গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিদায়ী অনুষ্ঠান আয়োজন করার নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিত থাকার কথা প্রচার করা হলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর লাগালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং শিক্ষকদের কয়েকটি গ্রুপে নোটিশ দেন। তিনি ওই নোটিশ দেন গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক হিসেবে।
নোটিশে সম্প্রতি বদলি হওয়া গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিনের বিদায় উপলক্ষে আগামী ১১ জানুয়ারি একটি অভিজাত রিসোর্টে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানের যোগ দেয়ার জন্য সদর উপজেলার সাতটি ক্লাস্টারের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদেরকে অংশ গ্রহণের জন্য নোটিশে শর্ত আরোপ করা হয়। বলা হয়, এই অনুষ্ঠানে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ আলম ভুঁইয়া উপস্থিত থাকবেন। এই অনুষ্ঠানের জন্য ‘প্রধান শিক্ষককে এক হাজার টাকা ও সহকারী শিক্ষকদেরকে ৭০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে’।
এই নোটিশ জারির পর সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাদের অভিযোগ, শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিদায় সংবর্ধনা দিতে হলে সেটি উপজেলা পরিষদে অথবা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে হতে পারত। একটি অভিজত রিসোর্টে অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে এভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে ‘চাঁদা নিয়ে’ অনুষ্ঠান আয়োজন করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, যেহেতু জেলা শিক্ষা অফিসার উপস্থিত থাকবেন, তাই তারা না গেলে ‘বিপদে পড়তে পারেন’। এই আশঙ্কায় ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে তারা যেতে বাধ্য হচ্ছেন’ বলে অভিযোগ। তাই ‘টাকা দিয়ে’ তারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন।
এ বিষয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজক ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিদায় উপলক্ষে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনাক্রমে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন বলে রাজি হয়েছেন।’
কোনও রেজুলেশন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না কোন রেজুলেশন হয়নি, আমরা কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি জানান, ‘অধিকাংশ শিক্ষক নিবন্ধন করেছেন। অতএব অনুষ্ঠানটি যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে।’
এ বিষয়ে আলোচিত বিদায়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন সংবাদকে বলেন, ‘আমি তো চলে যাইতেছি, এখন কে করতেছে তা তো জানিনা। আমাকে শুধু দাওয়াত করেছে। আর কোন শিক্ষকের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক টাকা আদায় করা হয়েছে কিনা বিষয়টা আমার জানা নেই। কে কত টাকা দিল কে নিলো এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমাকে শুধু অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ আলম ভুঁইয়া সংবাদকে বলেন, ‘একটি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমার সাথে আলোচনা করেছিলো। ছুটির দিন হওয়ায় আমি উপস্থিত থাকবো বলে সম্মতি দিয়েছি। কিন্তু অনুষ্ঠানের নামে চাঁদাবাজি করার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’
একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন আলোচিত শিক্ষক নেতা জাহাঙ্গীর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীদের ‘নাম ভাঙিয়ে’ শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ‘চাঁদাবাজি করেছেন’ এরকমই বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে। বিগত সরকারের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের একাধিক ছবি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। তিনি আগের ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সাবেক সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে ‘আঁতাত করে’ সাধারণ শিক্ষকদের এভাবেই ‘হয়রানি করেছেন’ বলেও অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক।
তারা আরও অভিযোগ করেন, একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও ‘কোটি টাকা খরচ করে তিনি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন’। বিভিন্ন জায়গায় নামে ‘বেনামে সম্পদ করেছেন’। তারা এই শিক্ষক নেতার ‘হয়রানি থেকে বাঁচার আকুতি’ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে, গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মামুন উর রশিদ সংবাদকে বলেন, ‘কোনও সরকারি কর্মকর্তার ফেয়ারওয়েল দেয়ার নামে এভাবে টাকা নেওয়ার আইনগত ভাবে কোন সুযোগ নেই। এটা হওয়ার কথা না। আর এটা আমার নলেজেও নাই। এমন হয়ে থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫
গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিদায়ী অনুষ্ঠান আয়োজন করার নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিত থাকার কথা প্রচার করা হলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর লাগালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং শিক্ষকদের কয়েকটি গ্রুপে নোটিশ দেন। তিনি ওই নোটিশ দেন গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক হিসেবে।
নোটিশে সম্প্রতি বদলি হওয়া গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিনের বিদায় উপলক্ষে আগামী ১১ জানুয়ারি একটি অভিজাত রিসোর্টে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানের যোগ দেয়ার জন্য সদর উপজেলার সাতটি ক্লাস্টারের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদেরকে অংশ গ্রহণের জন্য নোটিশে শর্ত আরোপ করা হয়। বলা হয়, এই অনুষ্ঠানে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ আলম ভুঁইয়া উপস্থিত থাকবেন। এই অনুষ্ঠানের জন্য ‘প্রধান শিক্ষককে এক হাজার টাকা ও সহকারী শিক্ষকদেরকে ৭০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে’।
এই নোটিশ জারির পর সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাদের অভিযোগ, শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিদায় সংবর্ধনা দিতে হলে সেটি উপজেলা পরিষদে অথবা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে হতে পারত। একটি অভিজত রিসোর্টে অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে এভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে ‘চাঁদা নিয়ে’ অনুষ্ঠান আয়োজন করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, যেহেতু জেলা শিক্ষা অফিসার উপস্থিত থাকবেন, তাই তারা না গেলে ‘বিপদে পড়তে পারেন’। এই আশঙ্কায় ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে তারা যেতে বাধ্য হচ্ছেন’ বলে অভিযোগ। তাই ‘টাকা দিয়ে’ তারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন।
এ বিষয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজক ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিদায় উপলক্ষে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনাক্রমে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন বলে রাজি হয়েছেন।’
কোনও রেজুলেশন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না কোন রেজুলেশন হয়নি, আমরা কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি জানান, ‘অধিকাংশ শিক্ষক নিবন্ধন করেছেন। অতএব অনুষ্ঠানটি যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে।’
এ বিষয়ে আলোচিত বিদায়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন সংবাদকে বলেন, ‘আমি তো চলে যাইতেছি, এখন কে করতেছে তা তো জানিনা। আমাকে শুধু দাওয়াত করেছে। আর কোন শিক্ষকের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক টাকা আদায় করা হয়েছে কিনা বিষয়টা আমার জানা নেই। কে কত টাকা দিল কে নিলো এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমাকে শুধু অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ আলম ভুঁইয়া সংবাদকে বলেন, ‘একটি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমার সাথে আলোচনা করেছিলো। ছুটির দিন হওয়ায় আমি উপস্থিত থাকবো বলে সম্মতি দিয়েছি। কিন্তু অনুষ্ঠানের নামে চাঁদাবাজি করার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’
একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন আলোচিত শিক্ষক নেতা জাহাঙ্গীর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীদের ‘নাম ভাঙিয়ে’ শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ‘চাঁদাবাজি করেছেন’ এরকমই বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে। বিগত সরকারের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের একাধিক ছবি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। তিনি আগের ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সাবেক সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে ‘আঁতাত করে’ সাধারণ শিক্ষকদের এভাবেই ‘হয়রানি করেছেন’ বলেও অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক।
তারা আরও অভিযোগ করেন, একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও ‘কোটি টাকা খরচ করে তিনি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন’। বিভিন্ন জায়গায় নামে ‘বেনামে সম্পদ করেছেন’। তারা এই শিক্ষক নেতার ‘হয়রানি থেকে বাঁচার আকুতি’ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে, গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মামুন উর রশিদ সংবাদকে বলেন, ‘কোনও সরকারি কর্মকর্তার ফেয়ারওয়েল দেয়ার নামে এভাবে টাকা নেওয়ার আইনগত ভাবে কোন সুযোগ নেই। এটা হওয়ার কথা না। আর এটা আমার নলেজেও নাই। এমন হয়ে থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’