বাতাসে লালনের আত্মা
কামালউদ্দিন নীলু
(ফরিদা পারভীন স্মরণে)
কুষ্টিয়ার শান্ত নদীর বাঁক থেকে,
একটি মৃদু কণ্ঠস্বর ভেসে উঠলো-
“আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি”।
বাতাসে লালনের আত্মা,
একজন রহস্যময়ের সত্য,
একজন গায়কের প্রার্থনা।
তিনি প্রেমের গান গেয়েছিলেন,
গেয়েছিলেন জাতপাতের বিলুপ্তির গান,
গেয়েছিলেন মানুষের ঐক্যের গান।
“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি”,
তিনি সেই পাখিটিকে ডাকলেন,
যা কেউ দেখতে পায় না।
“আকাশে মিশবে আকাশ
জানা গেল পঞ্চ বেনা।
দেহের আত্মা কর্তা কারে বলি
কোন মোকাম তার কোথা গলি
আওনা যাওনা”।
তোমার গান কখনো ম্লান হনে না।
প্রতিটি বাউল-
প্রতিটি বাতাসের মধ্যে,
তোমার আত্মার সুর-
তাই অচিন পাখি উড়ে যাক,
আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে-
“সেই মহলে লালন কোন জন
তাও লালনের ঠিক হলো না,
খিতি জল বাউ হুতাশনে
যার যার বস্তু সেই সেখানে”।
যাওয়ার কোনো জায়গা নেই
মালেক মুস্তাকিম
মানুষ এক অদৃশ্য দরজা-
ঘুমিয়ে পড়া গলি যার দেয়ালে এঁকে রাখে সিঁড়ি;
হেঁটে যেতে যেতে পথেরা হয়ে ওঠে
বুনো দুপুরের মেন্যু;
ঘুমের অন্তরালে মানুষই ডুবিয়ে রাখে বিহারী চাতাল-
জোছনায় ভর দিয়ে যে চোখ মেলে আছে ডানা
চৌকাঠের ভেজা রোদ খেয়ে গেছে
তার সমান বয়সী অভিমান;
আমাদের আসলে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
যতই যেতে চাই- একটা বন্ধ চৌরাস্তা শরীর এলিয়ে
শুয়ে থাকে পায়ের আঙুলে-
হে মানুষ, তুমি কতদূর যাবে? দৃশ্যের বাইরে- কতদূর?
প্রেমের তরিকা
তরুন ইউসুফ
আমরা সবাই মুরগি
আবার সবাই শেয়াল
প্রেমের তরিকায়
জুলুজুলু চোখে তাকিয়ে থাকি
একে অপরের দিকে
অতঃপর শিয়াল হতে হতে
মুরগি হই-কিংবা
মুরগি হতে হতে শেয়াল।
জার্নাল-সেপ্টেম্বর
আমেনা তাওসিরাত
সেপ্টেম্বর আসলে আমার খুব হাসপাতাল লিখতে ইচ্ছে করে।
দীর্ঘকালীন ছুটিতে সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম।
সেপ্টেম্বর আসলে আমার ব্লু রাল্ফ লরেন ও তার পরিবার লিখতে ইচ্ছে করে।
বিছানাতে সেদিন ওলেন বেড়াল আর ফ্যান্সি ভালুকের মায়া রেখে গিয়েছিলাম।
হাই ডিপেন্ডেন্সি স্যুইট আর সব ফরমাল উৎকণ্ঠা লিখতে ইচ্ছে করে।
দমবন্ধ অভিমানে আমি তো রিসিপ্রোক্যালি হাসতে ভুলে গিয়েছিলাম।
যশোর রোডের সাথে ডায়েরি বদলে পাওয়া স্বদেশ লিখতে ইচ্ছে করে,
খাঁচা ভরা দিন উড়াবো বলে আমিও তো সুদূরে পতাকা খুঁজছিলাম!
ঠাকুরানীর হাসপাতালে আমি কেন গিয়েছিলাম,
কাহিনীতে গহীন করে সেও লিখতে ইচ্ছে করে।
রাণীজন্মের শোধ দিতে নয়,
আমি তো ধানকমলের বীজ ভাঙতে গিয়েছিলাম।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের বুড়ো বাড়িটায় সেদিন আমার অমলধবল মন পড়েছিল,
তাও লিখতে অতীব ইচ্ছে করে।
পাতাকুড়–নির কপিশ রং থলিটার কোণ ধরে হাঁটতে হাঁটতে,
আবাহন আর সম্মোহনে, কত ঋতু বাড়ি চলে গেছে।
শুধু আমার হয়নি ফেরা!
অতিকায় বেলা আর ব্যথাতুর দৈবক্রিয়ায় আমার সেই সব অসুখ লিখতে ইচ্ছে করে।
অভিমান আর আড়বাঁশি ছাড়া সেদিন তো আমি একাই ছিলাম।
চকবন্দি করুণ সন্ধি; প্রসক্ত রাজ, রাজহংসী;
দুষ্টু ঘোড়া, কূটচাল- আমার কি আর মেঘের মতই বইতে ইচ্ছে করে?
কিন্তু পোখরাজ পাবো বলে জাগতিক ছল আমি নাই দেখছিলাম।
দেশ, বাড়ি, অতিক্রম পথ শুধু কথা বলেছিল।
অভাষী মনে কত ডাক আর ঝাঁপতাল ছিলো।
যোগাযোগে বাড়ি নয় বাসা বসেছিল।
মা মানে মিঠে নয়, ঝাঁমর কিছু নীলও।
ছাঁচিকুমড়ো বেটে সর্ষে তেল, ধনে, গুল্মে মাখা মায়া পদ
বা কুচো চিংড়ির বড়া-
এইসব দুপুরবর্তী গন্ধ নয়, আমার বুকের অন্য কোথাও হুহু কাঁদছিল,
আমার তাও লিখতে ইচ্ছে করে।
বাড়ি তোলা ঘি, নারকেলি তেল, আনারস জ্যাম-
এই তিনটে গন্ধে আমার কত সহজ জন্ম কেটে গিয়েছিল।
বাড়িভর্তি প্রার্থনা না থাকলে ফিরে আসা সমীচীন নয়,
তবুও আমি কেন ফিরে এসেছিলাম?
সেপ্টেম্বর আসলে বিজি প্রেস হয়ে
আমার সেইসব প্রশ্ন লিখতে ইচ্ছে করে।
অমূল্য
মাহবুবা ফারুক
ডাকি আয় কতবার মনে মনে ডাকি
বিরহ ছিঁড়ে ফেলে প্রেমে জড়িয়ে থাকি।
কতবার বলি আয় বাঁচি এমন করে
স্রোত যেমন স্রোতের গায়ে জড়িয়ে ধরে।
ব্যর্থ আমি বোঝাতে পারিনি প্রেমের কত মূল্য,
বোঝাতে পারিনি প্রেম এ জীবনে কিসের তুল্য।
রোদ যেমন মেঘের গোপনীয়তা ভেঙ্গে মেশে,
ভালোবেসে কাছাকাছি থাকে দুজনেই ভেসে ভেসে।
কত কী পেয়েছিস আবার ফেলে দিয়েছিস ছুঁড়ে,
জানলি না সবাই ভেসে যায় শুধু প্রেমের তোড়ে।
আয় পাখির মতো প্রেমে কাটাই দিন গাছে গাছে,
ভালোবাসা ছাড়া জীবনে অমূল্য আর কী আছে!
উড়ে গেলে খুঁজবি না, ধরে নিবি গেছে চিরতরে,
গোপনে এসে দেখবো বেঁচে আছিস নতুন করে।
বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাতাসে লালনের আত্মা
কামালউদ্দিন নীলু
(ফরিদা পারভীন স্মরণে)
কুষ্টিয়ার শান্ত নদীর বাঁক থেকে,
একটি মৃদু কণ্ঠস্বর ভেসে উঠলো-
“আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি”।
বাতাসে লালনের আত্মা,
একজন রহস্যময়ের সত্য,
একজন গায়কের প্রার্থনা।
তিনি প্রেমের গান গেয়েছিলেন,
গেয়েছিলেন জাতপাতের বিলুপ্তির গান,
গেয়েছিলেন মানুষের ঐক্যের গান।
“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি”,
তিনি সেই পাখিটিকে ডাকলেন,
যা কেউ দেখতে পায় না।
“আকাশে মিশবে আকাশ
জানা গেল পঞ্চ বেনা।
দেহের আত্মা কর্তা কারে বলি
কোন মোকাম তার কোথা গলি
আওনা যাওনা”।
তোমার গান কখনো ম্লান হনে না।
প্রতিটি বাউল-
প্রতিটি বাতাসের মধ্যে,
তোমার আত্মার সুর-
তাই অচিন পাখি উড়ে যাক,
আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে-
“সেই মহলে লালন কোন জন
তাও লালনের ঠিক হলো না,
খিতি জল বাউ হুতাশনে
যার যার বস্তু সেই সেখানে”।
যাওয়ার কোনো জায়গা নেই
মালেক মুস্তাকিম
মানুষ এক অদৃশ্য দরজা-
ঘুমিয়ে পড়া গলি যার দেয়ালে এঁকে রাখে সিঁড়ি;
হেঁটে যেতে যেতে পথেরা হয়ে ওঠে
বুনো দুপুরের মেন্যু;
ঘুমের অন্তরালে মানুষই ডুবিয়ে রাখে বিহারী চাতাল-
জোছনায় ভর দিয়ে যে চোখ মেলে আছে ডানা
চৌকাঠের ভেজা রোদ খেয়ে গেছে
তার সমান বয়সী অভিমান;
আমাদের আসলে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
যতই যেতে চাই- একটা বন্ধ চৌরাস্তা শরীর এলিয়ে
শুয়ে থাকে পায়ের আঙুলে-
হে মানুষ, তুমি কতদূর যাবে? দৃশ্যের বাইরে- কতদূর?
প্রেমের তরিকা
তরুন ইউসুফ
আমরা সবাই মুরগি
আবার সবাই শেয়াল
প্রেমের তরিকায়
জুলুজুলু চোখে তাকিয়ে থাকি
একে অপরের দিকে
অতঃপর শিয়াল হতে হতে
মুরগি হই-কিংবা
মুরগি হতে হতে শেয়াল।
জার্নাল-সেপ্টেম্বর
আমেনা তাওসিরাত
সেপ্টেম্বর আসলে আমার খুব হাসপাতাল লিখতে ইচ্ছে করে।
দীর্ঘকালীন ছুটিতে সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম।
সেপ্টেম্বর আসলে আমার ব্লু রাল্ফ লরেন ও তার পরিবার লিখতে ইচ্ছে করে।
বিছানাতে সেদিন ওলেন বেড়াল আর ফ্যান্সি ভালুকের মায়া রেখে গিয়েছিলাম।
হাই ডিপেন্ডেন্সি স্যুইট আর সব ফরমাল উৎকণ্ঠা লিখতে ইচ্ছে করে।
দমবন্ধ অভিমানে আমি তো রিসিপ্রোক্যালি হাসতে ভুলে গিয়েছিলাম।
যশোর রোডের সাথে ডায়েরি বদলে পাওয়া স্বদেশ লিখতে ইচ্ছে করে,
খাঁচা ভরা দিন উড়াবো বলে আমিও তো সুদূরে পতাকা খুঁজছিলাম!
ঠাকুরানীর হাসপাতালে আমি কেন গিয়েছিলাম,
কাহিনীতে গহীন করে সেও লিখতে ইচ্ছে করে।
রাণীজন্মের শোধ দিতে নয়,
আমি তো ধানকমলের বীজ ভাঙতে গিয়েছিলাম।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের বুড়ো বাড়িটায় সেদিন আমার অমলধবল মন পড়েছিল,
তাও লিখতে অতীব ইচ্ছে করে।
পাতাকুড়–নির কপিশ রং থলিটার কোণ ধরে হাঁটতে হাঁটতে,
আবাহন আর সম্মোহনে, কত ঋতু বাড়ি চলে গেছে।
শুধু আমার হয়নি ফেরা!
অতিকায় বেলা আর ব্যথাতুর দৈবক্রিয়ায় আমার সেই সব অসুখ লিখতে ইচ্ছে করে।
অভিমান আর আড়বাঁশি ছাড়া সেদিন তো আমি একাই ছিলাম।
চকবন্দি করুণ সন্ধি; প্রসক্ত রাজ, রাজহংসী;
দুষ্টু ঘোড়া, কূটচাল- আমার কি আর মেঘের মতই বইতে ইচ্ছে করে?
কিন্তু পোখরাজ পাবো বলে জাগতিক ছল আমি নাই দেখছিলাম।
দেশ, বাড়ি, অতিক্রম পথ শুধু কথা বলেছিল।
অভাষী মনে কত ডাক আর ঝাঁপতাল ছিলো।
যোগাযোগে বাড়ি নয় বাসা বসেছিল।
মা মানে মিঠে নয়, ঝাঁমর কিছু নীলও।
ছাঁচিকুমড়ো বেটে সর্ষে তেল, ধনে, গুল্মে মাখা মায়া পদ
বা কুচো চিংড়ির বড়া-
এইসব দুপুরবর্তী গন্ধ নয়, আমার বুকের অন্য কোথাও হুহু কাঁদছিল,
আমার তাও লিখতে ইচ্ছে করে।
বাড়ি তোলা ঘি, নারকেলি তেল, আনারস জ্যাম-
এই তিনটে গন্ধে আমার কত সহজ জন্ম কেটে গিয়েছিল।
বাড়িভর্তি প্রার্থনা না থাকলে ফিরে আসা সমীচীন নয়,
তবুও আমি কেন ফিরে এসেছিলাম?
সেপ্টেম্বর আসলে বিজি প্রেস হয়ে
আমার সেইসব প্রশ্ন লিখতে ইচ্ছে করে।
অমূল্য
মাহবুবা ফারুক
ডাকি আয় কতবার মনে মনে ডাকি
বিরহ ছিঁড়ে ফেলে প্রেমে জড়িয়ে থাকি।
কতবার বলি আয় বাঁচি এমন করে
স্রোত যেমন স্রোতের গায়ে জড়িয়ে ধরে।
ব্যর্থ আমি বোঝাতে পারিনি প্রেমের কত মূল্য,
বোঝাতে পারিনি প্রেম এ জীবনে কিসের তুল্য।
রোদ যেমন মেঘের গোপনীয়তা ভেঙ্গে মেশে,
ভালোবেসে কাছাকাছি থাকে দুজনেই ভেসে ভেসে।
কত কী পেয়েছিস আবার ফেলে দিয়েছিস ছুঁড়ে,
জানলি না সবাই ভেসে যায় শুধু প্রেমের তোড়ে।
আয় পাখির মতো প্রেমে কাটাই দিন গাছে গাছে,
ভালোবাসা ছাড়া জীবনে অমূল্য আর কী আছে!
উড়ে গেলে খুঁজবি না, ধরে নিবি গেছে চিরতরে,
গোপনে এসে দেখবো বেঁচে আছিস নতুন করে।