শরৎ
মহাদেব সাহা
কাশবনে শরৎ নেই, শরৎ আমার মনে
আমি তাকে প্রথম দেখি ভাদ্রেুর বর্ষণে,
উছলে পড়ে জ্যোৎস্না জলে, নৃত্য করে চাঁদ
তারই জন্য আমার এই ব্যাকুল সেরেনাদ;
উঠানভরা শারদশশী আমায় বলে- আয়
ভালোবাসার পাঠ নিয়েছি শারদ-পূর্ণিমায়,
সেই শরতের গন্ধে আমি এমন দিশেহারা
দুচোখ ভরে ফোটে আমার হাজার রাতের তারা;
এই শরতে তোমার চোখে শিউলিফোটা ভোর
শারদনিশির ডাকে আমি ছেড়েছি ঘরদোর।
শরৎ তোমার মিষ্টি হাতের পরশ যদি পাই
সহ¯্র রাত জেগে থাকি, আনন্দে গান গাই,
শরৎ তোমায় কিনেছি যে চোখের জলের দামে
ভালোবাসার হলুদ চিঠি পাঠাই নীল খামে,
কাশবনে শরৎ নেই, শরৎ আমার মনে
শরৎ তোমায় বেঁধে রাখি জন্মের বন্ধনে।
কাশফুলের কাব্য
নির্মলেন্দু গুণ
ভেবেছিলাম প্রথম যেদিন ফুটবে তোমায় দেখব,
তোমার পুষ্প বনের গাথা মনের মতো লেখব।
তখন কালো কাজল মেঘ তো ব্যস্ত ছিল ছুটতে,
ভেবেছিলাম আরো ক’দিন যাবে তোমার ফুটতে।
সবে তো এই বর্ষা গেল শরৎ এলো মাত্র,
এরই মধ্যে শুভ্র কাশে ভরলো তোমার গাত্র।
ক্ষেতের আলে নদীর কূলে পুকুরের ওই পাড়টায়,
হঠাৎ দেখি কাশ ফুটেছে বাঁশ বনের ওই ধারটায়।
আকাশ থাকে মুখ নামিয়ে মাটির দিকে নুয়ে,
দেখি ভোরের বাতাসে কাশ দুলছে মাটি ছুঁয়ে।
কিন্তু কখন ফুটেছে তা কেউ পারে না বলতে,
সবাই শুধু থমকে দাঁড়ায় গাঁয়ের পথে চলতে।
উচ্চ দোলা পাখির মতো কাশ বনে এক কন্যে,
তুলছে কাশের ময়ূর চূড়া কালো খোপার জন্যে।
শরত রাণী যেন কাশের বোরখা খানি খুলে,
কাশবনের ওই আড়াল থেকে নাচছে দুলে দুলে।
প্রথম কবে ফুটেছে কাশ সেই শুধুরা জানে,
তাইতো সেটা সবার আগে খোপায় বেঁধে আনে।
ইচ্ছে করে ডেকে বলি, “ওগো কাশের মেয়ে-
আজকে আমার চোখ জুরালো তোমার দেখা পেয়ে
তোমার হাতে বন্দী আমার ভালোবাসার কাশ
তাইতো আমি এই শরতে তোমার কৃতদাস”
ভালোবাসা কাব্য শুনে কাশ ঝরেছে যেই
দেখি আমার শরৎ রাণী কাশবনে আর নেই।
পাহাড়ের বুক ফেটে দুপুরের রোদ
আবদুর রাজ্জাক
ডালিম ফুলের চাহনি, রক্তজবার প্রতিশোধ নিয়েছো সখি,
প্রতিশোধ নিয়েছো,
সাপ ফণাই তোলেনি শুধু, ছোঁবলও মেরেছে,
তোমার সমস্ত শরীরে বিষ-
আমি গণনা করছি বিষের ফণা, বিস্মরণের নদী।
ফুটতে দিও না ফুল, ফুটতে দিও না ফুল,
ঠোঁট সরিয়ে নাও, ঠোঁট সরিয়ে নাও, চুমু খেতে দিও না তবুও
আকাশ বেচেছি, মেঘ বেচিনি। এবং প্রতারণা করিনি,
একটু চালাকি করেছি, এটা চলে।
ধর্ম অধর্ম হলেও তুমি আমাতেই লীন, তথাপি কিন্নর
আমাকে জড়ায়ে রয়েছো।
জ্যোৎস্নায় বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়েছে, আর আমার ভালোবাসা
হাতছাড়া হয়েছে, আমি পাহাড় চূড়ায় বেঁধেছি ঘর।
একপাল গরু- নিয়েছে মাঠে গোটের রাখাল,
সবগুলো গরু সাবাড় করেছে একটি মাত্র বাঘ-
আসমানের রোদ, নীলিমার মিনারে আযান দিয়েছে মৃত্যু
তোমার পৃথিবীতে আমিই একজন,
আমারে খারিজ কইরা কী পাইবা তুমি!
দুই.
আকাশের ওপারে আকাশ, তারপরও আকাশ
তোমাকে, কেউ না কেউ ভালোবাসে, হয়তো তুমিও
কারো বন্ধনে রয়েছো।
কোন দিকে পথের বাঁক আর তুমি!
এই দেখো তোমাকে ধারণ করে- এই এক বিপদগ্রস্ত
যাযাবর বেঁচে আছি এতোকাল।
পিপাসায় বুক ফেটে যায় আমার। আসমান দরদী!
একটু বৃষ্টি দিলেই আমার পিপাসা সম্পূর্ণ চলে যায়।
চিরস্থায়ী শরৎকাল
হাইকেল হাশমী
দিন ছোট হয়ে আসছে
রাত দীর্ঘ-
তোমার চিন্তায় ডুবে থাকার সুযোগ দীর্ঘতর।
মনের পৃথিবীতে কখনও গরম বাতাস
আর কখনও শীতল পবন,
দুলছে তোমার ভাবনার শ্বতবর্ণ কাশবন।
আন্দোলিত মনের গভীরে বহমান নদী
ঝরেছে নিরাশার বৃক্ষ থেকে শুকনো পাতাগুলি
ফুটছে আশার হিমঝুরি, গগনশিরীষ, মিনজিরি।
শরৎ আসবে ঘুরে ঘুরে
কিন্তু মনের মাটিতে
সতেজ থাকবে চিরদিন
তোমার কল্পনার পান্থপাদপ, বকুল,
শিউলি আর শেফালি।
ভাবনার প্রজাপতি উড়ে বেড়াবে
মনের কাশবনে,
আমার হৃদয়ের মাটিতে-
তোমার ভাবনার শরৎ চিরস্থায়ী।
শরৎ
মাসুদ খান
বর্ষার এই যে অনর্গল ভেজা-ভেজা তিরস্ক্রিয়া, তারই বিপরীতে
পুরস্কার হিসেবে কি ফুরফুরে মেজাজে আসে বিনয়ী শরৎ?
এদেশে বসন্ত যদি হয় ভরা ফুলের মৌসুম,
তবে ফল-প্রকাশের ঋতু আকারে কি আসে গ্রীষ্ম?
আর বর্ষা কি তবে বীজের?
শরৎ কি অঙ্কুরের? নবীন গাছের?
যেই গাছ থমকে থাকবে কিছুকাল, তারপর
আবার ফলাবে ফুল- ফুল আর ফলাফল, অনাগত বসন্তে ও গ্রীষ্মে।
এভাবেই ওঠানামা করে
এ নিসর্গ-মেজাজের নীরব পারদ।
বিষয়টি বার্ষিক ও চক্রাকার। তবে আপাতত উপজীব্য-
নিচে ঘন সবুজ ও অনেক ওপরে হালকা নীলের মলাটে শাদা মেঘের শারদ।
হেমন্ত গান
তাপস গায়েন
প্রথমে হারিয়েছি তোমাকে, ধূলাকীর্ণ নগরীর এক কফিশপে
তারপর হারিয়ে গেছে আমার বাইসাইকেল হেমন্ত অরণ্যে
জীবনের অন্তিম সময়ে শুধু এই ঋতুকেই পুনঃ পুনঃ ফিরে দেখা
আমার এই নিষ্প্রাণ দেহ যদি পড়ে থাকে হেমন্ত বাগানে
তাকে সজ্ঞানতা দেখে নেবে ধূমকেতু দূরত্বে,
লাল, হলুদ, বাদামী পাতার উৎসবে
পড়ে থাকুক আমার দেহের কঙ্কাল-
সকল বিশেষণের উর্ধে...
‘মানুষ’ শীর্ষক ভুক্তি
মাহফুজ আল-হোসেন
ঋতু-বৈচিত্র্যের মতো প্রাকৃতিক সত্যে আস্থাবান হয়ে আজন্ম গড়পড়তা মানুষের বোধগম্য থাকতে চেয়েছিলেন একদা এক প্রাজ্ঞ প্রবীণ কবি;
অথচ, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য...’- অবশ্যপাঠ্য এ অর্ধসত্যের ঘোরপ্যাঁচ বুঝতে না বুঝতেই কয়েক সহ¯্রাব্দ গড়িয়ে গেল সভ্যতার বালুঘড়ি থেকে।
এরই ফাঁকে অকাট্য যুক্তিতর্কের আবেদন ফুরিয়ে গেলে কতিপয় সশস্ত্র যুদ্ধবাজকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো পণবন্দি সন্ত্রস্ত ধ্বনি আর নিসর্গের বিপরীতে;
ইত্যবসরে, দিগন্ত বিস্তৃত রক্তপাত আর বিপন্নতা নাক্ষত্রিক সত্যকে আড়াল করে দিলো বধ্যভূমিতে অপেক্ষমাণ বিশ্বাসী ব্যাসবাক্যের বানান থেকে।
এতদসত্ত্বেও, অস্থিরমতি হাওয়া আর স্বাপদসঙ্কুল ঘূর্ণিজল রোদ্দুরের ঠোঁটে সম্ভবত কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো দ্বিপদ মানুষের বোধগম্য অস্ফুট স্বরে;
শেষাবধি, সওদাগরী অভিধানের কোত্থাও ‘মানুষ’ শীর্ষক কোনো ভুক্তি কিংবা এর এঁটো কাঁটার অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে গলদঘর্ম কবি সত্যের এক সারবান প্রতিশব্দ হঠাৎ কুড়িয়ে পেলেন হাইব্রিড কাঁঠালের আমসত্ত্বে!!
শারৎ-সায়াহ্ন
অশোক কর
সেই কাশবন, আসন্ন শরতের গান গায় যারা
তাদের নিয়েই যতো বিপত্তি
রাজধানীর ছাদে বাতাসের আলিঙ্গনে দুলে দুলে
কাশফুল জানিয়ে দেয় প্রকৃতি কতো অবারিত
আমরাই শুধু সঙ্কুচিত করে রাখি দৃষ্টিকে!
প্রকৃতি অবলীলায় শেখায় কতো কিছু-
পরিযায়ী সারস-ডানায় উড়ে আসে শীতের আমেজ
মাঠের ভেজা ঘাসে কুয়াশা জমে থাকে মেঘ হয়ে
ঝরে পরার আগেও বকুল বিলিয়ে দেয় সৌরভ
শুধু কারো কারো দেহ ভরা কুৎসিত দুর্গন্ধে!
আসন্ন সেই শারৎ-সায়াহ্নে
শৈশবের মুগ্ধ স্মৃতিকাতরতা অতিক্রান্ত শেষে
জীবন-পান্ডুলিপির পাতা উল্টে খুঁজে খুঁজে দেখি
যতবার নগ্ন-পা’ ভিজিয়েছি শরতের শিশিরে
তারও বেশি অবহেলায় অবজ্ঞা করেছি প্রকৃতিকে!
বিযুক্ত
ভাগ্যধন বড়ুয়া
মীমাংসা কি হলো শেষে? আলাদা জগত!
অশ্রুসজল সময়, অব্যক্ত কথারা বাতাসে ঝাপটায়
কখনও প্রকাশ করে দীর্ঘশ্বাস, আশ্বিন বাতাসে...
আমাদের মতামত, সব কথা দীর্ঘরাত্রি জানে
সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলে কান্নার মাতম ভারি কেন?
কে বলেছিল, বিচ্ছিন্নতা মানে মৃত্যু? গভীর আঁধার!
হাহাকার করা মায়াবুকে হৃদিটান যারা অনুভব করে
তারা জানে, সম্পর্কের রেখা ধরে নদী চলে নিয়মে...
শরতে লিখেছেন মা
ওবায়েদ আকাশ
একদল শাব্দিক- তাদের ঠোঁট কবোষ্ণ প্রখর-
ঝরছে বেদনার্ত শহরের চিঠি
লিখেছেন মা-
“বৎসরের মগজ উজার করে তোদের জন্য সেজেছি সত্যবতী
আমার দক্ষিণে রোদ- হালট-চুয়ানো আহ্লাদ, উত্তরে রঙধনু-
আমার আঁচল গড়িয়ে নামছে শোকার্ত অরণ্য-ক্ষত
আমার উদর-বেষ্টিত কান্না, গাঢ় অনিশ্চয়-
এই নদীমাতৃক আমি: ফুলে- ফসলে- অভিধায়-
সকলই মুখশ্রী আমার, স্রোতস্বিনী বিশ^স্ত বিভোর-
পারাপারে বিপুল উৎসুক মন, মেঘফুলে ঝরছে ব্যথায়-”
শরতে লিখেছেন মা- এমন এক ক্লান্ত বরষায়-
তুমি দিনান্তের ব্যাসকূট
কামরুল ইসলাম
আমার দীর্ঘশ্বাসের প্রতিধ্বনিগুলো ঝরা পাতার মন্ত্র নিয়ে
গাছে গাছে উড়ে বেড়ায় নির্ভয়ে, আর
বজ্রধ্বনির ওপারে শরতের দিন আসে বিষাদের ঘোরে।
জামরঙা দীর্ঘশ্বাস পাটিগণিতের ঘেরে পড়ে যায়
নৈঃশব্দ্যের ভেতরে তিন তাসের জলনৃত্য-
খোলা কণ্ঠে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে
পাতাদের যৌথ বেদনার সুরগুলো সাথে নিয়ে
ভঙ্গুর ভবিষ্যতের দিকে তোমার যাত্রার সময়
আমি কি উড়াতে পেরেছি কোনো সরল ঘুড়ি
কুয়াশার ভেতর দিয়ে আকাশের নিচের
উন্মুক্ত বাতাসে, কিছুটা উষ্ণ নেশায়?
আত্মার দুর্দান্ত প্রচ্ছদ ছিঁড়ে গেলে কিছুটা
পরিমার্জনা করি, মুছে দিই ঝকঝকে রক্তের ধারা
অতঃপর ফুটে ওঠে শাদা শাদা অ্যাপ্রন-পরা মেঘেরা,
ছলনার তৃষ্ণাগুলো জ¦রের হাত ধরে ফিরে যায়
কেউ এসে পাশে দাঁড়ায়, আর বলে:
তুমি দিনান্তের ব্যাসকূট, মাঝরাতের দরিয়ার হাঁক!
ছত্রিশে জুলাই
চয়ন শায়েরী
শুনলাম তুমি নাকি কাশ নিয়ে ছবিকল্প এঁকে ফেসবুকে পোস্ট দেবে বলে কাশবনে গিয়েছিলে- খুঁজেছিলে কি রাসেল ভাইপারও?
এদিকে বাংলার রক্তনদী সব আল্পনা আঁকবে বলে কাশের তুলিকে রক্তরঙে রাঙিয়ে নিলো;
‘জুলাই গণপরিসর’ রক্তবীজ রুয়ে রুয়ে ছত্রিশে জুলাই এসে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো- রক্তবীজ জন্ম দিক হৃদয়ের রক্তনদীপাড়ে লাল কাশ-হৃদয়ে তোমার রক্তনদী কই?
যারা রক্তবীজ রুয়ে গেছে রাষ্ট্রজুড়ে, রক্তরং কাশ দ্রোহ নদীটির পাড় থেকে এসে- গণভবনের ছবিকল্প পালটায়ে ফেলে গণপরিসরে!
কাশফুল সুখ
রকিবুল হাসান
যৌবনা দুপুরে দুহাত বাড়িয়ে তুমি চেয়েছো আকাশ
আকাশ তখন এসেছে নেমে যে দূরের পাল্কিতে,
শুভ্রতায় মেঘবতী নারী-দুহাত ছড়িয়ে
দাঁড়ালে মুগ্ধতা বুকে- কারো প্রেমে হৃদয় যে ধ্যানরত।
একেবারে সাদা ধবধবে শাড়িতে দারুণ শরৎ নারী
নিশ^াসে মেখেছ নিশ^াসের ঘ্রাণ
শীতল হৃদয়ে হৃদয় মেখে ভেসেছ যে নিজেই
দুচোখের গহিনে প্রচ্ছদ এঁকে কবিতার রূপশ্রী রমণী।
দুহাত বাড়িয়ে তুমি কোনো এক প্রিয় মুখ বুকে করে
বুকেতে বেঁধেছ শীতলপরশ মিহিন চুম্বনে কাশফুল সুখ।
কাশফুলের খই
শেলী সেনগুপ্তা
মেয়েটি জানতে চেয়েছিলো
কাশফুল পুরুষ নাকি নারী?
উওর শোনার আগেই
ওরা হেসে গড়িয়ে পড়লো,
ছেলেটির মনে ফেনিয়ে উঠলো
‘কাশফুলের ধর্ম কী?’
উওর জানতে গেলো-
মালতি নামের মেয়েটিকে
কাশবনের পাশে রেখে
শাঁখের শব্দ আর আজানের ধ্বনি
গায়ে মেখে
ফিরে আসা ছেলেটি দেখলো
কাশবনের পাশে
পোড়া বুদ্ধের হাত ধরে
ভুলুণ্ঠিত ক্রুশবিদ্ধ মালতি
এই শরতে
কাশফুল যেন খই হয়ে ফুটে আছে...
শরতের সম্প্রসারণ
আশরাফুল কবীর
যায় সময় চলে যায় আশ্বিনের প্রশস্তিতে।
ভাদ্রের পৌরোহিত্যে ধানক্ষেত আলোকিত করে
বসে থাকে কিছু আক্ষেপ প্রোটোজোয়ার মতো।
শরতের এপাশে তুমি জমা করে নিয়ে অনেক কথা;
ওপাশে আমি, অকারণ ঘোরাঘুরি এক বরচন্দন
আক্ষেপ সে-তো ছিল, আছে, থাকবে চিরকাল তার
কিয়ৎ ইচ্ছেমতোন।
এ দীপমালা রাতে
কোথায় তুমি পদ্মাবতী-পদ্মপলাশলোচন?
সময় যে বয়ে যায়, এখন পুরুষ্টু হওয়ার মরসুম!
সরব হয়ে উঠুক অবারিত বন্দর দীপ্ত পাল তুলে
কিছুটা আলাপসালাপ, কিছুটা বাড়াবাড়ি
স্তিমিত শাওনের কীর্তন ভুলে-
ধীরানদী
জাফর সাদেক
বৃষ্টির রেশ ছুঁয়ে অধোমুখী নির্জন আকাশ
কাশবনের অন্ধকারে কার কণ্ঠে নিষিক্ত হবার গান
তুমি কি নির্জনতার স্তরে স্তরে অপেক্ষমাণ কেউ
বলেছিলে, প্রাপ্তির রেখায় অধরা কিছু নেই
শাড়িভাঁজ কখনও আলিবাবার গুপ্ত ক্যানভাস
শরৎ মেঘের এসরাজে রোদের আঙুল
সেই কণ্ঠস্বর আরও নিঝুম হয়ে চুপসুখী অধর এগিয়ে বলে-
তলমন্ত্র জানা থাকলে খোলে বিগত বর্ষার না-খোলা দুয়ার
আর, নদীমুখে বিভ্রান্তি যেন শুভ্র মেঘের নৈঃশব্দ্যের খিল
কান পাতি, শরৎ বন্দনায় সুর তুলছে শত অশ্বের তেজ
মেঘের দেয়াল ভেঙে ছুটে আসছে আলিবাবা ও চল্লিশ চোর
ধীরতালের নদীতে নেমেছে পুরো ভদ্রা-আকাশ
মুগ্ধতায় ঘামছে ডাকাত সর্দার- ধীরানদী ভুল দুয়ার নয়
বরং সর্দার ভুলভাল মন্ত্রের যন্ত্রণায়
মধু পূর্ণিমায়
নিজাম বিশ্বাস
তুমি চাঁদ দেখে দেখে যাও,
যেদিকে জোছনা যায়
ঝলমলিয়া নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে
ভেসে ভেসে,
তোমার চোখের সীমা যতোদূর
যতো নটিক্যাল দূর যায়-
এমন জোছনা কতকাল পর
চৌরাশিয়ার বাঁশির মতন
বিরহী রাত্রি ডেকে এনেছে-
ক্রমশ হারিয়ে যেতে যেতে
ফিরে ফিরে আসছ আমার কাছে,
তুমি যতো দূর যাও
ততো কাছে আসো আমার
কৃষ্ণ কৃষ্ণ প্রেম
চঞ্চল শাহরিয়ার
শরতের আকাশজুড়ে রোজ আফসানার অভিমান। সে অভিমান বৃষ্টি হয়ে ঝরে। তারপর কাশবনে হেসে কুটিকুটি হয় বিনোদিনী রাই। গোলকধাঁধায় পড়ে আমি পথটা হারাই। কুঞ্জবনে যাওয়ার পথ।
বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪
শরৎ
মহাদেব সাহা
কাশবনে শরৎ নেই, শরৎ আমার মনে
আমি তাকে প্রথম দেখি ভাদ্রেুর বর্ষণে,
উছলে পড়ে জ্যোৎস্না জলে, নৃত্য করে চাঁদ
তারই জন্য আমার এই ব্যাকুল সেরেনাদ;
উঠানভরা শারদশশী আমায় বলে- আয়
ভালোবাসার পাঠ নিয়েছি শারদ-পূর্ণিমায়,
সেই শরতের গন্ধে আমি এমন দিশেহারা
দুচোখ ভরে ফোটে আমার হাজার রাতের তারা;
এই শরতে তোমার চোখে শিউলিফোটা ভোর
শারদনিশির ডাকে আমি ছেড়েছি ঘরদোর।
শরৎ তোমার মিষ্টি হাতের পরশ যদি পাই
সহ¯্র রাত জেগে থাকি, আনন্দে গান গাই,
শরৎ তোমায় কিনেছি যে চোখের জলের দামে
ভালোবাসার হলুদ চিঠি পাঠাই নীল খামে,
কাশবনে শরৎ নেই, শরৎ আমার মনে
শরৎ তোমায় বেঁধে রাখি জন্মের বন্ধনে।
কাশফুলের কাব্য
নির্মলেন্দু গুণ
ভেবেছিলাম প্রথম যেদিন ফুটবে তোমায় দেখব,
তোমার পুষ্প বনের গাথা মনের মতো লেখব।
তখন কালো কাজল মেঘ তো ব্যস্ত ছিল ছুটতে,
ভেবেছিলাম আরো ক’দিন যাবে তোমার ফুটতে।
সবে তো এই বর্ষা গেল শরৎ এলো মাত্র,
এরই মধ্যে শুভ্র কাশে ভরলো তোমার গাত্র।
ক্ষেতের আলে নদীর কূলে পুকুরের ওই পাড়টায়,
হঠাৎ দেখি কাশ ফুটেছে বাঁশ বনের ওই ধারটায়।
আকাশ থাকে মুখ নামিয়ে মাটির দিকে নুয়ে,
দেখি ভোরের বাতাসে কাশ দুলছে মাটি ছুঁয়ে।
কিন্তু কখন ফুটেছে তা কেউ পারে না বলতে,
সবাই শুধু থমকে দাঁড়ায় গাঁয়ের পথে চলতে।
উচ্চ দোলা পাখির মতো কাশ বনে এক কন্যে,
তুলছে কাশের ময়ূর চূড়া কালো খোপার জন্যে।
শরত রাণী যেন কাশের বোরখা খানি খুলে,
কাশবনের ওই আড়াল থেকে নাচছে দুলে দুলে।
প্রথম কবে ফুটেছে কাশ সেই শুধুরা জানে,
তাইতো সেটা সবার আগে খোপায় বেঁধে আনে।
ইচ্ছে করে ডেকে বলি, “ওগো কাশের মেয়ে-
আজকে আমার চোখ জুরালো তোমার দেখা পেয়ে
তোমার হাতে বন্দী আমার ভালোবাসার কাশ
তাইতো আমি এই শরতে তোমার কৃতদাস”
ভালোবাসা কাব্য শুনে কাশ ঝরেছে যেই
দেখি আমার শরৎ রাণী কাশবনে আর নেই।
পাহাড়ের বুক ফেটে দুপুরের রোদ
আবদুর রাজ্জাক
ডালিম ফুলের চাহনি, রক্তজবার প্রতিশোধ নিয়েছো সখি,
প্রতিশোধ নিয়েছো,
সাপ ফণাই তোলেনি শুধু, ছোঁবলও মেরেছে,
তোমার সমস্ত শরীরে বিষ-
আমি গণনা করছি বিষের ফণা, বিস্মরণের নদী।
ফুটতে দিও না ফুল, ফুটতে দিও না ফুল,
ঠোঁট সরিয়ে নাও, ঠোঁট সরিয়ে নাও, চুমু খেতে দিও না তবুও
আকাশ বেচেছি, মেঘ বেচিনি। এবং প্রতারণা করিনি,
একটু চালাকি করেছি, এটা চলে।
ধর্ম অধর্ম হলেও তুমি আমাতেই লীন, তথাপি কিন্নর
আমাকে জড়ায়ে রয়েছো।
জ্যোৎস্নায় বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়েছে, আর আমার ভালোবাসা
হাতছাড়া হয়েছে, আমি পাহাড় চূড়ায় বেঁধেছি ঘর।
একপাল গরু- নিয়েছে মাঠে গোটের রাখাল,
সবগুলো গরু সাবাড় করেছে একটি মাত্র বাঘ-
আসমানের রোদ, নীলিমার মিনারে আযান দিয়েছে মৃত্যু
তোমার পৃথিবীতে আমিই একজন,
আমারে খারিজ কইরা কী পাইবা তুমি!
দুই.
আকাশের ওপারে আকাশ, তারপরও আকাশ
তোমাকে, কেউ না কেউ ভালোবাসে, হয়তো তুমিও
কারো বন্ধনে রয়েছো।
কোন দিকে পথের বাঁক আর তুমি!
এই দেখো তোমাকে ধারণ করে- এই এক বিপদগ্রস্ত
যাযাবর বেঁচে আছি এতোকাল।
পিপাসায় বুক ফেটে যায় আমার। আসমান দরদী!
একটু বৃষ্টি দিলেই আমার পিপাসা সম্পূর্ণ চলে যায়।
চিরস্থায়ী শরৎকাল
হাইকেল হাশমী
দিন ছোট হয়ে আসছে
রাত দীর্ঘ-
তোমার চিন্তায় ডুবে থাকার সুযোগ দীর্ঘতর।
মনের পৃথিবীতে কখনও গরম বাতাস
আর কখনও শীতল পবন,
দুলছে তোমার ভাবনার শ্বতবর্ণ কাশবন।
আন্দোলিত মনের গভীরে বহমান নদী
ঝরেছে নিরাশার বৃক্ষ থেকে শুকনো পাতাগুলি
ফুটছে আশার হিমঝুরি, গগনশিরীষ, মিনজিরি।
শরৎ আসবে ঘুরে ঘুরে
কিন্তু মনের মাটিতে
সতেজ থাকবে চিরদিন
তোমার কল্পনার পান্থপাদপ, বকুল,
শিউলি আর শেফালি।
ভাবনার প্রজাপতি উড়ে বেড়াবে
মনের কাশবনে,
আমার হৃদয়ের মাটিতে-
তোমার ভাবনার শরৎ চিরস্থায়ী।
শরৎ
মাসুদ খান
বর্ষার এই যে অনর্গল ভেজা-ভেজা তিরস্ক্রিয়া, তারই বিপরীতে
পুরস্কার হিসেবে কি ফুরফুরে মেজাজে আসে বিনয়ী শরৎ?
এদেশে বসন্ত যদি হয় ভরা ফুলের মৌসুম,
তবে ফল-প্রকাশের ঋতু আকারে কি আসে গ্রীষ্ম?
আর বর্ষা কি তবে বীজের?
শরৎ কি অঙ্কুরের? নবীন গাছের?
যেই গাছ থমকে থাকবে কিছুকাল, তারপর
আবার ফলাবে ফুল- ফুল আর ফলাফল, অনাগত বসন্তে ও গ্রীষ্মে।
এভাবেই ওঠানামা করে
এ নিসর্গ-মেজাজের নীরব পারদ।
বিষয়টি বার্ষিক ও চক্রাকার। তবে আপাতত উপজীব্য-
নিচে ঘন সবুজ ও অনেক ওপরে হালকা নীলের মলাটে শাদা মেঘের শারদ।
হেমন্ত গান
তাপস গায়েন
প্রথমে হারিয়েছি তোমাকে, ধূলাকীর্ণ নগরীর এক কফিশপে
তারপর হারিয়ে গেছে আমার বাইসাইকেল হেমন্ত অরণ্যে
জীবনের অন্তিম সময়ে শুধু এই ঋতুকেই পুনঃ পুনঃ ফিরে দেখা
আমার এই নিষ্প্রাণ দেহ যদি পড়ে থাকে হেমন্ত বাগানে
তাকে সজ্ঞানতা দেখে নেবে ধূমকেতু দূরত্বে,
লাল, হলুদ, বাদামী পাতার উৎসবে
পড়ে থাকুক আমার দেহের কঙ্কাল-
সকল বিশেষণের উর্ধে...
‘মানুষ’ শীর্ষক ভুক্তি
মাহফুজ আল-হোসেন
ঋতু-বৈচিত্র্যের মতো প্রাকৃতিক সত্যে আস্থাবান হয়ে আজন্ম গড়পড়তা মানুষের বোধগম্য থাকতে চেয়েছিলেন একদা এক প্রাজ্ঞ প্রবীণ কবি;
অথচ, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য...’- অবশ্যপাঠ্য এ অর্ধসত্যের ঘোরপ্যাঁচ বুঝতে না বুঝতেই কয়েক সহ¯্রাব্দ গড়িয়ে গেল সভ্যতার বালুঘড়ি থেকে।
এরই ফাঁকে অকাট্য যুক্তিতর্কের আবেদন ফুরিয়ে গেলে কতিপয় সশস্ত্র যুদ্ধবাজকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো পণবন্দি সন্ত্রস্ত ধ্বনি আর নিসর্গের বিপরীতে;
ইত্যবসরে, দিগন্ত বিস্তৃত রক্তপাত আর বিপন্নতা নাক্ষত্রিক সত্যকে আড়াল করে দিলো বধ্যভূমিতে অপেক্ষমাণ বিশ্বাসী ব্যাসবাক্যের বানান থেকে।
এতদসত্ত্বেও, অস্থিরমতি হাওয়া আর স্বাপদসঙ্কুল ঘূর্ণিজল রোদ্দুরের ঠোঁটে সম্ভবত কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো দ্বিপদ মানুষের বোধগম্য অস্ফুট স্বরে;
শেষাবধি, সওদাগরী অভিধানের কোত্থাও ‘মানুষ’ শীর্ষক কোনো ভুক্তি কিংবা এর এঁটো কাঁটার অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে গলদঘর্ম কবি সত্যের এক সারবান প্রতিশব্দ হঠাৎ কুড়িয়ে পেলেন হাইব্রিড কাঁঠালের আমসত্ত্বে!!
শারৎ-সায়াহ্ন
অশোক কর
সেই কাশবন, আসন্ন শরতের গান গায় যারা
তাদের নিয়েই যতো বিপত্তি
রাজধানীর ছাদে বাতাসের আলিঙ্গনে দুলে দুলে
কাশফুল জানিয়ে দেয় প্রকৃতি কতো অবারিত
আমরাই শুধু সঙ্কুচিত করে রাখি দৃষ্টিকে!
প্রকৃতি অবলীলায় শেখায় কতো কিছু-
পরিযায়ী সারস-ডানায় উড়ে আসে শীতের আমেজ
মাঠের ভেজা ঘাসে কুয়াশা জমে থাকে মেঘ হয়ে
ঝরে পরার আগেও বকুল বিলিয়ে দেয় সৌরভ
শুধু কারো কারো দেহ ভরা কুৎসিত দুর্গন্ধে!
আসন্ন সেই শারৎ-সায়াহ্নে
শৈশবের মুগ্ধ স্মৃতিকাতরতা অতিক্রান্ত শেষে
জীবন-পান্ডুলিপির পাতা উল্টে খুঁজে খুঁজে দেখি
যতবার নগ্ন-পা’ ভিজিয়েছি শরতের শিশিরে
তারও বেশি অবহেলায় অবজ্ঞা করেছি প্রকৃতিকে!
বিযুক্ত
ভাগ্যধন বড়ুয়া
মীমাংসা কি হলো শেষে? আলাদা জগত!
অশ্রুসজল সময়, অব্যক্ত কথারা বাতাসে ঝাপটায়
কখনও প্রকাশ করে দীর্ঘশ্বাস, আশ্বিন বাতাসে...
আমাদের মতামত, সব কথা দীর্ঘরাত্রি জানে
সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলে কান্নার মাতম ভারি কেন?
কে বলেছিল, বিচ্ছিন্নতা মানে মৃত্যু? গভীর আঁধার!
হাহাকার করা মায়াবুকে হৃদিটান যারা অনুভব করে
তারা জানে, সম্পর্কের রেখা ধরে নদী চলে নিয়মে...
শরতে লিখেছেন মা
ওবায়েদ আকাশ
একদল শাব্দিক- তাদের ঠোঁট কবোষ্ণ প্রখর-
ঝরছে বেদনার্ত শহরের চিঠি
লিখেছেন মা-
“বৎসরের মগজ উজার করে তোদের জন্য সেজেছি সত্যবতী
আমার দক্ষিণে রোদ- হালট-চুয়ানো আহ্লাদ, উত্তরে রঙধনু-
আমার আঁচল গড়িয়ে নামছে শোকার্ত অরণ্য-ক্ষত
আমার উদর-বেষ্টিত কান্না, গাঢ় অনিশ্চয়-
এই নদীমাতৃক আমি: ফুলে- ফসলে- অভিধায়-
সকলই মুখশ্রী আমার, স্রোতস্বিনী বিশ^স্ত বিভোর-
পারাপারে বিপুল উৎসুক মন, মেঘফুলে ঝরছে ব্যথায়-”
শরতে লিখেছেন মা- এমন এক ক্লান্ত বরষায়-
তুমি দিনান্তের ব্যাসকূট
কামরুল ইসলাম
আমার দীর্ঘশ্বাসের প্রতিধ্বনিগুলো ঝরা পাতার মন্ত্র নিয়ে
গাছে গাছে উড়ে বেড়ায় নির্ভয়ে, আর
বজ্রধ্বনির ওপারে শরতের দিন আসে বিষাদের ঘোরে।
জামরঙা দীর্ঘশ্বাস পাটিগণিতের ঘেরে পড়ে যায়
নৈঃশব্দ্যের ভেতরে তিন তাসের জলনৃত্য-
খোলা কণ্ঠে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে
পাতাদের যৌথ বেদনার সুরগুলো সাথে নিয়ে
ভঙ্গুর ভবিষ্যতের দিকে তোমার যাত্রার সময়
আমি কি উড়াতে পেরেছি কোনো সরল ঘুড়ি
কুয়াশার ভেতর দিয়ে আকাশের নিচের
উন্মুক্ত বাতাসে, কিছুটা উষ্ণ নেশায়?
আত্মার দুর্দান্ত প্রচ্ছদ ছিঁড়ে গেলে কিছুটা
পরিমার্জনা করি, মুছে দিই ঝকঝকে রক্তের ধারা
অতঃপর ফুটে ওঠে শাদা শাদা অ্যাপ্রন-পরা মেঘেরা,
ছলনার তৃষ্ণাগুলো জ¦রের হাত ধরে ফিরে যায়
কেউ এসে পাশে দাঁড়ায়, আর বলে:
তুমি দিনান্তের ব্যাসকূট, মাঝরাতের দরিয়ার হাঁক!
ছত্রিশে জুলাই
চয়ন শায়েরী
শুনলাম তুমি নাকি কাশ নিয়ে ছবিকল্প এঁকে ফেসবুকে পোস্ট দেবে বলে কাশবনে গিয়েছিলে- খুঁজেছিলে কি রাসেল ভাইপারও?
এদিকে বাংলার রক্তনদী সব আল্পনা আঁকবে বলে কাশের তুলিকে রক্তরঙে রাঙিয়ে নিলো;
‘জুলাই গণপরিসর’ রক্তবীজ রুয়ে রুয়ে ছত্রিশে জুলাই এসে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো- রক্তবীজ জন্ম দিক হৃদয়ের রক্তনদীপাড়ে লাল কাশ-হৃদয়ে তোমার রক্তনদী কই?
যারা রক্তবীজ রুয়ে গেছে রাষ্ট্রজুড়ে, রক্তরং কাশ দ্রোহ নদীটির পাড় থেকে এসে- গণভবনের ছবিকল্প পালটায়ে ফেলে গণপরিসরে!
কাশফুল সুখ
রকিবুল হাসান
যৌবনা দুপুরে দুহাত বাড়িয়ে তুমি চেয়েছো আকাশ
আকাশ তখন এসেছে নেমে যে দূরের পাল্কিতে,
শুভ্রতায় মেঘবতী নারী-দুহাত ছড়িয়ে
দাঁড়ালে মুগ্ধতা বুকে- কারো প্রেমে হৃদয় যে ধ্যানরত।
একেবারে সাদা ধবধবে শাড়িতে দারুণ শরৎ নারী
নিশ^াসে মেখেছ নিশ^াসের ঘ্রাণ
শীতল হৃদয়ে হৃদয় মেখে ভেসেছ যে নিজেই
দুচোখের গহিনে প্রচ্ছদ এঁকে কবিতার রূপশ্রী রমণী।
দুহাত বাড়িয়ে তুমি কোনো এক প্রিয় মুখ বুকে করে
বুকেতে বেঁধেছ শীতলপরশ মিহিন চুম্বনে কাশফুল সুখ।
কাশফুলের খই
শেলী সেনগুপ্তা
মেয়েটি জানতে চেয়েছিলো
কাশফুল পুরুষ নাকি নারী?
উওর শোনার আগেই
ওরা হেসে গড়িয়ে পড়লো,
ছেলেটির মনে ফেনিয়ে উঠলো
‘কাশফুলের ধর্ম কী?’
উওর জানতে গেলো-
মালতি নামের মেয়েটিকে
কাশবনের পাশে রেখে
শাঁখের শব্দ আর আজানের ধ্বনি
গায়ে মেখে
ফিরে আসা ছেলেটি দেখলো
কাশবনের পাশে
পোড়া বুদ্ধের হাত ধরে
ভুলুণ্ঠিত ক্রুশবিদ্ধ মালতি
এই শরতে
কাশফুল যেন খই হয়ে ফুটে আছে...
শরতের সম্প্রসারণ
আশরাফুল কবীর
যায় সময় চলে যায় আশ্বিনের প্রশস্তিতে।
ভাদ্রের পৌরোহিত্যে ধানক্ষেত আলোকিত করে
বসে থাকে কিছু আক্ষেপ প্রোটোজোয়ার মতো।
শরতের এপাশে তুমি জমা করে নিয়ে অনেক কথা;
ওপাশে আমি, অকারণ ঘোরাঘুরি এক বরচন্দন
আক্ষেপ সে-তো ছিল, আছে, থাকবে চিরকাল তার
কিয়ৎ ইচ্ছেমতোন।
এ দীপমালা রাতে
কোথায় তুমি পদ্মাবতী-পদ্মপলাশলোচন?
সময় যে বয়ে যায়, এখন পুরুষ্টু হওয়ার মরসুম!
সরব হয়ে উঠুক অবারিত বন্দর দীপ্ত পাল তুলে
কিছুটা আলাপসালাপ, কিছুটা বাড়াবাড়ি
স্তিমিত শাওনের কীর্তন ভুলে-
ধীরানদী
জাফর সাদেক
বৃষ্টির রেশ ছুঁয়ে অধোমুখী নির্জন আকাশ
কাশবনের অন্ধকারে কার কণ্ঠে নিষিক্ত হবার গান
তুমি কি নির্জনতার স্তরে স্তরে অপেক্ষমাণ কেউ
বলেছিলে, প্রাপ্তির রেখায় অধরা কিছু নেই
শাড়িভাঁজ কখনও আলিবাবার গুপ্ত ক্যানভাস
শরৎ মেঘের এসরাজে রোদের আঙুল
সেই কণ্ঠস্বর আরও নিঝুম হয়ে চুপসুখী অধর এগিয়ে বলে-
তলমন্ত্র জানা থাকলে খোলে বিগত বর্ষার না-খোলা দুয়ার
আর, নদীমুখে বিভ্রান্তি যেন শুভ্র মেঘের নৈঃশব্দ্যের খিল
কান পাতি, শরৎ বন্দনায় সুর তুলছে শত অশ্বের তেজ
মেঘের দেয়াল ভেঙে ছুটে আসছে আলিবাবা ও চল্লিশ চোর
ধীরতালের নদীতে নেমেছে পুরো ভদ্রা-আকাশ
মুগ্ধতায় ঘামছে ডাকাত সর্দার- ধীরানদী ভুল দুয়ার নয়
বরং সর্দার ভুলভাল মন্ত্রের যন্ত্রণায়
মধু পূর্ণিমায়
নিজাম বিশ্বাস
তুমি চাঁদ দেখে দেখে যাও,
যেদিকে জোছনা যায়
ঝলমলিয়া নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে
ভেসে ভেসে,
তোমার চোখের সীমা যতোদূর
যতো নটিক্যাল দূর যায়-
এমন জোছনা কতকাল পর
চৌরাশিয়ার বাঁশির মতন
বিরহী রাত্রি ডেকে এনেছে-
ক্রমশ হারিয়ে যেতে যেতে
ফিরে ফিরে আসছ আমার কাছে,
তুমি যতো দূর যাও
ততো কাছে আসো আমার
কৃষ্ণ কৃষ্ণ প্রেম
চঞ্চল শাহরিয়ার
শরতের আকাশজুড়ে রোজ আফসানার অভিমান। সে অভিমান বৃষ্টি হয়ে ঝরে। তারপর কাশবনে হেসে কুটিকুটি হয় বিনোদিনী রাই। গোলকধাঁধায় পড়ে আমি পথটা হারাই। কুঞ্জবনে যাওয়ার পথ।