alt

সারাদেশ

পদ্মাসেতু রেলপ্রকল্প

যশোরবাসীর দুর্ভোগ আর প্রতারণার নাম ‘পদ্মবিলা জংশন’

যশোর অফিস : সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪

# মূল স্টেশন শহর থেকে ১৮ কি.মি. দূরে পদ্মবিলা জংশন

# যশোরের জংশন বলা হলেও সেটি বাঘারপাড়া উপজেলায়

# ঢাকার রেলবঞ্চিত কোটচাঁদপুর-কালীগঞ্জের যাত্রীরা

যশোরবাসীর দুর্ভোগ আর প্রতারণার নাম ‘পদ্মবিলা জংশন’। পদ্মাসেতু হয়ে যশোর-ঢাকা রুটে যশোর থেকে এই পদ্মবিলা রেল জংশন দিয়ে ট্রেন চলাচলের তোড়জোড় চলছে। যশোর শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের এই স্টেশন থেকে ঢাকার ট্রেন ধরতে যাওয়া ‘বাস্তবতা বিবর্জিত’ সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করছেন যশোরবাসী। পদ্মবিলা বলা হলেও স্টেশনটি পদ্মবিলায় নয় বরং যশোর সদর উপজেলার বাইরে বাঘারপাড়া উপজেলায়। এটিকে প্রতারণা বলেও দাবি করা হচ্ছে। এ কারণে পদ্মবিলা জংশনের পরিবর্তে যশোর জংশন থেকে ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচলের দাবিতে আন্দোলনে মাঠে রয়েছে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই স্বপ্ন দেখে আসছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হওয়ায় পদ্মা সেতু দিয়ে নড়াইল হয়ে রেলপথে রাজধানীতে পৌঁছানোর যশোরবাসীর সেই স্বপ্ন এখন হাতছোঁয়া দূরত্বে। নতুন এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে রেলপথে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৯৩ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ব্রডগেজ রেললাইন দিয়ে ছুটবে ট্রেন। ঢাকা-ভাঙ্গা হয়ে (রাজবাড়ি-কুষ্টিয়া হয়ে) খুলনা, যশোর ও বেনাপোল রুটে বর্তমানে ট্রেন চলাচল চালু আছে। এতে দূরত্ব কমেছে তিন ঘণ্টার মতো। আর নড়াইল হয়ে সরাসরি রেল সংযোগ চালু হলে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাবে ট্রেন। সড়কপথে যশোর থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা, যা আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেক সময়। রেলপথটি ঢাকার কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এবং নড়াইলের ওপর দিয়ে যশোর গিয়ে শেষ হয়েছে। এই রেললিংক প্রকল্পে যশোর থেকে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া সম্ভব হবে।

কিন্তু বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মানুষের এই স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। রেলপথ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ট্রেনে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রাধানগর গ্রামের পদ্মবিলা রেল জংশন। যশোর শহরের মূল স্টেশন থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। এছাড়া, বেনাপোল থেকে প্রায় ৪০, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর স্টেশন থেকে প্রায় ৫০ এবং চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্টেশন থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে পদ্মবিলার অবস্থান। এই অঞ্চলের মানুষকে ট্রেনে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকায় যেতে হলে ১৮ থেকে ৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পদ্মবিলা স্টেশনে যেতে হবেÑ যা এই অঞ্চলের যাত্রীদের সময় ও দুর্ভোগ বয়ে আনবে। এ কারণে এই ট্রেনের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। ফলে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী রেলযোগাযোগের প্রকৃত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। তেমনি বিপুল সংখ্যক যাত্রী হারিয়ে রেলও রাজস্ব আয়ে পেছনের দিকেই ধাবিত হবে। তাই ভোগান্তি লাঘব, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে পদ্মাসেতুর রুটের সঙ্গে বেনাপোল, যশোর, দর্শনা ও কোটচাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন সংযুক্ত করার দাবি এ অঞ্চলের মানুষের।

সূত্র আরও জানায়, খুব দ্রুতই যশোর-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকার ট্রেনগুলো যশোরের পদ্মবিলা জংশন হয়ে গন্তব্যে যাত্রা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটিকে ‘বাস্তবতা বিবর্জিত’ সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি।

কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল জানান, বাস্তবতা উপলব্ধির জন্য আমরা সরেজমিন পরিদর্শনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা থেকে ইজিবাইকে চড়ে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে লোকাল বাসে চড়ে যশোর-খুলনা মহাসড়কের ঘুনি রাস্তার মোড়ে নেমে ভ্যানে চড়ে পদ্মবিলা জংশনে পৌঁছাই। তিনবার বাহন পরিবর্তন করে ১৮ কিলোমিটার দূরত্বের স্টেশনে পৌঁছাতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টার বেশি। ফলে পদ্মবিলা থেকে ট্রেন ধরে ঢাকায় যেতে হলে দু’ঘণ্টার বেশি সময় হাতে নিয়ে বের হতে হবে। ওই সময়ে মণিহার এলাকা থেকে বাসে চড়ে পদ্মাসেতুতে পৌঁছে যাওয়া যাবে।

কমিটির নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ শেফার্ড বলেন, পদ্মবিলা জংশনের সাথে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। লোকাল বাসসহ তিন বার যেমন বাহন পরিবর্তন করতে হবে, তেমনি ঘুনি রাস্তার মোড় থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার গ্রামের বন-জঙ্গল ও ক্ষেত খামারের মধ্যে দিয়ে সড়ক। ফলে এখানে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি থাকবে ঝুঁকিতে।

বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, পদ্মবিলা জংশন নাম দিয়ে যশোরবাসীর সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। পদ্মবিলা গ্রাম যশোর সদর উপজেলার মধ্যে। কিন্তু পদ্মবিলা জংশনটি স্থাপন করা হয়েছে বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে। অর্থাৎ সদর উপজেলার বাইরে অন্য উপজেলায় নিয়ে যশোরের জংশন দেখানো হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ সড়কের মোটর পার্টস ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বলেন, ‘পদ্মাসেতু দিয়ে ট্রেন যাত্রা আমাদের যশোর অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে। সকালে যেয়ে কাজ শেষ করে বিকালে বাড়ি ফিরতে পারবে। কিন্তু বৃহত্তর যশোরের যাত্রীদের স্টেশন করেছে পদ্মবিলাতে। এতোদূর থেকে পদ্মবিলা গিয়ে ট্রেন ধরা সময়-শ্রম-অর্থ সবকিছুই জন্য বিড়ম্বনার।’

বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব রুহুল আমীন বলেন, বর্তমানে যশোরবাসী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের ৩টি ট্রেন পাচ্ছেন। পদ্মাসেতু রেল প্রকল্প চালু হলে এ রুটে (নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু) মাত্র একটা ট্রেন পাবে। ফলে এই অঞ্চলের মানুষ রেলসেবা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হবে। পদ্মাসেতু আমাদের স্বপ্নেই থেকে যাবে। তাই বেনাপোল-যশোর-ঢাকা রুটে ২টি ও দর্শনা-যশোর-ঢাকা রুটে ২টি ট্রেন চালু এবং খুলনা থেকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকা রুটের ট্রেনগুলো বহাল রাখতে হবে। এই দাবি পূরণ হলে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন পদ্মবিলা হয়ে ঢাকায় গেলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যশোরের যাত্রীদের জন্য এই পাঁচটি ট্রেন দিতে হবে।

যশোর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, ঢাকার ট্রেনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা তারা পাননি। তবে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নিলে খুলনার ট্রেনগুলো যশোর জংশন হয়েও ঢাকায় যাওয়া সম্ভব।

গাজীপুরে কেয়া গ্রুপের ৪ কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা

ছবি

একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রিজভী

ছবি

সাটুরিয়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ তিন শিক্ষার্থীর হাজতবাস

ছবি

উখিয়ায় বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ২

ছবি

সারদায় প্রশিক্ষণরত আরও ৮ এসআইকে অব্যাহতি

ছবি

গাজীপুরের শ্রীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় এক ব্যবসায়ীর মৃত্যূ, আহত ৪

ছবি

অনুপ্রবেশে সহায়তা করায় তিন ভারতীয় গ্রেপ্তার

ছবি

লাস ভেগাসে ট্রাম্প হোটেলের বাইরে সাইবারট্রাকে বিস্ফোরণ, হতাহত ৮

ছবি

হিমেল হাওয়ায় বাড়ছে শীতের তীব্রতা, ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ

বর্ষবরণের রাতে গান বাজানো নিয়ে মারামারি: তরুণ খুন, আহত ১০

ছবি

কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ১৫০ কোটি টাকার চোরাচালানী জব্দ

ছবি

দুইদিনেও হদিস মেলেনি অপহৃত অপর ৯ জনের

ছবি

সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর ও তার স্ত্রীর ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

ছবি

থার্টিফার্স্ট উদযাপন করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

ছবি

গাজীপুরে চাঁদা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৩, ড্রাম ট্রাকে আগুন

ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত সহ-সমন্বয়ক গ্রেফতার

ছবি

অপহৃত ১৯ বনকর্মীর মধ্যে ১৮ জন উদ্ধার, আটক ২

ছবি

শিক্ষার্থীদের মার্চ ফর ইউনিটির গাড়িবহরে হামলা, সংঘর্ষে রণক্ষেত্র

ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে

ছবি

আকিজ বেভারেজ কারখানায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, প্রকৌশলীসহ নিহত ৪

ছবি

থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে উৎসবের আমেজ কক্সবাজারে, থাকছে না উন্মুক্ত স্থানে কনসার্ট

ছবি

বনবিভাগের কাজ করতে গিয়ে ১৯ শ্রমিক অপহৃত, এক লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি

ছবি

শ্রমিক অবরোধে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রী

ছবি

সিদ্ধান্ত মেনে আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা

ছবি

বিক্রি হওয়া শিশুটি ফিরে পেল মায়ের কোল

ছবি

বনবিভাগের কাজ করতে গিয়ে ১৯ শ্রমিক অপহরণের শিকার

ছবি

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সারদায় ৮ এসআইকে শোকজ

ছবি

কুমিল্লার মাধাইয়া বাজারে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক দোকান পুড়ে ছাই

ছবি

আবারও ১০ ডিগ্রির নিচে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা

ছবি

ফরিদপুরে চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা

ছবি

উর্দুভাষীদের পুর্নবাসনসহ ৪ দফা দাবিতে অবাঙ্গালীদের প্রতীক অনশন

ছবি

সখীপুরে অবৈধ ভাবে মাটি কাটায় মাটি ব্যবসায়ীকে লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

শেরপুরে বাস-সিএনজি অটোরিকশা সংঘর্ষ, নিহত ৫

ছবি

সিলেটে এক দিনের ব্যবধানে ‘ভারতীয় খা‌সিয়াদের গু‌লিতে’ আরেকজন নিহত

ছবি

কক্সবাজারে চুরির অভিযোগে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

ছবি

হিন্দু সে‌জে ডাকা‌তির প্রস্তু‌তিকালে নারীসহ গ্রেপ্তার ১০

tab

সারাদেশ

পদ্মাসেতু রেলপ্রকল্প

যশোরবাসীর দুর্ভোগ আর প্রতারণার নাম ‘পদ্মবিলা জংশন’

যশোর অফিস

সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪

# মূল স্টেশন শহর থেকে ১৮ কি.মি. দূরে পদ্মবিলা জংশন

# যশোরের জংশন বলা হলেও সেটি বাঘারপাড়া উপজেলায়

# ঢাকার রেলবঞ্চিত কোটচাঁদপুর-কালীগঞ্জের যাত্রীরা

যশোরবাসীর দুর্ভোগ আর প্রতারণার নাম ‘পদ্মবিলা জংশন’। পদ্মাসেতু হয়ে যশোর-ঢাকা রুটে যশোর থেকে এই পদ্মবিলা রেল জংশন দিয়ে ট্রেন চলাচলের তোড়জোড় চলছে। যশোর শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের এই স্টেশন থেকে ঢাকার ট্রেন ধরতে যাওয়া ‘বাস্তবতা বিবর্জিত’ সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করছেন যশোরবাসী। পদ্মবিলা বলা হলেও স্টেশনটি পদ্মবিলায় নয় বরং যশোর সদর উপজেলার বাইরে বাঘারপাড়া উপজেলায়। এটিকে প্রতারণা বলেও দাবি করা হচ্ছে। এ কারণে পদ্মবিলা জংশনের পরিবর্তে যশোর জংশন থেকে ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচলের দাবিতে আন্দোলনে মাঠে রয়েছে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই স্বপ্ন দেখে আসছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হওয়ায় পদ্মা সেতু দিয়ে নড়াইল হয়ে রেলপথে রাজধানীতে পৌঁছানোর যশোরবাসীর সেই স্বপ্ন এখন হাতছোঁয়া দূরত্বে। নতুন এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে রেলপথে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৯৩ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ব্রডগেজ রেললাইন দিয়ে ছুটবে ট্রেন। ঢাকা-ভাঙ্গা হয়ে (রাজবাড়ি-কুষ্টিয়া হয়ে) খুলনা, যশোর ও বেনাপোল রুটে বর্তমানে ট্রেন চলাচল চালু আছে। এতে দূরত্ব কমেছে তিন ঘণ্টার মতো। আর নড়াইল হয়ে সরাসরি রেল সংযোগ চালু হলে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাবে ট্রেন। সড়কপথে যশোর থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা, যা আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেক সময়। রেলপথটি ঢাকার কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এবং নড়াইলের ওপর দিয়ে যশোর গিয়ে শেষ হয়েছে। এই রেললিংক প্রকল্পে যশোর থেকে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া সম্ভব হবে।

কিন্তু বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মানুষের এই স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। রেলপথ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ট্রেনে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রাধানগর গ্রামের পদ্মবিলা রেল জংশন। যশোর শহরের মূল স্টেশন থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। এছাড়া, বেনাপোল থেকে প্রায় ৪০, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর স্টেশন থেকে প্রায় ৫০ এবং চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্টেশন থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে পদ্মবিলার অবস্থান। এই অঞ্চলের মানুষকে ট্রেনে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকায় যেতে হলে ১৮ থেকে ৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পদ্মবিলা স্টেশনে যেতে হবেÑ যা এই অঞ্চলের যাত্রীদের সময় ও দুর্ভোগ বয়ে আনবে। এ কারণে এই ট্রেনের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। ফলে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী রেলযোগাযোগের প্রকৃত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। তেমনি বিপুল সংখ্যক যাত্রী হারিয়ে রেলও রাজস্ব আয়ে পেছনের দিকেই ধাবিত হবে। তাই ভোগান্তি লাঘব, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে পদ্মাসেতুর রুটের সঙ্গে বেনাপোল, যশোর, দর্শনা ও কোটচাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন সংযুক্ত করার দাবি এ অঞ্চলের মানুষের।

সূত্র আরও জানায়, খুব দ্রুতই যশোর-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকার ট্রেনগুলো যশোরের পদ্মবিলা জংশন হয়ে গন্তব্যে যাত্রা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটিকে ‘বাস্তবতা বিবর্জিত’ সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি।

কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল জানান, বাস্তবতা উপলব্ধির জন্য আমরা সরেজমিন পরিদর্শনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা থেকে ইজিবাইকে চড়ে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে লোকাল বাসে চড়ে যশোর-খুলনা মহাসড়কের ঘুনি রাস্তার মোড়ে নেমে ভ্যানে চড়ে পদ্মবিলা জংশনে পৌঁছাই। তিনবার বাহন পরিবর্তন করে ১৮ কিলোমিটার দূরত্বের স্টেশনে পৌঁছাতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টার বেশি। ফলে পদ্মবিলা থেকে ট্রেন ধরে ঢাকায় যেতে হলে দু’ঘণ্টার বেশি সময় হাতে নিয়ে বের হতে হবে। ওই সময়ে মণিহার এলাকা থেকে বাসে চড়ে পদ্মাসেতুতে পৌঁছে যাওয়া যাবে।

কমিটির নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ শেফার্ড বলেন, পদ্মবিলা জংশনের সাথে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। লোকাল বাসসহ তিন বার যেমন বাহন পরিবর্তন করতে হবে, তেমনি ঘুনি রাস্তার মোড় থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার গ্রামের বন-জঙ্গল ও ক্ষেত খামারের মধ্যে দিয়ে সড়ক। ফলে এখানে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি থাকবে ঝুঁকিতে।

বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, পদ্মবিলা জংশন নাম দিয়ে যশোরবাসীর সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। পদ্মবিলা গ্রাম যশোর সদর উপজেলার মধ্যে। কিন্তু পদ্মবিলা জংশনটি স্থাপন করা হয়েছে বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে। অর্থাৎ সদর উপজেলার বাইরে অন্য উপজেলায় নিয়ে যশোরের জংশন দেখানো হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ সড়কের মোটর পার্টস ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বলেন, ‘পদ্মাসেতু দিয়ে ট্রেন যাত্রা আমাদের যশোর অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে। সকালে যেয়ে কাজ শেষ করে বিকালে বাড়ি ফিরতে পারবে। কিন্তু বৃহত্তর যশোরের যাত্রীদের স্টেশন করেছে পদ্মবিলাতে। এতোদূর থেকে পদ্মবিলা গিয়ে ট্রেন ধরা সময়-শ্রম-অর্থ সবকিছুই জন্য বিড়ম্বনার।’

বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব রুহুল আমীন বলেন, বর্তমানে যশোরবাসী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের ৩টি ট্রেন পাচ্ছেন। পদ্মাসেতু রেল প্রকল্প চালু হলে এ রুটে (নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু) মাত্র একটা ট্রেন পাবে। ফলে এই অঞ্চলের মানুষ রেলসেবা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হবে। পদ্মাসেতু আমাদের স্বপ্নেই থেকে যাবে। তাই বেনাপোল-যশোর-ঢাকা রুটে ২টি ও দর্শনা-যশোর-ঢাকা রুটে ২টি ট্রেন চালু এবং খুলনা থেকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকা রুটের ট্রেনগুলো বহাল রাখতে হবে। এই দাবি পূরণ হলে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন পদ্মবিলা হয়ে ঢাকায় গেলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যশোরের যাত্রীদের জন্য এই পাঁচটি ট্রেন দিতে হবে।

যশোর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, ঢাকার ট্রেনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা তারা পাননি। তবে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নিলে খুলনার ট্রেনগুলো যশোর জংশন হয়েও ঢাকায় যাওয়া সম্ভব।

back to top