সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা বাজার। মঙ্গলবার বেলা তখন প্রায় সাড়ে ১২টা। হঠাৎই এ বাজারের মাদ্রাসা রোডে চোখে পড়ল গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে পা হারানো মো. ইনামুল কাওছারকে (৩২)। সঙ্গে তাঁর বড় মেয়ে। মনে হচ্ছিল সুস্থ মানুষের মতো মেয়ের হাত ধরে বাড়ির পথে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। কুশল বিনিময় শেষে ইনামুল কাওছার জানান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সৌজন্যে কৃত্রিম পায়ে হাঁটা শুরু করেছেন। প্রায় এক মাস ধরে চলাফেরা করতে পারছেন। এর আগে এক মাস ঢাকায় ব্র্যাকের নির্ধারিত একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ শেষে কৃত্রিম পা লাগানো হয়। হাঁটতে পারলেও এখনো অনেক কষ্ট হয় বলে জানিয়ে ইনামুল বলেন, ‘একটানা বেশিক্ষণ চলতে পারি না। তবু এটুকু সুবিধা হওয়ায় মেয়েরা খুব খুশি হয়েছে। সময় নিয়ে ওদের সঙ্গে হাঁটি। বাড়ির টুকটাক কাজ করতে পারি। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, যাঁরা আমার এমন উপকার করেছেন তাঁদের যেন ভালো হয়।’
আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন ইনামুল কাওছার। উপজেলার মধ্যপাড়া ভরমোহিনী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। পা হারানোর কথা বলতে গিয়ে ইনামুল জানান, ৪ আগস্ট সলঙ্গা বাজার এলাকায় মিছিল করছিলেন তাঁরা। এ সময় পুলিশের ধাওয়ায় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সেখান থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান। ঠিক সেই সময় আচমকা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। একটি গুলি এসে তাঁর ডান পায়ের হাঁটুতে লাগে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ইনামুল। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে জেলা সদরের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দেশের পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে তাঁকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। সেখানে চিকিৎসার একপর্যায়ে জানা যায়, ইনামুলের পায়ের ক্ষতস্থানে পচন ধরেছে। আরও ক্ষতির আশঙ্কায় তাঁর পায়ের হাঁটুর ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা; তা–ই করা হয়। ইনামুল কাওছারকে নিয়ে গত বছরের ১ অক্টোবর ‘আমার ভালো ছেলেটা মিছিলে গেল, কিন্তু নিজের পা একটা হারাইয়া আইল —শিরোনামে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ইনামুলের বাবা মারা গেছেন। মা বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকেন। চার বোনের বিয়ের পর মা, ছোট ভাই, স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন। উল্লাপাড়ার সরকারি আকবর আলী কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে বাবার রেখে যাওয়া জমিতে চাষাবাদ, গরু পালন আর বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইনামুল। ভালোই চলছিল তাঁর সংসার। এর মধ্যে পা হারানোয় সেই ছন্দে ব্যাঘাত ঘটেছে। ছোট ভাই নাজমুল ইসলাম স্নাতকোত্তর পাস। পারাবারিক কাজকর্মের পাশাপাশি চাকরি খুঁজছেন তিনি। ভাইয়ের একটা চাকরি হলে চলাফেরার একটা ব্যবস্থা হতো বলে জানান ইনামুল। স্থানীয় একটি শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান মোস্তফা জামান বলেন, টগবগে একটি মানুষ আন্দোলনে গিয়ে পা হারাল। ব্র্যাকের ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম পা সংযুক্ত করে কিছুটা হলেও তাঁর চলাচলের উপযোগী হয়েছে ইনামুল কাওছার। তাঁর পরিবারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
রোববার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা বাজার। মঙ্গলবার বেলা তখন প্রায় সাড়ে ১২টা। হঠাৎই এ বাজারের মাদ্রাসা রোডে চোখে পড়ল গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে পা হারানো মো. ইনামুল কাওছারকে (৩২)। সঙ্গে তাঁর বড় মেয়ে। মনে হচ্ছিল সুস্থ মানুষের মতো মেয়ের হাত ধরে বাড়ির পথে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। কুশল বিনিময় শেষে ইনামুল কাওছার জানান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সৌজন্যে কৃত্রিম পায়ে হাঁটা শুরু করেছেন। প্রায় এক মাস ধরে চলাফেরা করতে পারছেন। এর আগে এক মাস ঢাকায় ব্র্যাকের নির্ধারিত একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ শেষে কৃত্রিম পা লাগানো হয়। হাঁটতে পারলেও এখনো অনেক কষ্ট হয় বলে জানিয়ে ইনামুল বলেন, ‘একটানা বেশিক্ষণ চলতে পারি না। তবু এটুকু সুবিধা হওয়ায় মেয়েরা খুব খুশি হয়েছে। সময় নিয়ে ওদের সঙ্গে হাঁটি। বাড়ির টুকটাক কাজ করতে পারি। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, যাঁরা আমার এমন উপকার করেছেন তাঁদের যেন ভালো হয়।’
আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন ইনামুল কাওছার। উপজেলার মধ্যপাড়া ভরমোহিনী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। পা হারানোর কথা বলতে গিয়ে ইনামুল জানান, ৪ আগস্ট সলঙ্গা বাজার এলাকায় মিছিল করছিলেন তাঁরা। এ সময় পুলিশের ধাওয়ায় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সেখান থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান। ঠিক সেই সময় আচমকা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। একটি গুলি এসে তাঁর ডান পায়ের হাঁটুতে লাগে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ইনামুল। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে জেলা সদরের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দেশের পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে তাঁকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। সেখানে চিকিৎসার একপর্যায়ে জানা যায়, ইনামুলের পায়ের ক্ষতস্থানে পচন ধরেছে। আরও ক্ষতির আশঙ্কায় তাঁর পায়ের হাঁটুর ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা; তা–ই করা হয়। ইনামুল কাওছারকে নিয়ে গত বছরের ১ অক্টোবর ‘আমার ভালো ছেলেটা মিছিলে গেল, কিন্তু নিজের পা একটা হারাইয়া আইল —শিরোনামে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ইনামুলের বাবা মারা গেছেন। মা বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকেন। চার বোনের বিয়ের পর মা, ছোট ভাই, স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন। উল্লাপাড়ার সরকারি আকবর আলী কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে বাবার রেখে যাওয়া জমিতে চাষাবাদ, গরু পালন আর বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইনামুল। ভালোই চলছিল তাঁর সংসার। এর মধ্যে পা হারানোয় সেই ছন্দে ব্যাঘাত ঘটেছে। ছোট ভাই নাজমুল ইসলাম স্নাতকোত্তর পাস। পারাবারিক কাজকর্মের পাশাপাশি চাকরি খুঁজছেন তিনি। ভাইয়ের একটা চাকরি হলে চলাফেরার একটা ব্যবস্থা হতো বলে জানান ইনামুল। স্থানীয় একটি শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান মোস্তফা জামান বলেন, টগবগে একটি মানুষ আন্দোলনে গিয়ে পা হারাল। ব্র্যাকের ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম পা সংযুক্ত করে কিছুটা হলেও তাঁর চলাচলের উপযোগী হয়েছে ইনামুল কাওছার। তাঁর পরিবারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।