ধারাবাহিক স্মৃতিকথা : ৭
আবদুস সেলিম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি স্নাতক সম্মান বা ইংরেজি বিএ অনার্সে ভর্তি হবার পর কয়েক দিনের জন্য ময়মনসিংহে ফিরে আসি যেখানে আমার বাবার তদানীন্তন পোস্টিং ছিল। এর কারণ আমার ক্লাস শুরু হতে সপ্তাহখানেক দেরি ছিল এবং আমিও একদিকে ভর্তির ব্যস্ততা এবং উদ্বেগ নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম অন্যদিকে মা-বাব ছেড়ে থাকার অভিজ্ঞতা আমার তখন পর্যন্ত একদমই ছিল না। ময়মনসিংহে আমরা যে এলাকাতে থাকতাম সেটার ঐতিহ্যগত স্থানীয় নাম ছিল কাঁচিঝুলি। কিন্তু এই স্থানটির আরও একটি নাম ছিল- সাহেব কোয়াটার্স- কারণ এলাকাটি মিশনারি সাহেব-মেমদের আবাসস্থল ছিল ব্রিটিশ আমল থেকে। ওখানে দু’টি নতুন চারতলা সরকারি আবাসগৃহ তৈরি হয়েছিল। প্রথমে আমরা যে বিল্ডিঙে স্থান পেয়েছিলাম সেটি বেশ ছোটই ছিল- যার কারণ সরকারি কর্মকর্তা অপেক্ষা তাদের বাসস্থানের অপ্রতুলতা। অবশ্য তিন কি চার মাসের ভেতরই পাশের বড় বিল্ডিঙে আমরা স্থানান্তরিত হই। এর পেছনে আমার বাবার বিশাল বন্ধুত্বের পরিধি কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল।
বাবা, আগেই বলেছি খুবই বহির্মুখি মানুষ ছিলেন। নিয়মিত ক্লাবে যেতেন, বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিতেন, এবং সর্বোপরি অত্যন্ত বন্ধুবৎসল ছিলেন। তিনি কলকাতা থাকাকালীন অনেক মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করেছিলেন যারা পাকিস্তান আমলে উচ্চ সরকারি এবং রাজনৈতিক অবস্থানে কাজ করেছেন। ময়মনসিংহের তখনকার জেলা প্রশাসক ছিলেন বিখ্যাত জনপ্রশাসক পি এ নাজির, সাবেক সি এস পি (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান)। ইনি ১৯৭০ সালে যে তিনশত জন সি এস পি-কে ইয়াহিয়া খান বরখাস্ত করেন তাদের অন্যতম ছিলেন। বাবার সাথে উনার কলকাতাতে বন্ধুত্ব হয়েছিল। কারণ সমসাময়িক সময়ে উনারা কলকাতাতে পড়াশোনা করতেন- বাবা ইসলামিয়া কলেজে এবং পি এ নাজির কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অনার্স। উনি আমাদের ওই সরকারি বাসাতে এসে বেশ শরমিন্দা হন এবং এক মাসের ভেতর কোনো আমলাতান্ত্রিক প্রভাবে আমাদের ওই বড় ফ্ল্যাটে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন। অবশ্য বিষয়টা এমন নয় যে, কোনো নিয়মবহির্ভূত প্রক্রিয়াতে কাজটি করা হয়েছিল। আসলে আমার বাবার, যেটাকে বলে “এনটাইটেলমেন্ট”, সেটা ছিল বলেই উনি দিতে পেরেছিলেন। যতদূর মনে পড়ে পি এ নাজির তাঁর স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন “স্মৃতির পাতা থেকে” ১৯৯৩ সালে এবং উনি প্রয়াত হন ২০০৩ সালে।
ময়মনসিংহের আরও অনেক স্মৃতি আছে যেখান বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব ম হামিদ-এর একটি বিরাট পর্ব রয়েছে। এ বিষয়ে আলাদা লেখার ইচ্ছা আছে। ময়মনসিংহে এক সপ্তাহ থাকার পর আমি আবার ঢাকাতে ফিরে আসি কারণ আমার ক্লাস শুরু হবার কথা তখনকার সপ্তাহ শুরু সোমবার থেকে (আমাদের সময় সপ্তাহান্ত ছুটি ছিল একদিন রবিবারে)। সবারই জানা বাংলাদেশে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই আবাসিক, অর্থাৎ সব শিক্ষার্থিকেই কোনো না কোনো “হলের” সাথে হয় “রেসিডেন্ট” অথবা “অ্যাটাচড” হয়ে থাকতে হয়। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ঢাকা এবং রাজশাহী দুটোই এখনকার মতোই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমাদের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের আবাসিক হল ছিল ছেলেদের জন্য চারটি- সলিমুল্লাহ মুসলিম হল (এস এম হল), ফজলুল হক মুসলিম হল (এফ এইচ হল), ইকবাল হল এবং জগন্নাথ হল। জগ্ননাথ হল ছিল এবং এখনও আছে- হিন্দু শিক্ষার্থিদের জন্য। মেয়েদের জন্য ছিল একটিমাত্র হল- রোকেয়া হল। আমরা যারা মানবিকের ছাত্র, বিশেষ করে সাহিত্য, অর্থনীতি, ইতিহাস, বাংলা ইত্যাদি বিভাগের ছাত্র ছিলাম তাদের প্রাথমিক অনুরক্তি ছিল সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আবাসিক বা সংযুক্তভাবে শিক্ষার্থি হওয়া, আর যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা প্রধানত ফজলুল মুসলিম হলে আবাসিক বা সংযুক্ত হতো। ফলে আমিও আমার প্রাথমিক অনুরক্তি হিসাবে এস এম হলে আবাসিক হবার জন্য আবেদন করি।
তখন প্রতিটি হলে আবাসিক/সংযুক্তভাবে ছাত্র হবার জন্য যোগ্যতা বিচার করা হতো “ইন্টারমেডিয়েটে” প্রাপ্ত সর্বমোট নম্বরের অনুক্রম অনুসারে এবং সেই অনুক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থি নেয়া হতো হলের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী- আর এই অনুক্রমের “কাট অফ” নম্বর অনুমান করার এখতিয়ার ছিল প্রতিটি নিজ নিজ হল কর্তৃপক্ষের। সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক হবার নম্বর আমার ছিল, তাই আবেদনে কোনো বাধা ছিল না, কিন্তু শুধু আবেদন করলেই হল কর্তৃপক্ষ নিয়ে নিত না প্রশাসনিক কিছু অনুমোদন প্রয়োজন হতো। হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন নিম্ন থেকে উচ্চক্রমানুসারে: অ্যাসিস্ট্যান্ট হাউস টিউটর, হাউস টিউটর, এবং প্রভোস্ট। আবেদন মার্কশিট ও ভর্তির কাগজপত্রসহ জমা দিতে হতো অ্যাসিস্ট্যান্ট হাউস টিউটর-এর দফতরে এবং তিনি নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দিতেন কবে হলে এসে হাউস টিউটর এবং প্রভোস্টের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। এই সাক্ষাৎকারে দাপ্তরিক অনুমোদন দেয়া হতো। উল্লেখ্য এই সাক্ষাৎকারেও অনেক সময় দু’একজনকে বাদ দেয়া হতো এবং তারা তখন অন্য হলে চেষ্টা করতো।
আমাদের সময় অ্যাসিস্ট্যান্ট হাউস টিউটর ছিলেন বাংলা বিভাগের ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদ; হাউস টিউটর ছিলেন ইতিহাস বিভাগের ডক্টর গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, এবং প্রভোস্ট ছিলেন কেমিস্ট্রির ডক্টর মফিজ উদ্দীন আহমেদ। কাজী দীন মুহম্মদ-এর নামের সাথে তাঁর কিছু রচনার জন্য আমি পরিচিত ছিলাম যার দু’একটি আমি নবম বা দশম শ্রেণিতে থাকাকালে পড়েছিলা। হাউস টিউটর হাউস টিউটর তবে মানুষটির সাথে প্রথমদিন পরিচিত হয়ে আমি তেমন প্রীত হইনি। তিনি পরবর্তীকালে ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির পরিচালক (পাকিস্তান আমলে বাংলা একাডেমির প্রধান ছিলেন পরিচালক- যা স্বাধীনতার পর পরিবর্তিত হয়ে মহা পরিচালক হয়েছে) হয়েছিলেন। তিনি মারা যান ২০১১ সালে।
হাউস টিউটর ডক্টর গিয়াসউদ্দিন আহমেদ-এর পরিচয় দেয়া বাহুল্য ছাড়া কিছু নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে বুদ্ধিজীবী অপহরণ ও হত্যাকা-ের শিকার শহিদ ডক্টর গিয়াসউদ্দিন আহমেদের কথা আমরা সবাই জানি। তাঁর মতো সুশ্রী এবং অমায়িক মানুষ আমি খুবই কম দেখেছি। অন্যদিকে প্রভোস্ট ডক্টর মফিজ উদ্দীন আহমেদ ছিলেন নিজের উচ্চ পদের ব্যাপারে সদাসচেতন, অনেকটাই আমলাতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন। নিজের পদমর্যাদাকে তিনি দারুণ উপভোগ করতেন বলে আমার মনে হয়েছে। মনে পড়ে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ চলাকালে তিনি অনেক হাস্যকর ইংরেজি নোটিশ দিতেন যা নিয়ে আমরা বেশ মজা করতাম।
তো আমার এস এম হলে আবাসিক হবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দু’একদিন পর সকালে হলের নোটিশবোর্ডে আমার নামসহ অন্য প্রায় দশ জনকে একটি নির্দিষ্ট দিনে প্রভোস্ট অফিসে দেখা করতে বলা হলো। আমাদের ক্লাস ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আমি এবং আমার চাচাত ভাই সাদুল্লাহ আমার চাচাত বোনের রেঙ্কিন স্ট্রিটের বাসা থেকে তখন ক্লাস করতাম। সাদুল্লাহর ইন্টারমেডিয়েটে আমার চাইতে ভাল নম্বর ছিল ফলে ওর এস এম হলে আবাসিক হবার অনুমোদন আগেই হয়ে গিয়েছিল; যদিও তখনও হলে উঠতে পারেনি। আমি আমার এই সাক্ষাৎকারের ‘একেকডোট’-টি সারা জীবনেও ভুলবো না। তাঁর আগে বলে নেই, আমাদের সময়ে একটা কথা প্রচলিত ছিল: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে তিনটি নোটিশবোর্ডের নোটিশ প্রতিদিন পড়া পড়াশোনার অংশ হিসেবে বাধ্যতামূলক, আর সে নোটিশবোর্ডগুলো হলো, যথাক্রমে বিভাগীয় নোটিশবোর্ড, আবাসিক/সংযুক্ত হলের নোটিশবোর্ড এবং রেজিস্ট্রার অফিসের নোটিশবোর্ড। আমরা সবাই এই নির্দেশ ভর্তি হবার পর থেকেই মেনে চলতাম।
আমার সাক্ষাতের তারিখ ধার্য হয়েছিল আগস্ট ১৯, ১৯৬৩-র বেলা তিনটায়। প্রশ্ন উঠতেই পারে আমি এত স্পষ্টভাবে এই দিন-তারিখ স্মরণে রাখলাম কেন এবং কীভাবে। রাখলাম এই কারণে যে ঐ দিন পাকিস্তান কন্সটিটিয়েন্ট অ্যাসেম্বলির স্পিকার মৌলভী তমিজউদ্দিন খান মারা গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু আমার জন্য কোনো শোকদুঃখের ব্যাপার ছিল না তখন, যদিও তিনি বাঙালি ছিলেন (রাজবাড়ি জেলায় জন্ম) এবং আমার অত্যন্ত প্রিয় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা খান আমিনের পিতা ছিলেন। তবে এসব জেনেছি অনেক পরে যখন আমি রাজিয়া খান আমিনের ক্লাস করা শুরু করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। অবশ্য সেটি ঐ ১৯৬৩ সালেই।
আমি সেই আগস্ট মাসের ঘাম ঝরানো গরমে রেঙ্কিন স্ট্রিট থেকে ঘর্মাক্ত হয়ে এস এম হলে পৌঁছালাম তখন লক্ষ্য করলাম প্রভোস্টের অফিস বন্ধ এবং সেখানে কেউ নেই। হতভম্ভ আমি কয়েক মিনিট বুঝলাম না আমার কি করা উচিত। ভাবলাম আমি বোধহয় নোটিশটা ভুল পড়েছি। প্রভোস্ট অফিসের সামনে নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো দ্রুত আবার খুঁজতে লাগলাম এবং পেয়েও গেলাম। পড়ে বুঝলাম আমি কোনো ভুল করিনি। তবে, কিছু পরে আবিষ্কার করলাম আর একটি নোটিশ যাতে লেখা পাকিস্তান কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির স্পিকার মৌলভী তমিজউদ্দিন খান-এর মৃত্যুর কারণে ঐ দিনের সাক্ষাৎকার বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষাৎকারের তারিখ এবং সময় দ্রুত জানানো হবে। বলাবাহুল্য, এসব নোটিশ কিন্তু সবই ইংরেজিতে দেয়া হতো।
আমি, সত্যি বলতে কি, যারপরনাই ক্ষু্ণ্ন হয়েছিলাম সেদিন কারণ ওই সময়ে আমার সবচাইতে জরুরি ছিল হলের আবাসিক হওয়া, পাকিস্তান কন্সটিটিয়েন্ট অ্যাসেম্বলির স্পিকার মৌলভী তমিজউদ্দিন খান-এর মৃত্যুর জন্য শোকাহত হবার চাইতে। পরে ব্যপারটা নিয়ে যখন ভেবেছি তখন শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথের সেই কটি পংক্তি মনে উঠে এসেছে। লেডি ম্যাকবেথের অত্মহত্যার খবর শুনে ম্যাকবেথ বলেছিল: She should have died hereafter. আমার এস এম হলে আবাসিক হবার অনুমতির পর পাকিস্তান কন্সটিটিয়েন্ট অ্যাসেম্বলির স্পিকার মৌলভী তমিজউদ্দিন খান-এর মৃত্যু হলে কোনো ক্ষতি হতো না।
কিন্তু আমার জন্য আরও বিস্ময়কর কিছু ঘটনার অপেক্ষা ছিল বৈকি! পরদিন আমি ক্লাস শেষ করে আমার মৌখিক পরীক্ষার পরিবর্তিত তারিখ ঠিক হয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য হলের নোটিশবোর্ড দেখতে এসে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম নেটিশবোর্ডে নোটিশ দেয়া হয়েছে এই মর্মে যে, যেসব ছাত্রের গত দিনে হলের আবাসিক হবার মৌখিক পরীক্ষা ছিল তাদের সবাইকে ম্যাট্রিক ও ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক হিশেবে নেয়া হয়েছে এবং তাদের কোনও মৌখিক পরীক্ষা দেবার আর প্রয়োজন নেই। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম পাকিস্তান কন্সটিটিয়েন্ট অ্যাসেম্বলির স্পিকার মৌলভী তমিজউদ্দিন খান সাহেব আমার যে উপকার করলেন সে উপকারের জন্য তাকে আমি তো আর কৃতজ্ঞতা জানাতে পারবো না কারণ তিনি ইহজগতে আর নেই। পেছন ফিরে বিবেচনা করলে ওথেলো নাটকে রোড্রিগোর মতো বলতে পারতাম and then have we a prescription to die when Death is/Our physician. যখন মৃত্যু স্বয়ং চিকিৎসক তখন আমাদের চিকিৎসাপত্র তো মৃত্যু ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। তবে হ্যাঁ, তাঁর কন্যা রাজিয়া খান আমিন-এর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ দুটি কারণে, প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে উনিই আমাকে প্রথম ধারণা দিয়েছেন শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কটা শুধু শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ নয়, এবং দ্বিতীয়ত সাহিত্যের ছাত্রদের খামখেয়ালী হতে হয় এবং লেখালেখি ঐ খামখেয়ালীর একটি বড় অংশ। এই খামখেয়ালীপনার উদাহরণ সময় মতো বর্ণনা করব।
ধারাবাহিক স্মৃতিকথা : ৭
আবদুস সেলিম
বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
(পূর্ব প্রকাশের পর)
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি স্নাতক সম্মান বা ইংরেজি বিএ অনার্সে ভর্তি হবার পর কয়েক দিনের জন্য ময়মনসিংহে ফিরে আসি যেখানে আমার বাবার তদানীন্তন পোস্টিং ছিল। এর কারণ আমার ক্লাস শুরু হতে সপ্তাহখানেক দেরি ছিল এবং আমিও একদিকে ভর্তির ব্যস্ততা এবং উদ্বেগ নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম অন্যদিকে মা-বাব ছেড়ে থাকার অভিজ্ঞতা আমার তখন পর্যন্ত একদমই ছিল না। ময়মনসিংহে আমরা যে এলাকাতে থাকতাম সেটার ঐতিহ্যগত স্থানীয় নাম ছিল কাঁচিঝুলি। কিন্তু এই স্থানটির আরও একটি নাম ছিল- সাহেব কোয়াটার্স- কারণ এলাকাটি মিশনারি সাহেব-মেমদের আবাসস্থল ছিল ব্রিটিশ আমল থেকে। ওখানে দু’টি নতুন চারতলা সরকারি আবাসগৃহ তৈরি হয়েছিল। প্রথমে আমরা যে বিল্ডিঙে স্থান পেয়েছিলাম সেটি বেশ ছোটই ছিল- যার কারণ সরকারি কর্মকর্তা অপেক্ষা তাদের বাসস্থানের অপ্রতুলতা। অবশ্য তিন কি চার মাসের ভেতরই পাশের বড় বিল্ডিঙে আমরা স্থানান্তরিত হই। এর পেছনে আমার বাবার বিশাল বন্ধুত্বের পরিধি কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল।
বাবা, আগেই বলেছি খুবই বহির্মুখি মানুষ ছিলেন। নিয়মিত ক্লাবে যেতেন, বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিতেন, এবং সর্বোপরি অত্যন্ত বন্ধুবৎসল ছিলেন। তিনি কলকাতা থাকাকালীন অনেক মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করেছিলেন যারা পাকিস্তান আমলে উচ্চ সরকারি এবং রাজনৈতিক অবস্থানে কাজ করেছেন। ময়মনসিংহের তখনকার জেলা প্রশাসক ছিলেন বিখ্যাত জনপ্রশাসক পি এ নাজির, সাবেক সি এস পি (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান)। ইনি ১৯৭০ সালে যে তিনশত জন সি এস পি-কে ইয়াহিয়া খান বরখাস্ত করেন তাদের অন্যতম ছিলেন। বাবার সাথে উনার কলকাতাতে বন্ধুত্ব হয়েছিল। কারণ সমসাময়িক সময়ে উনারা কলকাতাতে পড়াশোনা করতেন- বাবা ইসলামিয়া কলেজে এবং পি এ নাজির কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অনার্স। উনি আমাদের ওই সরকারি বাসাতে এসে বেশ শরমিন্দা হন এবং এক মাসের ভেতর কোনো আমলাতান্ত্রিক প্রভাবে আমাদের ওই বড় ফ্ল্যাটে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন। অবশ্য বিষয়টা এমন নয় যে, কোনো নিয়মবহির্ভূত প্রক্রিয়াতে কাজটি করা হয়েছিল। আসলে আমার বাবার, যেটাকে বলে “এনটাইটেলমেন্ট”, সেটা ছিল বলেই উনি দিতে পেরেছিলেন। যতদূর মনে পড়ে পি এ নাজির তাঁর স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন “স্মৃতির পাতা থেকে” ১৯৯৩ সালে এবং উনি প্রয়াত হন ২০০৩ সালে।
ময়মনসিংহের আরও অনেক স্মৃতি আছে যেখান বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব ম হামিদ-এর একটি বিরাট পর্ব রয়েছে। এ বিষয়ে আলাদা লেখার ইচ্ছা আছে। ময়মনসিংহে এক সপ্তাহ থাকার পর আমি আবার ঢাকাতে ফিরে আসি কারণ আমার ক্লাস শুরু হবার কথা তখনকার সপ্তাহ শুরু সোমবার থেকে (আমাদের সময় সপ্তাহান্ত ছুটি ছিল একদিন রবিবারে)। সবারই জানা বাংলাদেশে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই আবাসিক, অর্থাৎ সব শিক্ষার্থিকেই কোনো না কোনো “হলের” সাথে হয় “রেসিডেন্ট” অথবা “অ্যাটাচড” হয়ে থাকতে হয়। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ঢাকা এবং রাজশাহী দুটোই এখনকার মতোই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমাদের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের আবাসিক হল ছিল ছেলেদের জন্য চারটি- সলিমুল্লাহ মুসলিম হল (এস এম হল), ফজলুল হক মুসলিম হল (এফ এইচ হল), ইকবাল হল এবং জগন্নাথ হল। জগ্ননাথ হল ছিল এবং এখনও আছে- হিন্দু শিক্ষার্থিদের জন্য। মেয়েদের জন্য ছিল একটিমাত্র হল- রোকেয়া হল। আমরা যারা মানবিকের ছাত্র, বিশেষ করে সাহিত্য, অর্থনীতি, ইতিহাস, বাংলা ইত্যাদি বিভাগের ছাত্র ছিলাম তাদের প্রাথমিক অনুরক্তি ছিল সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আবাসিক বা সংযুক্তভাবে শিক্ষার্থি হওয়া, আর যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা প্রধানত ফজলুল মুসলিম হলে আবাসিক বা সংযুক্ত হতো। ফলে আমিও আমার প্রাথমিক অনুরক্তি হিসাবে এস এম হলে আবাসিক হবার জন্য আবেদন করি।
তখন প্রতিটি হলে আবাসিক/সংযুক্তভাবে ছাত্র হবার জন্য যোগ্যতা বিচার করা হতো “ইন্টারমেডিয়েটে” প্রাপ্ত সর্বমোট নম্বরের অনুক্রম অনুসারে এবং সেই অনুক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থি নেয়া হতো হলের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী- আর এই অনুক্রমের “কাট অফ” নম্বর অনুমান করার এখতিয়ার ছিল প্রতিটি নিজ নিজ হল কর্তৃপক্ষের। সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক হবার নম্বর আমার ছিল, তাই আবেদনে কোনো বাধা ছিল না, কিন্তু শুধু আবেদন করলেই হল কর্তৃপক্ষ নিয়ে নিত না প্রশাসনিক কিছু অনুমোদন প্রয়োজন হতো। হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন নিম্ন থেকে উচ্চক্রমানুসারে: অ্যাসিস্ট্যান্ট হাউস টিউটর, হাউস টিউটর, এবং প্রভোস্ট। আবেদন মার্কশিট ও ভর্তির কাগজপত্রসহ জমা দিতে হতো অ্যাসিস্ট্যান্ট হাউস টিউটর-এর দফতরে এবং তিনি নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দিতেন কবে হলে এসে হাউস টিউটর এবং প্রভোস্টের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। এই সাক্ষাৎকারে দাপ্তরিক অনুমোদন দেয়া হতো। উল্লেখ্য এই সাক্ষাৎকারেও অনেক সময় দু’একজনকে বাদ দেয়া হতো এবং তারা তখন অন্য হলে চেষ্টা করতো।
আমাদের সময় অ্যাসিস্ট্যান্ট হাউস টিউটর ছিলেন বাংলা বিভাগের ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদ; হাউস টিউটর ছিলেন ইতিহাস বিভাগের ডক্টর গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, এবং প্রভোস্ট ছিলেন কেমিস্ট্রির ডক্টর মফিজ উদ্দীন আহমেদ। কাজী দীন মুহম্মদ-এর নামের সাথে তাঁর কিছু রচনার জন্য আমি পরিচিত ছিলাম যার দু’একটি আমি নবম বা দশম শ্রেণিতে থাকাকালে পড়েছিলা। হাউস টিউটর হাউস টিউটর তবে মানুষটির সাথে প্রথমদিন পরিচিত হয়ে আমি তেমন প্রীত হইনি। তিনি পরবর্তীকালে ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির পরিচালক (পাকিস্তান আমলে বাংলা একাডেমির প্রধান ছিলেন পরিচালক- যা স্বাধীনতার পর পরিবর্তিত হয়ে মহা পরিচালক হয়েছে) হয়েছিলেন। তিনি মারা যান ২০১১ সালে।
হাউস টিউটর ডক্টর গিয়াসউদ্দিন আহমেদ-এর পরিচয় দেয়া বাহুল্য ছাড়া কিছু নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে বুদ্ধিজীবী অপহরণ ও হত্যাকা-ের শিকার শহিদ ডক্টর গিয়াসউদ্দিন আহমেদের কথা আমরা সবাই জানি। তাঁর মতো সুশ্রী এবং অমায়িক মানুষ আমি খুবই কম দেখেছি। অন্যদিকে প্রভোস্ট ডক্টর মফিজ উদ্দীন আহমেদ ছিলেন নিজের উচ্চ পদের ব্যাপারে সদাসচেতন, অনেকটাই আমলাতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন। নিজের পদমর্যাদাকে তিনি দারুণ উপভোগ করতেন বলে আমার মনে হয়েছে। মনে পড়ে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ চলাকালে তিনি অনেক হাস্যকর ইংরেজি নোটিশ দিতেন যা নিয়ে আমরা বেশ মজা করতাম।
তো আমার এস এম হলে আবাসিক হবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দু’একদিন পর সকালে হলের নোটিশবোর্ডে আমার নামসহ অন্য প্রায় দশ জনকে একটি নির্দিষ্ট দিনে প্রভোস্ট অফিসে দেখা করতে বলা হলো। আমাদের ক্লাস ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আমি এবং আমার চাচাত ভাই সাদুল্লাহ আমার চাচাত বোনের রেঙ্কিন স্ট্রিটের বাসা থেকে তখন ক্লাস করতাম। সাদুল্লাহর ইন্টারমেডিয়েটে আমার চাইতে ভাল নম্বর ছিল ফলে ওর এস এম হলে আবাসিক হবার অনুমোদন আগেই হয়ে গিয়েছিল; যদিও তখনও হলে উঠতে পারেনি। আমি আমার এই সাক্ষাৎকারের ‘একেকডোট’-টি সারা জীবনেও ভুলবো না। তাঁর আগে বলে নেই, আমাদের সময়ে একটা কথা প্রচলিত ছিল: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে তিনটি নোটিশবোর্ডের নোটিশ প্রতিদিন পড়া পড়াশোনার অংশ হিসেবে বাধ্যতামূলক, আর সে নোটিশবোর্ডগুলো হলো, যথাক্রমে বিভাগীয় নোটিশবোর্ড, আবাসিক/সংযুক্ত হলের নোটিশবোর্ড এবং রেজিস্ট্রার অফিসের নোটিশবোর্ড। আমরা সবাই এই নির্দেশ ভর্তি হবার পর থেকেই মেনে চলতাম।
আমার সাক্ষাতের তারিখ ধার্য হয়েছিল আগস্ট ১৯, ১৯৬৩-র বেলা তিনটায়। প্রশ্ন উঠতেই পারে আমি এত স্পষ্টভাবে এই দিন-তারিখ স্মরণে রাখলাম কেন এবং কীভাবে। রাখলাম এই কারণে যে ঐ দিন পাকিস্তান কন্সটিটিয়েন্ট অ্যাসেম্বলির স্পিকার মৌলভী তমিজউদ্দিন খান মারা গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু আমার জন্য কোনো শোকদুঃখের ব্যাপার ছিল না তখন, যদিও তিনি বাঙালি ছিলেন (রাজবাড়ি জেলায় জন্ম) এবং আমার অত্যন্ত প্রিয় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা খান আমিনের পিতা ছিলেন। তবে এসব জেনেছি অনেক পরে যখন আমি রাজিয়া খান আমিনের ক্লাস করা শুরু করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। অবশ্য সেটি ঐ ১৯৬৩ সালেই।
আমি সেই আগস্ট মাসের ঘাম ঝরানো গরমে রেঙ্কিন স্ট্রিট থেকে ঘর্মাক্ত হয়ে এস এম হলে পৌঁছালাম তখন লক্ষ্য করলাম প্রভোস্টের অফিস বন্ধ এবং সেখানে কেউ নেই। হতভম্ভ আমি কয়েক মিনিট বুঝলাম না আমার কি করা উচিত। ভাবলাম আমি বোধহয় নোটিশটা ভুল পড়েছি। প্রভোস্ট অফিসের সামনে নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো দ্রুত আবার খুঁজতে লাগলাম এবং পেয়েও গেলাম। পড়ে বুঝলাম আমি কোনো ভুল করিনি। তবে, কিছু পরে আবিষ্কার করলাম আর একটি নোটিশ যাতে লেখা পাকিস্তান কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির স্পিকার মৌলভী তমিজউদ্দিন খান-এর মৃত্যুর কারণে ঐ দিনের সাক্ষাৎকার বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষাৎকারের তারিখ এবং সময় দ্রুত জানানো হবে। বলাবাহুল্য, এসব নোটিশ কিন্তু সবই ইংরেজিতে দেয়া হতো।
আমি, সত্যি বলতে কি, যারপরনাই ক্ষু্ণ্ন হয়েছিলাম সেদিন কারণ ওই সময়ে আমার সবচাইতে জরুরি ছিল হলের আবাসিক হওয়া, পাকিস্তান কন্সটিটিয়েন্ট অ্যাসেম্বলির স্পিকার মৌলভী তমিজউদ্দিন খান-এর মৃত্যুর জন্য শোকাহত হবার চাইতে। পরে ব্যপারটা নিয়ে যখন ভেবেছি তখন শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথের সেই কটি পংক্তি মনে উঠে এসেছে। লেডি ম্যাকবেথের অত্মহত্যার খবর শুনে ম্যাকবেথ বলেছিল: She should have died hereafter. আমার এস এম হলে আবাসিক হবার অনুমতির পর পাকিস্তান কন্সটিটিয়েন্ট অ্যাসেম্বলির স্পিকার মৌলভী তমিজউদ্দিন খান-এর মৃত্যু হলে কোনো ক্ষতি হতো না।
কিন্তু আমার জন্য আরও বিস্ময়কর কিছু ঘটনার অপেক্ষা ছিল বৈকি! পরদিন আমি ক্লাস শেষ করে আমার মৌখিক পরীক্ষার পরিবর্তিত তারিখ ঠিক হয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য হলের নোটিশবোর্ড দেখতে এসে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম নেটিশবোর্ডে নোটিশ দেয়া হয়েছে এই মর্মে যে, যেসব ছাত্রের গত দিনে হলের আবাসিক হবার মৌখিক পরীক্ষা ছিল তাদের সবাইকে ম্যাট্রিক ও ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক হিশেবে নেয়া হয়েছে এবং তাদের কোনও মৌখিক পরীক্ষা দেবার আর প্রয়োজন নেই। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম পাকিস্তান কন্সটিটিয়েন্ট অ্যাসেম্বলির স্পিকার মৌলভী তমিজউদ্দিন খান সাহেব আমার যে উপকার করলেন সে উপকারের জন্য তাকে আমি তো আর কৃতজ্ঞতা জানাতে পারবো না কারণ তিনি ইহজগতে আর নেই। পেছন ফিরে বিবেচনা করলে ওথেলো নাটকে রোড্রিগোর মতো বলতে পারতাম and then have we a prescription to die when Death is/Our physician. যখন মৃত্যু স্বয়ং চিকিৎসক তখন আমাদের চিকিৎসাপত্র তো মৃত্যু ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। তবে হ্যাঁ, তাঁর কন্যা রাজিয়া খান আমিন-এর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ দুটি কারণে, প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে উনিই আমাকে প্রথম ধারণা দিয়েছেন শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কটা শুধু শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ নয়, এবং দ্বিতীয়ত সাহিত্যের ছাত্রদের খামখেয়ালী হতে হয় এবং লেখালেখি ঐ খামখেয়ালীর একটি বড় অংশ। এই খামখেয়ালীপনার উদাহরণ সময় মতো বর্ণনা করব।