যৌথবাহিনীর অভিযানে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ যে পাঁচজনকে সোমবার রাতে আটকের পর দুজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ তুলছেন পরিবারের সদস্য ও অন্য আটককৃতরা।
আটকরা হলেন- সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন সুইট (৫০), তার ভাতিজা গোবিন্দী গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে সোহরাব হোসেন আপেল (৩৫), চেয়ারম্যানের গৃহকর্মী ও উত্তর সাথালিয়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫), চেয়ারম্যানের মোটরসাইকেলের চালক ও ভরতখালী বাঁশহাটি এলাকার রিয়াজুল ইসলাম রকি (২৮) এবং চেয়ারম্যানের প্রতিবেশী শাহাদৎ হোসেন।
গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার মো. মোশারফ হোসেন মঙ্গলবার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি ও বাঁশহাটি এলাকা থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইটসহ পাঁচজনকে আটক করে। এর পর অসুস্থ হওয়ায় তাদের মধ্যে দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিকুল ও আপেল নামের দুইজনের মৃত্যু হয়।
তাদের মধ্যে মৃত সোহরাব হোসেন আপেল গোবিন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী পদে চাকরি করতেন। তিনি গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে মারা যান। আর শফিকুল ইসলামকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
আটক ও নিহতদের স্বজনরা বলছেন, যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে। এরপর তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র আছে দাবি করে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালায়। কিন্তু কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি।
স্বজনদের অভিযোগ, আটকদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তাতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম ও রিয়াজুল ইসলাম রকিকে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকি তিনজনকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ,হাসপাতালে ভর্তির সময় তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিলো। তবে, সেগুলোই মৃত্যুর কারণ কি না তা নিয়ে সন্দিহান তারা।
গাইবান্ধা সদর হাসপাতলে চিকিৎসাধীন ইউপি চেয়ারম্যান সুইট জানান, সোমবার রাত ১২ টার দিকে তাদের বাড়িতে অভিযানে যায় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে অভিযানকারীরা কিছু পায়নি। যদিও গ্রেফতারের পর তোলা ছবিতে কয়েকটি দেশি অস্ত্র দেখা যায়।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সাহাদত হোসেন। তিনি জানান, স্থানীয় বাজার থেকে তাকে আটক করা হয়। নিয়ে আসা হয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে। পেছনে থেকে বাড়ি শুরু করছে। বলে, তোরা চেয়ারম্যানের ক্যাডার... পাঁচ মিনিট যদি রেস্ট দেয়, দশ মিনিট পিটায়।
নিহত সোহরাব হোসেন আপেলের স্ত্রীর দাবি, পরিবারের সবাইকে একটা রুমে আটকে রেখে আপেলকে মারধোর করা হয়। আমার স্বামীর কাছে কোন অস্ত্র ছিল না। সে দাপাচ্ছিল।
আপেলের স্ত্রীর চাচাতো ভাই মো. বিপ্লব বলেন, প্রশাসন যে একটা লোককে মারতে মারতে মাইরে ফেলায় দিবে, এটা আমাদের জানা ছিল না।
সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রিয়াদ আহম্মেদ বলেন, যৌথ বাহিনীর হাতে আটক পাঁচজনকে মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হয়েছিল। কিন্তু এখানে তাদের সবার শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া এবং গাইবান্ধায় স্থানান্তর করা হয়।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও মোহাম্মদ আসিফ বলেন, সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার মধ্যে আপেলের শরীরে মারধরের আঘাতের চিহ্ন ছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর পৌনে ১টার দিকে তিনি মারা যান। লাশের ময়নাতদন্ত হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া মৃত্যুর কারণ বলা যাচ্ছে না।
এই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহাবুব হোসেন বলেন, অসুস্থ অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে তিনজন ভর্তি হয়। ভর্তির পর থেকে তাদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলেও আপেল নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ও আহতদের শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ রাতে বলেন, গাইবান্ধার শফিকুল ইসলাম হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ইবনে মিজান বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক দুইজন অসুস্থজনিত কারণে মারা যান।
 
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
যৌথবাহিনীর অভিযানে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ যে পাঁচজনকে সোমবার রাতে আটকের পর দুজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ তুলছেন পরিবারের সদস্য ও অন্য আটককৃতরা।
আটকরা হলেন- সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন সুইট (৫০), তার ভাতিজা গোবিন্দী গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে সোহরাব হোসেন আপেল (৩৫), চেয়ারম্যানের গৃহকর্মী ও উত্তর সাথালিয়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫), চেয়ারম্যানের মোটরসাইকেলের চালক ও ভরতখালী বাঁশহাটি এলাকার রিয়াজুল ইসলাম রকি (২৮) এবং চেয়ারম্যানের প্রতিবেশী শাহাদৎ হোসেন।
গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার মো. মোশারফ হোসেন মঙ্গলবার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি ও বাঁশহাটি এলাকা থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইটসহ পাঁচজনকে আটক করে। এর পর অসুস্থ হওয়ায় তাদের মধ্যে দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিকুল ও আপেল নামের দুইজনের মৃত্যু হয়।
তাদের মধ্যে মৃত সোহরাব হোসেন আপেল গোবিন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী পদে চাকরি করতেন। তিনি গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে মারা যান। আর শফিকুল ইসলামকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
আটক ও নিহতদের স্বজনরা বলছেন, যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে। এরপর তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র আছে দাবি করে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালায়। কিন্তু কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি।
স্বজনদের অভিযোগ, আটকদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তাতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম ও রিয়াজুল ইসলাম রকিকে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকি তিনজনকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ,হাসপাতালে ভর্তির সময় তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিলো। তবে, সেগুলোই মৃত্যুর কারণ কি না তা নিয়ে সন্দিহান তারা।
গাইবান্ধা সদর হাসপাতলে চিকিৎসাধীন ইউপি চেয়ারম্যান সুইট জানান, সোমবার রাত ১২ টার দিকে তাদের বাড়িতে অভিযানে যায় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে অভিযানকারীরা কিছু পায়নি। যদিও গ্রেফতারের পর তোলা ছবিতে কয়েকটি দেশি অস্ত্র দেখা যায়।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সাহাদত হোসেন। তিনি জানান, স্থানীয় বাজার থেকে তাকে আটক করা হয়। নিয়ে আসা হয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে। পেছনে থেকে বাড়ি শুরু করছে। বলে, তোরা চেয়ারম্যানের ক্যাডার... পাঁচ মিনিট যদি রেস্ট দেয়, দশ মিনিট পিটায়।
নিহত সোহরাব হোসেন আপেলের স্ত্রীর দাবি, পরিবারের সবাইকে একটা রুমে আটকে রেখে আপেলকে মারধোর করা হয়। আমার স্বামীর কাছে কোন অস্ত্র ছিল না। সে দাপাচ্ছিল।
আপেলের স্ত্রীর চাচাতো ভাই মো. বিপ্লব বলেন, প্রশাসন যে একটা লোককে মারতে মারতে মাইরে ফেলায় দিবে, এটা আমাদের জানা ছিল না।
সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রিয়াদ আহম্মেদ বলেন, যৌথ বাহিনীর হাতে আটক পাঁচজনকে মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হয়েছিল। কিন্তু এখানে তাদের সবার শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া এবং গাইবান্ধায় স্থানান্তর করা হয়।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও মোহাম্মদ আসিফ বলেন, সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার মধ্যে আপেলের শরীরে মারধরের আঘাতের চিহ্ন ছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর পৌনে ১টার দিকে তিনি মারা যান। লাশের ময়নাতদন্ত হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া মৃত্যুর কারণ বলা যাচ্ছে না।
এই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহাবুব হোসেন বলেন, অসুস্থ অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে তিনজন ভর্তি হয়। ভর্তির পর থেকে তাদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলেও আপেল নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ও আহতদের শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ রাতে বলেন, গাইবান্ধার শফিকুল ইসলাম হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ইবনে মিজান বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক দুইজন অসুস্থজনিত কারণে মারা যান।
