দ্রুত বাড়ছে তিস্তার পানি, বন্যার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন গ্রামবাসী। লালমনিরহাট এলাকার চিত্র -সংবাদ
ভারতে সিকিমে অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে জল-বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ ভেঙে রাজ্য এবং এর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। পাশাপাশি তিস্তার বাংলাদেশ অংশেও হু হু করে পানি বাড়ছে। উজানের পানি মাত্রারিক্ত বৃদ্ধির কারণে তিস্তা নদীর পানি সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করার আশঙ্কা করছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ।
বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দেশে তিস্তার পানির উচ্চতা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে গেছে, রাতের মধ্যে যা ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম (বাঁধ) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতল (পানির উচ্চতা) দ্রুত বাড়ছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গজলডোবা পয়েন্টে পানি সমতল বিগত মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত প্রায় ২৮৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে স্থিতিশীল আছে (বর্তমান পানির সমতল ১১০ দশমিক ২০ মিটার)। তিস্তা নদীর দোমোহনী পয়েন্টে ভোর থেকে প্রায় ১১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে ধীরগতিতে কমছে (বর্তমানে পানি সমতল ৮৫ দশমিক ৪০ মিটার)।
আতঙ্কে, বাড়িঘর ছাড়ছে চরাঞ্চলের মানুষ
রংপুরে বন্যার আশঙ্কায় তিস্তা তীরের বাসিন্দাদের সরে যেতে মাইকিং চলছে
সংবাদের রংপুর জেলা প্রতিবেদক জানিয়েছেন, তিস্তা নদীর পানি সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করতে পারে। বুধবার রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলা প্রশাসন ওই এলাকার চরাঞ্চলে বসবাসকারী ৫০টি গ্রামের ৭০ হাজার পরিবারকে বাড়িঘর ছেড়ে মালামাল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে দুপুর থেকে মাইকিং শুরু করেছে।
তিস্তানদীর চরাঞ্চলের গ্রামগুলো ৬ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে এই আশংকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেটের সবগুলো খুলে দেয়া হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।
বিকেল থেকে গঙ্গাচড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের চর বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইক যোগে চরবাসিকে দ্রুততার সঙ্গে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসার আহ্বান জানান। তিস্তা নদীতে মাছ ধরা নৌকাসহ সব ধরনের নৌকা চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রশাসনের মাইকিংয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী সহ চরাঞ্চলের ২৫টি গ্রামে চরম আতঙ্ক দেখা গেছে।
বুধবার বিকেল ৪টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস প্রদান করে জানিয়েছে, ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ভারতের উত্তর সিকিম এ তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারতের গজল ডোবা ব্যারেজ পয়েন্টে ২৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাবে তিস্তা নদীর পানি বাংলাদেশের ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ হলেও এখন ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। ফলে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলার নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। আজ রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানা গেছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, সন্ধ্যার পর থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বিধায় নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষকে রাতের মধ্যেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে বিকেল সোয়া ৫টায় রংপুরের জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান চরাঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে গরু ছাগলসহ মালামাল নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন দুটি স্থানে পরিবারদের জন্য রাতের খাবার খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা করেছেন। এ কর্মকান্ড চলবে বলেও জানান তিনি।
গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, নোহালী ও লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামসহ কাউনিয়া উপজেলার ধুসমারার চর, আজম খাঁ চর, হাইবত খাঁ গোনাই, পল্লীমারী, চরএকতা চর মিলনবাজার, গোপীকাল্লা, ডালার চর চর গোদাই চরের ৭০ হাজার পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে।
নদীপাড়ে রেড এলার্ট-মাইকিং
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভয়াবহ বন্যার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে আতঙ্কিত তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে ও সার্বিক প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন। নদীপাড়ে রেডএলার্ট জারি করে মাইকিং করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ জানিয়েছেন, ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় তিস্তা অববাহিকায় সর্তকতা জারি করে মাইকিং করা হয়েছে। সেই সঙ্গে চর ও নদীপাড়ের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বুধবার বিকেল ৪টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে রাতে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৫০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের ৪৪টি জল কপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে তিস্তা চরের নিম্নাঞ্চলের মানুষ আরেকবার বন্যার আশঙ্কা করছেন।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে সকাল ৯টা থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি আর সারোয়ার বলেন, আমরা নদী এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাইকিং করে ও বিভিন্নভাবে নদী এলাকার মানুষকে সচেতন করতে বলেছি। আমি সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছ। চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের লোকজনদের পশুপাখিসহ প্রস্তুতি নিয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, উজানের ভারী ঢলে তিস্তায় আবারও বন্যা দেখা দেবে। আমরা সার্বিক খোঁজখবর রাখছি।
নীলফামারীতে দ্রুত বাড়ছে তিস্তার পানি
নীলফামারী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বুধবার বিকেল চারটায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় কিছুটা বেড়ে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার, দুপুর একটায় ৭২ সেন্টিমিটার, দুইটায় ২৫ সেন্টিমিটার, তিনটায় ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেখানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। রাত পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনার রয়েছে। ওই পয়েন্টে নদীর পানির বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে সতর্কতা জারি করে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, গয়াবাড়ি, ঝুনাগাছ ছাপানী, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে ১৫ গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা বলেন, ‘বুধবার বেলা ৩টায় তিস্তা ব্যরাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেলা ৪টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখে সতর্কাবস্থায় রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।’
জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘আমি তিস্তা পারে অবস্থান করছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিমলা উপজেলা পরিষদকে ৩০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুদ আছে।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩
দ্রুত বাড়ছে তিস্তার পানি, বন্যার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন গ্রামবাসী। লালমনিরহাট এলাকার চিত্র -সংবাদ
ভারতে সিকিমে অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে জল-বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ ভেঙে রাজ্য এবং এর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। পাশাপাশি তিস্তার বাংলাদেশ অংশেও হু হু করে পানি বাড়ছে। উজানের পানি মাত্রারিক্ত বৃদ্ধির কারণে তিস্তা নদীর পানি সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করার আশঙ্কা করছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ।
বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দেশে তিস্তার পানির উচ্চতা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে গেছে, রাতের মধ্যে যা ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম (বাঁধ) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতল (পানির উচ্চতা) দ্রুত বাড়ছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গজলডোবা পয়েন্টে পানি সমতল বিগত মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত প্রায় ২৮৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে স্থিতিশীল আছে (বর্তমান পানির সমতল ১১০ দশমিক ২০ মিটার)। তিস্তা নদীর দোমোহনী পয়েন্টে ভোর থেকে প্রায় ১১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে ধীরগতিতে কমছে (বর্তমানে পানি সমতল ৮৫ দশমিক ৪০ মিটার)।
আতঙ্কে, বাড়িঘর ছাড়ছে চরাঞ্চলের মানুষ
রংপুরে বন্যার আশঙ্কায় তিস্তা তীরের বাসিন্দাদের সরে যেতে মাইকিং চলছে
সংবাদের রংপুর জেলা প্রতিবেদক জানিয়েছেন, তিস্তা নদীর পানি সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করতে পারে। বুধবার রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলা প্রশাসন ওই এলাকার চরাঞ্চলে বসবাসকারী ৫০টি গ্রামের ৭০ হাজার পরিবারকে বাড়িঘর ছেড়ে মালামাল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে দুপুর থেকে মাইকিং শুরু করেছে।
তিস্তানদীর চরাঞ্চলের গ্রামগুলো ৬ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে এই আশংকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেটের সবগুলো খুলে দেয়া হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।
বিকেল থেকে গঙ্গাচড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের চর বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইক যোগে চরবাসিকে দ্রুততার সঙ্গে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসার আহ্বান জানান। তিস্তা নদীতে মাছ ধরা নৌকাসহ সব ধরনের নৌকা চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রশাসনের মাইকিংয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী সহ চরাঞ্চলের ২৫টি গ্রামে চরম আতঙ্ক দেখা গেছে।
বুধবার বিকেল ৪টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস প্রদান করে জানিয়েছে, ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ভারতের উত্তর সিকিম এ তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারতের গজল ডোবা ব্যারেজ পয়েন্টে ২৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাবে তিস্তা নদীর পানি বাংলাদেশের ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ হলেও এখন ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। ফলে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলার নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। আজ রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানা গেছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, সন্ধ্যার পর থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বিধায় নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষকে রাতের মধ্যেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে বিকেল সোয়া ৫টায় রংপুরের জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান চরাঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে গরু ছাগলসহ মালামাল নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন দুটি স্থানে পরিবারদের জন্য রাতের খাবার খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা করেছেন। এ কর্মকান্ড চলবে বলেও জানান তিনি।
গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, নোহালী ও লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামসহ কাউনিয়া উপজেলার ধুসমারার চর, আজম খাঁ চর, হাইবত খাঁ গোনাই, পল্লীমারী, চরএকতা চর মিলনবাজার, গোপীকাল্লা, ডালার চর চর গোদাই চরের ৭০ হাজার পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে।
নদীপাড়ে রেড এলার্ট-মাইকিং
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভয়াবহ বন্যার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে আতঙ্কিত তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে ও সার্বিক প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন। নদীপাড়ে রেডএলার্ট জারি করে মাইকিং করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ জানিয়েছেন, ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় তিস্তা অববাহিকায় সর্তকতা জারি করে মাইকিং করা হয়েছে। সেই সঙ্গে চর ও নদীপাড়ের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বুধবার বিকেল ৪টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে রাতে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৫০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের ৪৪টি জল কপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে তিস্তা চরের নিম্নাঞ্চলের মানুষ আরেকবার বন্যার আশঙ্কা করছেন।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে সকাল ৯টা থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি আর সারোয়ার বলেন, আমরা নদী এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাইকিং করে ও বিভিন্নভাবে নদী এলাকার মানুষকে সচেতন করতে বলেছি। আমি সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছ। চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের লোকজনদের পশুপাখিসহ প্রস্তুতি নিয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, উজানের ভারী ঢলে তিস্তায় আবারও বন্যা দেখা দেবে। আমরা সার্বিক খোঁজখবর রাখছি।
নীলফামারীতে দ্রুত বাড়ছে তিস্তার পানি
নীলফামারী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বুধবার বিকেল চারটায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় কিছুটা বেড়ে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার, দুপুর একটায় ৭২ সেন্টিমিটার, দুইটায় ২৫ সেন্টিমিটার, তিনটায় ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেখানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। রাত পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনার রয়েছে। ওই পয়েন্টে নদীর পানির বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে সতর্কতা জারি করে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, গয়াবাড়ি, ঝুনাগাছ ছাপানী, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে ১৫ গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা বলেন, ‘বুধবার বেলা ৩টায় তিস্তা ব্যরাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেলা ৪টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখে সতর্কাবস্থায় রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।’
জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘আমি তিস্তা পারে অবস্থান করছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিমলা উপজেলা পরিষদকে ৩০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুদ আছে।’