বাংলাদেশে ক্রিকেটের অন্যতম প্রাণপুরুষ, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শামিম কবির আর নেই। সোমবার (২৯ জুলাই) সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। এই কৃতী ক্রীড়াবিদ দীর্ঘদিন ক্যানসারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, দ্ইু বড় বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আমেরিকা প্রবাসী শামিম কবিরের ছেলে আগামীকাল দেশে আসবেন। আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তার প্রথম জানাজা হবে। বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজার পর তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর ঘোড়াশালে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তৃতীয় ও শেষ জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। শামিম কবিরের প্রতি সম্মান জানাতে কলম্বোতে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কালো আর্মব্যান্ড পরবেন। এছাড়া খেলার আগে তারা দুই মিনিট নীরবতা পালন করবেন। শামিম কবির নামে পরিচিতি পেলেও তার আসল নাম আনোয়ারুল কবির। নরসিংদীর ঘোড়াশালে বনেদি জমিদার পরিবারে ১৯৪৫ সালের ৩ মার্চ তার জন্ম। তিনি আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির এবং সুফিয়া খাতুনের কনিষ্ঠ ছেলে। চট্টগ্রামে সেন্টপ্লাসিড স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরে সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন, নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি লন্ডন এবং ম্যানচেস্টার থেকে কম্পিউটার বিষয়ে একাধিক কোর্স সম্পন্ন করেন।
বাল্যকাল থেকেই ক্রীড়ার প্রতি ঝোঁক ছিল শামিম কবিরের। স্কুলে পড়ার সময়ই ঢাকা ক্রিকেট লীগের শীর্ষস্থানীয় ক্লাব আজাদ বয়েজের ক্রিকেট দলে খেলেন। তিনি পরে ধীর্ঘ সময় দলটির অধিনায়ক ছিলেন। তিনি এ সময় চাইল্ড অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হন এবং বিভিন্ন দেশের চাইল্ড অ্যাম্বাসেডরদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে ক্রিকেট ছাড়াও আরও অনেক ডিসিপ্লিনে খেলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদানস্বরূপ ‘ব্লু’ লাভ করেন তিনি। তার খেলার সময়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে শীর্ষপর্যায়ের ক্রিকেট প্রথম বিভাগ লীগে আজাদ বয়েজ ক্লাব দাপটের সঙ্গে খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়। তার নেতৃত্বেই সৈয়দ আশরাফুল হক, তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না, কাজী সালাউদ্দিহনের মতো ক্রীড়াবিদরা আজাদ বয়েজে খেলেছেন।
শামিম কবিরের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ১৯৬১ সালে। ওই বছরের নভেম্বরে করাচির (গ্রিন) বিরুদ্ধে তিনি পূর্ব পাকিস্তান দলের পক্ষে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেন। ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা স্টেডিয়াম (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম)। শক্তিশালী পিআইএ দলের বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি ও অর্ধশতক করেন। পূর্ব পাকিস্তান, পূর্ব জোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬১-৬৯ সাল পর্যন্ত অসংখ্য ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেন তিনি।
শামিম কবিরের অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলে এসিসির বিরুদ্ধে, ১৯৭৭ সালের ৭ জানুয়ারি। তিন দিনের বেসরকারি টেস্ট ম্যাচটি মূলত আয়োজিত হয় বাংলাদেশের সামর্থ্য যাচাইয়ের জন্য।
বিসিবির যে দলটি এমসিসির বিপক্ষে তিন দিনের ম্যাচ খেলে, সেটির অধিনায়ক ছিলেন শামিম কবির। এ ম্যাচটিই বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচ। শামিম কবিরের নেতৃত্বের সেই ম্যাচের ভিত্তিতেই বাংলাদেশের ক্রিকেট আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে। শামিম কবির প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার যিনি পাকিস্তান দলে খেলেছেন। পাকিস্তান অনূর্ধ্ব ২৫ দলে বিখ্যাত ক্রিকেটার আসিফ ইকবালের অধিনায়কত্বে খেলার কৃতিত্ব রয়েছে তার। বাংলাদেশের ক্রিকেট যত দিন থাকবে শামিম কবিরও তত দিন ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন।
শামিম কবির ১৯৭৭ সালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। অবসর নেয়ার পরেও ক্রিকেটের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুবার (১৯৮২ ও ৮৬) বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ক্রিকেট বোর্ডের নানা দায়িত্বে ছিলেন। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পান। এছাড়া ক্রীড়াঙ্গন ও গণমাধ্যমের অনেক সংস্থার নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে প্রথম আলো এই গুণী ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে আজীবন সম্মাননা জানিয়েছে।
শামিম কবির ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শামিম কবির শুধু কৃতী ক্রীড়াবিদই নন, সফল ব্যবসায়ীও। পাকিস্তান আমল থেকে প্রসিদ্ধ চা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এ.কবির লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরবর্তীতে চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। তিনি অনেক সামাজিক সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ঢাকা ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। দৈনিক সংবাদের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান দি সংবাদ লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন তিনি। তার দুই বড় ভাই ছিলেন দৈনিক সংবাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক খায়রুল কবির এবং দৈনিক সংবাদের প্রধান সম্পাদক আহমদুল কবির।
বিভিন্ন সংগঠনের শোক
বাংলাদেশে ক্রিকেটের অন্যতম প্রাণপুরুষ, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শামিম কবিরের মৃত্যুতে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক ও ব্যবসায়ী সংগঠন।
শামিম কবিরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান (পাপন) এমপি। শামিম কবিরের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি। এক শোকবার্তায় নাজমুল হাসান বলেন, শামিম কবির বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেছিলেন যখন সময়টা ক্রিকেটের পক্ষে কঠিন ছিল এবং খেলায় খুব সীমিত সংস্থান ছিল। তিনি একজন অগ্রগামী মানুষ ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থানের জন্য শামিম কবিরের আবেগ এবং উৎসর্গের কথা উল্লেখ করে বিসিবি সভাপতি বলেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে আমি শামিম কবিরের শোকাহত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই।
সাবেক রাষ্ট্রদূত তারেক করিম বলেন, শামিম কবির ছিলেন উঁচুমাপের একজন মানুষ। ভালো বন্ধু এবং সবার প্রিয় ব্যক্তি। আমি ক্রিকেট না খেললেও তার খেলা সবসময় দেখতাম। নিপাট ভদ্রলোক শামিম কবির শুধুমাত্র একজন ক্রিড়াবিদই ছিলেন না, তিনি পড়াশোনায়ও ছিলেন দুর্দান্ত। আমি আমার এই বন্ধুকে অনেক মিস করব। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
শামিম কবিরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মুরাদ মোমেন বলেন, শামিম কবির একজন পরিচ্ছন্ন, আদর্শবান ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। আমরা কখনোই তাকে কোন ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করতে পারিনি।
বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ক্রিকেটার তানভীর মাজহার তান্না বলেন, তিনি আজীবন আমার কাছে ক্যাপ্টেন। আজাদ বয়েজ ক্লাবের সাফল্যের পেছনে তার অবদান অনেক।
সাবেক জাতীয় পেস বোলার গোলাম ফারুক সুরু বলেন, শামিম ভাইয়ের কাছ থেকে ক্রিকেট ও ব্যক্তিজীবনের অনেক কিছু শিখেছি। অত্যন্ত নীতিবান লোক ছিলেন। খেলোয়াড়দের নৈতিকতার বিষয়টি দারুণভাবে বোঝাতেন তিনি।
এছাড়াও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিশেয়নের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, ইস্পাহানী গ্রুপের পক্ষে বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক সালমান ইস্পাহানী, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পিযুষ বন্দোপাধ্যায়, ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াব, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনসহ ক্রীড়াঙ্গনের নানা সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯
বাংলাদেশে ক্রিকেটের অন্যতম প্রাণপুরুষ, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শামিম কবির আর নেই। সোমবার (২৯ জুলাই) সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। এই কৃতী ক্রীড়াবিদ দীর্ঘদিন ক্যানসারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, দ্ইু বড় বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আমেরিকা প্রবাসী শামিম কবিরের ছেলে আগামীকাল দেশে আসবেন। আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তার প্রথম জানাজা হবে। বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজার পর তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর ঘোড়াশালে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তৃতীয় ও শেষ জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। শামিম কবিরের প্রতি সম্মান জানাতে কলম্বোতে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কালো আর্মব্যান্ড পরবেন। এছাড়া খেলার আগে তারা দুই মিনিট নীরবতা পালন করবেন। শামিম কবির নামে পরিচিতি পেলেও তার আসল নাম আনোয়ারুল কবির। নরসিংদীর ঘোড়াশালে বনেদি জমিদার পরিবারে ১৯৪৫ সালের ৩ মার্চ তার জন্ম। তিনি আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির এবং সুফিয়া খাতুনের কনিষ্ঠ ছেলে। চট্টগ্রামে সেন্টপ্লাসিড স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরে সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন, নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি লন্ডন এবং ম্যানচেস্টার থেকে কম্পিউটার বিষয়ে একাধিক কোর্স সম্পন্ন করেন।
বাল্যকাল থেকেই ক্রীড়ার প্রতি ঝোঁক ছিল শামিম কবিরের। স্কুলে পড়ার সময়ই ঢাকা ক্রিকেট লীগের শীর্ষস্থানীয় ক্লাব আজাদ বয়েজের ক্রিকেট দলে খেলেন। তিনি পরে ধীর্ঘ সময় দলটির অধিনায়ক ছিলেন। তিনি এ সময় চাইল্ড অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হন এবং বিভিন্ন দেশের চাইল্ড অ্যাম্বাসেডরদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে ক্রিকেট ছাড়াও আরও অনেক ডিসিপ্লিনে খেলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদানস্বরূপ ‘ব্লু’ লাভ করেন তিনি। তার খেলার সময়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে শীর্ষপর্যায়ের ক্রিকেট প্রথম বিভাগ লীগে আজাদ বয়েজ ক্লাব দাপটের সঙ্গে খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়। তার নেতৃত্বেই সৈয়দ আশরাফুল হক, তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না, কাজী সালাউদ্দিহনের মতো ক্রীড়াবিদরা আজাদ বয়েজে খেলেছেন।
শামিম কবিরের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ১৯৬১ সালে। ওই বছরের নভেম্বরে করাচির (গ্রিন) বিরুদ্ধে তিনি পূর্ব পাকিস্তান দলের পক্ষে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেন। ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা স্টেডিয়াম (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম)। শক্তিশালী পিআইএ দলের বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি ও অর্ধশতক করেন। পূর্ব পাকিস্তান, পূর্ব জোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬১-৬৯ সাল পর্যন্ত অসংখ্য ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেন তিনি।
শামিম কবিরের অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলে এসিসির বিরুদ্ধে, ১৯৭৭ সালের ৭ জানুয়ারি। তিন দিনের বেসরকারি টেস্ট ম্যাচটি মূলত আয়োজিত হয় বাংলাদেশের সামর্থ্য যাচাইয়ের জন্য।
বিসিবির যে দলটি এমসিসির বিপক্ষে তিন দিনের ম্যাচ খেলে, সেটির অধিনায়ক ছিলেন শামিম কবির। এ ম্যাচটিই বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচ। শামিম কবিরের নেতৃত্বের সেই ম্যাচের ভিত্তিতেই বাংলাদেশের ক্রিকেট আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে। শামিম কবির প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার যিনি পাকিস্তান দলে খেলেছেন। পাকিস্তান অনূর্ধ্ব ২৫ দলে বিখ্যাত ক্রিকেটার আসিফ ইকবালের অধিনায়কত্বে খেলার কৃতিত্ব রয়েছে তার। বাংলাদেশের ক্রিকেট যত দিন থাকবে শামিম কবিরও তত দিন ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন।
শামিম কবির ১৯৭৭ সালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। অবসর নেয়ার পরেও ক্রিকেটের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুবার (১৯৮২ ও ৮৬) বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ক্রিকেট বোর্ডের নানা দায়িত্বে ছিলেন। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পান। এছাড়া ক্রীড়াঙ্গন ও গণমাধ্যমের অনেক সংস্থার নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে প্রথম আলো এই গুণী ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে আজীবন সম্মাননা জানিয়েছে।
শামিম কবির ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শামিম কবির শুধু কৃতী ক্রীড়াবিদই নন, সফল ব্যবসায়ীও। পাকিস্তান আমল থেকে প্রসিদ্ধ চা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এ.কবির লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরবর্তীতে চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। তিনি অনেক সামাজিক সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ঢাকা ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। দৈনিক সংবাদের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান দি সংবাদ লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন তিনি। তার দুই বড় ভাই ছিলেন দৈনিক সংবাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক খায়রুল কবির এবং দৈনিক সংবাদের প্রধান সম্পাদক আহমদুল কবির।
বিভিন্ন সংগঠনের শোক
বাংলাদেশে ক্রিকেটের অন্যতম প্রাণপুরুষ, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শামিম কবিরের মৃত্যুতে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক ও ব্যবসায়ী সংগঠন।
শামিম কবিরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান (পাপন) এমপি। শামিম কবিরের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি। এক শোকবার্তায় নাজমুল হাসান বলেন, শামিম কবির বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেছিলেন যখন সময়টা ক্রিকেটের পক্ষে কঠিন ছিল এবং খেলায় খুব সীমিত সংস্থান ছিল। তিনি একজন অগ্রগামী মানুষ ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থানের জন্য শামিম কবিরের আবেগ এবং উৎসর্গের কথা উল্লেখ করে বিসিবি সভাপতি বলেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে আমি শামিম কবিরের শোকাহত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই।
সাবেক রাষ্ট্রদূত তারেক করিম বলেন, শামিম কবির ছিলেন উঁচুমাপের একজন মানুষ। ভালো বন্ধু এবং সবার প্রিয় ব্যক্তি। আমি ক্রিকেট না খেললেও তার খেলা সবসময় দেখতাম। নিপাট ভদ্রলোক শামিম কবির শুধুমাত্র একজন ক্রিড়াবিদই ছিলেন না, তিনি পড়াশোনায়ও ছিলেন দুর্দান্ত। আমি আমার এই বন্ধুকে অনেক মিস করব। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
শামিম কবিরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মুরাদ মোমেন বলেন, শামিম কবির একজন পরিচ্ছন্ন, আদর্শবান ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। আমরা কখনোই তাকে কোন ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করতে পারিনি।
বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ক্রিকেটার তানভীর মাজহার তান্না বলেন, তিনি আজীবন আমার কাছে ক্যাপ্টেন। আজাদ বয়েজ ক্লাবের সাফল্যের পেছনে তার অবদান অনেক।
সাবেক জাতীয় পেস বোলার গোলাম ফারুক সুরু বলেন, শামিম ভাইয়ের কাছ থেকে ক্রিকেট ও ব্যক্তিজীবনের অনেক কিছু শিখেছি। অত্যন্ত নীতিবান লোক ছিলেন। খেলোয়াড়দের নৈতিকতার বিষয়টি দারুণভাবে বোঝাতেন তিনি।
এছাড়াও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিশেয়নের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, ইস্পাহানী গ্রুপের পক্ষে বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক সালমান ইস্পাহানী, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পিযুষ বন্দোপাধ্যায়, ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াব, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনসহ ক্রীড়াঙ্গনের নানা সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।