গ্রীষ্মের প্রতিভা
অ্যাসফল্ট চষে-চষে দেখা হলো গ্রীষ্মের প্রতিভা!
রাস্তায়, দোকানে, পার্কে, কুকুরের পিঠে। শীততাপ
ঘর ছাড়া সবাই প্রচণ্ড এলোমেলো। এত রুষ্ট
শহরে আসেনি সন্ধ্যা নির্বাতাস আজকের মতো।
প্রখর অরুচি দেখি শরীরের, সমীচিন জেনে
বাক্যালাপও প্রায় বন্ধ। কেউ যদি ঘর্মাক্ত চুম্বন
হুল্লোড়ে ফেলেও আসে, প্রাপকের হয় না বিনোদ।
চেনা তৃষ্ণা উড়ে যায়, ওষ্ঠের দূরত্বে তান্তালস
সহজে পায় না মুক্তি। এই ক্রোধ চলে সারা রাত;
ট্রাউজার, গেঞ্জি ভিজে, সিদ্ধ হয় স্তনের গৌরব।
বেসিনে চমক নেই, প্রিয় গ্রন্থ, শুভেচ্ছার চিঠি
বিরক্তির উৎস মাত্র। কাক নয়, গ্রীষ্মই সরব-
অশ্লীল, কামুকতুল্য,- গনগনে নীলিমার নীল
যেন রুদ্র নজরুল, গান ভুলে রৌদ্রঝলসিত।
কাতরতা তোমাকে দেখি না
এলাম সে-পাড়া ছেড়ে। তোমাকে দেখি না বারান্দায়
সেই থেকে। দীর্ঘদিন!- সারা বিশ্বে, শহরে ও গ্রামে
এসেছে বিস্তর ভালো-মন্দ দিন। একভাবে ভালো
নয় কিংবা মন্দ দীর্ঘস্থায়ী নয়। দিন ও রাত্রির
দরজা খুলেছে হেসে আমাদের পুরোনো পৃথিবী।
কেবল একক অন্ধকারে আমার এদিন যায়
অশরীরী মৃত্যু ভয়ে স্তব্ধ স্নিগ্ধ গভীর সন্ধ্যায়,
অথবা ঝড়ের দিনে ছিন্নভিন্ন নির্বোধ মাস্তুলে।
মনে কি তোমার পড়ে? তুমি একা, বেলা দশটার
বারান্দায় স্থির দূত। বাড়ি নয়, যেন গণ্ডোলায়
ভাসছে তোমার নিঃসঙ্গতা, বিশ্রী শূন্যতায় তুমি
ভাঁজে ভাঁজে ক্লান্ত শত খণ্ড যেন ছাদে ও কার্নিশে।
অযথা গলির রৌদ্রে ভাদ্রের ভ্যাপসা মেঘলোকে
ছড়ায় বিনষ্ট ঘ্রাণ। তোমাকে নিস্পন্দ শব জেনে
উড়ে আসে কিছু কাক। চতুর্দিকে খাঁ-খাঁ শূনত্যার
তুমুল দাপটে দগ্ধ ছন্নছাড়া দশটার বেলা।
জানি না তোমার নাম; শুধু দেখি ঠাণ্ডা রন্ধনশালায়
তুমি হেঁট হয়ে বসা। বিদঘুটে পুরুষের ট্রাউজার
দিচ্ছ শুকোতে বাইরে, কিংবা পিঠ আলস্যের
রৌদ্রে মেলা, কৌচে বসে পড়ছো, গ্রীবার মরূদ্যানে
দুপুরের প্রসন্নতা। এত স্নিগ্ধ, এত তন্দ্রাময়
তোমার বিশ্রাম আর নিশ্চিত যান্ত্রিক ওঠা-বসা।
ক্রমাগত দেখে দেখে আমি জানি তোমার সময়
মুহূর্ত মাসের যাবতীয় দৃশ্য, বাস্তবিক আমি।
এখানে আকাশই দেখি। পচে যাওয়া শাদা মেঘ,
দীর্ঘ অনুজ্জ্বল বেলা, অপ্রস্তুত গলির প্রহর।
চিলের নাছোড় ডানা, অকস্মাৎ কোনো স্নানঘরে
মধ্যবয়স্কার মুণ্ড। ভবঘুরে বাস ফিরে আসে
স্বেচ্ছায় নিজস্ব স্টপে, সব দেখি তোমাকে দেখি না।
আজকাল বই নিয়ে তুমুল শিল্পিত হতে চাই,
লিখি, পড়ি, ছবি দেখি, বাখের সোনাটা শুনে শুনে
প্রথামতো ভালোবাসি গন্ধভরা আপাতত দিন।
স্বচ্ছন্দে নিয়মে চলে, হাত, জিভ, প্রত্যঙ্গের কাজ-
কোথাও বিরতি নেই, কাতরতা তোমাকে দেখি না।
বেলা দশটার কবিতা
সবাই চলেছে কাজে; আমার সহধর্মিণী সেও!
কিন্তু কী আমার কাজ? জানি না কোথায় পৌঁছবো;
উত্তর চল্লিশে পৌঁছে আজও এই মতিচ্ছন্নতার
বুঝি না উৎস কী যে, আমি নই জনপ্রিয়, লিখে
ঘরে বসে বই পড়ে, যে-গ্রন্থ হবে না ছাপা, তার
আপাদমস্তক খুঁটে, পাণ্ডুলিপি ছড়িয়ে টেবিলে
কেন যে প্রহর যায় পরিণামহীন। সকলের
এত কাজ, আকস্মাৎ আমি কেন এতটা স্বাধীন?
আমার সঙ্গীও আছে। এক কাক। তাকে ভয়ানক
স্তব্ধ মনে করি। বিরক্ত হয় না, কার্নিশেই বসে থাকে।
নিতান্ত মাছের লেজ, পোড়া রুটি, বিস্কুটের গুঁড়ো
হৃষ্ট চিত্তে বেছে নেয়। কাজ শেষে আবার ঝিমোয়।
যান্ত্রিক বাঁচার কাজে এই একাগ্রতা, হতে পারে
চেষ্টাকৃত, জন্মলব্ধ, যা-ই হোক, কিন্তু তা নিশ্চিত।
এদিকে আমার কাজ প্রায়শই দুর্ঘটনা আর
দৈবের নির্ভর।- ক্রোধে বিদ্ধ হয়ে তাকে ঈর্ষা করি।
সুলতা জানে
সুলতা জানে, সুলতা জানে ভালো,
আকাশে মেঘ- দিঘিতে কেন হাঁস,
সুলতা জানে, সুলতা জানে ভালো
কবিরা কেন নারীর ক্রীতদাস!
সুলতা জানে, সুলতা জানে ভালো
প্রেমিক কেন থাকে না চিরকাল
সুলতা জানে, সুলতা জানে ভালো
দহনে শ্রুতি নির্মম বহুকাল
বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১
গ্রীষ্মের প্রতিভা
অ্যাসফল্ট চষে-চষে দেখা হলো গ্রীষ্মের প্রতিভা!
রাস্তায়, দোকানে, পার্কে, কুকুরের পিঠে। শীততাপ
ঘর ছাড়া সবাই প্রচণ্ড এলোমেলো। এত রুষ্ট
শহরে আসেনি সন্ধ্যা নির্বাতাস আজকের মতো।
প্রখর অরুচি দেখি শরীরের, সমীচিন জেনে
বাক্যালাপও প্রায় বন্ধ। কেউ যদি ঘর্মাক্ত চুম্বন
হুল্লোড়ে ফেলেও আসে, প্রাপকের হয় না বিনোদ।
চেনা তৃষ্ণা উড়ে যায়, ওষ্ঠের দূরত্বে তান্তালস
সহজে পায় না মুক্তি। এই ক্রোধ চলে সারা রাত;
ট্রাউজার, গেঞ্জি ভিজে, সিদ্ধ হয় স্তনের গৌরব।
বেসিনে চমক নেই, প্রিয় গ্রন্থ, শুভেচ্ছার চিঠি
বিরক্তির উৎস মাত্র। কাক নয়, গ্রীষ্মই সরব-
অশ্লীল, কামুকতুল্য,- গনগনে নীলিমার নীল
যেন রুদ্র নজরুল, গান ভুলে রৌদ্রঝলসিত।
কাতরতা তোমাকে দেখি না
এলাম সে-পাড়া ছেড়ে। তোমাকে দেখি না বারান্দায়
সেই থেকে। দীর্ঘদিন!- সারা বিশ্বে, শহরে ও গ্রামে
এসেছে বিস্তর ভালো-মন্দ দিন। একভাবে ভালো
নয় কিংবা মন্দ দীর্ঘস্থায়ী নয়। দিন ও রাত্রির
দরজা খুলেছে হেসে আমাদের পুরোনো পৃথিবী।
কেবল একক অন্ধকারে আমার এদিন যায়
অশরীরী মৃত্যু ভয়ে স্তব্ধ স্নিগ্ধ গভীর সন্ধ্যায়,
অথবা ঝড়ের দিনে ছিন্নভিন্ন নির্বোধ মাস্তুলে।
মনে কি তোমার পড়ে? তুমি একা, বেলা দশটার
বারান্দায় স্থির দূত। বাড়ি নয়, যেন গণ্ডোলায়
ভাসছে তোমার নিঃসঙ্গতা, বিশ্রী শূন্যতায় তুমি
ভাঁজে ভাঁজে ক্লান্ত শত খণ্ড যেন ছাদে ও কার্নিশে।
অযথা গলির রৌদ্রে ভাদ্রের ভ্যাপসা মেঘলোকে
ছড়ায় বিনষ্ট ঘ্রাণ। তোমাকে নিস্পন্দ শব জেনে
উড়ে আসে কিছু কাক। চতুর্দিকে খাঁ-খাঁ শূনত্যার
তুমুল দাপটে দগ্ধ ছন্নছাড়া দশটার বেলা।
জানি না তোমার নাম; শুধু দেখি ঠাণ্ডা রন্ধনশালায়
তুমি হেঁট হয়ে বসা। বিদঘুটে পুরুষের ট্রাউজার
দিচ্ছ শুকোতে বাইরে, কিংবা পিঠ আলস্যের
রৌদ্রে মেলা, কৌচে বসে পড়ছো, গ্রীবার মরূদ্যানে
দুপুরের প্রসন্নতা। এত স্নিগ্ধ, এত তন্দ্রাময়
তোমার বিশ্রাম আর নিশ্চিত যান্ত্রিক ওঠা-বসা।
ক্রমাগত দেখে দেখে আমি জানি তোমার সময়
মুহূর্ত মাসের যাবতীয় দৃশ্য, বাস্তবিক আমি।
এখানে আকাশই দেখি। পচে যাওয়া শাদা মেঘ,
দীর্ঘ অনুজ্জ্বল বেলা, অপ্রস্তুত গলির প্রহর।
চিলের নাছোড় ডানা, অকস্মাৎ কোনো স্নানঘরে
মধ্যবয়স্কার মুণ্ড। ভবঘুরে বাস ফিরে আসে
স্বেচ্ছায় নিজস্ব স্টপে, সব দেখি তোমাকে দেখি না।
আজকাল বই নিয়ে তুমুল শিল্পিত হতে চাই,
লিখি, পড়ি, ছবি দেখি, বাখের সোনাটা শুনে শুনে
প্রথামতো ভালোবাসি গন্ধভরা আপাতত দিন।
স্বচ্ছন্দে নিয়মে চলে, হাত, জিভ, প্রত্যঙ্গের কাজ-
কোথাও বিরতি নেই, কাতরতা তোমাকে দেখি না।
বেলা দশটার কবিতা
সবাই চলেছে কাজে; আমার সহধর্মিণী সেও!
কিন্তু কী আমার কাজ? জানি না কোথায় পৌঁছবো;
উত্তর চল্লিশে পৌঁছে আজও এই মতিচ্ছন্নতার
বুঝি না উৎস কী যে, আমি নই জনপ্রিয়, লিখে
ঘরে বসে বই পড়ে, যে-গ্রন্থ হবে না ছাপা, তার
আপাদমস্তক খুঁটে, পাণ্ডুলিপি ছড়িয়ে টেবিলে
কেন যে প্রহর যায় পরিণামহীন। সকলের
এত কাজ, আকস্মাৎ আমি কেন এতটা স্বাধীন?
আমার সঙ্গীও আছে। এক কাক। তাকে ভয়ানক
স্তব্ধ মনে করি। বিরক্ত হয় না, কার্নিশেই বসে থাকে।
নিতান্ত মাছের লেজ, পোড়া রুটি, বিস্কুটের গুঁড়ো
হৃষ্ট চিত্তে বেছে নেয়। কাজ শেষে আবার ঝিমোয়।
যান্ত্রিক বাঁচার কাজে এই একাগ্রতা, হতে পারে
চেষ্টাকৃত, জন্মলব্ধ, যা-ই হোক, কিন্তু তা নিশ্চিত।
এদিকে আমার কাজ প্রায়শই দুর্ঘটনা আর
দৈবের নির্ভর।- ক্রোধে বিদ্ধ হয়ে তাকে ঈর্ষা করি।
সুলতা জানে
সুলতা জানে, সুলতা জানে ভালো,
আকাশে মেঘ- দিঘিতে কেন হাঁস,
সুলতা জানে, সুলতা জানে ভালো
কবিরা কেন নারীর ক্রীতদাস!
সুলতা জানে, সুলতা জানে ভালো
প্রেমিক কেন থাকে না চিরকাল
সুলতা জানে, সুলতা জানে ভালো
দহনে শ্রুতি নির্মম বহুকাল