বৈশাখে কালবৈশাখীসহ ঝড়-ঝাঁপটা হবে, এমনটাই নিয়ম। কিন্তু মধ্য বৈশাখ পার হলেও আবহাওয়ায় ঝড়বৃষ্টি হওয়ার কোনো আভাস নেই। টানা ২৮ দিন এমন দাবদাহ এর আগে কবে দেখেছে দেশ অনেকেই বলতে পারে না। ৬০ বছর বয়সী রিশকাচালক গিয়াসউদ্দীন ঘাম মুছতে মুছতে এমনটাই বলেন। তিনি বলেন, দুপুরের রোদ থেকে যেন আগুন বের হচ্ছে। আগুনের ফুলকি গায়ে এসে লাগছে। এমন রোদে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে গায়ে ফোসকা পড়বে মনে হয়।
‘চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতে তাপপ্রবাহ কমার সম্ভাবনা নেই’ বলে বলছেন আবহাওয়াবিদেরা। দিনে গরম তো থাকবেই, রাতেও বয়ে যাবে গরম বাতাস আর তা অব্যাহত থাকবে চলতি মাসজুড়ে। এরই মধ্যে জানা গেল ১৫ বৈশাখ রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে আবারো তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা হিট অ্যালার্ট জারি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত টানা ২৮ দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে।
রাজধানীতে শনিবার (২৭ এপ্র্রিল) আগের দিনের তুলনায় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমলেও গরমের কষ্ট কমেনি। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বাতাসে আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়ায় গরমে অস্বস্তিকর অনুভূতি বেড়ে গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) তিন দিনের তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা (হিট অ্যালার্ট) জারি করে। সেই হিট অ্যালার্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে শনিবার। কিন্তু তাপপ্রবাহ কমার কোনো লক্ষণ নাই, নাই বৃষ্টির আভাস। এমন পরিস্থিতিতে রোববার থেকে আবারো তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
‘মে মাসের ২ তারিখের দিকে বৃষ্টি হতে পারে, যা কয়েকদিন থাকার সম্ভাবনা আছে, তখন তাপমাত্রা কমে আসবে। সে পর্যন্ত গরম সহ্য করতে হবে’ বলে জানান আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।
ঢাকাসহ কয়েকটি স্থানে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শনিবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মোটামুটি আগের মতোই রয়েছে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, যা এ মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শুক্রবার যা ছিল ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে হয়েছে ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার চুয়াডাঙ্গা ছাড়া দেশের কোথাও দিনের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে নেই। ২৬ এপ্রিল শুক্রবার রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বইছিল অর্থাৎ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘এপ্রিল ও মে মাসে আমাদের দেশে সবচেয়ে উষ্ণ মাস। কিন্তু এবার পৃথিবীর অনেক দেশেই গরমের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। পূর্ব এশিয়ার মায়ানমার থেকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া হয়ে লাওস পর্যন্ত, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান পর্যন্ত তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।’
মল্লিক বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং এই অঞ্চলে দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বৈশ্বিক আবহাওয়ায় এল নিনোর প্রভাবের কারণে অভ্যন্তরীণ তাপ তৈরি হয়েছে। মূলত এই তিন কারণে উষ্ণতা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
এবার বৃষ্টিপাতের প্রবণতা না থাকায় চৈত্র মাসের শেষ সময় থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে ৩১ মার্চ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়তে থাকে।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুকের মতে, ‘গত বছর বাতাসে আর্দ্রতা কম ছিল। এবার আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে মানুষের শরীর ঘামছে, অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। এই সময়ে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়।এবার বৃষ্টিপাত কম। কালবৈশাখী এবং বৃষ্টি না থাকার কারণে এবার গরমের তীব্রতা বেশি।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত ত্রিশ বছরে বাংলাদেশের আবহাওয়া আগের তুলনায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাত ও শীতের দিন কমছে, বছরের বড় অংশজুড়ে গরমের বিস্তার বাড়ছে। গড় তাপমাত্রা বেড়ে এপ্রিল মাস আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
তবে মে মাসেও গরমের দাপট থাকতে পারে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ১৯৭২ সালে এই মে মাসেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল, ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
তিনি বলেন, ‘জলীয়বাষ্প পুঞ্জীভূত হয়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা। সেটি পুঞ্জীভূত না হয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এ কারণেই গরম বেশি পড়ছে।’
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
বৈশাখে কালবৈশাখীসহ ঝড়-ঝাঁপটা হবে, এমনটাই নিয়ম। কিন্তু মধ্য বৈশাখ পার হলেও আবহাওয়ায় ঝড়বৃষ্টি হওয়ার কোনো আভাস নেই। টানা ২৮ দিন এমন দাবদাহ এর আগে কবে দেখেছে দেশ অনেকেই বলতে পারে না। ৬০ বছর বয়সী রিশকাচালক গিয়াসউদ্দীন ঘাম মুছতে মুছতে এমনটাই বলেন। তিনি বলেন, দুপুরের রোদ থেকে যেন আগুন বের হচ্ছে। আগুনের ফুলকি গায়ে এসে লাগছে। এমন রোদে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে গায়ে ফোসকা পড়বে মনে হয়।
‘চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতে তাপপ্রবাহ কমার সম্ভাবনা নেই’ বলে বলছেন আবহাওয়াবিদেরা। দিনে গরম তো থাকবেই, রাতেও বয়ে যাবে গরম বাতাস আর তা অব্যাহত থাকবে চলতি মাসজুড়ে। এরই মধ্যে জানা গেল ১৫ বৈশাখ রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে আবারো তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা হিট অ্যালার্ট জারি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত টানা ২৮ দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে।
রাজধানীতে শনিবার (২৭ এপ্র্রিল) আগের দিনের তুলনায় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমলেও গরমের কষ্ট কমেনি। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বাতাসে আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়ায় গরমে অস্বস্তিকর অনুভূতি বেড়ে গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) তিন দিনের তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা (হিট অ্যালার্ট) জারি করে। সেই হিট অ্যালার্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে শনিবার। কিন্তু তাপপ্রবাহ কমার কোনো লক্ষণ নাই, নাই বৃষ্টির আভাস। এমন পরিস্থিতিতে রোববার থেকে আবারো তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
‘মে মাসের ২ তারিখের দিকে বৃষ্টি হতে পারে, যা কয়েকদিন থাকার সম্ভাবনা আছে, তখন তাপমাত্রা কমে আসবে। সে পর্যন্ত গরম সহ্য করতে হবে’ বলে জানান আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।
ঢাকাসহ কয়েকটি স্থানে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শনিবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মোটামুটি আগের মতোই রয়েছে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, যা এ মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শুক্রবার যা ছিল ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে হয়েছে ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার চুয়াডাঙ্গা ছাড়া দেশের কোথাও দিনের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে নেই। ২৬ এপ্রিল শুক্রবার রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বইছিল অর্থাৎ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘এপ্রিল ও মে মাসে আমাদের দেশে সবচেয়ে উষ্ণ মাস। কিন্তু এবার পৃথিবীর অনেক দেশেই গরমের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। পূর্ব এশিয়ার মায়ানমার থেকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া হয়ে লাওস পর্যন্ত, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান পর্যন্ত তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।’
মল্লিক বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং এই অঞ্চলে দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বৈশ্বিক আবহাওয়ায় এল নিনোর প্রভাবের কারণে অভ্যন্তরীণ তাপ তৈরি হয়েছে। মূলত এই তিন কারণে উষ্ণতা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
এবার বৃষ্টিপাতের প্রবণতা না থাকায় চৈত্র মাসের শেষ সময় থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে ৩১ মার্চ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়তে থাকে।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুকের মতে, ‘গত বছর বাতাসে আর্দ্রতা কম ছিল। এবার আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে মানুষের শরীর ঘামছে, অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। এই সময়ে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়।এবার বৃষ্টিপাত কম। কালবৈশাখী এবং বৃষ্টি না থাকার কারণে এবার গরমের তীব্রতা বেশি।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত ত্রিশ বছরে বাংলাদেশের আবহাওয়া আগের তুলনায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাত ও শীতের দিন কমছে, বছরের বড় অংশজুড়ে গরমের বিস্তার বাড়ছে। গড় তাপমাত্রা বেড়ে এপ্রিল মাস আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
তবে মে মাসেও গরমের দাপট থাকতে পারে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ১৯৭২ সালে এই মে মাসেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল, ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
তিনি বলেন, ‘জলীয়বাষ্প পুঞ্জীভূত হয়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা। সেটি পুঞ্জীভূত না হয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এ কারণেই গরম বেশি পড়ছে।’