alt

উপ-সম্পাদকীয়

ধনী হওয়ার মন্ত্র ও বোকা বানানোর যন্ত্র

আব্দুর রহমান

: সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

যে কোনভাবেই হোক ‘বড়’ হওয়া কিংবা লোভ-লালসা বা অন্যের সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা মানুষের এক মহারোগ। এটি একটি সুপ্রাচীন রোগ কিন্তু এর কোন মহৌষধ নেই, আর নেই বলেই এক শ্রেণীর মানুষ যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রতারণা করে যাচ্ছে আর সেই প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকে, এক প্রতারকের বিদায় হয়, আবির্ভূত হয় আরেক প্রতারক, আবার কখনও কখনও খোলস বদলে একই প্রতারক আসেন নানান রূপে, নানা নামে। মানুষের ‘বড়’ হওয়ার চেষ্টা মানুষের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ‘ধনী’ অর্থে যে ‘বড়লোক’ তাও যদি কেউ হয় ‘হক-হালাল’ পথে তাতেও দোষের কিছু নেই, কিন্তু যেনতেনভাবে, মানুষকে বোকা বানিয়ে, ফটকাবাজি করে নিজের আখের গোছানোর যে ঘৃণ্য চেষ্টা এক শ্রেণীর মানুষ প্রায়ই করে তা দোষের ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ‘পাপ ছাড়ে না বাপরে’ কিংবা ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’ এই কথাগুলো তো আর এমনি এমনি চালু হয়নি, সবাই জানেন অপরাধ করলে আজ হোক কাল হোক ধরা পরতেই হবে, কিন্তু সেই আশঙ্কা মানুষের মনে কতটা ভীতি তৈরি করতে পেরেছে? সম্ভবত: খুব কমই পেরেছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি দেখি গত দুই দশকে এদেশে প্রতারণার বিষয়টি প্রায় শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। ‘স্যুট-কোট-টাই’ পরা সাহেবরা প্রতারণা করে মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। শুধু কেড়ে নিচ্ছেন বললে কম বলা হবে বলা যায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এরা অস্বাভাবিক উপায়ে, ‘শটকাট’ রাস্তায় নিজের ভাগ্য ফেরানোর অন্ধ প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে। ডেসটিনি ২০০০, জিজিএন, ইউনিপে এরা অল্প সময়ে স্বল্প বিনিয়োগে কিংবা কোনরকম বিনিয়োগ ছাড়াই বড়লোক হওয়ার আকাক্সক্ষা উসকে দিয়েছে। তাদের সেই উসকানিতে পা দিয়ে অনেকেই পতঙ্গের আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ভাগ্যোন্নয়ন, সৌভাগ্যের সন্ধানে।

প্রতারণার নানা মডেল উদ্ভাবন করে তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে এরা, আবার এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই আইনের বেড়াজালে বন্দিও হয়েছেন। এই ধারার প্রতিষ্ঠানের সবশেষ দুটি ‘ধরা খাওয়া’ প্রতিষ্ঠান হলো ‘এহাসন গ্রুপ’ আর ‘ইভ্যালি’।

এহাসন গ্রুপ ধর্মের বড়ি গিলিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, আর ইভ্যালি মানুষকে মোহাবিস্ট করেছে আধুনিক প্রচারণা কৌশল ব্যবহার করে। এহসান গ্রুপের কর্ণধাররা ধরা পরেছেন। ইভ্যালি অবশ্য বলতে গেলে ‘ওয়ান ম্যান শো’। আর সেই ব্যক্তিটি হচ্ছেন মোহাম্মদ রাসেল। তিনি ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিই্ও, আর তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন হচ্ছেনের চেয়ারম্যান। রাসেল আর নাসরিনকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৬ সেপ্টেম্বর। এক গ্রাহক প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন। আর ওই মামলার সূত্র ধরেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তাদের গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি আসলেই সময়ের ব্যাপারমাত্র হয়েছিল প্রায় তিন মাস ধরে। গ্রেপ্তারের পর কোম্পানির দায় ও দেনা সম্পর্কে তাদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানিয়েছেন, গ্রাহক ও পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে ইভ্যালির দেনা বেড়ে এক হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। তাদের ব্যবসায়িক কৌশল ছিল নতুন গ্রাহকের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে পুরোনো গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের দেনা আংশিক পরিশোধ করা। তারা ‘দায় ট্রান্সফারের’ মাধ্যমে ব্যবসা করছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য ছিল প্রথমত ইভ্যালির ‘ব্রান্ড ভ্যালু’ তৈরি করা। পরে দায়সহ কোনো প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে লভ্যাংশ নেয়া। এ উদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন দেশও ভ্রমণ করেছেন। অন্য পরিকল্পনার মধ্যে ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কাছে কোম্পানি শেয়ারের প্রস্তাব দিয়ে দায় চাপিয়ে দেয়া। দায় মেটাতে ব্যর্থ হলে সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে ইভ্যালিকে দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা ছিলো রাসেলের।

মানুষকে ধনী হওয়ার মন্ত্রে এরা দীক্ষিত করেছে তাদের প্রতারণার যন্ত্র দিয়ে। মানুষের সহজাত ও স্বভাবজাত লোভ-লালসা কিংবা সম্পদের আকাক্সক্ষার কারণে এই প্রতারকদের দ্রুত সিঁড়ি টপকানো খুবই সহজ হয়ে যায়, যতই উপরে উঠেছে এরা ততই বেড়েছে আরও উপরে ওঠার আকাক্সক্ষা, কিন্তু পা পিছলে যে পড়ে যেতে পারে সে কথাটি সম্ভবত: এই প্রতারকদের মাথায়ই আসেনি, তাই এরা যত প্রতারণা করেছে ততই এদের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে মানুষ। যে মানুষ এদের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে তাদের সাধারণভাবে ‘সাধারণ মানুষ’ বলা হলেও মোটা দাগে এদের একেবারে নিরীহ, গোবেচারা ‘সাধারণ মানুষ’ ভাবার কোন কারণ নেই, কারণ এরা এসব প্রতিষ্ঠানের পিছু পিছু হেটেছে আরও ওপরে ওঠার স্বপ্ন থেকেই। নিজের পকেটের আর ঘরেরটাই না এরা অনেকেই নিজের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকেও টাকা এনে ‘বিনিয়োগ’ করেছেন। এই বিনিয়োগ কোন স্বাভাবিক বিনিয়োগ ছিল না, এই বিনিয়োগ হচ্ছে অনেকটা ‘যদি লাইগ্যা যায়’ ধরনের বিনিয়োগ। এই ‘যদি লাইগ্যা যায়’ ফর্মুলার কারণে যাদের ’লাইগ্যা গেছে’ তাদের ভাগ্য খুলেছে আর যাদের ‘লাইগ্যা যায়নি’ তারা এখন মাথা চাপরাচ্ছে। প্রতারক, ঠগ, বাটপারদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার সুযোগ নেই, কিন্তু সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ভাগ্য ফেরানোর যে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা চলছে তার দায় আসলে কার? শুধুই কি প্রতারকের?

ইভ্যালির মালিক মোহাম্মদ রাসেলকে আটক করার পর তার বাসার সামনে জড়ো হয়েছিলেন বেশকিছু গ্রাহক। তাদের বেশিরভাগই তরুণ আর যুবক। এই তরুণ আর যুবকরা যখন কপাল চাপরে, দু’চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আর্তনাদ করতে করতে বলছিল, তাদের সব শেষ হয়ে গেছে, তারা পথে বসে গেছেন তখন অবচেতন মনে প্রশ্ন জেগেছে, দেশের তরুণ আর যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্রুত ধনী হওয়ার যে মন্ত্র আর সেই মন্ত্রকে বাস্তবায়নে যন্ত্র নিয়ে যারা ঘোরেন এই দু’য়ের মধ্যে দোষী হিসেবে কেউ কি কম? জেনে শুনে যদি কেউ বিষ পান করে তখন অন্যদের কিই বা করার থাকে? তবে বিষয়টাকে একেবারে সাদামাটা ‘জেনে শুনে বিষপান’ এর সঙ্গে মেলালে চলবে না, কেন না হঠাৎ ধনী বানানোর যন্ত্র নিয়ে যারা মানুষকে ফাঁদে ফেলছেন তাদের নিয়ন্ত্রণ বা দমনের জন্য আইন ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ রয়েছে, রয়েছে বিচারিক কর্তৃপক্ষও, কিন্তু একশ্রেণির ‘চালাক’ মানুষ খুবই সুকৌশলে এসবকেও বোকা বানানোর চেষ্টা করে, আর অনেক সময় তারা সফলও হয়ে যায়, কখনো কখনো প্রশাসন আর আইনকে পাস কাটিয়ে কিংবা চোখে ধুলো দিয়ে এরা দৃশ্যত: সাফল্যও অর্জন করে। আর এই ‘চালাক’ শ্রেণীটি যত ‘সফল’ হয় ততই ঝুঁকিতে পরেন ‘সাধারণ মানুষ’।

ডেসটিনি ২০০০-এর কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে, সারাদেশে তোলপাড় ফেলা এই হায় হায় কোম্পানিটি মানুষকে কত দ্রুত ‘ধনী’ হওয়া যায় সে পথ দেখাতে চেয়েছিল, রাস্তাঘাটে, পথে-প্রান্তরে ছিল এই কোম্পানির অক্লান্ত কর্মীদের দৌরাত্ম্য। তারা হয়েছিলেন সিলভার, গোল্ডেন ও ডায়মন্ড গ্রুপের সদস্য, এমনকি সাফল্যের সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে তাদের কেউ কেউ হয়ে গিয়েছিলেন পিএসডি- প্রোফিট শেয়ার ডিস্ট্রিবিউটর’। একবার দূর গ্রামে এক নৌকার আরোহী হয়েছিলাম, সেখানে একটি তরুণ বয়সী ছেলে যখন জানিয়েছিল, সে গোল্ডেন হয়ে গেছে, অল্প দিনের মধ্যে হয়ে যাবে ‘ডায়মন্ড’। তখন মুখ থেকে আপনাতেই বেরিয়ে গিয়েছিল ‘হীরের টুকরো ছেলে’। কিন্তু কথা না থামিয়ে ছেলেটি যখন বললো ‘পিএসডি’ হতেও তার বেশি সময় লাগবে না, তখন একটু হোঁচট খেয়েছি, এই হোঁচট খাওয়ার দায়টা আমার, ওই হীরের টুকরো ছেলের নয়, কারণ সে ‘পিএসডি’ বলেছে, তা ‘পিএইচডি’ শোনার দায় সে নিতে যাবে কেন?

ডেসটিনির স্বপ্নপুরুষরা এখন কারাবন্দি, লাখ লাখ মানুষের সঞ্চয় বা বিনিয়োগের অর্থ কোথায় আছে কেউ জানে না, তবে তাদের কিছু কিছু সম্পত্তিতে পুলিশি প্রহরা দেখা যায়। ওই সব সম্পত্তি দিয়ে ডেসটিনি আবার ঘুরে দাঁড়াবে এমন স্বপ্ন নাকি এর উদ্যোক্তারা এখনও দেখেন।

ডেসটিনি ২০০০-এর পরে এলো যুবক। এরাও সারাদেশের যুবকদের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য কতশত প্রকল্প তৈরি করতে লাগলো তার ইয়ত্তা নেই, কিন্তু সেই ‘যুবক’ অকালেই হারিয়ে গেল। প্রায় একই সময়ে এলো ‘জিজিএন’ ‘ইউনি পে’। তারাও মানুষের সঞ্চয় সাম্রাজ্যে ঝাঁকুনি দিয়েছিল, কিন্তু কিছু মানুষের সর্বস্ব খোয়ানো ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান অর্থনীতিতে আর কোন ‘অবদান’ রেখেছে তা কাউকে বলতে শুনিনি।

এহসান গ্রুপ নাকি হাতিয়ে নিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। ‘এহসান’ শব্দের অর্থ সফল, বিজয়ী। এহসান গ্রুপের মালিক রাগীব আহসান প্রতারণায় ধর্মের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন। শুধু চলনে, বলনে বা লেবাসেই নয়, তিনি যেসব প্রতিষ্ঠান করেছিলেন তার নামকরণও এমন করেছিলেন যা নরম মনের ধর্মভীরু মুসলমানদের আকৃষ্ট না করে পারেই না। এহসান গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটির নাম হচ্ছে এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমেটেড, নূর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট।

রাগীব এহসান নিজেও ছিলেন মসজিদের ইমাম, পরে একটি এমএলএম কোম্পানিতে কাজ করেন, সেই অভিজ্ঞতা দিয়েই তিনি খুলে বসেন ফটকা ব্যবসার প্রতিষ্ঠান এহসান গ্রুপ। মসজিদের ইমাম, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক আর ছাত্রদের তিনি নিয়োগ দেন, তারা এহসান গ্রুপে বিনিয়োগের জন্য মানুষকে নানাভাবে বোঝান আর এই বোঝানোর ক্ষেত্রে তাদের বড় হাতিয়ার ছিল ধর্ম, এমনকি ওয়াজ মাহফিলেও এহসান গ্রুপের পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়।

ডেসটিনি, যুবক, জিজিএন, এহসান গ্রুপ নামের কোম্পানিগুলো কী বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে? এক টাকায় বছর শেষে তিন টাকা লাভ! আর মানুষও তাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ইভ্যালি তো আরেক কাঠি বেশি আগানো, তারা মানুষের কাছে তিন টাকার পণ্য বিক্রি করত এক টাকায়! কত টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে কত লাভ হতে পারে সে ব্যাপারে কেউই ভাবেনি, তিন টাকার পণ্য এক টাকায় কী করে দিচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান তা নিয়েও ভাবেননি হুমড়ি খাওয়া ব্যক্তিরা। কিন্তু বিনিয়োগকারীকে তো তা ভাবতে হবে। হায় হায় কোম্পানিগুলো শুধু মানুষের সরলতাকেই পুঁজি করে ব্যবসায় নামে না। তারা প্রশাসনের দুর্বলতাকে পূজি করে, রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততাকে পুঁজি করে সবচেয়ে বড় কথা তারা মানুষের লোভকে পুঁজি করে, এমনকি পুঁজি হিসেবে মানুষের সরলতার চেয়েও অনেক বেশি কার্যকর হচ্ছে এই লোভ। তাই তো দেখা যায় একজন কূলবধূ তার স্বামীর অজান্তে গহনা বন্ধক রেখে তুলে দিচ্ছে ‘যুবক’ এর হাতে। পাহাড়ি এলাকায় গাছ লাগাতে টাকা দিচ্ছেন কোন দিন পাহাড়ি এলাকায় না যাওয়া দেশের উত্তর বা দক্ষিণ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।

মানুষের ‘বড়’ হওয়ার মন্ত্র আর প্রতারকের মিষ্টি কথা নামের যন্ত্র মিলে আমাদের সমাজ, অর্থনীতি তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে ধস নামে সেজন্য আমাদের অনেক মাশুল গুনতে হয়, আগামী দিনগুলোতে সে মাশুল যাতে আরও বড় আকারে দিতে না হয় সে জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে আর মানুষকে অবলম্বন করতে হবে সর্বোচ্চ সাবধানতা।

[লেখক : সাবেক সাধারণ সম্পাদক,

ল’রিপোর্টার্স ফোরাম]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ধনী হওয়ার মন্ত্র ও বোকা বানানোর যন্ত্র

আব্দুর রহমান

সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

যে কোনভাবেই হোক ‘বড়’ হওয়া কিংবা লোভ-লালসা বা অন্যের সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা মানুষের এক মহারোগ। এটি একটি সুপ্রাচীন রোগ কিন্তু এর কোন মহৌষধ নেই, আর নেই বলেই এক শ্রেণীর মানুষ যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রতারণা করে যাচ্ছে আর সেই প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকে, এক প্রতারকের বিদায় হয়, আবির্ভূত হয় আরেক প্রতারক, আবার কখনও কখনও খোলস বদলে একই প্রতারক আসেন নানান রূপে, নানা নামে। মানুষের ‘বড়’ হওয়ার চেষ্টা মানুষের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ‘ধনী’ অর্থে যে ‘বড়লোক’ তাও যদি কেউ হয় ‘হক-হালাল’ পথে তাতেও দোষের কিছু নেই, কিন্তু যেনতেনভাবে, মানুষকে বোকা বানিয়ে, ফটকাবাজি করে নিজের আখের গোছানোর যে ঘৃণ্য চেষ্টা এক শ্রেণীর মানুষ প্রায়ই করে তা দোষের ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ‘পাপ ছাড়ে না বাপরে’ কিংবা ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’ এই কথাগুলো তো আর এমনি এমনি চালু হয়নি, সবাই জানেন অপরাধ করলে আজ হোক কাল হোক ধরা পরতেই হবে, কিন্তু সেই আশঙ্কা মানুষের মনে কতটা ভীতি তৈরি করতে পেরেছে? সম্ভবত: খুব কমই পেরেছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি দেখি গত দুই দশকে এদেশে প্রতারণার বিষয়টি প্রায় শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। ‘স্যুট-কোট-টাই’ পরা সাহেবরা প্রতারণা করে মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। শুধু কেড়ে নিচ্ছেন বললে কম বলা হবে বলা যায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এরা অস্বাভাবিক উপায়ে, ‘শটকাট’ রাস্তায় নিজের ভাগ্য ফেরানোর অন্ধ প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে। ডেসটিনি ২০০০, জিজিএন, ইউনিপে এরা অল্প সময়ে স্বল্প বিনিয়োগে কিংবা কোনরকম বিনিয়োগ ছাড়াই বড়লোক হওয়ার আকাক্সক্ষা উসকে দিয়েছে। তাদের সেই উসকানিতে পা দিয়ে অনেকেই পতঙ্গের আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ভাগ্যোন্নয়ন, সৌভাগ্যের সন্ধানে।

প্রতারণার নানা মডেল উদ্ভাবন করে তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে এরা, আবার এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই আইনের বেড়াজালে বন্দিও হয়েছেন। এই ধারার প্রতিষ্ঠানের সবশেষ দুটি ‘ধরা খাওয়া’ প্রতিষ্ঠান হলো ‘এহাসন গ্রুপ’ আর ‘ইভ্যালি’।

এহাসন গ্রুপ ধর্মের বড়ি গিলিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, আর ইভ্যালি মানুষকে মোহাবিস্ট করেছে আধুনিক প্রচারণা কৌশল ব্যবহার করে। এহসান গ্রুপের কর্ণধাররা ধরা পরেছেন। ইভ্যালি অবশ্য বলতে গেলে ‘ওয়ান ম্যান শো’। আর সেই ব্যক্তিটি হচ্ছেন মোহাম্মদ রাসেল। তিনি ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিই্ও, আর তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন হচ্ছেনের চেয়ারম্যান। রাসেল আর নাসরিনকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৬ সেপ্টেম্বর। এক গ্রাহক প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন। আর ওই মামলার সূত্র ধরেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তাদের গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি আসলেই সময়ের ব্যাপারমাত্র হয়েছিল প্রায় তিন মাস ধরে। গ্রেপ্তারের পর কোম্পানির দায় ও দেনা সম্পর্কে তাদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানিয়েছেন, গ্রাহক ও পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে ইভ্যালির দেনা বেড়ে এক হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। তাদের ব্যবসায়িক কৌশল ছিল নতুন গ্রাহকের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে পুরোনো গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের দেনা আংশিক পরিশোধ করা। তারা ‘দায় ট্রান্সফারের’ মাধ্যমে ব্যবসা করছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য ছিল প্রথমত ইভ্যালির ‘ব্রান্ড ভ্যালু’ তৈরি করা। পরে দায়সহ কোনো প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে লভ্যাংশ নেয়া। এ উদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন দেশও ভ্রমণ করেছেন। অন্য পরিকল্পনার মধ্যে ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কাছে কোম্পানি শেয়ারের প্রস্তাব দিয়ে দায় চাপিয়ে দেয়া। দায় মেটাতে ব্যর্থ হলে সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে ইভ্যালিকে দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা ছিলো রাসেলের।

মানুষকে ধনী হওয়ার মন্ত্রে এরা দীক্ষিত করেছে তাদের প্রতারণার যন্ত্র দিয়ে। মানুষের সহজাত ও স্বভাবজাত লোভ-লালসা কিংবা সম্পদের আকাক্সক্ষার কারণে এই প্রতারকদের দ্রুত সিঁড়ি টপকানো খুবই সহজ হয়ে যায়, যতই উপরে উঠেছে এরা ততই বেড়েছে আরও উপরে ওঠার আকাক্সক্ষা, কিন্তু পা পিছলে যে পড়ে যেতে পারে সে কথাটি সম্ভবত: এই প্রতারকদের মাথায়ই আসেনি, তাই এরা যত প্রতারণা করেছে ততই এদের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে মানুষ। যে মানুষ এদের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে তাদের সাধারণভাবে ‘সাধারণ মানুষ’ বলা হলেও মোটা দাগে এদের একেবারে নিরীহ, গোবেচারা ‘সাধারণ মানুষ’ ভাবার কোন কারণ নেই, কারণ এরা এসব প্রতিষ্ঠানের পিছু পিছু হেটেছে আরও ওপরে ওঠার স্বপ্ন থেকেই। নিজের পকেটের আর ঘরেরটাই না এরা অনেকেই নিজের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকেও টাকা এনে ‘বিনিয়োগ’ করেছেন। এই বিনিয়োগ কোন স্বাভাবিক বিনিয়োগ ছিল না, এই বিনিয়োগ হচ্ছে অনেকটা ‘যদি লাইগ্যা যায়’ ধরনের বিনিয়োগ। এই ‘যদি লাইগ্যা যায়’ ফর্মুলার কারণে যাদের ’লাইগ্যা গেছে’ তাদের ভাগ্য খুলেছে আর যাদের ‘লাইগ্যা যায়নি’ তারা এখন মাথা চাপরাচ্ছে। প্রতারক, ঠগ, বাটপারদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার সুযোগ নেই, কিন্তু সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ভাগ্য ফেরানোর যে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা চলছে তার দায় আসলে কার? শুধুই কি প্রতারকের?

ইভ্যালির মালিক মোহাম্মদ রাসেলকে আটক করার পর তার বাসার সামনে জড়ো হয়েছিলেন বেশকিছু গ্রাহক। তাদের বেশিরভাগই তরুণ আর যুবক। এই তরুণ আর যুবকরা যখন কপাল চাপরে, দু’চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আর্তনাদ করতে করতে বলছিল, তাদের সব শেষ হয়ে গেছে, তারা পথে বসে গেছেন তখন অবচেতন মনে প্রশ্ন জেগেছে, দেশের তরুণ আর যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্রুত ধনী হওয়ার যে মন্ত্র আর সেই মন্ত্রকে বাস্তবায়নে যন্ত্র নিয়ে যারা ঘোরেন এই দু’য়ের মধ্যে দোষী হিসেবে কেউ কি কম? জেনে শুনে যদি কেউ বিষ পান করে তখন অন্যদের কিই বা করার থাকে? তবে বিষয়টাকে একেবারে সাদামাটা ‘জেনে শুনে বিষপান’ এর সঙ্গে মেলালে চলবে না, কেন না হঠাৎ ধনী বানানোর যন্ত্র নিয়ে যারা মানুষকে ফাঁদে ফেলছেন তাদের নিয়ন্ত্রণ বা দমনের জন্য আইন ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ রয়েছে, রয়েছে বিচারিক কর্তৃপক্ষও, কিন্তু একশ্রেণির ‘চালাক’ মানুষ খুবই সুকৌশলে এসবকেও বোকা বানানোর চেষ্টা করে, আর অনেক সময় তারা সফলও হয়ে যায়, কখনো কখনো প্রশাসন আর আইনকে পাস কাটিয়ে কিংবা চোখে ধুলো দিয়ে এরা দৃশ্যত: সাফল্যও অর্জন করে। আর এই ‘চালাক’ শ্রেণীটি যত ‘সফল’ হয় ততই ঝুঁকিতে পরেন ‘সাধারণ মানুষ’।

ডেসটিনি ২০০০-এর কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে, সারাদেশে তোলপাড় ফেলা এই হায় হায় কোম্পানিটি মানুষকে কত দ্রুত ‘ধনী’ হওয়া যায় সে পথ দেখাতে চেয়েছিল, রাস্তাঘাটে, পথে-প্রান্তরে ছিল এই কোম্পানির অক্লান্ত কর্মীদের দৌরাত্ম্য। তারা হয়েছিলেন সিলভার, গোল্ডেন ও ডায়মন্ড গ্রুপের সদস্য, এমনকি সাফল্যের সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে তাদের কেউ কেউ হয়ে গিয়েছিলেন পিএসডি- প্রোফিট শেয়ার ডিস্ট্রিবিউটর’। একবার দূর গ্রামে এক নৌকার আরোহী হয়েছিলাম, সেখানে একটি তরুণ বয়সী ছেলে যখন জানিয়েছিল, সে গোল্ডেন হয়ে গেছে, অল্প দিনের মধ্যে হয়ে যাবে ‘ডায়মন্ড’। তখন মুখ থেকে আপনাতেই বেরিয়ে গিয়েছিল ‘হীরের টুকরো ছেলে’। কিন্তু কথা না থামিয়ে ছেলেটি যখন বললো ‘পিএসডি’ হতেও তার বেশি সময় লাগবে না, তখন একটু হোঁচট খেয়েছি, এই হোঁচট খাওয়ার দায়টা আমার, ওই হীরের টুকরো ছেলের নয়, কারণ সে ‘পিএসডি’ বলেছে, তা ‘পিএইচডি’ শোনার দায় সে নিতে যাবে কেন?

ডেসটিনির স্বপ্নপুরুষরা এখন কারাবন্দি, লাখ লাখ মানুষের সঞ্চয় বা বিনিয়োগের অর্থ কোথায় আছে কেউ জানে না, তবে তাদের কিছু কিছু সম্পত্তিতে পুলিশি প্রহরা দেখা যায়। ওই সব সম্পত্তি দিয়ে ডেসটিনি আবার ঘুরে দাঁড়াবে এমন স্বপ্ন নাকি এর উদ্যোক্তারা এখনও দেখেন।

ডেসটিনি ২০০০-এর পরে এলো যুবক। এরাও সারাদেশের যুবকদের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য কতশত প্রকল্প তৈরি করতে লাগলো তার ইয়ত্তা নেই, কিন্তু সেই ‘যুবক’ অকালেই হারিয়ে গেল। প্রায় একই সময়ে এলো ‘জিজিএন’ ‘ইউনি পে’। তারাও মানুষের সঞ্চয় সাম্রাজ্যে ঝাঁকুনি দিয়েছিল, কিন্তু কিছু মানুষের সর্বস্ব খোয়ানো ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান অর্থনীতিতে আর কোন ‘অবদান’ রেখেছে তা কাউকে বলতে শুনিনি।

এহসান গ্রুপ নাকি হাতিয়ে নিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। ‘এহসান’ শব্দের অর্থ সফল, বিজয়ী। এহসান গ্রুপের মালিক রাগীব আহসান প্রতারণায় ধর্মের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন। শুধু চলনে, বলনে বা লেবাসেই নয়, তিনি যেসব প্রতিষ্ঠান করেছিলেন তার নামকরণও এমন করেছিলেন যা নরম মনের ধর্মভীরু মুসলমানদের আকৃষ্ট না করে পারেই না। এহসান গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটির নাম হচ্ছে এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমেটেড, নূর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট।

রাগীব এহসান নিজেও ছিলেন মসজিদের ইমাম, পরে একটি এমএলএম কোম্পানিতে কাজ করেন, সেই অভিজ্ঞতা দিয়েই তিনি খুলে বসেন ফটকা ব্যবসার প্রতিষ্ঠান এহসান গ্রুপ। মসজিদের ইমাম, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক আর ছাত্রদের তিনি নিয়োগ দেন, তারা এহসান গ্রুপে বিনিয়োগের জন্য মানুষকে নানাভাবে বোঝান আর এই বোঝানোর ক্ষেত্রে তাদের বড় হাতিয়ার ছিল ধর্ম, এমনকি ওয়াজ মাহফিলেও এহসান গ্রুপের পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়।

ডেসটিনি, যুবক, জিজিএন, এহসান গ্রুপ নামের কোম্পানিগুলো কী বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে? এক টাকায় বছর শেষে তিন টাকা লাভ! আর মানুষও তাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ইভ্যালি তো আরেক কাঠি বেশি আগানো, তারা মানুষের কাছে তিন টাকার পণ্য বিক্রি করত এক টাকায়! কত টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে কত লাভ হতে পারে সে ব্যাপারে কেউই ভাবেনি, তিন টাকার পণ্য এক টাকায় কী করে দিচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান তা নিয়েও ভাবেননি হুমড়ি খাওয়া ব্যক্তিরা। কিন্তু বিনিয়োগকারীকে তো তা ভাবতে হবে। হায় হায় কোম্পানিগুলো শুধু মানুষের সরলতাকেই পুঁজি করে ব্যবসায় নামে না। তারা প্রশাসনের দুর্বলতাকে পূজি করে, রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততাকে পুঁজি করে সবচেয়ে বড় কথা তারা মানুষের লোভকে পুঁজি করে, এমনকি পুঁজি হিসেবে মানুষের সরলতার চেয়েও অনেক বেশি কার্যকর হচ্ছে এই লোভ। তাই তো দেখা যায় একজন কূলবধূ তার স্বামীর অজান্তে গহনা বন্ধক রেখে তুলে দিচ্ছে ‘যুবক’ এর হাতে। পাহাড়ি এলাকায় গাছ লাগাতে টাকা দিচ্ছেন কোন দিন পাহাড়ি এলাকায় না যাওয়া দেশের উত্তর বা দক্ষিণ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।

মানুষের ‘বড়’ হওয়ার মন্ত্র আর প্রতারকের মিষ্টি কথা নামের যন্ত্র মিলে আমাদের সমাজ, অর্থনীতি তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে ধস নামে সেজন্য আমাদের অনেক মাশুল গুনতে হয়, আগামী দিনগুলোতে সে মাশুল যাতে আরও বড় আকারে দিতে না হয় সে জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে আর মানুষকে অবলম্বন করতে হবে সর্বোচ্চ সাবধানতা।

[লেখক : সাবেক সাধারণ সম্পাদক,

ল’রিপোর্টার্স ফোরাম]

back to top