alt

পোশাকশ্রমিক নেতা কল্পনার বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যাখ্যা চাইবে’ বাংলাদেশ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩

প্রেসিডেন্টের একটি স্মারকের ঘোষণা দিতে গিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তারের যে বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা (ক্ল্যারিফিকেশন) সরকার চাইবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কল্পনা আক্তার যেটা বলেছেন, তিনি আমাদের কারণে বা অন্য কারও দ্বারা হুমকি পেয়েছিলেন, এই ক্ল্যারিফিকেশনটা আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চাইব।’

বিশ্বব্যাপী শ্রম অধিকার রক্ষায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সই করা স্মারকের আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় গত ১৬ নভেম্বর কল্পনা আক্তারের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেন ব্লিংকেন। প্রেসিডেন্সিয়াল স্মারকের আলোকে শ্রম অধিকার হরণ করে এমন কার্যক্রমের জন্য নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি। ওই ঘোষণায় শ্রম অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি গার্মেন্টকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট কল্পনা আক্তারের মতো ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াতে চাই আমরা; যিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার পক্ষে ভূমিকা রাখার কারণে এখনো তিনি বেঁচে আছেন।’

তার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কল্পনা আক্তারকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট এবং শ্রম অধিকার রক্ষায় তার ‘সফল’ কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

কে এই কল্পনা আক্তার : বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনেরও সভাপতি। নব্বইয়ের দশকে ১২ বছরে বয়সে শিশু শ্রমিক হিসেবে পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করা কল্পনা কয়েক বছর পরই শ্রমিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। বিসিডব্লিউএসের ওয়েবসাইটে বলা হয়, সাবেক তিন গার্মেন্টকর্মী কল্পনা আক্তার, নাজমা শেখ ও বাবুল আক্তার ২০০০ সালে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন।

গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে ২০১০ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার হন বিসিডব্লিউএসের তিন সংগঠক কল্পনা আক্তার, বাবুল আখতার এবং আমিনুল ইসলাম।

কল্পনা আক্তারের বক্তব্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যাখ্যা চাইবে’ বাংলাদেশ :

সে সময় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। মাসখানেক পর জেল থেকে ছাড়া পেলেও আদালতে তাদের মামলা চলতে থাকে।

এর মধ্যে ২০১২ সালের এপ্রিলে খুন হন বিসিডব্লিউএসের সংগঠক আমিনুল ইসলাম। আশুলিয়া থেকে নিখোঁজের পরদিন ৬০ মাইল দূরের ঘাটাইলে তার লাশ পাওয়া যায়। এর বছরখানেক পরে সাভারে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে কল্পনা আক্তারদের বিরুদ্ধে মামলা আলোচনায় আসে।

ভয়াবহ ওই ঘটনার পর বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা হিসেবে শ্রমিকনেতা কল্পনা আক্তার ও বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে করা আটটি মামলা প্রত্যাহার করে নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

শ্রম অধিকার হরণ করলে নিষেধাজ্ঞা : যুক্তরাষ্ট্র

কল্পনার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমার যদি ঠিক মনে থাকে, কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে একবারই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ২০১০ সালে।

‘তিনি একা নন, তার সঙ্গে আরও একাধিক শ্রমিক নেতা চাকরিরত অবস্থায় আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাদের মামলাটি তুলে নেয়া হয়।’

রানা প্লাজা ধসের পর আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কল্পনা আক্তারের গ্রেপ্তার হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শাহরিয়ার বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পরে পশ্চিমা দেশের কিছু ক্রেতা যখন সেই ফ্যাক্টরিগুলোকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করল, তখন কল্পনা আক্তার এবং আরও দুয়েকজন মিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।’

২০১৫ সালের ১৫ মার্চ ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক খবরে বলা হয়, রানা প্লাজা ধসে আহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবিতে নিউ জার্সিতে ‘চিলড্রেন’স প্লেস’ নামক কোম্পানির প্রধান নির্বাহীকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন কল্পনা আক্তারসহ ২৭ জন।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইটস ফোরাম এবং ইউনাইটেড স্টুডেন্টস এগেইনস্ট সোয়েটশপসের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রে ওই সফরে যান কল্পনা আক্তার; তার সঙ্গে ছিলেন রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিক মাহিনুর বেগমও।

গার্ডিয়ানের ওই খবরে বলা হয়, গ্রেপ্তারের দুই ঘণ্টা ছাড়া পান কল্পনা আক্তাররা। ওই সময় তাদের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশের’ অভিযোগ আনা হয়েছিল।

মানবাধিকার রক্ষায় অবদানের জন্য ২০১৬ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এলিসন দেস ফোর্জস অ্যাওয়ার্ড পান বর্তমানে ৪৭ বছর বয়সী এই শ্রমিক নেতা।

২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রামে (আইভিএলপি) অংশ নেন কল্পনা। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে তার বক্তব্য শোনে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটি।

কল্পনা জীবনের হুমকির কথা ‘কাউকে বলেননি’

জীবনের হুমকি বোধ করার কথা কল্পনা আক্তার কখনই সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাননি মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের রেকর্ডে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রেকর্ডে আমরা যতদূর খোঁজ নিয়ে দেখেছি, জেনেছি বা আপনাদের ওপেন সোর্সে।

‘আপনারা এত সাংবাদিক আছেন, আপনারা তাকে গিয়ে যদি জিজ্ঞেস করেন যে, উনি এ কথাটি আদৌ বলেছেন কিনা? বলে থাকলে কিসের ভিত্তিতে বলেছেন? এটা খোঁজার দায়িত্ব আমার মনে হয় সাংবাদিক ভাইবোনদের। কিন্তু তিনি যে হুমকি বোধ করেছেন, এটা অতীতে তিনি কখনই বাংলাদেশের কাউকে জানাননি। তো, অবশ্যই এটার সত্যতা কতটুকু, আমরা সেটা জানতে চাইব।’

কল্পনার কার্যক্রমের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কল্পনা আক্তার খুব সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে তার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।’

কল্পনা আক্তারের বক্তব্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যাখ্যা চাইবে’ বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় ‘উদ্বিগ্ন হওয়ার যুক্তিযুক্ত কারণ নাই।’

শ্রম অধিকার হরণ করলে বাণিজ্যসহ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞার ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যিনি নিজেও তৈরি পোশাক ব্যবসায় জড়িত।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, এই কমেন্টস গার্মেন্টস কেন্দ্রিক ছিল না। অ্যান্টনি ব্লিংকেনের এই বক্তব্য ছিল অ্যাপেক সামিটে, এটা শুধুমাত্র গার্মেন্টস শিল্প বা টেক্সটাইল শিল্প বা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠকে নয়।

‘এটা একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যার মাধ্যমে তারা তাদের দূতাবাসগুলোর রাষ্ট্রদূতদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব অ্যাসাইন করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা সাপেক্ষে একজন লেবার অ্যাটাশে নিয়োগ দিয়েছে। এই তথ্যটি, যেকোনো কিছু সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হলে কিছু ভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং আমি মনে করি কোনোভাবেই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের, এই পদক্ষেপের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নাই।’

ব্লিংকেনের বক্তব্য ‘মোটেই বাংলাদেশ কেন্দ্রিক নয়’ মন্তব্য করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশ উল্লেখ করে কোনো বক্তব্য দেননি। উনি বলেছেন, বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টস নেতা বা কর্মী কল্পনা আক্তার।

‘দেশ উল্লেখ করে দুই-তিনটি আলাদা দেশের নাম বলেছেন, কিন্তু বাংলাদেশের কোনো ইস্যু সেখানে মেনশন করেননি, এটা মোটেই গার্মেন্টস শিল্প বা টেক্সটাইল শিল্প নির্দিষ্ট ছিল না।’

দূতাবাসে শ্রমবিষয়ক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার অনুমতি দেয়ায় বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রতিযোগী দেশগুলো বা যাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, সেসব রাষ্ট্রের কোথাওই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতটা সুবিধা পায় না, বা কোথাও এতটা সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায় না, যেটা বাংলাদেশ করেছে এবং নিশ্চিত এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানায়।’

যা বলছেন কল্পনা

ব্লিংকেনের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কল্পনা আক্তার বলেন, ‘কোনো সুনির্দিষ্ট ঘটনা ও সময়কাল থেকে তিনি এটা বলেননি।’

এক যুগের ঘটনাপ্রবাহ উল্লেখ করে কল্পনা বলেন, ‘আমাদের (২০১০ সালে) জেলে যাওয়া থেকে শুরু করে সহকর্মী আমিনুলকে মেরে ফেলা, আমাদের সংগঠনের নিবন্ধন নিয়ে ঝামেলা- এসব হয়েছে ধারাবাহিকভাবে এবং প্রত্যেকবারই আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে সরব হতে হয়েছে।

‘এর মধ্যে রানা প্লাজা ধসের পর অনেক কিছু হলো। এরপর ২০১৬ সালে আমাদের সহকর্মী ইব্রাহিম আড়াই মাস জেলে থাকল। ছয় মাস আগে আমাদের আরেক সহকর্মী শহীদুল খুন হলো। আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী বাবুল ভাই (বাবুল আক্তার) দুইটা মামলায় ঘুরপাক খাচ্ছেন। আমার সহকর্মীরা যখন মার খাচ্ছে, মামলা নিয়ে হয়রান হচ্ছে, খুন হচ্ছে তখন আমি নিরাপদ কোনো জায়গায়?’

ছবি

পটুয়াখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু, আহত ১

ছবি

টাঙ্গাইলের মগড়ায় বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

ভাঙ্গার কুমার নদে কিশোর-তরুণদের অস্ত্র প্রদর্শনের মহড়া

ছবি

জয়পুরহাটে ৭ ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার

ছবি

কালীগঞ্জে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

ছবি

কুড়িগ্রামে কৃষক সংলাপ অনুষ্ঠিত

ছবি

রংপুর বিভাগের গুণী প্রধান শিক্ষক উলিপুরের মাহবুবার রহমান

ছবি

কোটি টাকার স্বর্ণবারসহ পাচারকারী আটক

ছবি

থানচিতে নির্মাণের দুই বছরেই সড়ক মৃত্যুফাঁদ!

ছবি

খুড়ে রাখা সড়কে হাঁটু পানি ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

ছবি

রুমায় সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ

ছবি

রায়গঞ্জে পাখির তাড়াতে ধান খেতে নেট ব্যবহার

ছবি

কুষ্টিয়ায় দুর্গাপূজায় বেড়েছে ২২টি পূজা মন্ডপ

ছবি

যশোরের শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক শার্শার খাদিজা খাতুন

ছবি

রিয়াদ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছবি

পার্বতীপুর-রাজশাহী রুটে ২২ মাস ধরে বন্ধ উত্তরা এ´প্রেস ট্রেন

ছবি

সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

ছবি

বরুড়ায় আখের ভাল ফলনে চাষী ও বিক্রেতা উভয়েই খুশি

ছবি

মোল্লাহাটে গৃহবধূর আত্মহত্যা

ছবি

জাল সনদে ১২ বছর চাকরি, বেরোবির ইরিনা নাহার বরখাস্ত

ছবি

৫০ হাজার শিশুরা পাচ্ছেন বিনামূল্যে টাইফয়েড প্রতিরোধ টিকা

ছবি

ধ্বংসের পথে শরৎচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত কাশিপুর জমিদার বাড়ি

ছবি

দুমকিতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো ভোগান্তিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা

ছবি

দশমিনায় মাচায় লাউ আবাদ বাড়ছে

ছবি

মোরেলগঞ্জে সরকারি ভাতা বঞ্চিত হানিফের সংসার চলে বিলের শাপলায়

ছবি

চট্টগ্রামে ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা

ছবি

মহাদেবপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে চারা বিতরণ

ছবি

আলোচনা সভায় বক্তারা রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় ছাদ থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

ছবি

চাঁদপুর শহরের খেলার মাঠসমূহ খেলাধুলার উপযোগী করার দাবি

ছবি

সস কারখানার মালিককে ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

পূর্বাচল এলাকায় পরিবহনে হিজড়াদের চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ১২

ছবি

আমার জীবন আমার স্বপ্ন উদযাপন

ছবি

১০ টাকা কেজি ইলিশ বিক্রি, জনতার চাপে পালালেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী

ছবি

লড়াই ষাঁড়ের আঘাতে প্রাণ গেল যুবকের

ছবি

নৈতিকতার ভিত্তিতেই হতে হবে আদর্শ মানুষ: মেয়র

tab

পোশাকশ্রমিক নেতা কল্পনার বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যাখ্যা চাইবে’ বাংলাদেশ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩

প্রেসিডেন্টের একটি স্মারকের ঘোষণা দিতে গিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তারের যে বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা (ক্ল্যারিফিকেশন) সরকার চাইবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কল্পনা আক্তার যেটা বলেছেন, তিনি আমাদের কারণে বা অন্য কারও দ্বারা হুমকি পেয়েছিলেন, এই ক্ল্যারিফিকেশনটা আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চাইব।’

বিশ্বব্যাপী শ্রম অধিকার রক্ষায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সই করা স্মারকের আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় গত ১৬ নভেম্বর কল্পনা আক্তারের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেন ব্লিংকেন। প্রেসিডেন্সিয়াল স্মারকের আলোকে শ্রম অধিকার হরণ করে এমন কার্যক্রমের জন্য নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি। ওই ঘোষণায় শ্রম অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি গার্মেন্টকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট কল্পনা আক্তারের মতো ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াতে চাই আমরা; যিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার পক্ষে ভূমিকা রাখার কারণে এখনো তিনি বেঁচে আছেন।’

তার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কল্পনা আক্তারকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট এবং শ্রম অধিকার রক্ষায় তার ‘সফল’ কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

কে এই কল্পনা আক্তার : বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনেরও সভাপতি। নব্বইয়ের দশকে ১২ বছরে বয়সে শিশু শ্রমিক হিসেবে পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করা কল্পনা কয়েক বছর পরই শ্রমিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। বিসিডব্লিউএসের ওয়েবসাইটে বলা হয়, সাবেক তিন গার্মেন্টকর্মী কল্পনা আক্তার, নাজমা শেখ ও বাবুল আক্তার ২০০০ সালে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন।

গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে ২০১০ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার হন বিসিডব্লিউএসের তিন সংগঠক কল্পনা আক্তার, বাবুল আখতার এবং আমিনুল ইসলাম।

কল্পনা আক্তারের বক্তব্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যাখ্যা চাইবে’ বাংলাদেশ :

সে সময় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। মাসখানেক পর জেল থেকে ছাড়া পেলেও আদালতে তাদের মামলা চলতে থাকে।

এর মধ্যে ২০১২ সালের এপ্রিলে খুন হন বিসিডব্লিউএসের সংগঠক আমিনুল ইসলাম। আশুলিয়া থেকে নিখোঁজের পরদিন ৬০ মাইল দূরের ঘাটাইলে তার লাশ পাওয়া যায়। এর বছরখানেক পরে সাভারে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে কল্পনা আক্তারদের বিরুদ্ধে মামলা আলোচনায় আসে।

ভয়াবহ ওই ঘটনার পর বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা হিসেবে শ্রমিকনেতা কল্পনা আক্তার ও বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে করা আটটি মামলা প্রত্যাহার করে নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

শ্রম অধিকার হরণ করলে নিষেধাজ্ঞা : যুক্তরাষ্ট্র

কল্পনার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমার যদি ঠিক মনে থাকে, কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে একবারই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ২০১০ সালে।

‘তিনি একা নন, তার সঙ্গে আরও একাধিক শ্রমিক নেতা চাকরিরত অবস্থায় আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাদের মামলাটি তুলে নেয়া হয়।’

রানা প্লাজা ধসের পর আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কল্পনা আক্তারের গ্রেপ্তার হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শাহরিয়ার বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পরে পশ্চিমা দেশের কিছু ক্রেতা যখন সেই ফ্যাক্টরিগুলোকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করল, তখন কল্পনা আক্তার এবং আরও দুয়েকজন মিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।’

২০১৫ সালের ১৫ মার্চ ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক খবরে বলা হয়, রানা প্লাজা ধসে আহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবিতে নিউ জার্সিতে ‘চিলড্রেন’স প্লেস’ নামক কোম্পানির প্রধান নির্বাহীকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন কল্পনা আক্তারসহ ২৭ জন।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইটস ফোরাম এবং ইউনাইটেড স্টুডেন্টস এগেইনস্ট সোয়েটশপসের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রে ওই সফরে যান কল্পনা আক্তার; তার সঙ্গে ছিলেন রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিক মাহিনুর বেগমও।

গার্ডিয়ানের ওই খবরে বলা হয়, গ্রেপ্তারের দুই ঘণ্টা ছাড়া পান কল্পনা আক্তাররা। ওই সময় তাদের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশের’ অভিযোগ আনা হয়েছিল।

মানবাধিকার রক্ষায় অবদানের জন্য ২০১৬ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এলিসন দেস ফোর্জস অ্যাওয়ার্ড পান বর্তমানে ৪৭ বছর বয়সী এই শ্রমিক নেতা।

২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রামে (আইভিএলপি) অংশ নেন কল্পনা। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে তার বক্তব্য শোনে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটি।

কল্পনা জীবনের হুমকির কথা ‘কাউকে বলেননি’

জীবনের হুমকি বোধ করার কথা কল্পনা আক্তার কখনই সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাননি মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের রেকর্ডে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রেকর্ডে আমরা যতদূর খোঁজ নিয়ে দেখেছি, জেনেছি বা আপনাদের ওপেন সোর্সে।

‘আপনারা এত সাংবাদিক আছেন, আপনারা তাকে গিয়ে যদি জিজ্ঞেস করেন যে, উনি এ কথাটি আদৌ বলেছেন কিনা? বলে থাকলে কিসের ভিত্তিতে বলেছেন? এটা খোঁজার দায়িত্ব আমার মনে হয় সাংবাদিক ভাইবোনদের। কিন্তু তিনি যে হুমকি বোধ করেছেন, এটা অতীতে তিনি কখনই বাংলাদেশের কাউকে জানাননি। তো, অবশ্যই এটার সত্যতা কতটুকু, আমরা সেটা জানতে চাইব।’

কল্পনার কার্যক্রমের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কল্পনা আক্তার খুব সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে তার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।’

কল্পনা আক্তারের বক্তব্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যাখ্যা চাইবে’ বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় ‘উদ্বিগ্ন হওয়ার যুক্তিযুক্ত কারণ নাই।’

শ্রম অধিকার হরণ করলে বাণিজ্যসহ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞার ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যিনি নিজেও তৈরি পোশাক ব্যবসায় জড়িত।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, এই কমেন্টস গার্মেন্টস কেন্দ্রিক ছিল না। অ্যান্টনি ব্লিংকেনের এই বক্তব্য ছিল অ্যাপেক সামিটে, এটা শুধুমাত্র গার্মেন্টস শিল্প বা টেক্সটাইল শিল্প বা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠকে নয়।

‘এটা একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যার মাধ্যমে তারা তাদের দূতাবাসগুলোর রাষ্ট্রদূতদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব অ্যাসাইন করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা সাপেক্ষে একজন লেবার অ্যাটাশে নিয়োগ দিয়েছে। এই তথ্যটি, যেকোনো কিছু সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হলে কিছু ভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং আমি মনে করি কোনোভাবেই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের, এই পদক্ষেপের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নাই।’

ব্লিংকেনের বক্তব্য ‘মোটেই বাংলাদেশ কেন্দ্রিক নয়’ মন্তব্য করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশ উল্লেখ করে কোনো বক্তব্য দেননি। উনি বলেছেন, বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টস নেতা বা কর্মী কল্পনা আক্তার।

‘দেশ উল্লেখ করে দুই-তিনটি আলাদা দেশের নাম বলেছেন, কিন্তু বাংলাদেশের কোনো ইস্যু সেখানে মেনশন করেননি, এটা মোটেই গার্মেন্টস শিল্প বা টেক্সটাইল শিল্প নির্দিষ্ট ছিল না।’

দূতাবাসে শ্রমবিষয়ক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার অনুমতি দেয়ায় বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রতিযোগী দেশগুলো বা যাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, সেসব রাষ্ট্রের কোথাওই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতটা সুবিধা পায় না, বা কোথাও এতটা সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায় না, যেটা বাংলাদেশ করেছে এবং নিশ্চিত এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানায়।’

যা বলছেন কল্পনা

ব্লিংকেনের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কল্পনা আক্তার বলেন, ‘কোনো সুনির্দিষ্ট ঘটনা ও সময়কাল থেকে তিনি এটা বলেননি।’

এক যুগের ঘটনাপ্রবাহ উল্লেখ করে কল্পনা বলেন, ‘আমাদের (২০১০ সালে) জেলে যাওয়া থেকে শুরু করে সহকর্মী আমিনুলকে মেরে ফেলা, আমাদের সংগঠনের নিবন্ধন নিয়ে ঝামেলা- এসব হয়েছে ধারাবাহিকভাবে এবং প্রত্যেকবারই আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে সরব হতে হয়েছে।

‘এর মধ্যে রানা প্লাজা ধসের পর অনেক কিছু হলো। এরপর ২০১৬ সালে আমাদের সহকর্মী ইব্রাহিম আড়াই মাস জেলে থাকল। ছয় মাস আগে আমাদের আরেক সহকর্মী শহীদুল খুন হলো। আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী বাবুল ভাই (বাবুল আক্তার) দুইটা মামলায় ঘুরপাক খাচ্ছেন। আমার সহকর্মীরা যখন মার খাচ্ছে, মামলা নিয়ে হয়রান হচ্ছে, খুন হচ্ছে তখন আমি নিরাপদ কোনো জায়গায়?’

back to top