বগুড়ার কাহালু উপজেলার দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে যুগ যুগ ধরে বসছে ধান ও সবজির হাট। হাট উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেও মিলছেনা প্রতিকার। অসহায় প্রধান শিক্ষক সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিঘিœত হচ্ছে বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান। হাটের ইজারাদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ রুহুল আমিন।
কাহালু উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম কোণে দুর্গাপুর বাজারে এ হাট অবস্থিত। দুর্গাপুর বাজারের কাছেই ৫৩ শতক জায়গার উপর ১৯৪০ সালে স্থাপিত হয়েছে দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪শ। সপ্তাহের দুই দিন মঙ্গলবার ও শুক্রবার এ হাট বসে। সকালে ধানের হাট, বিকেলে সবজির হাট। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলছে দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দুর্গাপুর হাট। স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য ধান ও সবজি ভ্যানগাড়ি, ভটভটি করে বিদ্যালয় মাঠে বসানো হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। ধান হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের হৈ চৈ ডাক হাঁকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শ্রেনি কক্ষে মনোযোগ নষ্ট, ধুলাবালু ও ময়লা আবজর্নায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হলেও দেখার যেন কেউ নেই।
সপ্তাহের পাঁচ দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নের সুযোগ পেলেও বিদ্যালয় মাঠে হাট বসার কারণে সমাবেশ, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা থেকে শিক্ষার্থীরা হচ্ছে বঞ্চিত।
গত ১৪ জানুয়ারি মঙলবার সকালে দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে মাঠে বসেছে ধান ও সবজির হাট। স্থানীয় কৃষকরা ভ্যানগাড়ি ও ভটভটি করে ধান ও সবজি বিক্রি করতে হাটে নিয়ে এসেছেন। হাটুরেদের হৈ চৈ এ সরগরম বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ।
এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে হাটের ইজারাদার ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ রুহুল আমিন আতœগোপনে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার আরেক পার্টনার শ্রী নিতাই চন্দ্র জানান, হাটের জায়গা প্রায় এক একর। কিছু জায়গায় শেড ও পাকা স্থাপনা রয়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় আমার জন্মের আগে থেকে হাটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসে আসছে। দীর্ঘ দিন ধরে এ ভাবেই চলে আসছে দূর্গাপুর হাট। এবার ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে এ হাট ইজারা নিয়েছি। হাটের জায়গা সরকারি, বিদ্যালয়ের জায়গাও সরকারি। বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহারে স্থানীয় লোকজন কোন দিন আপত্তি জানায়নি। বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসলেও শিক্ষার্থীদের কোন ক্ষতি হয়না। এছাড়া বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককের বেতন বাবদ মাসে ১২শ টাকা পরিশোধ করা হয়। হাট ইজারার নেয়ার মেয়াদ বাকি আছে মাত্র ৩ মাস। উচ্চ মূল্যে এ হাটে ইজারা নিয়ে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবকরা জানান, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ বিঘিœত করে বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসাতে প্রধান শিক্ষকের কাছে কয়েক দফা অভিযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। কারণ হাটের ইজারাদার আওয়ামী লীগ নেতা।
অপরদিকে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শ্রেণি শিক্ষকের সাথে কথা বলা হলে তারা জানান, বিদ্যালয় মাঠে হাট বসায় হৈ চৈ এ পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। সেই সাথে ধুলাবালিতে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণ পাশ্বে অবস্থিত শহিদ মিনারের অমর্যাদা হচ্ছে। ইজাররাদার আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ার কারণে কেউ সাহস করে কিছু বলতে পারেনা।
বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানান, সকালে ধানের হাট, দুপুরে সবজির হাট বসায় বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ায় কঠিন হয়ে পড়ে। খেলাধুলাও করা যায়না। হাটের পরের দিন বিদ্যালয়ের মাঠে নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে ক্রেতা বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বিদ্যালয়ের শৌচাগারও ব্যবহার করে। বর্ষা মৌসুমে হাটুরে ও ব্যবসায়ীরা বিদ্যালয়ের বারান্দা ও শ্রেনি কক্ষে ঢুকে পড়ে। তখন শ্রেনি কক্ষে টেকাই দায় হয়ে পড়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফারুক হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের মাঠ সীমানা প্রাচীর বেষ্টনী করে গেট নির্মাণ করা হয়েছে। তবুও বিদ্যালয় মাঠে হাট বসানো ঠেকানো যাচ্ছেনা। বিদ্যালয়ের জায়গা সরকারি হওয়া স্বত্বেও ইজারদাররা জোরপূর্বক পেশী শক্তির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসিয়ে অবৈধভাবে হাটের ব্যবসা করে আসছেন। ইজারদারের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দাখিল করেও আজও কোন প্রতিকার মিলেনি। আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার কারণে কিছু বলা যায় না।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মুহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিদ্যালয় মাঠে হাট না বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে একাধিক বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।
বিষয়টি কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কাওছার হাবীব কে অবহিত করা হলে তিনি জানান, আমি নতুন যোগদান করেছি। কেউ অভিযোগ করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
বগুড়ার কাহালু উপজেলার দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে যুগ যুগ ধরে বসছে ধান ও সবজির হাট। হাট উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেও মিলছেনা প্রতিকার। অসহায় প্রধান শিক্ষক সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিঘিœত হচ্ছে বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান। হাটের ইজারাদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ রুহুল আমিন।
কাহালু উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম কোণে দুর্গাপুর বাজারে এ হাট অবস্থিত। দুর্গাপুর বাজারের কাছেই ৫৩ শতক জায়গার উপর ১৯৪০ সালে স্থাপিত হয়েছে দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪শ। সপ্তাহের দুই দিন মঙ্গলবার ও শুক্রবার এ হাট বসে। সকালে ধানের হাট, বিকেলে সবজির হাট। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলছে দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দুর্গাপুর হাট। স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য ধান ও সবজি ভ্যানগাড়ি, ভটভটি করে বিদ্যালয় মাঠে বসানো হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। ধান হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের হৈ চৈ ডাক হাঁকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শ্রেনি কক্ষে মনোযোগ নষ্ট, ধুলাবালু ও ময়লা আবজর্নায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হলেও দেখার যেন কেউ নেই।
সপ্তাহের পাঁচ দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নের সুযোগ পেলেও বিদ্যালয় মাঠে হাট বসার কারণে সমাবেশ, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা থেকে শিক্ষার্থীরা হচ্ছে বঞ্চিত।
গত ১৪ জানুয়ারি মঙলবার সকালে দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে মাঠে বসেছে ধান ও সবজির হাট। স্থানীয় কৃষকরা ভ্যানগাড়ি ও ভটভটি করে ধান ও সবজি বিক্রি করতে হাটে নিয়ে এসেছেন। হাটুরেদের হৈ চৈ এ সরগরম বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ।
এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে হাটের ইজারাদার ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ রুহুল আমিন আতœগোপনে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার আরেক পার্টনার শ্রী নিতাই চন্দ্র জানান, হাটের জায়গা প্রায় এক একর। কিছু জায়গায় শেড ও পাকা স্থাপনা রয়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় আমার জন্মের আগে থেকে হাটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসে আসছে। দীর্ঘ দিন ধরে এ ভাবেই চলে আসছে দূর্গাপুর হাট। এবার ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে এ হাট ইজারা নিয়েছি। হাটের জায়গা সরকারি, বিদ্যালয়ের জায়গাও সরকারি। বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহারে স্থানীয় লোকজন কোন দিন আপত্তি জানায়নি। বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসলেও শিক্ষার্থীদের কোন ক্ষতি হয়না। এছাড়া বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককের বেতন বাবদ মাসে ১২শ টাকা পরিশোধ করা হয়। হাট ইজারার নেয়ার মেয়াদ বাকি আছে মাত্র ৩ মাস। উচ্চ মূল্যে এ হাটে ইজারা নিয়ে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবকরা জানান, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ বিঘিœত করে বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসাতে প্রধান শিক্ষকের কাছে কয়েক দফা অভিযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। কারণ হাটের ইজারাদার আওয়ামী লীগ নেতা।
অপরদিকে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শ্রেণি শিক্ষকের সাথে কথা বলা হলে তারা জানান, বিদ্যালয় মাঠে হাট বসায় হৈ চৈ এ পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। সেই সাথে ধুলাবালিতে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণ পাশ্বে অবস্থিত শহিদ মিনারের অমর্যাদা হচ্ছে। ইজাররাদার আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ার কারণে কেউ সাহস করে কিছু বলতে পারেনা।
বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানান, সকালে ধানের হাট, দুপুরে সবজির হাট বসায় বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ায় কঠিন হয়ে পড়ে। খেলাধুলাও করা যায়না। হাটের পরের দিন বিদ্যালয়ের মাঠে নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে ক্রেতা বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বিদ্যালয়ের শৌচাগারও ব্যবহার করে। বর্ষা মৌসুমে হাটুরে ও ব্যবসায়ীরা বিদ্যালয়ের বারান্দা ও শ্রেনি কক্ষে ঢুকে পড়ে। তখন শ্রেনি কক্ষে টেকাই দায় হয়ে পড়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফারুক হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের মাঠ সীমানা প্রাচীর বেষ্টনী করে গেট নির্মাণ করা হয়েছে। তবুও বিদ্যালয় মাঠে হাট বসানো ঠেকানো যাচ্ছেনা। বিদ্যালয়ের জায়গা সরকারি হওয়া স্বত্বেও ইজারদাররা জোরপূর্বক পেশী শক্তির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসিয়ে অবৈধভাবে হাটের ব্যবসা করে আসছেন। ইজারদারের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দাখিল করেও আজও কোন প্রতিকার মিলেনি। আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার কারণে কিছু বলা যায় না।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মুহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিদ্যালয় মাঠে হাট না বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে একাধিক বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।
বিষয়টি কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কাওছার হাবীব কে অবহিত করা হলে তিনি জানান, আমি নতুন যোগদান করেছি। কেউ অভিযোগ করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।