alt

opinion » post-editorial

হাঁস-মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

আরাফাত রহমান

: মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

এভিয়ান টিউবারকুলোসিস, মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস ঘটিত হাঁস-মুরগির একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। রোগটি খুবই মারাত্মক, তবে যেসব সাধারণ খামার ও বাড়িতে দীর্ঘকাল হাঁস-মুরগি প্রতিপালিত হচ্ছে সেখানেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। আধুনিক হাঁস-মুরগির খামারে রোগটির প্রকোপ কম, কারণ সেখানে সাধারণত দু’বছরের বেশি সময় এদের রাখা হয় না। দেশি মোরগ-মুরগি, টার্কি ও গিনি ফাউল জীবাণু দ্বারা সহজে আক্রান্ত হয়, কিন্তু হাঁসে সচরাচর সংক্রমণ কম। তিন থেকে ছয় মাস বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে এ রোগপ্রবণতা বেশি। রোগটি বাংলাদেশের হাঁস-মুরগির খামারের জন্য তেমন কোন হুমকি নয়। শীতকালে মাঝে মধ্যে যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, রোগ ধীরে ধীরে বাড়ে এবং আক্রমণের অনেক দিন পর মুরগি মারা যায়। কখনও কখনও আক্রান্ত মুরগির দেহের ওজন কমে যায় এবং সেটি খুঁড়িয়ে হাঁটে।

কক্সিডিওসিস, এইমেরিয়া গনের কতিপয় প্রজাতির প্রোটোজোয়া দ্বারা সংক্রমিত এক রোগ। অন্তত সাতটি প্রজাতির মধ্যে E. tenella প্রধানত বাংলাদেশে কক্সিডিওসিস রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। এ রোগে পশুপাখিগুলো ঝিমিয়ে পড়ে, খাওয়া বন্ধ করে এবং বিষ্ঠায় রক্ত দেখা যায়। আক্রান্ত পাখির মৃত্যুর হার যথেষ্ট বেশি। মুরগির কলেরা Pasteurella নামের ব্যাকটেরিয়াজনিত মুরগির মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এটি হিমোরেজিক সেপটিসেমিয়া নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে মাঝে-মধ্যে এ রোগের মড়ক দেখা দেয়। তিন থেকে ছয় মাস বয়সী মুরগিই অধিক আক্রান্ত হয়। রুগ্ণ পাখি দ্বারা দূষিত মাটি, খাদ্য ও পানির মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়।

পাখির বসন্ত মুরগির ভাইরাসজনিত ব্যাধি। এর লক্ষণ আঁচিলের মতো গন্ডিকা, যা নানা আকারের হতে পারে। কোনটি শিমের দানা আবার কোনটি এর চেয়ে অপেক্ষাকৃত কিছুটা বড় হয়ে থাকে। গন্ডিকাগুলো মুরগির ঝুঁটি, চোখের পাতা এবং নাকের ও কানের ছিদ্রের প্রবেশ পথে বা মাথার অন্যান্য অংশে তৈরি হয়। বাংলাদেশে সচরাচর শীতকালে রোগটির প্রাদুর্ভাব ঘটে। অপেক্ষাকৃত বয়স্ক পাখির তুলনায় কমবয়সী পাখি এ রোগে বেশি ভুগে। মৃত্যুহার খুব একটা উল্লেখ করার মতো নয়। পাখির টাইফয়েড গৃহপালিত পাখির রক্তদূষণজনিত ব্যাধি। এর আক্রমণ তীব্র এবং এতে মৃত্যুহার অধিক। রোগের কারণ Bacillus gallinarum ব্যাকটেরিয়া। আক্রান্ত পাখির মল দ্বারা দূষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। মৃত্যুর হার শতকরা ২০-৮০ ভাগ।

বাংলাদেশের হাঁস-মুরগির প্রচুর পরজীবী শনাক্ত করা হয়েছে, আর এগুলোর বেশিরভাগই সন্ধিপদ ও চ্যাপ্টা-কৃমির দলভুক্ত। এক জাতের এঁটেল থাকে মুরগির খোয়ার ও খামারঘরের চিড় ও ফাটলে। পরজীবী হাঁস-মুরগির অনিদ্রা ও রক্তস্বল্পতা ঘটায়, উৎপাদন ক্ষমতা কমায় এবং এদের মধ্যে স্পাইরোকিটোসিস ও রিকেটসিয়ার মতো রোগ ছড়ায়। উকুন হাঁস-মুরগির ত্বকের উপরিভাগে বাস করে এবং চুলকানি, ওজন-হ্রাস, দুর্বলতা, ডিম পাড়ার ক্ষমতাহানি এমনকি ছানাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। বাংলাদেশে হাঁস-মুরগির প্রধানত ১২ প্রজাতির কৃমির মধ্যে A. galli ও Raillietina প্রজাতিগুলো আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিকর রোগ ঘটায়। এতে সংক্রমণের স্থান অত্যধিক ফুলে ওঠে। গ্রামীণ পরিবেশে এ পরজীবী বেশি দেখা যায়।

রানিক্ষেত মুরগির একটি তীব্র ভাইরাস রোগ। দৃশ্যত মুরগির প্লেগের মতো হলেও এটি পৃথক ও অনাক্রম্যতা অনুসারে সুচিহ্নিত আরেকটি ভাইরাসজনিত রোগ। ১৯২৬ সালে ইংল্যান্ডের নিউক্যাস্লেস অঞ্চলে প্রথম শনাক্ত হওয়ার জন্যই এ নামকরণ। রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হাঁচি-কাশি, জবুথবু অবস্থা, অতঃপর কাঁপুনি, পাক খাওয়া, পড়ে যাওয়া, মাথা ও গলা মোড়ানো বা সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত। সব ব্রয়লার মোরগ এ রোগপ্রবণ হলেও ৩-৮ সপ্তাহ বয়সীরাই বেশি আক্রান্ত হয়। মৃত্যুহার ৮০-১০০%। প্রধান লক্ষণ হলুদ-সাদা রঙের চুনের মতো দুর্গন্ধযুক্ত উদরাময়। আরেকটি বিশিষ্ট লক্ষণ মুখে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয়া। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এ রোগের প্রকোপ অত্যধিক এবং মোরগ মড়কের প্রধান হেতু। আক্রান্ত ডিম পাড়া মুরগির ডিমের সংখ্যা ও মান দ্রুত হ্রাস পায়। চিকিৎসার জন্য এখন টিকা পাওয়া যায়।

[লেখক : সহকারী কর্মকর্তা, ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস বিভাগ, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়]

শারদীয় পূজার দিনলিপি

ঋণের জন্য আত্মহত্যা, ঋণ নিয়েই চল্লিশা

জাকসু নির্বাচন ও হট্টগোল: আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কী?

নরসুন্দর পেশার গুরুত্ব ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন

বিভাগভিত্তিক এমপিআর নির্বাচন পদ্ধতি

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

আনন্দবেদনার হাসপাতাল: সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ছবি

ভিন্ন ধরনের নির্বাচন, ভিন্ন ধরনের ফল

বেসরকারি খাতে সিআইবি’র যাত্রা: ঋণ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত

স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠা হোক

ছবি

নেপালে সরকার পতন ও বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ

ডাকসু নির্বাচন ও সংস্কারপ্রয়াস: রাজনৈতিক চিন্তার নতুন দিগন্ত

নির্বাচন কি সব সমস্যার সমাধান

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

ছবি

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

একজন নাগরিকের অভিমানী বিদায় ও রাষ্ট্রের নৈতিক সংকট

tab

opinion » post-editorial

হাঁস-মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

আরাফাত রহমান

মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

এভিয়ান টিউবারকুলোসিস, মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস ঘটিত হাঁস-মুরগির একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। রোগটি খুবই মারাত্মক, তবে যেসব সাধারণ খামার ও বাড়িতে দীর্ঘকাল হাঁস-মুরগি প্রতিপালিত হচ্ছে সেখানেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। আধুনিক হাঁস-মুরগির খামারে রোগটির প্রকোপ কম, কারণ সেখানে সাধারণত দু’বছরের বেশি সময় এদের রাখা হয় না। দেশি মোরগ-মুরগি, টার্কি ও গিনি ফাউল জীবাণু দ্বারা সহজে আক্রান্ত হয়, কিন্তু হাঁসে সচরাচর সংক্রমণ কম। তিন থেকে ছয় মাস বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে এ রোগপ্রবণতা বেশি। রোগটি বাংলাদেশের হাঁস-মুরগির খামারের জন্য তেমন কোন হুমকি নয়। শীতকালে মাঝে মধ্যে যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, রোগ ধীরে ধীরে বাড়ে এবং আক্রমণের অনেক দিন পর মুরগি মারা যায়। কখনও কখনও আক্রান্ত মুরগির দেহের ওজন কমে যায় এবং সেটি খুঁড়িয়ে হাঁটে।

কক্সিডিওসিস, এইমেরিয়া গনের কতিপয় প্রজাতির প্রোটোজোয়া দ্বারা সংক্রমিত এক রোগ। অন্তত সাতটি প্রজাতির মধ্যে E. tenella প্রধানত বাংলাদেশে কক্সিডিওসিস রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। এ রোগে পশুপাখিগুলো ঝিমিয়ে পড়ে, খাওয়া বন্ধ করে এবং বিষ্ঠায় রক্ত দেখা যায়। আক্রান্ত পাখির মৃত্যুর হার যথেষ্ট বেশি। মুরগির কলেরা Pasteurella নামের ব্যাকটেরিয়াজনিত মুরগির মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এটি হিমোরেজিক সেপটিসেমিয়া নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে মাঝে-মধ্যে এ রোগের মড়ক দেখা দেয়। তিন থেকে ছয় মাস বয়সী মুরগিই অধিক আক্রান্ত হয়। রুগ্ণ পাখি দ্বারা দূষিত মাটি, খাদ্য ও পানির মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়।

পাখির বসন্ত মুরগির ভাইরাসজনিত ব্যাধি। এর লক্ষণ আঁচিলের মতো গন্ডিকা, যা নানা আকারের হতে পারে। কোনটি শিমের দানা আবার কোনটি এর চেয়ে অপেক্ষাকৃত কিছুটা বড় হয়ে থাকে। গন্ডিকাগুলো মুরগির ঝুঁটি, চোখের পাতা এবং নাকের ও কানের ছিদ্রের প্রবেশ পথে বা মাথার অন্যান্য অংশে তৈরি হয়। বাংলাদেশে সচরাচর শীতকালে রোগটির প্রাদুর্ভাব ঘটে। অপেক্ষাকৃত বয়স্ক পাখির তুলনায় কমবয়সী পাখি এ রোগে বেশি ভুগে। মৃত্যুহার খুব একটা উল্লেখ করার মতো নয়। পাখির টাইফয়েড গৃহপালিত পাখির রক্তদূষণজনিত ব্যাধি। এর আক্রমণ তীব্র এবং এতে মৃত্যুহার অধিক। রোগের কারণ Bacillus gallinarum ব্যাকটেরিয়া। আক্রান্ত পাখির মল দ্বারা দূষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। মৃত্যুর হার শতকরা ২০-৮০ ভাগ।

বাংলাদেশের হাঁস-মুরগির প্রচুর পরজীবী শনাক্ত করা হয়েছে, আর এগুলোর বেশিরভাগই সন্ধিপদ ও চ্যাপ্টা-কৃমির দলভুক্ত। এক জাতের এঁটেল থাকে মুরগির খোয়ার ও খামারঘরের চিড় ও ফাটলে। পরজীবী হাঁস-মুরগির অনিদ্রা ও রক্তস্বল্পতা ঘটায়, উৎপাদন ক্ষমতা কমায় এবং এদের মধ্যে স্পাইরোকিটোসিস ও রিকেটসিয়ার মতো রোগ ছড়ায়। উকুন হাঁস-মুরগির ত্বকের উপরিভাগে বাস করে এবং চুলকানি, ওজন-হ্রাস, দুর্বলতা, ডিম পাড়ার ক্ষমতাহানি এমনকি ছানাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। বাংলাদেশে হাঁস-মুরগির প্রধানত ১২ প্রজাতির কৃমির মধ্যে A. galli ও Raillietina প্রজাতিগুলো আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিকর রোগ ঘটায়। এতে সংক্রমণের স্থান অত্যধিক ফুলে ওঠে। গ্রামীণ পরিবেশে এ পরজীবী বেশি দেখা যায়।

রানিক্ষেত মুরগির একটি তীব্র ভাইরাস রোগ। দৃশ্যত মুরগির প্লেগের মতো হলেও এটি পৃথক ও অনাক্রম্যতা অনুসারে সুচিহ্নিত আরেকটি ভাইরাসজনিত রোগ। ১৯২৬ সালে ইংল্যান্ডের নিউক্যাস্লেস অঞ্চলে প্রথম শনাক্ত হওয়ার জন্যই এ নামকরণ। রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হাঁচি-কাশি, জবুথবু অবস্থা, অতঃপর কাঁপুনি, পাক খাওয়া, পড়ে যাওয়া, মাথা ও গলা মোড়ানো বা সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত। সব ব্রয়লার মোরগ এ রোগপ্রবণ হলেও ৩-৮ সপ্তাহ বয়সীরাই বেশি আক্রান্ত হয়। মৃত্যুহার ৮০-১০০%। প্রধান লক্ষণ হলুদ-সাদা রঙের চুনের মতো দুর্গন্ধযুক্ত উদরাময়। আরেকটি বিশিষ্ট লক্ষণ মুখে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয়া। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এ রোগের প্রকোপ অত্যধিক এবং মোরগ মড়কের প্রধান হেতু। আক্রান্ত ডিম পাড়া মুরগির ডিমের সংখ্যা ও মান দ্রুত হ্রাস পায়। চিকিৎসার জন্য এখন টিকা পাওয়া যায়।

[লেখক : সহকারী কর্মকর্তা, ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস বিভাগ, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top