alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

ছুটি এসে
কুমার দীপ
ছুটি এলো

এখানেও ছুটি এলো তবে।

গলির মোড়ের চায়ের দোকানে

লোকটা চা বানাতো

দিন নেই, রাত নেই-

‘সালাম ভাই, চা দাও’- বললেই হলো

লাল চা, দুধ চা, আদা চা, চিনি ছাড়া চা...

যার যেমন চাই-

ঈদ-পূজার ছুটিতে মানুষ মহল্লা ছেড়ে যায়

বাসাবদলের কারণে মানুষ মহল্লা ছাড়ে

বদলিতে-বিদায়েও মহল্লা ছাড়ে কেউ কেউ

কিন্তু সালাম ভাইয়ের মহল্লা ছাড়ার কোনো উপায় নেই...

জিজ্ঞেস করলেই-

ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিতে দিতে

একগাল হেসে বলেন- ‘সবার কি আর ছুটি থাকে রে ভাই!’

আজ যখন খুব চায়ের তেষ্টায়

গলির মোড়ে এসে দাঁড়ালাম-

সালাম ভাই নেই।

কে একজন জানালো-

‘সালাম ভাই এই মহল্লা ছেড়ে চলে গেছে।’

ছুটি এসে

হাত ধরে নিয়ে গেছে তারে

একেবারে।

নন্দ। নন্দানুসার
সিদ্দিক বকর
আধার ও আধেয়।

মগজগুলো পাহাড়- অস্তিত্বে তেজ বা অগ্নি

ভেতরে ইন্দ্র- গুপ্ত নাকি প্রকাশিত হব

আমি দ্বিধা- মিত্র ও বরুণ

একজোড়া পরিপূরক- আমার ভেতর সক্রিয়

আমি পাহাড়- এক ও বহুধাভক্ত- ওঁ-কার

চূড়া অবধি খাড়া

ধেয়ে বেয়ে নন্দা

শিশুর লুকোচুরি

চাষীর ফলনগীতি

মায়ের প্রসবধারা

সবপর আমি যে পাহাড় ও নন্দের দেউল

তার ভেতর হর্ষাশ্রু- রোদবৃষ্টিঝরাচিঠি

সাদাকালা মেঘপিওন

অ আ প ও ন দিয়ে

বানাচ্ছে

দু’পাহাড় চোয়ানি

ঐদিন বৈঠক- ধাবমান

বিবৃত সত্তাটি দৌড়

থেমে থেমে রোদবৃষ্টিগড়াগড়ি

অস্তিত্ব দৃশ্যের মধ্য- আনন্দ

গুঞ্জন
বিনয় বর্মন
গোধূলি মিলিয়ে যায় বিষাদরেখায়

বালিতটে এক ঝাঁক লাল কাঁকড়া

অদূরে ঢেউয়ের কল্লোল

বসেছে সভা নবাগত নেতার সম্মানে

ইনিয়েবিনিয়ে কী নিয়ে কথা বলছে ওরা?

কথা কথা আর কথা

সুকথা কুকথা আত্মকথা পরকথা

বিজয় আর বিপ্লবের কথা

কথার কাঁথা বোনা শেষ হলে

তা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে শামুকশিশুরা

স্বপ্নের ভেতর গুঞ্জন শোনা যায়

গুঞ্জন বাড়তে বাড়তে মহাবিস্ফোরণ

উড্ডয়ন সাধ জাগে কাঁকড়ার মনে

নেতা কোথায় নেতা কোথায়?

নেতার বসন ভাসে কালো শেওলায়।

বিকেন্দ্রিক
ফারুখ সিদ্ধার্থ
আমি সেই রাজ্যের রাজা

তুমি যার নতুন রাজধানী

তোমাকে কেন্দ্র করেই

আমার এ-বিকেন্দ্রিকরণ

তুমি কেন্দ্রবিন্দু

আমি বিকেন্দ্রিক

পৃথিবী লিখে রাখুক মায়ের আয়ু
রিক্তা রিচি
মায়ের সাদা চুল

আলতো আঘাতে বুকে মোচড় দেওয়ার অনুভূতি জাগায়।

পৌষের কুয়াশা ঝরা সকাল শেষে দুধ-কুসুম রোদ লুকোচুরি করে আর বলে

তাঁর বয়স বাড়ছে। এক পা, দুই পা করে আগাচ্ছে কোনো এক অনির্দিষ্ট ঠিকানার দিকে।

ভয়ের শকুনেরা আমায় জাপটে ধরে

শতাব্দীর সব ভার কাঁধে ভর করে

মনে হয় তাঁর আঁচল জুড়ে গিট বেঁধে থাকি, যেমন চাবিরা থাকে।

দিনের নামতাঘরে সরলরেখা আঁকতে আকতে রোজ কাটাকুটি খেলা খেলি।

পৃথিবীর কত্ত কত্ত হিসেব, অথচ সেসব দর কষাকষি, মাপজোখ ভালো লাগে না।

আমি কেবল পৃথিবীর পথে পথে লিখে যেতে চাই মায়ের আয়ু।

আমার মা- খুব সরল, ভীষণ সাধারণ

তার চোখ যেন নান্দনিক সরলকাব্য।

কাঁথার ফোড়ে ফোড়ে যে মমতা তিনি লিখে রাখেন

সেভাবে পৃথিবী লিখে রাখুক তাঁকে।

সবার বয়স বাড়–ক

দিন গিয়ে মিলুক সন্ধ্যার কোলে

বয়সী বট অপরাহ্ণে নুয়ে পড়ুক অজানায়

কেবল মায়েদের বয়স না বাড়ুক। না বাড়–ক।

পাতার দুঃখ
শারমিন সুলতানা রীনা
এলোমেলো বাতাসে একটা একটা করে

ডাল থেকে খসে পড়ে পাতা

নিয়মের শৃঙ্খলে বন্দি পাতার জীবন

প্রভাত শিশিরে সিক্ত হতে হতে

রোদের প্রতাপে পাতার করুণ বিনাশ

ধুলোর আস্তরণে মিশে যায় পাতা

সোঁদা মাটি বুকে ধারণ করে

মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে শব্দের কাছে

আর্তনাদে বলে যায় ক্ষণস্থায়ী জীবনের গল্প

শব্দের ঘুম ভাঙলে যেন তাদের কথা বলে

অতঃপর কোনো কবির অনুভূতির স্পর্শে

শব্দেরা জেগে ওঠে অনাদিকালের ঘুম ভেঙে

কবি লেখেন শব্দের ব্যাঞ্জনায়

পাতাদের ক্ষণিক জীবনের অপ্রকাশিত গল্প

যে সবুজ বিবর্ণ হয় ধূসর হলুদে

নিভৃতে কাঁদে শব্দ

গাছ ও পাতাদের দুঃখবোধের গল্প হয়ে।

নিষিদ্ধ আগ্রহ
মোস্তাফিজুল হক
পত্রহীন হয়ে বেঁচে থাকা মৃতের সমান,

এই মৃত্যু হয়ে যায় নিষিদ্ধ আগ্রহ থেকে...

মধুরতম বায়ুর বান খসায় অজ¯্র পাতা;

জন্ম হয় অজ¯্র ঘৃণার-

আচানক ন্যাড়া হয় মায়াবী অশ্বত্থ!

এতসব দেখে নিয়ে হারায় বাতাস;

ঘৃণার করাত রেখে যায় নির্বিকার বোধে।

বৃক্ষের নীরব আর্তনাদ:

‘ক্ষমা করো প্রভু, ক্ষমা করো!

উলঙ্গ দেহের বস্ত্র চাই-

ক্ষমা করো প্রভু, ক্ষমা করো!

কেন যে এমন ভুল মেনে নিলো মন;

কেন যে কা-ের বোঁটা সব খসে গেল!’

সবশেষে বৃক্ষ ভাবে: ‘কী যে শুষ্ক দেহ;

শুধু পুড়ে যেতে বাকি!

হে ন্যাংটো বাতাস, তুমিই তো উলঙ্গ বানালে!

তবু সেই তুমি কি না প্রশ্ন রেখে গেলে-

ভিন্নতার বোধে হারিয়েছি সব!

সুরের অতিথি তুমি উল্লসিত বায়ু,

এমন প্রবাহ এনে ছড়িয়ে দিও না কোনো ডালে

ঝরিয়ে নিও না তুমি বৃক্ষের সমস্ত পাতা;

ঘৃণার খেলায় মেতে আড়ালে যেও না তুমি!

যুগল প্রেমের ফ্যানটাসি
কুসুম তাহেরা
এভাবেই এতো রোদ!

তির্যক আলোক রশ্মি!

ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন পরমাণু নিয়ে আমি নক্ষত্র থেকে

ছিটকে পড়ছি ভালোবাসার আদিম ইন্দ্রজালে!

শরীরের মাঝে অবরুদ্ধ করেছি তোমার শুক্রানুর গতিপথ!

ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো!

তাকিয়ে দেখ, তোমার রেটিনায় এসে বসে থাকবে

আদিম পৃথিবীর উন্মুক্ত কটিদেশ!

সমৃদ্ধ জীবন মেট্রিক্স!

কোরান, পুরাণ, বেদ বা বাইবেল খোঁজো?

আমার হৃদয়ের সিম্ফনিতে হাত দাও, টের পাচ্ছো!

নীল হয়ে জমে আছে প্রেমের সিম্ফনি!

কণা আর তরঙ্গ যেমন একই সত্তা,

তোমার জন্য আমার জন্ম, মৃত্যু একই!

তোমার জন্য আমার যাবতীয় এপার ওপার!

সুখের জন্য সৃষ্টি হওয়া আমার অবাধ্য শরীর!

পৃথিবী বিক্রি করে মিথ্যে যত খোয়াব,

আর কিছু খুচরো কিছু অলীক

পৃথিবী দেহ ও মনের ওয়েব ফাংশনে তোমাকে

অবরুদ্ধ করছে আমার ম্যাগনেটিক ডোপামিন!

তোমার আলতো ইশারায়, বদলে যায় অবুঝ বাতাস

রাতের নিঝুম আকাশে জ্বলে ওঠে

বিকেলবেলার আশ্চর্য আলো!

তুমি পাশে থাকলে মহাবিশ্ব এক থার্মো নিউক্লিয়ার ছাই

চাইলেই ফুঁ দিতে তুমি ভুলে যাও বাস্তব আর অবাস্তব!

তবু থেকে যায় আলো

আদিম শুক্রাণুর মেলা

ঘাসের উপর দু-পা ছড়িয়ে থাকা

লাল টুকটুকে ফুল

তুমি খোঁপায় গুঁজে দাও গুচ্ছ গুচ্ছ অর্গাজম স্বপ্ন!

যেমন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হলেই ঝরে পড়ে তারা

যারা অতীতে হেঁটেছিল এই পৃথিবীর ইতিহাসে?

ছবি

দাউদ হায়দার: স্বকীয় ও নির্বাসিত

ছবি

অটোগ্রাফ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি : একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

আলবেয়ার কামুর গল্পে অস্তিত্বের নিষ্ঠুরতা

ছবি

উপন্যাসের জন্মবীক্ষা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কানাগলি

ছবি

পার্ল এস বাক-এর কবিতা

ছবি

হোসে এচেগারাই স্প্যানিশ আলোকবর্তিকা

ছবি

নববীণায় বাজে নতুনের জয়গান

ছবি

রবীন্দ্রনাথের ‘করুণা’ ঘিরে কিছু কথা

ছবি

গীতাঞ্জলির ইতিবৃত্ত ও বেদনাহত রবীন্দ্রনাথ

ছবি

রবীন্দ্রনাথ, শিলাইদহ ও ‘ছিন্নপত্র’

ছবি

নিউ নেদারল্যান্ডস: জার্র্সি এবং লেনাপি জনগোষ্ঠী

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বকুলীর সেইরাত

ছবি

আকাশের প্রান্ত

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

মুখ

ছবি

বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি

ছবি

অগ্রজ দাউদ হায়দারের মহাপ্রয়াণ

ছবি

নারী যখন পাঠক নারী যখন লেখক

সাময়িকী কবিতা

মিত্র

ছবি

মৃত্যুর মৃদু উত্তাপ : পথের শেষ কোথায়

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বেলাল চৌধুরীর কবিতা

ছবি

পাঠের আগ্রহ থাকলে বইয়ের অভাব হয় না

ছবি

রবীন্দ্রগানে শঙ্খ ঘোষের মন

ছবি

ফার্স্ট টিউসডে’স : আমার প্রথম মঙ্গলবার সন্ধ্যার গন্তব্য

ছবি

আজ লাবণ্যর বিয়ে

ছবি

সংস্কৃতির পরম্পরা, অভিঘাত-অভিজ্ঞান ইতিহাস বিচার-বিশ্লেষণ

ছবি

তুষার গায়েন-এর কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

ছুটি এসে
কুমার দীপ
ছুটি এলো

এখানেও ছুটি এলো তবে।

গলির মোড়ের চায়ের দোকানে

লোকটা চা বানাতো

দিন নেই, রাত নেই-

‘সালাম ভাই, চা দাও’- বললেই হলো

লাল চা, দুধ চা, আদা চা, চিনি ছাড়া চা...

যার যেমন চাই-

ঈদ-পূজার ছুটিতে মানুষ মহল্লা ছেড়ে যায়

বাসাবদলের কারণে মানুষ মহল্লা ছাড়ে

বদলিতে-বিদায়েও মহল্লা ছাড়ে কেউ কেউ

কিন্তু সালাম ভাইয়ের মহল্লা ছাড়ার কোনো উপায় নেই...

জিজ্ঞেস করলেই-

ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিতে দিতে

একগাল হেসে বলেন- ‘সবার কি আর ছুটি থাকে রে ভাই!’

আজ যখন খুব চায়ের তেষ্টায়

গলির মোড়ে এসে দাঁড়ালাম-

সালাম ভাই নেই।

কে একজন জানালো-

‘সালাম ভাই এই মহল্লা ছেড়ে চলে গেছে।’

ছুটি এসে

হাত ধরে নিয়ে গেছে তারে

একেবারে।

নন্দ। নন্দানুসার
সিদ্দিক বকর
আধার ও আধেয়।

মগজগুলো পাহাড়- অস্তিত্বে তেজ বা অগ্নি

ভেতরে ইন্দ্র- গুপ্ত নাকি প্রকাশিত হব

আমি দ্বিধা- মিত্র ও বরুণ

একজোড়া পরিপূরক- আমার ভেতর সক্রিয়

আমি পাহাড়- এক ও বহুধাভক্ত- ওঁ-কার

চূড়া অবধি খাড়া

ধেয়ে বেয়ে নন্দা

শিশুর লুকোচুরি

চাষীর ফলনগীতি

মায়ের প্রসবধারা

সবপর আমি যে পাহাড় ও নন্দের দেউল

তার ভেতর হর্ষাশ্রু- রোদবৃষ্টিঝরাচিঠি

সাদাকালা মেঘপিওন

অ আ প ও ন দিয়ে

বানাচ্ছে

দু’পাহাড় চোয়ানি

ঐদিন বৈঠক- ধাবমান

বিবৃত সত্তাটি দৌড়

থেমে থেমে রোদবৃষ্টিগড়াগড়ি

অস্তিত্ব দৃশ্যের মধ্য- আনন্দ

গুঞ্জন
বিনয় বর্মন
গোধূলি মিলিয়ে যায় বিষাদরেখায়

বালিতটে এক ঝাঁক লাল কাঁকড়া

অদূরে ঢেউয়ের কল্লোল

বসেছে সভা নবাগত নেতার সম্মানে

ইনিয়েবিনিয়ে কী নিয়ে কথা বলছে ওরা?

কথা কথা আর কথা

সুকথা কুকথা আত্মকথা পরকথা

বিজয় আর বিপ্লবের কথা

কথার কাঁথা বোনা শেষ হলে

তা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে শামুকশিশুরা

স্বপ্নের ভেতর গুঞ্জন শোনা যায়

গুঞ্জন বাড়তে বাড়তে মহাবিস্ফোরণ

উড্ডয়ন সাধ জাগে কাঁকড়ার মনে

নেতা কোথায় নেতা কোথায়?

নেতার বসন ভাসে কালো শেওলায়।

বিকেন্দ্রিক
ফারুখ সিদ্ধার্থ
আমি সেই রাজ্যের রাজা

তুমি যার নতুন রাজধানী

তোমাকে কেন্দ্র করেই

আমার এ-বিকেন্দ্রিকরণ

তুমি কেন্দ্রবিন্দু

আমি বিকেন্দ্রিক

পৃথিবী লিখে রাখুক মায়ের আয়ু
রিক্তা রিচি
মায়ের সাদা চুল

আলতো আঘাতে বুকে মোচড় দেওয়ার অনুভূতি জাগায়।

পৌষের কুয়াশা ঝরা সকাল শেষে দুধ-কুসুম রোদ লুকোচুরি করে আর বলে

তাঁর বয়স বাড়ছে। এক পা, দুই পা করে আগাচ্ছে কোনো এক অনির্দিষ্ট ঠিকানার দিকে।

ভয়ের শকুনেরা আমায় জাপটে ধরে

শতাব্দীর সব ভার কাঁধে ভর করে

মনে হয় তাঁর আঁচল জুড়ে গিট বেঁধে থাকি, যেমন চাবিরা থাকে।

দিনের নামতাঘরে সরলরেখা আঁকতে আকতে রোজ কাটাকুটি খেলা খেলি।

পৃথিবীর কত্ত কত্ত হিসেব, অথচ সেসব দর কষাকষি, মাপজোখ ভালো লাগে না।

আমি কেবল পৃথিবীর পথে পথে লিখে যেতে চাই মায়ের আয়ু।

আমার মা- খুব সরল, ভীষণ সাধারণ

তার চোখ যেন নান্দনিক সরলকাব্য।

কাঁথার ফোড়ে ফোড়ে যে মমতা তিনি লিখে রাখেন

সেভাবে পৃথিবী লিখে রাখুক তাঁকে।

সবার বয়স বাড়–ক

দিন গিয়ে মিলুক সন্ধ্যার কোলে

বয়সী বট অপরাহ্ণে নুয়ে পড়ুক অজানায়

কেবল মায়েদের বয়স না বাড়ুক। না বাড়–ক।

পাতার দুঃখ
শারমিন সুলতানা রীনা
এলোমেলো বাতাসে একটা একটা করে

ডাল থেকে খসে পড়ে পাতা

নিয়মের শৃঙ্খলে বন্দি পাতার জীবন

প্রভাত শিশিরে সিক্ত হতে হতে

রোদের প্রতাপে পাতার করুণ বিনাশ

ধুলোর আস্তরণে মিশে যায় পাতা

সোঁদা মাটি বুকে ধারণ করে

মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে শব্দের কাছে

আর্তনাদে বলে যায় ক্ষণস্থায়ী জীবনের গল্প

শব্দের ঘুম ভাঙলে যেন তাদের কথা বলে

অতঃপর কোনো কবির অনুভূতির স্পর্শে

শব্দেরা জেগে ওঠে অনাদিকালের ঘুম ভেঙে

কবি লেখেন শব্দের ব্যাঞ্জনায়

পাতাদের ক্ষণিক জীবনের অপ্রকাশিত গল্প

যে সবুজ বিবর্ণ হয় ধূসর হলুদে

নিভৃতে কাঁদে শব্দ

গাছ ও পাতাদের দুঃখবোধের গল্প হয়ে।

নিষিদ্ধ আগ্রহ
মোস্তাফিজুল হক
পত্রহীন হয়ে বেঁচে থাকা মৃতের সমান,

এই মৃত্যু হয়ে যায় নিষিদ্ধ আগ্রহ থেকে...

মধুরতম বায়ুর বান খসায় অজ¯্র পাতা;

জন্ম হয় অজ¯্র ঘৃণার-

আচানক ন্যাড়া হয় মায়াবী অশ্বত্থ!

এতসব দেখে নিয়ে হারায় বাতাস;

ঘৃণার করাত রেখে যায় নির্বিকার বোধে।

বৃক্ষের নীরব আর্তনাদ:

‘ক্ষমা করো প্রভু, ক্ষমা করো!

উলঙ্গ দেহের বস্ত্র চাই-

ক্ষমা করো প্রভু, ক্ষমা করো!

কেন যে এমন ভুল মেনে নিলো মন;

কেন যে কা-ের বোঁটা সব খসে গেল!’

সবশেষে বৃক্ষ ভাবে: ‘কী যে শুষ্ক দেহ;

শুধু পুড়ে যেতে বাকি!

হে ন্যাংটো বাতাস, তুমিই তো উলঙ্গ বানালে!

তবু সেই তুমি কি না প্রশ্ন রেখে গেলে-

ভিন্নতার বোধে হারিয়েছি সব!

সুরের অতিথি তুমি উল্লসিত বায়ু,

এমন প্রবাহ এনে ছড়িয়ে দিও না কোনো ডালে

ঝরিয়ে নিও না তুমি বৃক্ষের সমস্ত পাতা;

ঘৃণার খেলায় মেতে আড়ালে যেও না তুমি!

যুগল প্রেমের ফ্যানটাসি
কুসুম তাহেরা
এভাবেই এতো রোদ!

তির্যক আলোক রশ্মি!

ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন পরমাণু নিয়ে আমি নক্ষত্র থেকে

ছিটকে পড়ছি ভালোবাসার আদিম ইন্দ্রজালে!

শরীরের মাঝে অবরুদ্ধ করেছি তোমার শুক্রানুর গতিপথ!

ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো!

তাকিয়ে দেখ, তোমার রেটিনায় এসে বসে থাকবে

আদিম পৃথিবীর উন্মুক্ত কটিদেশ!

সমৃদ্ধ জীবন মেট্রিক্স!

কোরান, পুরাণ, বেদ বা বাইবেল খোঁজো?

আমার হৃদয়ের সিম্ফনিতে হাত দাও, টের পাচ্ছো!

নীল হয়ে জমে আছে প্রেমের সিম্ফনি!

কণা আর তরঙ্গ যেমন একই সত্তা,

তোমার জন্য আমার জন্ম, মৃত্যু একই!

তোমার জন্য আমার যাবতীয় এপার ওপার!

সুখের জন্য সৃষ্টি হওয়া আমার অবাধ্য শরীর!

পৃথিবী বিক্রি করে মিথ্যে যত খোয়াব,

আর কিছু খুচরো কিছু অলীক

পৃথিবী দেহ ও মনের ওয়েব ফাংশনে তোমাকে

অবরুদ্ধ করছে আমার ম্যাগনেটিক ডোপামিন!

তোমার আলতো ইশারায়, বদলে যায় অবুঝ বাতাস

রাতের নিঝুম আকাশে জ্বলে ওঠে

বিকেলবেলার আশ্চর্য আলো!

তুমি পাশে থাকলে মহাবিশ্ব এক থার্মো নিউক্লিয়ার ছাই

চাইলেই ফুঁ দিতে তুমি ভুলে যাও বাস্তব আর অবাস্তব!

তবু থেকে যায় আলো

আদিম শুক্রাণুর মেলা

ঘাসের উপর দু-পা ছড়িয়ে থাকা

লাল টুকটুকে ফুল

তুমি খোঁপায় গুঁজে দাও গুচ্ছ গুচ্ছ অর্গাজম স্বপ্ন!

যেমন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হলেই ঝরে পড়ে তারা

যারা অতীতে হেঁটেছিল এই পৃথিবীর ইতিহাসে?

back to top