সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

রিমালের যাত্রাপথের গতি ধীর হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে

image
ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষতির চিহ্ন দৃশ্যমান। মঙ্গলবার ঝালকাঠির একটি এলাকার চিত্র-সংবাদ

রিমালের যাত্রাপথের গতি ধীর হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ঘূর্ণিঝড় রিমাল ধীরগতিতে এগিয়ে আসায় বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। প্রায় ১২০ কিলোমিটার ঘূর্ণন গতি নিয়ে গত রোববার সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এরপর ধীরে ধীরে আগাতে শুরু করে সামনের দিকে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের ধ্বংসযজ্ঞ আরও ব্যাপক হতে পারতো যদি না সুন্দরবন থাকতো। প্রতিবারের মতো প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি কমিয়ে দিয়ে উপকূলকে বড় ক্ষয়ক্ষতি থেকে এবারও রক্ষা করল সুন্দরবন। এবারও উপকূল রক্ষায় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন বলে জানান বাংলাদেশ পরিবেশবিদ সোসাইটির সভাপতি এ.কে.এম. হুমায়ুন কবীর দেওয়ান।

তিনি জানান, স্থলে উঠে যাওয়ার পরও বহু সময় ধরে দমকা বাতাস ও ভারী বর্ষণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। গাছের গোড়া দুর্বল হয়ে উপড়ে পড়তে থাকে। ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। রিমাল ঝড় বাংলাদেশে প্রবেশের পর প্রথমেই তাণ্ডবের শিকার হয় বাংলাদেশের ঢাল হিসেবে পরিচিত সুন্দরবন। এরপর সাতক্ষীরা, যশোর, মাগুরা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ হয়ে টাঙ্গাইল ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট দিয়ে ভারতের আসামে চলে যায়।

ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব কত প্রলয়ংকারী হতে পারে, আবারও তার সাক্ষী হলো বাংলাদেশ। সময় যত গড়াচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের ধ্বংসলীলা। দমকা বাতাস আর ভারী বৃষ্টি কমতে শুরু করার পর দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবলীলার ক্ষত চিহ্নগুলো ফুটে উঠতে শুরু করেছে।

জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষ করে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায়, মানুষকে এখন সবচেয়ে বেশি মোকাবিলা করতে হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে বলছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)’র সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তার মতে তীব্র দাবদাহ, খরা, দাবানলের সঙ্গে বেড়ে চলছে অতি বৃষ্টি, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়। আর এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো বদ্বীপ দেশগুলো।

গত রোববার রাত আটটার দিকে উপকূলে আছড়ে পরার ব্যাপক তাণ্ডব চালাতে শুরু করে রিমাল। আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে রূপ নিলেও, প্রায় ৩৬ ঘণ্টা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থান করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালায়।

১৫ বছর আগে বাংলাদেশের ভূমিতে ঘূর্ণিঝড় আইলা যে প্রলয় চালিয়েছিল, রিমালের দীর্ঘসময় ধরে চালানো তাণ্ডবেও একই রকমের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সরকারের সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা মনে করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩৭ লাখ মানুষ, বিধ্বস্ত দেড় লাখ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩৭ লাখ মানুষ, বিধ্বস্ত দেড় লাখ বাড়ি।

পরিবেশবিদ সোসাইটির সভাপতি এ.কে.এম. হুমায়ুন কবীর দেওয়ান বলেন, নিজেকে নিশ্চিহ্ন করে অকৃপণভাবে বারবার বুক পেতে মানুষকে রক্ষা করছে সুন্দরবন। এর আগে ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, ২০২০ সালে সুপার সাইক্লোন আম্পানের তাণ্ডব থেকে সুন্দরবন উপকূলে বসবাস ৩০ লক্ষাধিক মানুষকে বাঁচিয়ে দিয়েছে এই সুন্দরবন।

বন বিভাগ জানিয়েছে, সুন্দরবন এলাকায় প্রায় সাড়ে চার হাজার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রায় ৭২ হেক্টর জমির সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই গাছ না থাকলে গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো বলে ধারণা পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক হিসাবে বলা হচ্ছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে দেড় লাখের বেশি বাড়িঘর সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৩৭ লাখ মানুষ। আর কেড়ে নিয়েছে ২১টি প্রাণ।

প্রবল জোয়ারের তোড়ে বহু জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ উপকূলের বহু এলাকা। জলোচ্ছ্বাসের ১০ থেকে ১২ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। জীব বৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা সেখানে। ভেসে গেছে উপকূলের বহু মাছের ঘের, প্লাবিত হওয়া উপকূলের নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে লবণাক্ত পানি।

রিমাল মোকাবেলা প্রসঙ্গে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেন, আমরা সফল ভাবে ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রণালয় গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে যার ফলে বড় ধরণের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

মঙ্গলবার (২৮ মে) থেকেই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করার কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে মোট ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার কথা বললেও বিকেল হতে হতেই জানা যায় রিমালের আঘাতে মারা যান মোট ২১ জন।

তিনি বলেন, আমরা সরকারের সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দুর্যোগ পূর্ব কার্যক্রম পরিচালনা করেছি এখন দুর্যোগ পরবর্তী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পূর্বাভাস দিয়েছে এবং আগাম কার্যাবলী ও সাড়া প্রদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আমরা আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহওয়া কেন্দ্রের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস মডেল নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সময়োপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পটুয়াখালীতে ৩ জন, চট্টগ্রামে ২ জন, ঢাকায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, বরিশালে ৩ জন এবং খুলনা, সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, বরগুনা, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লায় একজন করে মোট ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

দুর্যোগ কবলিত মানুষের সাহায্যে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৫ জেলায় জিআর (ক্যাশ) ৩ কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, ৫ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ ও গৃহপালিত পশুর খাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» গ্যাস সংকটের প্রতিবাদে শনির আখড়ায় তিন ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ

» সিরাজগঞ্জে মরিয়ম হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন

» বেতাগীতে ঘনকুয়াশা, হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত

» মোরেলগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ ৫ বছরেও সম্পন্ন হয়নি

» বোয়ালখালীতে খালের গর্ভে বিলীন চলাচলের সড়ক

» রাউজানে আগুনে পুড়েছে ৩ পরিবারের বসতঘর

» রৌমারীতে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু

» রায়গঞ্জে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটায় ৪ ব্যক্তির জেল-জরিমানা

» পোরশায় গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

» প্রকৌশলীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

» টুঙ্গিপাড়ায় এনসিপির সমন্বয় কমিটি গঠন

» হবিগঞ্জে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

» নোয়াখালীতে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে যুবক খুন

» সাঘাটায় হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপনে আলোচনা সভা

» বরুড়ায় কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ

» মহেশপুরে বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুতি সভা

» ‘লাইনম্যানের’ দৌরাত্মে দিশেহারা সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা

» ভালুকায় ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোষক কারিগরদের

» মীরসরাইয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে এক যুগের পুরোনো ভবন

» ধানের দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় কৃষকরা

সম্প্রতি