alt

সারাদেশ

ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব কেটে গেলেও কৃষকের মনে বিষাদ

শাফিউল আল ইমরান : শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে দেশের উত্তরাঞ্চলের আমনের ধানের বাপক ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও কাচা ধান গাছ নুয়ে পড়েছে, আবার কোথাও পাকা ধান। ক্ষতির মুখে পড়েছে শীতকালীন আগাম শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য চাষ।

অন্যদিকে, দানার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠিতে মাছের ঘের, কৃষির ক্ষতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে ধসে পড়েছে কাঁচা বাড়িঘর, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ি বাঁধ।

কঠোর পরিশ্রম করে দুই দফায় বন্যার হাত থেকে আমন ধানের ক্ষেত রক্ষা করলেও দমকা হাওয়ায় মাটিতে মিশে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। গত শুক্রবার সারা দিন ও রাতে হালকা বর্ষণ এবং দমকা হাওয়ায় কারণে ধানগাছ নুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা।

কৃষকরা জানান, দেশের অধিকাংশ মানুষ জীবন-জীবিকার জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল। চলতি রোপা আমন মৌসুমে খরা আর বন্যাসহ নানা প্রতিকূল অবস্থা পেরিয়ে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। অধিকাংশ কৃষক বাড়তি খরচে সেচ দিয়ে রোপণ করেছেন এই ধানচারা।

দু’দিনের ঝড়িত পড়ে ৩০ ভাগ ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, এখন তো মনে হওচে পোশবালায়: রংপুরের পীরগঞ্জের কৃষক শহিদুল ইসলাম

জলবায়ু পরিবর্তণের কারণে বন্যা ও অতি বৃষ্টির পর আগাছা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করে প্রয়োজনীয় সার ও পরিচর্যার মাধ্যমে আমন ক্ষেত রক্ষা করতে সমর্থ হন কৃষকরা।

ইতোমধ্যে এই ক্ষেতের ধান বড় হতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও তা পাকতেও দেখা গেছে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় দানা’র প্রভাবে গত দু’দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে রোপা আমন ক্ষেত নুয়ে পড়েছে মাটিতে। যার ফলে অভাবনীয় ক্ষতির শঙ্কায় আছে কৃষকরা। পানিতে পড়ে যাওয়ায় এসব ধান সমূলে চিটা হয়ে যাবে বলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে জমিতে কেটে রাখা ধান নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন তারা। ধানগুলো ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমন চাষিরা।

জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষির জন্য বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রাকে ধর্তব্য হিসেবে নিয়ে নতুন কৃষিপঞ্জিকা তৈরী ও কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলের আলাদা কৃষি পঞ্জিকা প্রণয়ন জরুরী: মুহম্মদ আবদুর রহমান

তারা বলছেন, নুয়ে যাওয়া ধান গাছগুলোতে পোকার আক্রমণ শুরু হবে। পরে ধানের পরিবর্তে শুধু শুষ্ক ছিটা পাওয়া যাবে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এছাড়াও আমন চাষিদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগাম শীতকালীন সবজি ও আলু চাষিরা।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার চক দাতিয়া গ্রামের আজগর আলী বলেন, ‘৪ বিঘা জমিত ধান চাষ করচি, এরমধ্য ২ বিঘা জমির ধান আধা-পাকা হইচে(হইছে)। বাকী জমির ধানে মুকুল ও শীষ দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে ঝড়-বৃষ্টিতে ধান জমিতে শুতে(পড়ে) গেছে। এ কারণে এবছর ধানে পাতান (চিটা) হতে পারে।’

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শালমারা গ্রামের কেরামত আলী বলেন, ‘এবার ঝড়িট্যা অনেক ক্ষতি করলো। ধান পাকার সময় ঝড়ি(বৃষ্টি) হলে ধানোত খালি পাতান(চিটা) হয়, পাতান হলে ফলন কমে যায়। আবার ধান কাটতে বেশি কিশান (অধিক মজুরি) নাগে(লাগে), ধানের গাছও পচে(নষ্ট) যায়, আর পচে গেলে পোয়াল(খড়) কম হয়, ধানের রং মরে যায় (নষ্ট হয়) আর দাম কমে যায়। তখন তো আবাদ করে পোশবালায়(লাভ হয়না)।’

রংপুরের পীরগঞ্জের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছরে ৩ বিঘা জমিত আমন ধান আবাদ করেচিনো। পহেলা (প্রথম) দিকে মনেহল; খুব ভালো আবাদ হবি (বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা ছিল)। গত দু’দিনের ঝড়ির(বৃষ্টিতে) পড়ে ৩০ ভাগ ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এখন তো মনে হওচো(হচ্ছে) পোশবালায়(লাভ হয়না)। ’

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার রাণীগঞ্জের কৃষক আতাহার আলী বলেন, ‘আকাশ পরিষ্কার থাকায় জমিতে পাকা ধান কেটে রেখেছিলাম শুকানোর জন্য। পরশুদিন থেকে বৃষ্টি হওয়ায় এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছি। কারণ আমি পাকা ধানের খড় আটি করে বিক্রি করবো জন্য আগাম ধান লাগাইছি।’

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত করে ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুচক্রে মে মাসের শেষার্ধ থেকে জুলাই মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বর্ষাকাল হিসেবে ধরা হয়। এই দুই মাস বর্ষাকাল হলেও দেশে মে মাসের শেষ থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত কম-বেশী বৃষ্টি হতো। এই বৃষ্টির সাথে যোগসূত্র স্থাপন করেই বাংলাদেশের বিভিন্ন ফসল চাষ করার সুবিধার্থে তিনটি মৌসুম ধরে কৃষি পঞ্জিকা তৈরী হয়। চৈত্র বৈশাখ মাসে এদেশে আউশ ধান চাষ হতো, বৃষ্টি নির্ভর আমনের চাষ হতো মে মাসের দিকে আর রবিশস্যের মৌসুম শুরু হতো অক্টোবরে।

সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভায়রোনমেন্টের (সিপিই) পরিচালক জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে গেছে ষড়ঋতু, এবং সাথে সাথে চাষের অনুকূল প্রতিবেশও বদলে গেছে। এখন বর্ষা ১৫ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। ২০১৯ সালে বর্ষা এসেছিল জুনের প্রথম সপ্তাহে আবার ২০২৩ সালে বর্ষা আগস্টেও পুরোপুরি আসেনি। এখন নভেম্বর পর্যন্তও কোন কোন বছর বৃষ্টি হচ্ছে। দেরীতে বর্ষা আসায় বিঘ্নিত হচ্ছে আমনের চাষ।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমন এবং বর্ষা পিছিয়ে যাওয়ার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে রবিশস্যের চাষ। নভেম্বরের ভিতরে রবিশস্য চাষ করতে না পারলে রবি ফসলের অংকুরোদগম, বৃদ্ধি এবং ফলন শীতের কারণে কমে যাচ্ছে। আবার যেখানে বোরো চাষ করা হয় তাও আমনের সাথে পিছিয়ে যাওয়ায় বন্যা এলাকাগুলোতে ফসল কাটার সময়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল।’

মুহম্মদ আবদুর রহমান ‘পানিচক্রের এই পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষি এবং কৃষকের অর্থনৈতিক ক্ষতির হার বাড়িয়ে যাচ্ছে। যদিও কৃষি মৌসুম এখন আর পূর্বের কৃষি পঞ্জিকা মেনে চলছেনা কিন্তু বাংলাদেশের কৃষিপঞ্জিকা সংশোধনের কোন উদ্যোগ নেই। জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষির জন্য এখন বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রাকে ধর্তব্য হিসেবে নিয়ে নতুন কৃষিপঞ্জিকা তৈরী এবং বিভিন্ন কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলের জন্য আলাদা কৃষি পঞ্জিকা প্রণয়ন জরুরী।’

ছবি

বাজিতপুরে বাবাকে হত্যা: টাকা না পাওয়ার জেরে ছেলে ও বন্ধুদের গ্রেপ্তার

ছবি

বি‌জি‌বির অ‌ভিযা‌নে আড়াই কোটি টাকার জব্দ মোবাইল ডিসপ্লে জব্দ

ছবি

পার্বত্য উপদেষ্টার পদত্যাগ সহ ৩ দফা দাবীতে বাইশারীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ছবি

শিশুদের জীবন মান উন্নয়নে হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশনের Walk for Hope

যৌথ বাহিনীর অভিযান : গাজীপুরে রাম দা-চাপাতিসহ ৮ জন গ্রেপ্তার

ছবি

আরাকান আর্মির থেকে ২ কিশোরকে বিজিবির উদ্ধার

ছবি

সৈকতে গোসলে নেমে কিশোরের মৃত্যু

ছবি

নরসিংদীতে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৬ যাত্রী নিহত

ছবি

চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ, ৮ দাবিতে লংমার্চের ঘোষণা

ছবি

টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে মহেশখালীর উপকূলের মানুষ

ছবি

সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করে আলাদা করার আহ্বান সারজিস আলমের

ছবি

সাবেক হুইপ কমলের বডিগার্ড খোকন যৌথ অভিযানে গ্রেফতার

ছবি

রামুর রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্টিত

ছবি

ভারতে পালানোর সময় এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তা আটক

ছবি

ইসরায়েলী গণহত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে আলেমদের বিক্ষোভ

ছবি

আত্মগোপনে থাকা ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল গ্রেপ্তার

ছবি

শারদায় এবার ৫৯ জন এসআইকে শোকজ

ছবি

কক্সবাজারে মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

ছবি

গাজীপুরে রাস্তাগুলোর বেহাল দশা, ‘অতিরিক্ত ভারী যানবাহনই দায়ী’

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে উত্তাল সমুদ্র

ছবি

ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন প্রশ্নে উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিককে তলব

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে নৌ মহড়ার জেটি দ্বিখণ্ডিত

ছবি

রাজধানীতে গাঁজাসহ মাদককারবারি গ্রেপ্তার

ছবি

শেরপুরে ছাত্র হত্যা মামলায় সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

‘দানা’ : প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা, ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

ময়মনসিংহে ধর্ষণের শিকার শিশুটি

ছবি

কৃষকের অজান্তেই ঈশ্বরদী ছেড়ে গেছে কৃষি স্পেশাল ট্রেন!

ছবি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে রিয়্যাক্টর এসেম্বলির কাজ সম্পন্ন

ছবি

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই পদ্মায় ইলিশ নিধন, চরাঞ্চলের পাড়জুড়ে হাট বসিয়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রির ধুম

হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন আরঙ্গজেব নান্নু

ছবি

৭ম আন্তর্জাতিক Flight Safety Seminar 2024 এর সমাপনী অনুষ্ঠান

ছবি

স্বস্তি নিয়েই দিন পার বাংলাদেশের

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় তেলবাহী ট্রেনের ট্যাঙ্কার লাইনচ্যুত, যোগাযোগ বন্ধ

ছবি

গাজীপুরে দুই যুগে কমেছে দুই তৃতীয়াংশ বন ও জলাশয়

ছবি

‘নাশতা নিয়ে হইচই করায়’ ২৫২ জন প্রশিক্ষণরত এসআইকে অব্যাহতি

ছবি

আদালতে আইনজীবীদের হট্টগোল, চট্টগ্রামের হাকিম আদালতে বিচার কাজ স্থগিত

tab

সারাদেশ

ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব কেটে গেলেও কৃষকের মনে বিষাদ

শাফিউল আল ইমরান

শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে দেশের উত্তরাঞ্চলের আমনের ধানের বাপক ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও কাচা ধান গাছ নুয়ে পড়েছে, আবার কোথাও পাকা ধান। ক্ষতির মুখে পড়েছে শীতকালীন আগাম শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য চাষ।

অন্যদিকে, দানার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠিতে মাছের ঘের, কৃষির ক্ষতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে ধসে পড়েছে কাঁচা বাড়িঘর, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ি বাঁধ।

কঠোর পরিশ্রম করে দুই দফায় বন্যার হাত থেকে আমন ধানের ক্ষেত রক্ষা করলেও দমকা হাওয়ায় মাটিতে মিশে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। গত শুক্রবার সারা দিন ও রাতে হালকা বর্ষণ এবং দমকা হাওয়ায় কারণে ধানগাছ নুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা।

কৃষকরা জানান, দেশের অধিকাংশ মানুষ জীবন-জীবিকার জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল। চলতি রোপা আমন মৌসুমে খরা আর বন্যাসহ নানা প্রতিকূল অবস্থা পেরিয়ে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। অধিকাংশ কৃষক বাড়তি খরচে সেচ দিয়ে রোপণ করেছেন এই ধানচারা।

দু’দিনের ঝড়িত পড়ে ৩০ ভাগ ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, এখন তো মনে হওচে পোশবালায়: রংপুরের পীরগঞ্জের কৃষক শহিদুল ইসলাম

জলবায়ু পরিবর্তণের কারণে বন্যা ও অতি বৃষ্টির পর আগাছা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করে প্রয়োজনীয় সার ও পরিচর্যার মাধ্যমে আমন ক্ষেত রক্ষা করতে সমর্থ হন কৃষকরা।

ইতোমধ্যে এই ক্ষেতের ধান বড় হতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও তা পাকতেও দেখা গেছে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় দানা’র প্রভাবে গত দু’দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে রোপা আমন ক্ষেত নুয়ে পড়েছে মাটিতে। যার ফলে অভাবনীয় ক্ষতির শঙ্কায় আছে কৃষকরা। পানিতে পড়ে যাওয়ায় এসব ধান সমূলে চিটা হয়ে যাবে বলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে জমিতে কেটে রাখা ধান নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন তারা। ধানগুলো ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমন চাষিরা।

জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষির জন্য বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রাকে ধর্তব্য হিসেবে নিয়ে নতুন কৃষিপঞ্জিকা তৈরী ও কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলের আলাদা কৃষি পঞ্জিকা প্রণয়ন জরুরী: মুহম্মদ আবদুর রহমান

তারা বলছেন, নুয়ে যাওয়া ধান গাছগুলোতে পোকার আক্রমণ শুরু হবে। পরে ধানের পরিবর্তে শুধু শুষ্ক ছিটা পাওয়া যাবে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এছাড়াও আমন চাষিদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগাম শীতকালীন সবজি ও আলু চাষিরা।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার চক দাতিয়া গ্রামের আজগর আলী বলেন, ‘৪ বিঘা জমিত ধান চাষ করচি, এরমধ্য ২ বিঘা জমির ধান আধা-পাকা হইচে(হইছে)। বাকী জমির ধানে মুকুল ও শীষ দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে ঝড়-বৃষ্টিতে ধান জমিতে শুতে(পড়ে) গেছে। এ কারণে এবছর ধানে পাতান (চিটা) হতে পারে।’

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শালমারা গ্রামের কেরামত আলী বলেন, ‘এবার ঝড়িট্যা অনেক ক্ষতি করলো। ধান পাকার সময় ঝড়ি(বৃষ্টি) হলে ধানোত খালি পাতান(চিটা) হয়, পাতান হলে ফলন কমে যায়। আবার ধান কাটতে বেশি কিশান (অধিক মজুরি) নাগে(লাগে), ধানের গাছও পচে(নষ্ট) যায়, আর পচে গেলে পোয়াল(খড়) কম হয়, ধানের রং মরে যায় (নষ্ট হয়) আর দাম কমে যায়। তখন তো আবাদ করে পোশবালায়(লাভ হয়না)।’

রংপুরের পীরগঞ্জের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছরে ৩ বিঘা জমিত আমন ধান আবাদ করেচিনো। পহেলা (প্রথম) দিকে মনেহল; খুব ভালো আবাদ হবি (বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা ছিল)। গত দু’দিনের ঝড়ির(বৃষ্টিতে) পড়ে ৩০ ভাগ ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এখন তো মনে হওচো(হচ্ছে) পোশবালায়(লাভ হয়না)। ’

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার রাণীগঞ্জের কৃষক আতাহার আলী বলেন, ‘আকাশ পরিষ্কার থাকায় জমিতে পাকা ধান কেটে রেখেছিলাম শুকানোর জন্য। পরশুদিন থেকে বৃষ্টি হওয়ায় এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছি। কারণ আমি পাকা ধানের খড় আটি করে বিক্রি করবো জন্য আগাম ধান লাগাইছি।’

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত করে ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুচক্রে মে মাসের শেষার্ধ থেকে জুলাই মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বর্ষাকাল হিসেবে ধরা হয়। এই দুই মাস বর্ষাকাল হলেও দেশে মে মাসের শেষ থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত কম-বেশী বৃষ্টি হতো। এই বৃষ্টির সাথে যোগসূত্র স্থাপন করেই বাংলাদেশের বিভিন্ন ফসল চাষ করার সুবিধার্থে তিনটি মৌসুম ধরে কৃষি পঞ্জিকা তৈরী হয়। চৈত্র বৈশাখ মাসে এদেশে আউশ ধান চাষ হতো, বৃষ্টি নির্ভর আমনের চাষ হতো মে মাসের দিকে আর রবিশস্যের মৌসুম শুরু হতো অক্টোবরে।

সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভায়রোনমেন্টের (সিপিই) পরিচালক জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে গেছে ষড়ঋতু, এবং সাথে সাথে চাষের অনুকূল প্রতিবেশও বদলে গেছে। এখন বর্ষা ১৫ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। ২০১৯ সালে বর্ষা এসেছিল জুনের প্রথম সপ্তাহে আবার ২০২৩ সালে বর্ষা আগস্টেও পুরোপুরি আসেনি। এখন নভেম্বর পর্যন্তও কোন কোন বছর বৃষ্টি হচ্ছে। দেরীতে বর্ষা আসায় বিঘ্নিত হচ্ছে আমনের চাষ।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমন এবং বর্ষা পিছিয়ে যাওয়ার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে রবিশস্যের চাষ। নভেম্বরের ভিতরে রবিশস্য চাষ করতে না পারলে রবি ফসলের অংকুরোদগম, বৃদ্ধি এবং ফলন শীতের কারণে কমে যাচ্ছে। আবার যেখানে বোরো চাষ করা হয় তাও আমনের সাথে পিছিয়ে যাওয়ায় বন্যা এলাকাগুলোতে ফসল কাটার সময়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল।’

মুহম্মদ আবদুর রহমান ‘পানিচক্রের এই পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষি এবং কৃষকের অর্থনৈতিক ক্ষতির হার বাড়িয়ে যাচ্ছে। যদিও কৃষি মৌসুম এখন আর পূর্বের কৃষি পঞ্জিকা মেনে চলছেনা কিন্তু বাংলাদেশের কৃষিপঞ্জিকা সংশোধনের কোন উদ্যোগ নেই। জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষির জন্য এখন বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রাকে ধর্তব্য হিসেবে নিয়ে নতুন কৃষিপঞ্জিকা তৈরী এবং বিভিন্ন কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলের জন্য আলাদা কৃষি পঞ্জিকা প্রণয়ন জরুরী।’

back to top