বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারাসমৃদ্ধ পিরোজপুরের বিভিন্ন অঞ্চল। এশিয়ার বিখ্যাত এই পেয়ারাকে স্থানীয় ভাষায় গইয়া কিংবা সবরি বলা হয়। তবে জাতীয়ভাবে এটি পেয়ারা নামে পরিচিত। পুষ্টিমানের দিক থেকে একটি পেয়ারা চারটি আপেলের সমতুল্য বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তাই পেয়ারাকে কেউ বলে ‘বাংলার আপেল’ আবার কেউ বলে ‘গরিবের আপেল’।
বর্ষা মৌসূমে এই এলাকা থেকে লাখ লাখ টন পেয়ারা সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। পেয়ারা চাষ সেখানকার কৃষকের প্রধান জীবিকা হলেও নানা ‘প্রতিবন্ধকতার’ কারণে তারা লাভবান হতে পারেনি। ফসলটি দ্রুত পচনশীল হওয়ায় বিক্রি করতে না পারলে চাষিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। তবে, স্থানীয় বাসিন্দা ও চাষীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপনন অধিদপ্তর।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ইতোমধ্য বরিশাল বিভাগের বরিশাল, ঝলাকাঠি ও পিরোজপুর জেলায় ‘পেয়ারা প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্রান্ডিং ও বিপণন কার্যক্রম সম্প্রসারণ’ নামক একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। কর্মসূচির আওতায় ওই এলাকার আগ্রহীদেরকে হাতে-কলমে পেয়ারার জ্যাম, জেলি, জুস, টফি ও আচার বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে পারদর্শী করে তোলার কাজ চলমান রয়েছে।
কর্মসূচির লক্ষ্য আগামীতে ৩ হাজার পেয়ারা চাষী, গৃহিণী, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ অনেক সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদেরকে পেয়ারার প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্য তৈরিতে পারদর্শী করে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের প্রক্রিয়াজাতকরণে সহায়তা করে এমন বিভিন্ন সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে যা এখনও চলমান আছে। কার্যক্রমটি ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে।
কর্মসূচির আওতায় এই অঞ্চলের তিনটি জেলার মানুষকে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ও কম পুঁজি বিনিয়োগ করে পেয়ারার প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্য তৈরি এবং বিপণনের মাধ্যমে নিজেদের এবং সার্বিকভভাবে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেবিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
কর্মসূচিতে থেকে সহায়তা পাওয়া পিরোজপুরের নেছারবাদ উপজেলার আটঘর গ্রামের জসিম। স্থানীয় একটি কলেজে পাস কোর্সে ডিগ্রি পড়ছেন। তিনি জানালেন, বছরের পর বছর প্রচুর উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েন। এছাড়া পেয়ারা সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থা না হওয়ায় জ্যাম-জেলি প্রস্তুত কারখানাও গড়ে ওঠেনি। তাই আমি পরিবারের উৎসাহে পেয়ারার নানান ধরনের জ্যাম জ্যালি টাফি তৈরির প্রশিক্ষণ নেই।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু এলাকায় কারখানা তৈরির সুযোগ কম সেহেতু আমরা চাষীরা যদি জ্যাম জেলি তৈরির প্রশিক্ষণ নেই তাহলে এলাকার পেয়ারা চাষীরা ভালো দাম পাবে তেমনি এই এলাকায়ও একটা নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। তাই আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছি।’
পেয়ারা প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্রান্ডিং, ও বিপণন কার্যক্রম সম্প্রসারণ কর্মসূচির পরিচালক মো. সানোয়ার হোসেন সংবাদকে বলেন ‘দেশি পেয়ারা চাষ এই অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যবাহী একটি পেশা এবং আয়ের অন্যতম উৎস। এই পেয়ারাকে কেন্দ্র করে মৌসুমে এই অঞ্চলে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে পর্যটকের সমাগম ঘটে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো ভরা মৌসুমে এই অঞ্চলের পেয়ারা চাষীরা ফল হিসেবে পেয়ারা ন্যায্যমূল্য পায় না এবং সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর পেয়ারা নষ্ট হয়।’
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মাসুদ করিম সংবাদকে বলেন, ‘একটি কর্মসূচির আওতায় এ অঞ্চলের পেয়ারা চাষীদেরকে আমরা নিবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেয়ারা হতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া জাত পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা প্রদান করেছি। এখন আমাদের অধিদপ্তর স্থানীয় উদ্যোক্তাদের তৈরি এসব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর পেয়ারা জাত পণ্য বিক্রির জন্য বাজার সংযোগ তৈরি করে দেবে; এছাড়াও কোন উদ্যোক্তা/সমবায় সমিতির প্রতিনিধি চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে স্থাপিত কৃষক বাজারে এগুলো বিক্রি করতে পারবে, যার জন্য কোন প্রকার অর্থ ব্যয় করতে হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতে বড় কোন প্রকল্পের আওতায় এসব উদ্যোক্তাকে দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদানসহ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।’
সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো পেয়ারা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষক ও প্রক্রিয়াজাতকারীদের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করা। সেইসাথে ভ্যালু চেইন ও সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা। এছাড়াও পেয়ারা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নত টেকসই বিপণন ব্যবস্থা তৈরি করা। যার মাধ্যমে কৃষকদের আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে।’
শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারাসমৃদ্ধ পিরোজপুরের বিভিন্ন অঞ্চল। এশিয়ার বিখ্যাত এই পেয়ারাকে স্থানীয় ভাষায় গইয়া কিংবা সবরি বলা হয়। তবে জাতীয়ভাবে এটি পেয়ারা নামে পরিচিত। পুষ্টিমানের দিক থেকে একটি পেয়ারা চারটি আপেলের সমতুল্য বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তাই পেয়ারাকে কেউ বলে ‘বাংলার আপেল’ আবার কেউ বলে ‘গরিবের আপেল’।
বর্ষা মৌসূমে এই এলাকা থেকে লাখ লাখ টন পেয়ারা সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। পেয়ারা চাষ সেখানকার কৃষকের প্রধান জীবিকা হলেও নানা ‘প্রতিবন্ধকতার’ কারণে তারা লাভবান হতে পারেনি। ফসলটি দ্রুত পচনশীল হওয়ায় বিক্রি করতে না পারলে চাষিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। তবে, স্থানীয় বাসিন্দা ও চাষীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপনন অধিদপ্তর।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ইতোমধ্য বরিশাল বিভাগের বরিশাল, ঝলাকাঠি ও পিরোজপুর জেলায় ‘পেয়ারা প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্রান্ডিং ও বিপণন কার্যক্রম সম্প্রসারণ’ নামক একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। কর্মসূচির আওতায় ওই এলাকার আগ্রহীদেরকে হাতে-কলমে পেয়ারার জ্যাম, জেলি, জুস, টফি ও আচার বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে পারদর্শী করে তোলার কাজ চলমান রয়েছে।
কর্মসূচির লক্ষ্য আগামীতে ৩ হাজার পেয়ারা চাষী, গৃহিণী, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ অনেক সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদেরকে পেয়ারার প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্য তৈরিতে পারদর্শী করে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের প্রক্রিয়াজাতকরণে সহায়তা করে এমন বিভিন্ন সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে যা এখনও চলমান আছে। কার্যক্রমটি ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে।
কর্মসূচির আওতায় এই অঞ্চলের তিনটি জেলার মানুষকে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ও কম পুঁজি বিনিয়োগ করে পেয়ারার প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্য তৈরি এবং বিপণনের মাধ্যমে নিজেদের এবং সার্বিকভভাবে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেবিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
কর্মসূচিতে থেকে সহায়তা পাওয়া পিরোজপুরের নেছারবাদ উপজেলার আটঘর গ্রামের জসিম। স্থানীয় একটি কলেজে পাস কোর্সে ডিগ্রি পড়ছেন। তিনি জানালেন, বছরের পর বছর প্রচুর উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েন। এছাড়া পেয়ারা সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থা না হওয়ায় জ্যাম-জেলি প্রস্তুত কারখানাও গড়ে ওঠেনি। তাই আমি পরিবারের উৎসাহে পেয়ারার নানান ধরনের জ্যাম জ্যালি টাফি তৈরির প্রশিক্ষণ নেই।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু এলাকায় কারখানা তৈরির সুযোগ কম সেহেতু আমরা চাষীরা যদি জ্যাম জেলি তৈরির প্রশিক্ষণ নেই তাহলে এলাকার পেয়ারা চাষীরা ভালো দাম পাবে তেমনি এই এলাকায়ও একটা নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। তাই আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছি।’
পেয়ারা প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্রান্ডিং, ও বিপণন কার্যক্রম সম্প্রসারণ কর্মসূচির পরিচালক মো. সানোয়ার হোসেন সংবাদকে বলেন ‘দেশি পেয়ারা চাষ এই অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যবাহী একটি পেশা এবং আয়ের অন্যতম উৎস। এই পেয়ারাকে কেন্দ্র করে মৌসুমে এই অঞ্চলে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে পর্যটকের সমাগম ঘটে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো ভরা মৌসুমে এই অঞ্চলের পেয়ারা চাষীরা ফল হিসেবে পেয়ারা ন্যায্যমূল্য পায় না এবং সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর পেয়ারা নষ্ট হয়।’
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মাসুদ করিম সংবাদকে বলেন, ‘একটি কর্মসূচির আওতায় এ অঞ্চলের পেয়ারা চাষীদেরকে আমরা নিবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেয়ারা হতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া জাত পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা প্রদান করেছি। এখন আমাদের অধিদপ্তর স্থানীয় উদ্যোক্তাদের তৈরি এসব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর পেয়ারা জাত পণ্য বিক্রির জন্য বাজার সংযোগ তৈরি করে দেবে; এছাড়াও কোন উদ্যোক্তা/সমবায় সমিতির প্রতিনিধি চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে স্থাপিত কৃষক বাজারে এগুলো বিক্রি করতে পারবে, যার জন্য কোন প্রকার অর্থ ব্যয় করতে হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতে বড় কোন প্রকল্পের আওতায় এসব উদ্যোক্তাকে দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদানসহ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।’
সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো পেয়ারা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষক ও প্রক্রিয়াজাতকারীদের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করা। সেইসাথে ভ্যালু চেইন ও সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা। এছাড়াও পেয়ারা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নত টেকসই বিপণন ব্যবস্থা তৈরি করা। যার মাধ্যমে কৃষকদের আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে।’