপনা গাইডলাইনে লং কোভিড বিষয়ে ভিন্ন অধ্যায় সন্নিবেশ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি এবং ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজি এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার গাইডলাইন প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ অন্যতম কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশ। আমাদের দেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়েছে। লং কোভিডের প্রভাব যে আমাদের মধ্যে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে তাতে সন্দেহ নেই। সুতরাং কোভিড নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি লং কোভিডের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সবার বিশেষভাবে নজর দেয়া প্রয়োজন।

[লেখক : সহকারী পরিচালক,

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা]

চা-জনগোষ্ঠীর দণ্ডপূজা ও উপেক্ষিত অধিকার

মেরিটোক্রেসি: সমাজ ও রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা

রম্যগদ্য: হাতের মুঠোয় বিশ্ব

শারদীয় পূজার দিনলিপি

ঋণের জন্য আত্মহত্যা, ঋণ নিয়েই চল্লিশা

জাকসু নির্বাচন ও হট্টগোল: আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কী?

নরসুন্দর পেশার গুরুত্ব ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন

বিভাগভিত্তিক এমপিআর নির্বাচন পদ্ধতি

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

আনন্দবেদনার হাসপাতাল: সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ছবি

ভিন্ন ধরনের নির্বাচন, ভিন্ন ধরনের ফল

বেসরকারি খাতে সিআইবি’র যাত্রা: ঋণ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত

স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠা হোক

ছবি

নেপালে সরকার পতন ও বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ

ডাকসু নির্বাচন ও সংস্কারপ্রয়াস: রাজনৈতিক চিন্তার নতুন দিগন্ত

নির্বাচন কি সব সমস্যার সমাধান

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

tab

opinion » post-editorial

লং কোভিড : ঝুঁকি ও প্রতিকার

নাজমুল হুদা খান

image

রোববার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

কোভিড-১৯ এর হিংস্র থাবা আজ সারা বিশ্বে বিস্তৃত। উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু সর্বত্র প্রতিটি মানুষ করোনাভাইরাসের ভয়ে সন্ত্রস্ত। বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২২ কোটি, প্রাণ নিয়েছে ৪৫ লাখের ওপর। প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও প্রয়োগের পরও স্বস্তিতে নেই বিশ্বের কোন প্রান্তের মানুষ। করোনাভাইরাস পাল্লা দিয়ে আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা, ল্যামডা, কাপ্পা, ডেল্টা প্লাস এবং মিউ এর মতো একের পর এক ধরন পাল্টিয়ে সংক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে এ সার্স কোভিড-২ ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে প্রয়োজনে মনোক্লোনাল এন্টিবডি বা সুপার এন্টিবডির মাধ্যমে চিকিৎসার কথা ভাবছে বিজ্ঞানীরা।

তারপরও যেন মুক্তি নেই। আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও এ ভাইরাসের প্রকোপ থেকে যাচ্ছে অনেক রোগীর দেহে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছেন পোস্ট কোভিড সিন্ড্রোম বা ক্রনিক কোভিড সিন্ড্রোম, অনেকে বলছেন লং হল কোভিড। তবে সবচেয়ে জনশ্রুত নাম হচ্ছে লং কোভিড। নামেই যায় চেনা; অর্থাৎ সাধারণভাবে দীর্ঘ সময় ধরে কোভিডের প্রকোপ দেহে অবস্থানকেই বলা হচ্ছে লং কোভিড। কতটা সময় ধরে কোভিডের এ কালো মেঘ দেহে অবস্থানের সময়কে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার এক্সেলেন্স (ঘওঈঊ) তিন ধাপে ভাগ করেছে। যথা : সংক্রমণ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত, ৪-১২ সপ্তাহ এবং ১২ সপ্তাহের ঊর্ধ্বে। তবে বিভিন্ন দেশে কোভিড রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদের প্রকোপ দেখা যায়। চীনের উহান সিটিতে প্রায় ৬ মাস, অনেক দেশে ৩৫ সপ্তাহ পর্যন্ত লং কোভিড রোগ শনাক্ত হয়েছে। সাধারণত কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর শতকরা প্রায় ৩০ ভাগের মধ্যে লং কোভিডের উপসর্গ পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যে এর সংখ্যা প্রায় ৩১%, ইন্দোনেশিয়ায় ৬৩% এবং চীনের উহানে ৪৯%। লং কোভিডে মৃত্যুর ঝুঁকিও আশঙ্কাজনক। নেচার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে ৮৭,০০০ লং কোভিড রোগীদের মধ্যে গবেষণালব্ধ ফলে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের চেয়ে মৃত্যুর হার হাজারে প্রায় ৩০ জন বেশি।

লং কোভিড রোগীদের দেহে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। প্রায় ৩ সহস্রাধিক রোগীর মধ্যে গবেষণায় পঞ্চাশের অধিক উপসর্গ শনাক্ত করা হয়। যাদের মধ্যে অবসাদগ্রস্ততা, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, পেশীর দুর্বলতা, মৃদু জ্বর থাকা, স্বাদ ও গন্ধ কমে যাওয়া, গলা ব্যথা, বুকে ব্যথা, এসিডিটি, বুক ধরফর করা, কাজে মনোযোগহীনতা, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, হতাশা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্ত চাপ, চর্ম রোগ, কিডনি রোগ এবং রক্ত জমাট বাঁধা অন্যতম।

এ ভাইরাস দেহের সব অঙ্গ ও তন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে থাকে। তবে শ্বাসতন্ত্র, রক্তসংবহনতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র, হরমোন ও গ্রন্থিতন্ত্র, রেচনতন্ত্র, চর্ম বা আচ্ছাদনতন্ত্র এবং পেশী ও হাড়জোড় তন্ত্রসমূহ প্রধান লক্ষ্যস্থল।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের উদ্রেক হয়, কোভিড-১৯ এর লং কোভিডের কারণ কি? বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, মূলত ৪টি কারণে এ রোগের উদ্ভব। প্রথমত, করোনাভাইরাস কর্তৃক ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত। দ্বিতীয়ত, ভাইরাসকে দমন করতে দেহের প্রতিরোধী কোষসমূহের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। তৃতীয়ত, ভাইরাস কর্তৃক দেহের রক্তনালীসমূহে ক্ষত ও রক্ত জমাট বাঁধা ব্যাহতকরণ এবং চতুর্থত, করোনাভাইরাস কর্তৃক কিডনির পরিস্রাবন প্রক্রিয়ায় জটিলতা প্রভৃতি।

মানুষের দেহে এতসব ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা লং কোভিড নিয়ে চিন্তিত। বিশেষ করে বয়স্ক, স্থূলকায়, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হাঁপানিসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে লং কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেশি। মহিলাদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় এ পর্যন্ত অধিক হারে এ রোগ শনাক্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে। এ কারণে উন্নত বিশ্বের প্রায় সব দেশে; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশসমূহের বিভিন্ন জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা লং কোভিড শনাক্ত, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যে এ রোগের জন্য পৃথক বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় এ রোগের ব্যবস্থাপনায় গাইডলাইন প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ লং কোভিড শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের ধরন ও প্রকৃতি শনাক্তকরণ, প্রতিকারে ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও প্রয়োগসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়নের পরও বিশ্ব থেকে একে নিশ্চিহ্ন কবে নাগাদ করা যাবে, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ না সব জায়গায় করোনা সংক্রমণ না কমে, ততদিন অতিমারি চলবে’।

এমতাবস্থায় করোনার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব লং কোভিডের প্রভাব সময়মতো প্রতিরোধ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে না আসতে পারলে মানুষের শারীরিক সুস্থতা, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে এতে সন্দেহ নেই।

লং কোভিড মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে গবেষণা, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার কর্মপরিধি ও কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এতে এ রোগ নির্ণয় পদ্ধতি, রেফার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার চার্ট সুপারিশ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর ব্যবস্থাপনা গাইডলাইনে লং কোভিড বিষয়ে ভিন্ন অধ্যায় সন্নিবেশ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি এবং ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজি এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার গাইডলাইন প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ অন্যতম কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশ। আমাদের দেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়েছে। লং কোভিডের প্রভাব যে আমাদের মধ্যে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে তাতে সন্দেহ নেই। সুতরাং কোভিড নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি লং কোভিডের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সবার বিশেষভাবে নজর দেয়া প্রয়োজন।

[লেখক : সহকারী পরিচালক,

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা]

back to top