alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

নাবিক নজরুল
যাকিয়া সুমি সেতু
আনাতোলিয়া থেকে নদীপথে যেন প্রেরণা নজরুল

তুর্কি, ইরানি, আরব, বাঙালির আবেগের পাহাড়

নদীর স্রোতে তিনি গড়ে তোলেন এক নতুন বাংলা-

যেখানে নারীর মুখে উঠে আসে স্বাধীনতার আলো,

ধর্মে সহনশীলতার স্পর্শ, বিভাজনে কাব্যের জোয়ার

এইভাবে নজরুল নদী দেশের সাংস্কৃতিক নাবিক,

যিনি আজও ইউরেশিয়ার নদীপথ বহমান ইতিহাস,

চেতনা ও দ্রোহকে বাংলার বুকে সঞ্চারিত করেন

চেতনায় প্লাবিত হয় বিপ্লব- তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক

এই বিপ্লব টাইগ্রিসের কূলে জাগ্রত চেতনার প্রতিধ্বনি,

ঢেউ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পারস্যের জয়তুন নদী, সিন্ধুর তীর,

গঙ্গা-পদ্মার মোহনা হয়ে বাংলার বুকে এসে আছড়ে পড়ে

ইউফ্রেটিস যেমন তুরস্কের প্রাচীন সভ্যতার নবীনজল

নজরুল কাব্যজলও ভিজে যায় আতাতুর্কীয় ভাবধারায়

পদ্মা যমুনা মেঘনা কর্ণফুলী গোমতী লোনার ¯্রােতে মিশে

হৃদয়ে জন্ম নেয় এক তুর্কি-প্রভাবিত বাঙালি রেনেসাঁ

যা কেবল ইসলামি ঐতিহ্যের পুনরাবিষ্কার নয়,

বিশ্বজনীন মানবতাবোধের বিদ্রোহের জোয়ার

এভাবেই আত্মচেতনার জলধারা ছুঁয়ে যায় নজরুল

বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে থাকে চিরকালের কবি বিদ্রোহী

যিনি আগুন ও জল মিলিয়ে গড়েন নতুন সভ্যতা

রাষ্ট্রদর্শন, আত্মমর্যাদা ও অসাম্প্রদায়িকতার অববাহিকা...

দুটি কবিতা
মণিপদ্ম দত্ত
চিঠির উত্তরে

চিঠি তো পেয়েছি আমি।

কী ভীষণ জটিল জ্যামিতি তোমার অক্ষরে

অনঙ্গ অস্পষ্ট কররেখা

অথচ তুমি তো ততো জটিল নও

যতোটা দেখেছি ঝরোখায়

না, তার চেয়ে ভিতরে নাওনি আমাকে

প্রতœচিহ্ন সম্বলিত অজ্ঞেয় জ্যামিতি

আরো গাঢ় দাসত্বে বাঁধে

উত্তরে যে কী লিখি এখন!

তোমারই প্রকোষ্ঠে থাক আমার যাপন।

সেল্ফি

কতো যে তুলেছি ছবি

বিভিন্ন বিভঙ্গে আমার

প্রতিবার দেখি

ভাবি এটা ঠিক কার

খানিকটা আমারই মতো

সত্যি কি আমার?

আরও তুলি, নিয়মিত

কোনোবারই সংশয় কাটে না

তবুও তোলার নেশা,

অযথা যন্ত্রণা

অর্ধভুক্ত আপেলে ঘোরে

কবে যে আমার আমি

ফুটে উঠবে ক্যামেরা অক্ষরে!

সোনালি ডানার শব্দ
হাবিবা রোজী
সোনালি ডানার শব্দগুলো উড়তে দাও

প্রকৃতির জলোবাতাসে,

শব্দগুলো ডানা ভেঙে পড়ে যাওয়ার আগে

উড়তে দাও পাখিদের নীল আকাশে,

কলম হোক অর্ফিয়ুস, কৃষ্ণের বাঁশরি,

মানুষে মানুষে প্রেম হোক কলমের আঁচড়ে।

ভাবগুলো মুছে যাওয়ার আগে কলমের লাঙল

চালিয়ে, অধিকারের শস্য ফলাও

পৃথিবীর রূঢ় হৃদয়ে।

চা-শ্রমিক, ধান-শ্রমিক,বস্ত্র-শ্রমিকের রক্তজবার মতো

আরক্ত জীবনের কথাগুলো কলমের কালো

আঁকিবুঁকিতে এঁকে যাও, কালের পৃষ্ঠায়।

কাজ নাই-বা হোক, আওয়াজ তো হোক,

রক্তচক্ষুকে এড়িয়ে যাও, বাজপাখি চোখ

হাওয়ায় মিলায়, মিলায় সপ্তমাকাশে,

আর তো ফেরে না, ফেরে না মানুষ!

শব্দগুলো ফেরে!ফিরবে মুখে মুখে, শতাব্দীর খাতায়

যেমনটা ফিরছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা,

ফিরছেন কাজী নজরুল ইসলাম,

প্রতিদিন মগজে, মননে, বইয়ের পাতায়।

একাকিত্ব
আদিত্য নজরুল
শোবার ঘরের আয়নাকে হিংসা

করতে করতে

টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যাচ্ছি

আমার সকল

শুভ্রতাই ভেঙে যায়

ইচ্ছে হয়

আয়নার নামে কুৎসা রটাই

দ্যাখো, তুমি যাকে দেখে দেখে

রাতদিন মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছো

সে তোমার ডান হাতকেই

বাম হাত বলে চালিয়ে দিচ্ছে!

হিংসে করতে করতে

বুক ভেঙে যাচ্ছে

তীরে পৌঁছানো ঢেউয়ের অভিনবত্ব নিয়ে!

অপেক্ষায় মেঘহীন আকাশ
আশরাফুল কবীর
আর একফোঁটা জল বেশি ঝরে গেলে

কালবৈশাখী ঝড়ের হয়তো কোনো ক্ষতি হবে না;

কমতি হবে না আমাকে আন্দোলিত করা তুমুল

হাওয়ারও;

অথচ ভেতরে চিরে দেখো- এক বুক কথা নিয়ে

অপেক্ষায় বসে আছে মেঘহীন স্বচ্ছ আকাশ; বাহিরটা

ঠিক যেন আটলান্টার মতো স্কন্ধে নিয়ে বুকে জমাকৃত

সকল যন্ত্রণার ভার;

কী এমন ক্ষতি, যদি-

মনোযোগ না দেয় নুয়েপড়া দূর্বাঘাসের দল,

মনোযোগ না দেয় কোনো চমকিত চাহনি

অবিরল ধারায় যদি ঝরে জল, ঝরঝর

যদি কাঁপে বুক আশংকায় দুরুদুরু তবে

ভেবে নিও, এ হচ্ছে ব্র্যাকেটবন্দী সব চোরকাঁটার

এক অযাচিত সম্মেলন

তাই, প্রয়োজন নেই কোনো ব্লটিং-পেপারের;

মিশে যাক সকল কষ্ট একফোঁটা জলের সাথে

ফোঁটায় ফোঁটায় জমে উঠুক

আরও একটি কষ্ট-সরোবর।

রুবাইগুচ্ছ
রেহমান সিদ্দিক
১০

যুদ্ধের ময়দান-লেগেছে গুলি পায়-রক্ত ঝরছেই বিরামহীন

ডাক্তার কই পাই? ধরেছি চেপে পাও-ফিনকি দেয় তাও-এমন দিন

আশ্রয় পাইলাম-বাড়িতে বুড়ো এক-আর তো কেউ নেই, খবর নেয়

তিরতির পড়ছেই-বেঁধেছি গামছায়, কেমনে সামলাই- ওষুধ দিন

১১

রক্তের অক্ষর- হৃদয়ে কত ফুল, ফুটছে চুপচাপ-ফাগুন মাস

বরকত জব্বার সকালে ঝরে যায়-বৃষ্টি রিমঝিম ভিজায় ঘাস

দিনভর কান্নার প্লাবনে ভাসে বুক, চক্ষু ছলছল বারংবার

ডালময় লাল-লাল পলাশে রাঙা পথ, তুই কি গনগন আগুন চাস?

১২

নির্জন ধানক্ষেত-সকালে সোনারোদ-দুলছে ঝনঝন ধানের শীষ

পক্ষীর হইচই-খুশিতে সারাদিন উড়ছে, চঞ্চুর ডগায় শিস

এই ধান কাটলাম-আহা কী আয়োজন! চলছে ধুমধাম ইঁদুরনাচ

চল্ যাই ঝটপট বাজারে-শাড়ি, দুল, আলতা, পাউডার আমায় দিস

দূরের সে
স্বপন আদিত্য
তার কাছে যেতে যেতে

ফুলে দৃশ্যমান হয় পৃথিবীর

জখমের ভাষা

মন অশ^তরের মতো ছোটে

তবুও তার কাছে যেতে যেতে

পথে খুন হয় ভালোবাসা।

স্মৃতির ফুল
তরুন ইউসুফ
আমি তো এক দিনের ফুল

সকালে ফুটলে সন্ধ্যায় ঝরে যাই

অতটা আয়োজন করে প্রণয়ের সময় নাই

আমার স্পর্শ চাইলে এখনই ছুঁয়ে যাও

আমারও বুকে আছে শিউলির সুবাস

নিতে পারো মূহুর্তের ঘ্রাণ; এখনই নাও

খানিক পরে সন্ধ্যা নামবে হেয়ার রোডের মতো

কোন এক রাস্তার ধারে ঝরে পড়ব সুনসান

যেমন ঝরে ফুল কতশত

তখন তুমি আমার স্মৃতি

তোমার স্মৃতিতে আমার নির্বাণ।

বৃক্ষ কথা
ফারহানা রহমান
বহুদিন আগে ঝরে গেছে

আয়নায় লেখা সেই বৃক্ষ কথা

তোমার স্পর্শের পেলবতা

জাগিয়ে রাখে যে রেশমি চোখের জল,

নিজেকে অচেনা লাগে তার কাছে

আমি যেন নিশি জাগা

কোনো এক অন্ধ মাতাল ময়ূরী

আবারও করছি অপেক্ষা

অন্য একটি দিনের!

নতুন শাড়ির পাটভাঙা

ভাঁজের ভেতর

মিশে যাচ্ছে দ্যাখো

তোমার স্পর্শের তীব্রতা অৎস্র

পীত রঙা স্রোতে...

দৃশ্যপট
বাবুল আনোয়ার
রোদের বহর বুকপকেটে ভরে

কেউ কেউ চলে যায় রাত্রিশেষের আগে

মধ্যবর্তী প্রেম নিয়ে বৈরাগ্য সুখে

ফিরে যায় ক্ষতময় ধূসর রিসোর্টে

সমূলে ডিলিট করে মননের ছবি, নিসঃঙ্গ নদী

ফেরেনি আর হলুদ দুপুরে,ধু ধু বালুচরে

গোসাঁইয়ের ঘাটে বসেনি বসন্তমেলা

সানাইয়ের সুরে এখন সকরুণ স্মৃতি।

ছবি

পিয়াস মজিদের ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’

ছবি

নজরুলের নিবেদিত কবিতা : অর্ঘ্যরে শিল্পরূপ

ছবি

বাঘাডাঙা গাঁও

ছবি

বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’ বিষয়ভাবনা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

পথকবিতা: লোকবাংলার সাধারণ কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

ক্ষমতার ভাষার বিপরীতে মাতৃভাষার সাধনা

ছবি

ফিলিস্তিনের বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে অণুগল্প

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

শিল্পী সুনীল কুমারের ‘পথের গল্প’-এর স্বরূপ

ছবি

রাত গভীর

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

‘এ নয় আঁখিজল’

জ্যৈষ্ঠের পদাবলি

ছবি

ওসামা অ্যালোমারের একঝুড়ি খুদে গল্প

ছবি

‘ব্রহ্মপুত্র দাঁড়াও’ কাব্যগ্রন্থে নীলদ্রোহের রেখাপাত

ছবি

নার্গিস-নজরুলের স্মৃতিধন্য দৌলতপুরে একদিন

ছবি

যেভাবে ভেঙেছিল এক মৌনতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি : একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

নজরুল সাহিত্যে নন্দনতত্ত্বের প্রেক্ষিত

ছবি

স্বাধীনতার কবি নজরুল

ছবি

নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত প্রতিভা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

দাউদ হায়দার: স্বকীয় ও নির্বাসিত

ছবি

অটোগ্রাফ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি : একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

আলবেয়ার কামুর গল্পে অস্তিত্বের নিষ্ঠুরতা

ছবি

উপন্যাসের জন্মবীক্ষা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কানাগলি

ছবি

পার্ল এস বাক-এর কবিতা

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

নাবিক নজরুল
যাকিয়া সুমি সেতু
আনাতোলিয়া থেকে নদীপথে যেন প্রেরণা নজরুল

তুর্কি, ইরানি, আরব, বাঙালির আবেগের পাহাড়

নদীর স্রোতে তিনি গড়ে তোলেন এক নতুন বাংলা-

যেখানে নারীর মুখে উঠে আসে স্বাধীনতার আলো,

ধর্মে সহনশীলতার স্পর্শ, বিভাজনে কাব্যের জোয়ার

এইভাবে নজরুল নদী দেশের সাংস্কৃতিক নাবিক,

যিনি আজও ইউরেশিয়ার নদীপথ বহমান ইতিহাস,

চেতনা ও দ্রোহকে বাংলার বুকে সঞ্চারিত করেন

চেতনায় প্লাবিত হয় বিপ্লব- তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক

এই বিপ্লব টাইগ্রিসের কূলে জাগ্রত চেতনার প্রতিধ্বনি,

ঢেউ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পারস্যের জয়তুন নদী, সিন্ধুর তীর,

গঙ্গা-পদ্মার মোহনা হয়ে বাংলার বুকে এসে আছড়ে পড়ে

ইউফ্রেটিস যেমন তুরস্কের প্রাচীন সভ্যতার নবীনজল

নজরুল কাব্যজলও ভিজে যায় আতাতুর্কীয় ভাবধারায়

পদ্মা যমুনা মেঘনা কর্ণফুলী গোমতী লোনার ¯্রােতে মিশে

হৃদয়ে জন্ম নেয় এক তুর্কি-প্রভাবিত বাঙালি রেনেসাঁ

যা কেবল ইসলামি ঐতিহ্যের পুনরাবিষ্কার নয়,

বিশ্বজনীন মানবতাবোধের বিদ্রোহের জোয়ার

এভাবেই আত্মচেতনার জলধারা ছুঁয়ে যায় নজরুল

বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে থাকে চিরকালের কবি বিদ্রোহী

যিনি আগুন ও জল মিলিয়ে গড়েন নতুন সভ্যতা

রাষ্ট্রদর্শন, আত্মমর্যাদা ও অসাম্প্রদায়িকতার অববাহিকা...

দুটি কবিতা
মণিপদ্ম দত্ত
চিঠির উত্তরে

চিঠি তো পেয়েছি আমি।

কী ভীষণ জটিল জ্যামিতি তোমার অক্ষরে

অনঙ্গ অস্পষ্ট কররেখা

অথচ তুমি তো ততো জটিল নও

যতোটা দেখেছি ঝরোখায়

না, তার চেয়ে ভিতরে নাওনি আমাকে

প্রতœচিহ্ন সম্বলিত অজ্ঞেয় জ্যামিতি

আরো গাঢ় দাসত্বে বাঁধে

উত্তরে যে কী লিখি এখন!

তোমারই প্রকোষ্ঠে থাক আমার যাপন।

সেল্ফি

কতো যে তুলেছি ছবি

বিভিন্ন বিভঙ্গে আমার

প্রতিবার দেখি

ভাবি এটা ঠিক কার

খানিকটা আমারই মতো

সত্যি কি আমার?

আরও তুলি, নিয়মিত

কোনোবারই সংশয় কাটে না

তবুও তোলার নেশা,

অযথা যন্ত্রণা

অর্ধভুক্ত আপেলে ঘোরে

কবে যে আমার আমি

ফুটে উঠবে ক্যামেরা অক্ষরে!

সোনালি ডানার শব্দ
হাবিবা রোজী
সোনালি ডানার শব্দগুলো উড়তে দাও

প্রকৃতির জলোবাতাসে,

শব্দগুলো ডানা ভেঙে পড়ে যাওয়ার আগে

উড়তে দাও পাখিদের নীল আকাশে,

কলম হোক অর্ফিয়ুস, কৃষ্ণের বাঁশরি,

মানুষে মানুষে প্রেম হোক কলমের আঁচড়ে।

ভাবগুলো মুছে যাওয়ার আগে কলমের লাঙল

চালিয়ে, অধিকারের শস্য ফলাও

পৃথিবীর রূঢ় হৃদয়ে।

চা-শ্রমিক, ধান-শ্রমিক,বস্ত্র-শ্রমিকের রক্তজবার মতো

আরক্ত জীবনের কথাগুলো কলমের কালো

আঁকিবুঁকিতে এঁকে যাও, কালের পৃষ্ঠায়।

কাজ নাই-বা হোক, আওয়াজ তো হোক,

রক্তচক্ষুকে এড়িয়ে যাও, বাজপাখি চোখ

হাওয়ায় মিলায়, মিলায় সপ্তমাকাশে,

আর তো ফেরে না, ফেরে না মানুষ!

শব্দগুলো ফেরে!ফিরবে মুখে মুখে, শতাব্দীর খাতায়

যেমনটা ফিরছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা,

ফিরছেন কাজী নজরুল ইসলাম,

প্রতিদিন মগজে, মননে, বইয়ের পাতায়।

একাকিত্ব
আদিত্য নজরুল
শোবার ঘরের আয়নাকে হিংসা

করতে করতে

টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যাচ্ছি

আমার সকল

শুভ্রতাই ভেঙে যায়

ইচ্ছে হয়

আয়নার নামে কুৎসা রটাই

দ্যাখো, তুমি যাকে দেখে দেখে

রাতদিন মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছো

সে তোমার ডান হাতকেই

বাম হাত বলে চালিয়ে দিচ্ছে!

হিংসে করতে করতে

বুক ভেঙে যাচ্ছে

তীরে পৌঁছানো ঢেউয়ের অভিনবত্ব নিয়ে!

অপেক্ষায় মেঘহীন আকাশ
আশরাফুল কবীর
আর একফোঁটা জল বেশি ঝরে গেলে

কালবৈশাখী ঝড়ের হয়তো কোনো ক্ষতি হবে না;

কমতি হবে না আমাকে আন্দোলিত করা তুমুল

হাওয়ারও;

অথচ ভেতরে চিরে দেখো- এক বুক কথা নিয়ে

অপেক্ষায় বসে আছে মেঘহীন স্বচ্ছ আকাশ; বাহিরটা

ঠিক যেন আটলান্টার মতো স্কন্ধে নিয়ে বুকে জমাকৃত

সকল যন্ত্রণার ভার;

কী এমন ক্ষতি, যদি-

মনোযোগ না দেয় নুয়েপড়া দূর্বাঘাসের দল,

মনোযোগ না দেয় কোনো চমকিত চাহনি

অবিরল ধারায় যদি ঝরে জল, ঝরঝর

যদি কাঁপে বুক আশংকায় দুরুদুরু তবে

ভেবে নিও, এ হচ্ছে ব্র্যাকেটবন্দী সব চোরকাঁটার

এক অযাচিত সম্মেলন

তাই, প্রয়োজন নেই কোনো ব্লটিং-পেপারের;

মিশে যাক সকল কষ্ট একফোঁটা জলের সাথে

ফোঁটায় ফোঁটায় জমে উঠুক

আরও একটি কষ্ট-সরোবর।

রুবাইগুচ্ছ
রেহমান সিদ্দিক
১০

যুদ্ধের ময়দান-লেগেছে গুলি পায়-রক্ত ঝরছেই বিরামহীন

ডাক্তার কই পাই? ধরেছি চেপে পাও-ফিনকি দেয় তাও-এমন দিন

আশ্রয় পাইলাম-বাড়িতে বুড়ো এক-আর তো কেউ নেই, খবর নেয়

তিরতির পড়ছেই-বেঁধেছি গামছায়, কেমনে সামলাই- ওষুধ দিন

১১

রক্তের অক্ষর- হৃদয়ে কত ফুল, ফুটছে চুপচাপ-ফাগুন মাস

বরকত জব্বার সকালে ঝরে যায়-বৃষ্টি রিমঝিম ভিজায় ঘাস

দিনভর কান্নার প্লাবনে ভাসে বুক, চক্ষু ছলছল বারংবার

ডালময় লাল-লাল পলাশে রাঙা পথ, তুই কি গনগন আগুন চাস?

১২

নির্জন ধানক্ষেত-সকালে সোনারোদ-দুলছে ঝনঝন ধানের শীষ

পক্ষীর হইচই-খুশিতে সারাদিন উড়ছে, চঞ্চুর ডগায় শিস

এই ধান কাটলাম-আহা কী আয়োজন! চলছে ধুমধাম ইঁদুরনাচ

চল্ যাই ঝটপট বাজারে-শাড়ি, দুল, আলতা, পাউডার আমায় দিস

দূরের সে
স্বপন আদিত্য
তার কাছে যেতে যেতে

ফুলে দৃশ্যমান হয় পৃথিবীর

জখমের ভাষা

মন অশ^তরের মতো ছোটে

তবুও তার কাছে যেতে যেতে

পথে খুন হয় ভালোবাসা।

স্মৃতির ফুল
তরুন ইউসুফ
আমি তো এক দিনের ফুল

সকালে ফুটলে সন্ধ্যায় ঝরে যাই

অতটা আয়োজন করে প্রণয়ের সময় নাই

আমার স্পর্শ চাইলে এখনই ছুঁয়ে যাও

আমারও বুকে আছে শিউলির সুবাস

নিতে পারো মূহুর্তের ঘ্রাণ; এখনই নাও

খানিক পরে সন্ধ্যা নামবে হেয়ার রোডের মতো

কোন এক রাস্তার ধারে ঝরে পড়ব সুনসান

যেমন ঝরে ফুল কতশত

তখন তুমি আমার স্মৃতি

তোমার স্মৃতিতে আমার নির্বাণ।

বৃক্ষ কথা
ফারহানা রহমান
বহুদিন আগে ঝরে গেছে

আয়নায় লেখা সেই বৃক্ষ কথা

তোমার স্পর্শের পেলবতা

জাগিয়ে রাখে যে রেশমি চোখের জল,

নিজেকে অচেনা লাগে তার কাছে

আমি যেন নিশি জাগা

কোনো এক অন্ধ মাতাল ময়ূরী

আবারও করছি অপেক্ষা

অন্য একটি দিনের!

নতুন শাড়ির পাটভাঙা

ভাঁজের ভেতর

মিশে যাচ্ছে দ্যাখো

তোমার স্পর্শের তীব্রতা অৎস্র

পীত রঙা স্রোতে...

দৃশ্যপট
বাবুল আনোয়ার
রোদের বহর বুকপকেটে ভরে

কেউ কেউ চলে যায় রাত্রিশেষের আগে

মধ্যবর্তী প্রেম নিয়ে বৈরাগ্য সুখে

ফিরে যায় ক্ষতময় ধূসর রিসোর্টে

সমূলে ডিলিট করে মননের ছবি, নিসঃঙ্গ নদী

ফেরেনি আর হলুদ দুপুরে,ধু ধু বালুচরে

গোসাঁইয়ের ঘাটে বসেনি বসন্তমেলা

সানাইয়ের সুরে এখন সকরুণ স্মৃতি।

back to top