alt

ভালুকায় ডায়িং ফ্যাক্টরির বর্জ্যে খীরুর পানি বিষাক্ত, বিপন্ন জীববৈচিত্র্য

প্রতিনিধি, ভালুকা (ময়মনসিংহ) : বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন ডাইং ফ্যাক্টরি থেকে বছরের পর বছর অবিরাম কেমিক্যাল মিশ্রিত গরম বর্জ্য লাউতি ও বেতিয়াহাঙ্গুন খাল দিয়ে খীরু নদীতে ফেলায় নদীর পানি কালো হয়ে বিষাক্ত দুর্গন্ধ ছড়ানোয় ব্যবহার অনুউপযোগী হয়ে গেছে। এসব বর্জ্য্য মিশ্রিত পানি খাল বিলে প্রবাহিত হওয়ায় মৎস্যসম্পদ ও জলজ প্রাণীর বিনাশ, পশুপাখির ক্ষতি সাধন, পানিবাহিত পেটের পীড়া, চর্মরোগ বিস্তার ও ফসলের ক্ষেতে সেচ ব্যবস্থার চরম অবনতিসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে বলে। বিষাক্ত পানির কারণে প্রতি বছর বোরো আবাদ করে কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হচ্ছেন এলাকার কৃষকরা। উপজেলার ভালুকা, ভরাডোবা, মেদুয়ারী ও হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জামিরদিয়া ও কাশর এলাকার অসংখ্য ডাইং মিল থেকে বিরামহীন দুর্গন্ধযুক্ত ঘন কালোপানি লাউতি খাল দিয়ে খীরু নদীসহ খাল বিলে নামায় পানি বিষাক্ত হয়ে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর বিলুপ্তসহ ক্ষতি হচ্ছে ফল ফসলের। ভরাডোবা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে ডাইং মিলের বর্জ্য্যপানি নামায় সাধুয়া, খুরোলিয়া, তালতলা, কেচুরগোনা, তেইরা, হায়রা, শিমুলিয়া বিলসহ অসংখ ছোট বড় বিলে শত শত একর জমিতে বোরো আবাদ ব্যহত হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে ফ্যাক্টরি হতে বর্জ্য্যপানি বন্ধের দাবিতে কৃষকরা একাধিকবার মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন পালনসহ স্বারকলিপি প্রদান করলেও বর্জ্য্য ফেলা বন্ধ হয়নি অদ্যাবধি। প্রাগৈতিহাসিক যুগ হতে ভালুকার উপর দিয়ে বয়ে চলা খীরু নদীতে পালতোলা নৌকা, জমিদারদের বজ্রা ও যাত্রীবাহী মাঝারি লঞ্চ চলাচল করত। মিঠা পানিতে এক সময় গ্রামের দুরন্ত ছেলে মেয়েরা সাঁতার কাটত। জেলে সম্প্রদায় দলবেঁধে জীবিকার উৎস্য হিসেবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকতেন এই নদীতে। পানি দূষণে খীরু নদীর মাছ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হওয়ায় জেলেরা এখন পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। পানি দুর্গন্ধযুক্ত ও বিষাক্ত হওয়ার কারণে কৃষকরা গবাদিপশু নিয়ে এখন আর পানি খাওয়াতে কিংবা গোসল করতে নদীতে নামছেন না।

স্থানীয়রা জানান, নদীর কিনারসহ খাল বিলের ধানি জমির মাটি আলকাতরার মত কিচকিচে কালো হয়ে গেছে। এসব কালো পানির জমিতে নামলে হাঁটু পর্যন্ত কাদার নিচে গেড়ে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যে হাত পা ও শরীরে চুলকানি ও ফুসকার মত পরে। এর ফলে নানা রকম চর্ম রোগের সৃষ্টি হয়। এসব কারণে সময়মতো জমি চাষ ও ধান রোপণ করার জন্য শ্রমিক পাওয়া যায় না। ভালুকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খীরু নদীর উভয় পাড়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্ন গ্রামে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে নদী থেকে বহু বছর যাবত দমকলের সাহায্যে পানি সেচ দিয়ে প্রচুর ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব এলাকার কৃষকদের অভিযোগ গত কয়েক বছর ধরে খীরু নদীতে বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরি হতে দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত কালো পানি নামায় ব্যবহারের অনোপযোগী হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে ফসলের জমিতে নদীর বিষাক্ত পানি সেচ দিতে হয়। কিন্তু তাতে ধানের গোছা ভালো হলেও থোর বের হওয়ার পর ধান চিটা হয়ে যায়। অন্যদিকে দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য্য পানি খেয়ে প্রায়ই হাঁস, গরু ছাগল মারা যায়। হবিরবাড়ী এলাকার বিলাইজুড়ি ও লাউতি খাল দিয়ে বিভিন্ন ডায়িং ফ্যাক্টরি থেকে দুর্গন্ধযুক্ত কালো রঙের গরম পানি দিন রাত প্রবাহিত হয়। খালের আশ পাশের বাড়ি ঘরের মানুষ দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ। এসব এলাকার শিশুরা নানা রকম পেটের পীড়াসহ প্রায়ই বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। অধিকাংশ ডায়িং ফ্যাক্টরিতে ইটিপি থাকলেও সেগুলো সচল না রেখে অপরিশোধিত বর্জ্য্যপানি সরাসরি কারখানার পাইপ দিয়ে খাল বিলে ছেড়ে পরিবেশ ধ্বংস করছে। আর পরিবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা নিজেদের কালো চশমার আড়ালে রাখায় ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ খাল বিল নদী নালাসহ সারা এলাকা নিজের মনে করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে মাঝে মধ্যে পরিবেশ কর্তৃপক্ষ অভিযানে আসলে ইটিপি চালু করে তাদের দেখানো হলেও পরবর্তীতে ইটিপি বন্ধ রেখে অপরিশোধিত বর্জ্য পানি খাল বিল নদী নালায় ফেলা হয় সারা বছর।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ভালুকা আঞ্চলিক শাখার সদস্য সচিব কামরুল হাসান পাঠান কামাল জানান, হবিরবাড়ীর লউতি, বিলাইজুড়ি, ভালুকা কাঁঠালির বেতিয়া হাঙ্গুন সহ অসংখ্য সংযোগ খাল দিয়ে খীরু নদীতে বিভিন্ন ডাইং মিল হতে দূষিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে যেটিকে তিনি পরিবেশে নৈরাজ্য বলে উল্লেখ করেছেন, তার মতে পরিবেশ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এসব ডায়িং ফ্যাক্টরিগুলো ইটিপি সচল না রেখে সরাসরি কারখানার বর্জ্য্য নদীতে ফেলে পরিবেশ ধ্বংস করে চলেছে। তিনি আরও জানান পরিবেশ রক্ষায় মিল ফ্যাক্টরির দূষিত বর্জ্য পানি বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) উদ্যোগে একাধিকবার ভালুকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন ও স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। মিল কারখানা হতে ইটিপির মাধ্যমে বর্জ্য পানি পরিশোধন করে নদীতে ফেললে যেমন কৃষিকাজে সেচ উপযোগী হবে তেমনি দেশীয় প্রজাতির মাছগুলোর বংশ বিস্তারসহ জীব বৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি সচেতনমহলের দাবি মিল কারখানার বর্জ্যপানি নদীখালে ফেলা বন্ধ হলে সবুজ শ্যামল ভালুকার পরিবেশে পুনরায় প্রাণ ফিরে আসবে। ক্ষেতের ফসলে কৃষকের গোলা আর দেশীয় মাছে ভরে উঠবে নদী নালা খাল বিল।

ছবি

নির্দিষ্ট সময়েই বেতন কমিশনের সুপারিশ

ছবি

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পাশে থাকবে বিএনপি : ফখরুল

ছবি

‘পর্ন তারকা’ যুগল ৫ দিনের রিমান্ডে

ছবি

মোরেলগঞ্জ পৌর শহরে ১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ৫টি কার্পেটিং রাস্তার কাজ শুরু

ছবি

কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগের মিছিল, গ্রেপ্তার হলেন সাংবাদিক

ছবি

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আমন খেতে কারেন্ট পোকা ছড়িয়ে পড়েছে

ছবি

নারী গণমাধ্যমকর্মীর আত্মহত্যা: সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি

ছবি

দারিদ্র্য দমাতে পারেনি সালমানের অদম্য স্পৃহা, এবার কামিল পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫

ছবি

২৯ বছর পর স্ত্রীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

ছবি

সরকারের আশ্বাসে শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিত

ছবি

মেহেরপুরে নিখোঁজ তিন যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

বরুড়ায় বীজ ও সার বিতরণ

ছবি

ঝিনাইদহে ৭ দফা দাবিতে সওজ কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ছবি

শেরপুরে জোরপূর্বক জায়গা দখলের অভিযোগ

ছবি

ধোবাউড়ায় অনলাইন গেইমে আসক্ত শিশু-কিশোর, হুমকির মুখে ভবিষৎ প্রজন্ম

ছবি

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি

ছবি

নড়াইলে প্রকল্পের অগ্রগতি অবহিতকরণ ও পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা

ছবি

কেশবপুরে আগাম জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপি আবাদে ব্যস্ত কৃষক

ছবি

কোম্পানীগঞ্জে অসহায় ব্যক্তিদের পাশে চরহাজারী যুব সংঘ

গজারিয়ায় ফসলের সঠিক পরিচর্যা বিষয়ে মতবিনিময়

ছবি

সিরাজদিখানে গাড়ি চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

ছবি

আদালতের নির্দেশে কবর থেকে ৪ মরদেহ উত্তোলন

ছবি

মনপুরায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

সাঘাটায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ছবি

চান্দিনায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ

ছবি

কেন্দুয়ায় ছাত্রদলের নেতা দিদারকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার

ছবি

পীরগাছায় হাত ধোয়া দিবস উৎযাপন

ছবি

ভাঙ্গুড়ায় নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে ছাগল ও ঘরনির্মাণ সামগ্রী বিতরণ

ছবি

রাউজানে শ্যামা পূজা উপলক্ষে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা, বস্ত্র বিতরণ

ছবি

পাঁচবিবিতে চায়না দুয়ারী জাল জব্দ, ধ্বংস

ছবি

অযত্ন অবেলায় দুমকিতে পড়ে আছে কোটি টাকার ফেরি

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকের চালক-হেলাপার নিহত

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় মদসহ ৭ বাংলাদেশি আটক

ছবি

কাঠালিয়ায় দূষণ প্রতিরোধে র‌্যালি

ছবি

বড়াইগ্রামে সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু

ছবি

বাইশারীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু

tab

ভালুকায় ডায়িং ফ্যাক্টরির বর্জ্যে খীরুর পানি বিষাক্ত, বিপন্ন জীববৈচিত্র্য

প্রতিনিধি, ভালুকা (ময়মনসিংহ)

বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন ডাইং ফ্যাক্টরি থেকে বছরের পর বছর অবিরাম কেমিক্যাল মিশ্রিত গরম বর্জ্য লাউতি ও বেতিয়াহাঙ্গুন খাল দিয়ে খীরু নদীতে ফেলায় নদীর পানি কালো হয়ে বিষাক্ত দুর্গন্ধ ছড়ানোয় ব্যবহার অনুউপযোগী হয়ে গেছে। এসব বর্জ্য্য মিশ্রিত পানি খাল বিলে প্রবাহিত হওয়ায় মৎস্যসম্পদ ও জলজ প্রাণীর বিনাশ, পশুপাখির ক্ষতি সাধন, পানিবাহিত পেটের পীড়া, চর্মরোগ বিস্তার ও ফসলের ক্ষেতে সেচ ব্যবস্থার চরম অবনতিসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে বলে। বিষাক্ত পানির কারণে প্রতি বছর বোরো আবাদ করে কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হচ্ছেন এলাকার কৃষকরা। উপজেলার ভালুকা, ভরাডোবা, মেদুয়ারী ও হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জামিরদিয়া ও কাশর এলাকার অসংখ্য ডাইং মিল থেকে বিরামহীন দুর্গন্ধযুক্ত ঘন কালোপানি লাউতি খাল দিয়ে খীরু নদীসহ খাল বিলে নামায় পানি বিষাক্ত হয়ে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর বিলুপ্তসহ ক্ষতি হচ্ছে ফল ফসলের। ভরাডোবা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে ডাইং মিলের বর্জ্য্যপানি নামায় সাধুয়া, খুরোলিয়া, তালতলা, কেচুরগোনা, তেইরা, হায়রা, শিমুলিয়া বিলসহ অসংখ ছোট বড় বিলে শত শত একর জমিতে বোরো আবাদ ব্যহত হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে ফ্যাক্টরি হতে বর্জ্য্যপানি বন্ধের দাবিতে কৃষকরা একাধিকবার মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন পালনসহ স্বারকলিপি প্রদান করলেও বর্জ্য্য ফেলা বন্ধ হয়নি অদ্যাবধি। প্রাগৈতিহাসিক যুগ হতে ভালুকার উপর দিয়ে বয়ে চলা খীরু নদীতে পালতোলা নৌকা, জমিদারদের বজ্রা ও যাত্রীবাহী মাঝারি লঞ্চ চলাচল করত। মিঠা পানিতে এক সময় গ্রামের দুরন্ত ছেলে মেয়েরা সাঁতার কাটত। জেলে সম্প্রদায় দলবেঁধে জীবিকার উৎস্য হিসেবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকতেন এই নদীতে। পানি দূষণে খীরু নদীর মাছ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হওয়ায় জেলেরা এখন পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। পানি দুর্গন্ধযুক্ত ও বিষাক্ত হওয়ার কারণে কৃষকরা গবাদিপশু নিয়ে এখন আর পানি খাওয়াতে কিংবা গোসল করতে নদীতে নামছেন না।

স্থানীয়রা জানান, নদীর কিনারসহ খাল বিলের ধানি জমির মাটি আলকাতরার মত কিচকিচে কালো হয়ে গেছে। এসব কালো পানির জমিতে নামলে হাঁটু পর্যন্ত কাদার নিচে গেড়ে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যে হাত পা ও শরীরে চুলকানি ও ফুসকার মত পরে। এর ফলে নানা রকম চর্ম রোগের সৃষ্টি হয়। এসব কারণে সময়মতো জমি চাষ ও ধান রোপণ করার জন্য শ্রমিক পাওয়া যায় না। ভালুকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খীরু নদীর উভয় পাড়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্ন গ্রামে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে নদী থেকে বহু বছর যাবত দমকলের সাহায্যে পানি সেচ দিয়ে প্রচুর ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব এলাকার কৃষকদের অভিযোগ গত কয়েক বছর ধরে খীরু নদীতে বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরি হতে দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত কালো পানি নামায় ব্যবহারের অনোপযোগী হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে ফসলের জমিতে নদীর বিষাক্ত পানি সেচ দিতে হয়। কিন্তু তাতে ধানের গোছা ভালো হলেও থোর বের হওয়ার পর ধান চিটা হয়ে যায়। অন্যদিকে দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য্য পানি খেয়ে প্রায়ই হাঁস, গরু ছাগল মারা যায়। হবিরবাড়ী এলাকার বিলাইজুড়ি ও লাউতি খাল দিয়ে বিভিন্ন ডায়িং ফ্যাক্টরি থেকে দুর্গন্ধযুক্ত কালো রঙের গরম পানি দিন রাত প্রবাহিত হয়। খালের আশ পাশের বাড়ি ঘরের মানুষ দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ। এসব এলাকার শিশুরা নানা রকম পেটের পীড়াসহ প্রায়ই বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। অধিকাংশ ডায়িং ফ্যাক্টরিতে ইটিপি থাকলেও সেগুলো সচল না রেখে অপরিশোধিত বর্জ্য্যপানি সরাসরি কারখানার পাইপ দিয়ে খাল বিলে ছেড়ে পরিবেশ ধ্বংস করছে। আর পরিবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা নিজেদের কালো চশমার আড়ালে রাখায় ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ খাল বিল নদী নালাসহ সারা এলাকা নিজের মনে করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে মাঝে মধ্যে পরিবেশ কর্তৃপক্ষ অভিযানে আসলে ইটিপি চালু করে তাদের দেখানো হলেও পরবর্তীতে ইটিপি বন্ধ রেখে অপরিশোধিত বর্জ্য পানি খাল বিল নদী নালায় ফেলা হয় সারা বছর।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ভালুকা আঞ্চলিক শাখার সদস্য সচিব কামরুল হাসান পাঠান কামাল জানান, হবিরবাড়ীর লউতি, বিলাইজুড়ি, ভালুকা কাঁঠালির বেতিয়া হাঙ্গুন সহ অসংখ্য সংযোগ খাল দিয়ে খীরু নদীতে বিভিন্ন ডাইং মিল হতে দূষিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে যেটিকে তিনি পরিবেশে নৈরাজ্য বলে উল্লেখ করেছেন, তার মতে পরিবেশ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এসব ডায়িং ফ্যাক্টরিগুলো ইটিপি সচল না রেখে সরাসরি কারখানার বর্জ্য্য নদীতে ফেলে পরিবেশ ধ্বংস করে চলেছে। তিনি আরও জানান পরিবেশ রক্ষায় মিল ফ্যাক্টরির দূষিত বর্জ্য পানি বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) উদ্যোগে একাধিকবার ভালুকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন ও স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। মিল কারখানা হতে ইটিপির মাধ্যমে বর্জ্য পানি পরিশোধন করে নদীতে ফেললে যেমন কৃষিকাজে সেচ উপযোগী হবে তেমনি দেশীয় প্রজাতির মাছগুলোর বংশ বিস্তারসহ জীব বৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি সচেতনমহলের দাবি মিল কারখানার বর্জ্যপানি নদীখালে ফেলা বন্ধ হলে সবুজ শ্যামল ভালুকার পরিবেশে পুনরায় প্রাণ ফিরে আসবে। ক্ষেতের ফসলে কৃষকের গোলা আর দেশীয় মাছে ভরে উঠবে নদী নালা খাল বিল।

back to top