alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বেশি দামে সার বিক্রিতে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষক

নিতাই চন্দ্র রায়

: বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

গত বছর পর পর কয়েকবারের বন্যায় আমন ধানের উৎপাদন হ্রাস পায়। বোরো মৌসুমে ধানের শীষ বের হওযার পর্যায়ে গরম বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে দেশের বেশ কটি জেলায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব কারণে এ বছর প্রথম থেকেই চালের বাজার ছিল অস্থির। এছাড়া মিল মালিক ও এক শ্রেণীর চাল ব্যবসায়ীর কারসাজিও কম ছিল না। করোনার কারণে এমনিতে মানুষের আয় রোজগার কমে গেছে। প্রায় ২ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। তার মধ্যে চাল, তেল ও চিনিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার চালের দাম সহনশীল করার প্রয়াসে ৪০০ আমদানিকারকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে ১৭ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি প্রদান করেছে। সরকারে এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। সারা দেশে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে দেশের ১২/১৩টি জেলার রোপণকৃত আমন ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেসব জমিতে কৃষক আবার নতুন করে নামলা জাতের আমন ধানের চারা রোপণ করবেন। এ ব্যাপারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে বিনা মূল্যে ধানের চারা ও সার সরবরাহ করা প্রয়োজন। এতে আমন ধানের উৎপাদন বাড়বে এবং কৃষকও বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।

বর্তমানে আমন ধানের জমিতে উপরি সার প্রয়োগ, রবি মৌসুমের সবজি উৎপাদন, বৃক্ষরোপণ ও ফল গাছের পরিচর্যার জন্য কৃষকের প্রচুর রাসায়নিক সারের প্রয়োজন। সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য রাসায়নিক সারের দাম হ্রাস করেছে পাঁচবার। বর্তমানে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সারের সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্য হলো যথাক্রমে ১৬ টাকা, ২২ টাকা, ১৫ টাকা ও ১৬ টাকা। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এক শ্রেণীর সার ডিলারের অতিলোভ ও অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে কৃষক সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার পাচ্ছেন না। সম্প্রতি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার বিভিন্ন সারের দোকানে ১৬ টাকা কেজির প্রতি কেজি ইউরিয়া সার ২২ টাকা, ২২ টাকা কেজির টিএসপি সার ২৮ টাকা, ১৫ টাকা কেজির এমওপি সার ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ১৬ টাকা কেজি দরের ডিএপি সার বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকা কেজি দরে। দেশে প্রচুর সারের মজুত থাকা সত্ত্বেও প্রতি কেজি রাসায়নিক সারের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা বৃদ্ধির কোন যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। এটা ডিলার ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া আর কিছু নয়।

আমনের উৎপাদন মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধির কারণে আর্থিক সংকটের জন্য কৃষক ধানের জমিতে সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করতে পারবেন না। এতে আমন ধানের ফলন হ্রাস পেতে পারে। পোকা ও রোগবালইয়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে, যার বিরূপ প্রভাব পড়বে পরবর্তীতে ফলনে। এছাড়া সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে রবি মৌসুমে সবজি উৎপাদনও ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে সরকার নির্ধারিত একাধিক সার ডিলার। তাদের কাজ হলো কৃষকদের মধ্যে সরকার নির্ধারিত মূল্যে নিয়মিত সার বিক্রি। কিন্তু ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক সেই সব সার ডিলারদের নাম জানেন না। ইউনিয়নের সার ডিলাররা কখন সার উত্তলন করেন, কখন কোথায় সার বিক্রি করেন- এসব তথ্য সাধারণ কৃষক জানেন না। জানলেও ভয়ে কৃষক ওই সব রাজনৈতি প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোন কথা উচ্চারণ করার সাহস পান না। ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের প্রগতিশীল সবজি চাষি আব্দুল মান্নানকে তার ইউনিয়নের সারের ডিলারের নাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা বলতে পারেননি।

সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি নিশ্চিত করার বিষয়ে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

১. প্রতিটি উপজেলায় সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি আছে। এই কমিটিকে সারের বাজার দর মূল্যায়ন করে এখনই কৃষকের স্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২. প্রত্যেক সার ডিলারকে উপসহকারী কৃষি বর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কৃষকের মধ্যে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। ২. প্রত্যেক সার ডিলারকে সার বিক্রির পৃথক রেজিস্টারে কৃষকের নাম ও বিক্রিকৃত সারের পরিমাণ এবং কৃষকের স্বাক্ষর গ্রহণ করতে হবে। ৩. প্রত্যেক ডিলারকে সারের মূল্য তালিকার ব্যানার নিজ দোকানে প্রদর্শন করতে হবে। ৪. কৃষি বিভাগ ও বিএডিসির পক্ষ থেকে সার ডিলারদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করে বেশি দামে সার বিক্রিকারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫. ভেজাল ও বেশি দামে সার বিক্রির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কার্যক্রম আরও জোরদার ও গতিশীল করতে হবে।

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সারের মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে সরকার। কৃষকের উৎপাদন খরচ হ্রাস ,সুষম সারের ব্যবহারের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা সংরক্ষণ, ফসলের রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ পরিবেশবান্ধব খাদ্য নিরাপত্তাই সারের মূল্য হ্রাসের অন্যতম কারণ। কৃষি উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য সরকার ডিএপি সারের দাম প্রতিকেজি ১৬ টাকা নির্ধারণ করেছে। খুচরা বিক্রেতা ডিলারের নিকট থেকে কিনবেন ১৪ টাকা আর কৃষকরে কাছে বিক্রি করবেন ১৬ টাকা কেজিতে। টিএসপি ডিলারের কাছ থেকে বিনবেন ১৪ টাকা কেজিতে কৃষকের কাছে বিক্রি করবেন ২২ টাকা কেজিতে।

ইউনিয়নের সার ডিলাররা কখন সার উত্তোলন করেন, কখন কোথায় সার বিক্রি করেন- এসব তথ্য সাধারণ কৃষক জানেন না

এমওপি সার ডিলারের কাছ থেকে কিনবেন ১৩ টাকায় কৃষকের কাছে বিক্রি করবেন ১৫ টাকায়। ইউরিয়া ডিলারের কাছ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছে বিক্রি করবেন ১৬ টাকা কেজি দরে। সরকারের এসব উদ্যোগ যদি তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়ন না হয়, কৃষক যদি সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার না পান, তা হলে সার খাতে সরকারের দেয়া কোটি কোটি টাকার ভর্তুকির কোনো সুফল বয়ে আনবে না জাতির জীবনে। টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের সকল উদ্যোগ ভেস্তে যাবে-এটা কোন অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না।

[লেখক : মহাব্যবস্থাপক (কৃষি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন]

নবম পে স্কেল ও এর আর্থসামাজিক প্রভাব

মৃত্যুদণ্ড, তারপর...

জমির ভুয়া দলিল কীভাবে বাতিল করবেন?

জুলাই সনদ আদিবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি

ব্যাংকের দুরবস্থা থামানো যাচ্ছে না কেন

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্টহপারের প্রাদুর্ভাব

বৈষম্য, অপচয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সংকট

“বাঙালি আমরা, নহিতো...”

নারী নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সমাজের দায়

কাঁপছে ডলারের সিংহাসন

ত্রিশতম জলবায়ু সম্মেলন : প্রতীকী প্রদর্শনী, নাকি বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির বাঁক নেওয়ার মুহূর্ত?

অপরিণত নবজাতক : ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও যত্নের জরুরি বাস্তবতা

বাংলাদেশী উত্তরাধিকার: প্রবাস-জীবন ও আমাদের সংস্কৃতি

রাজনীতিতে ভাষার সহনীয় প্রয়োগ

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বেশি দামে সার বিক্রিতে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষক

নিতাই চন্দ্র রায়

বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

গত বছর পর পর কয়েকবারের বন্যায় আমন ধানের উৎপাদন হ্রাস পায়। বোরো মৌসুমে ধানের শীষ বের হওযার পর্যায়ে গরম বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে দেশের বেশ কটি জেলায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব কারণে এ বছর প্রথম থেকেই চালের বাজার ছিল অস্থির। এছাড়া মিল মালিক ও এক শ্রেণীর চাল ব্যবসায়ীর কারসাজিও কম ছিল না। করোনার কারণে এমনিতে মানুষের আয় রোজগার কমে গেছে। প্রায় ২ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। তার মধ্যে চাল, তেল ও চিনিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার চালের দাম সহনশীল করার প্রয়াসে ৪০০ আমদানিকারকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে ১৭ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি প্রদান করেছে। সরকারে এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। সারা দেশে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে দেশের ১২/১৩টি জেলার রোপণকৃত আমন ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেসব জমিতে কৃষক আবার নতুন করে নামলা জাতের আমন ধানের চারা রোপণ করবেন। এ ব্যাপারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে বিনা মূল্যে ধানের চারা ও সার সরবরাহ করা প্রয়োজন। এতে আমন ধানের উৎপাদন বাড়বে এবং কৃষকও বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।

বর্তমানে আমন ধানের জমিতে উপরি সার প্রয়োগ, রবি মৌসুমের সবজি উৎপাদন, বৃক্ষরোপণ ও ফল গাছের পরিচর্যার জন্য কৃষকের প্রচুর রাসায়নিক সারের প্রয়োজন। সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য রাসায়নিক সারের দাম হ্রাস করেছে পাঁচবার। বর্তমানে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সারের সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্য হলো যথাক্রমে ১৬ টাকা, ২২ টাকা, ১৫ টাকা ও ১৬ টাকা। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এক শ্রেণীর সার ডিলারের অতিলোভ ও অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে কৃষক সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার পাচ্ছেন না। সম্প্রতি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার বিভিন্ন সারের দোকানে ১৬ টাকা কেজির প্রতি কেজি ইউরিয়া সার ২২ টাকা, ২২ টাকা কেজির টিএসপি সার ২৮ টাকা, ১৫ টাকা কেজির এমওপি সার ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ১৬ টাকা কেজি দরের ডিএপি সার বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকা কেজি দরে। দেশে প্রচুর সারের মজুত থাকা সত্ত্বেও প্রতি কেজি রাসায়নিক সারের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা বৃদ্ধির কোন যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। এটা ডিলার ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া আর কিছু নয়।

আমনের উৎপাদন মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধির কারণে আর্থিক সংকটের জন্য কৃষক ধানের জমিতে সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করতে পারবেন না। এতে আমন ধানের ফলন হ্রাস পেতে পারে। পোকা ও রোগবালইয়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে, যার বিরূপ প্রভাব পড়বে পরবর্তীতে ফলনে। এছাড়া সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে রবি মৌসুমে সবজি উৎপাদনও ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে সরকার নির্ধারিত একাধিক সার ডিলার। তাদের কাজ হলো কৃষকদের মধ্যে সরকার নির্ধারিত মূল্যে নিয়মিত সার বিক্রি। কিন্তু ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক সেই সব সার ডিলারদের নাম জানেন না। ইউনিয়নের সার ডিলাররা কখন সার উত্তলন করেন, কখন কোথায় সার বিক্রি করেন- এসব তথ্য সাধারণ কৃষক জানেন না। জানলেও ভয়ে কৃষক ওই সব রাজনৈতি প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোন কথা উচ্চারণ করার সাহস পান না। ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের প্রগতিশীল সবজি চাষি আব্দুল মান্নানকে তার ইউনিয়নের সারের ডিলারের নাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা বলতে পারেননি।

সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি নিশ্চিত করার বিষয়ে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

১. প্রতিটি উপজেলায় সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি আছে। এই কমিটিকে সারের বাজার দর মূল্যায়ন করে এখনই কৃষকের স্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২. প্রত্যেক সার ডিলারকে উপসহকারী কৃষি বর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কৃষকের মধ্যে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। ২. প্রত্যেক সার ডিলারকে সার বিক্রির পৃথক রেজিস্টারে কৃষকের নাম ও বিক্রিকৃত সারের পরিমাণ এবং কৃষকের স্বাক্ষর গ্রহণ করতে হবে। ৩. প্রত্যেক ডিলারকে সারের মূল্য তালিকার ব্যানার নিজ দোকানে প্রদর্শন করতে হবে। ৪. কৃষি বিভাগ ও বিএডিসির পক্ষ থেকে সার ডিলারদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করে বেশি দামে সার বিক্রিকারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫. ভেজাল ও বেশি দামে সার বিক্রির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কার্যক্রম আরও জোরদার ও গতিশীল করতে হবে।

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সারের মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে সরকার। কৃষকের উৎপাদন খরচ হ্রাস ,সুষম সারের ব্যবহারের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা সংরক্ষণ, ফসলের রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ পরিবেশবান্ধব খাদ্য নিরাপত্তাই সারের মূল্য হ্রাসের অন্যতম কারণ। কৃষি উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য সরকার ডিএপি সারের দাম প্রতিকেজি ১৬ টাকা নির্ধারণ করেছে। খুচরা বিক্রেতা ডিলারের নিকট থেকে কিনবেন ১৪ টাকা আর কৃষকরে কাছে বিক্রি করবেন ১৬ টাকা কেজিতে। টিএসপি ডিলারের কাছ থেকে বিনবেন ১৪ টাকা কেজিতে কৃষকের কাছে বিক্রি করবেন ২২ টাকা কেজিতে।

ইউনিয়নের সার ডিলাররা কখন সার উত্তোলন করেন, কখন কোথায় সার বিক্রি করেন- এসব তথ্য সাধারণ কৃষক জানেন না

এমওপি সার ডিলারের কাছ থেকে কিনবেন ১৩ টাকায় কৃষকের কাছে বিক্রি করবেন ১৫ টাকায়। ইউরিয়া ডিলারের কাছ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছে বিক্রি করবেন ১৬ টাকা কেজি দরে। সরকারের এসব উদ্যোগ যদি তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়ন না হয়, কৃষক যদি সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার না পান, তা হলে সার খাতে সরকারের দেয়া কোটি কোটি টাকার ভর্তুকির কোনো সুফল বয়ে আনবে না জাতির জীবনে। টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের সকল উদ্যোগ ভেস্তে যাবে-এটা কোন অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না।

[লেখক : মহাব্যবস্থাপক (কৃষি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন]

back to top