alt

সারাদেশ

কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক

দুই বছরের সংস্কারকাজ, সাড়ে ৪ বছর খোঁড়াখুঁড়িতেই শেষ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা : বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দুই বছর মেয়াদি খুলনার কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটির কাজ সাড়ে ৪ বছর ধরে কেবল ‘খোঁড়াখুঁড়িতেই’ সীমাবদ্ধ রয়েছে। এতে সড়কে চলাচল করতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সড়কটিতে দৃশ্যমান কাজ না হলেও ১৭৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মধ্য দিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার বেতগ্রাম পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটারের দৈর্ঘ্যরে সড়কটি খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়কটি সংস্কারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করা। কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই করা হয়নি। সড়কের কোথাও মানসম্মত কাজ হয়নি। দু’এক জায়গায় আগের কার্পেটিংয়ের ওপর নতুন করে কার্পেটিং করা হলেও অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী সরকারের এক প্রভাবশালী এমপির আস্থাভাজন অনভিজ্ঞ এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাগিয়ে নিয়েছিল। তারা মানসম্মতভাবে কাজটি করতে ব্যর্থ হলেও প্রকল্পের টাকা তুলে নিয়েছে। ফলে সরকারি টাকার অপচয়ই হয়েছে শুধু, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চার বছর ধরে সড়কটিতে চলাচল করতে গিয়ে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ পথে যাতায়াতকারী চালকরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে সড়কটি দিয়ে ভালোভাবে যাতায়াত করা গেলেও এখন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। সড়কের আগের কার্পেটিং তুলে দীর্ঘদিন খুঁড়ে রাখায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে নতুন কর্পেটিং করা হলেও সেখানে পিচ উঠে গেছে। বর্তমানে কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়কে নির্বিঘেœ যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। ৬৫ কিলোমিটার রাস্তায় দুই-তিন কিলোমিটার পর পর দুর্ভোগ নিয়ে চলতে হয়। এর চেয়ে প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে সড়কটি দিয়ে ভালোভাবে যাতায়াত করা যেত।

স্থানীয়রা বলছেন, আশির দশকে এ পথে কয়রা থেকে খুলনা জেলা শহরে যাতায়াত শুরু হয়। সে সময় কয়রা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত রাস্তা ছিল কাঁচা। পাইকগাছা থেকে বেতগ্রাম পর্যন্ত ছিল ইট বিছানো রাস্তা। ১৯৯৮ সালের শুরুতে সড়কে বাস চলাচল শুরু হয়। তবে সড়কের প্রশস্ততা কম ও অর্ধশত বাঁক থাকায় যাতায়াতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় চালকদের। ওই সময় থেকে সড়কটি প্রশস্তকরণ ও বাঁক সোজা করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন এ অঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ বছর পর সে দাবি বাস্তবায়নে সড়ক কাজ শুরু হলেও মানুষ এখন হতাশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ কাজ অসমাপ্ত রেখে সড়কের কিছু স্থানে কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়েছে। নির্মাণ শেষ হওয়া কার্পেটিংয়ের বিভিন্ন স্থানে ঢালাই উঠে বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ স্থানে ভারী যানবাহনের চাকায় দেবে গেছে। সড়কের দুই পাশে গাইডওয়াল, প্যালাসাইডিংও মাটির চাপে বেঁকে যেতে দেখা গেছে। কয়রা সদর থেকে বেতগ্রাম পর্যন্ত বাঁকের ৩৪ স্থানে কাজ ফেলে রাখায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পরপর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যান চালকদের। বাঁকের স্থানগুলোতে পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সে স্থান দিয়ে আন্দাজনির্ভর চলতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনাও।

খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ৬৫ কিলোমিটারের সড়ক সংস্কার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারের আবেদনে সময় বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এ সময়েও কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখন আর কাজটি তারা করতে চাইছে না। প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৪ দশমিক ৫০ ভাগ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দের ১৭৮ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে।

৫টি প্যাকেজে বিভক্ত এ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ছিল সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণ, ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ, কালভার্ট নির্মাণ, একশ মিটার নদী শাসন, রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মোজাহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নজরুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে সড়কের ভাঙাচোরা স্থানে খোয়া ফেলে যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চলছে। অন্য কাজ কখন কীভাবে করা হবে জানি না। তবে কর্তৃপক্ষ নতুন টেন্ডার আহ্বান করবে বলে শুনেছি। সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাগর সৈকত বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ যতটুকু করেছে, তা যৌথভাবে পরিমাপ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সেখান থেকেই আসবে।

মানসম্মত কাজ না হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টাকা ছাড় দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, প্রকল্পের পাঁচ প্যাকেজের মধ্যে তারা তিনটি ওয়ার্ক প্যাকেজের (ডব্লিউপি) কাজ যথাযথভাবে করেছেন। সে হিসাবে আগের যিনি প্রকল্প পরিচালক ছিলেন, তিনি অর্থ ছাড়ের সুপারিশ করেন। তবে এ মুহূর্তে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে দরপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

ছবি

নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর

ছবি

দুর্নীতির সাজা বাড়ানো প্রয়োজন: ঢাকা মহানগর দায়রা জজ

ছবি

গাজীপুরে ঝুট নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মহড়া, ৫টি মোটরসাইকেলে অগ্নি সংযোগ

৭ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১০

বাগেরহাটে খাস সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড

ছবি

কষ্টিপাথরের বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার, আটক ১

সিংড়ায় পলকের মুক্তি চেয়ে পোস্টারিং

পাহাড় থেকে তিন কাঠুরিয়াকে অপহরণ

এসএসসি পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

মক্কায় কালিহাতীর এক প্রবাসীর হাতে আরেক প্রবাসী খুন

ছুরিকাঘাতে আহত দুই তরুণের মৃত্যু

সৈয়দপুরে তিন ইটভাটাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা

সান্তাহারে সওজের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু

মানিকগঞ্জে নিষিদ্ধ পলিথিনে বাজার সয়লাব, নজরদারি নেই প্রশাসনের

ছবি

সিলেটে হঠাৎ বেড়েছে এলপিজি গ্যাসের দাম

ছবি

মোরেলগঞ্জে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বেহাল, মূল ফটকে ঝুলছে তালা

সিরাজগঞ্জে বোরো চারার দাম চড়া বিপাকে কৃষক

শাহজাদপুরে নদীতে ডুবে জেলের মৃত্যু

গোবিন্দগঞ্জে শত্রুতার আগুনে পুড়লো ৫টি বসতঘর

মেঘনায় ডাকাতির ঘটনায় সর্দারসহ গ্রেপ্তার ৩

ছবি

সারা দেশে আ.লীগ নেতাদের বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

ছবি

চকরিয়ায় হারবাং বনবিট এখন কাঠ চোরাকারবারি চক্রের অভয়ারণ্যে

ছবি

ওবায়দুল কাদেরের নোয়াখালীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

ছবি

রামেকের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাচিপ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর

ছবি

১৭ বছর আগের হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

নাটোরে সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের পোড়া বাড়িতে আবার আগুন

ছবি

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, বেগম মুজিব হলের সাইন বোর্ড গুড়িয়ে দিয়ে নতুন নাম ঘোষণা

ছবি

গোপালগঞ্জে ৪ গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০

ছবি

রাজশাহীতে স্বামীর পর মহিলা যুবলীগের নেত্রী আটক

ছবি

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগ কার্যালয়কে ‘পাবলিক টয়লেট’ ঘোষণা, মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর

ছবি

আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র বিলি: রাজশাহীর সেই যুব মহিলা লীগ নেত্রীর বাড়িতে ভাঙচুর

ছবি

ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিলো ছাত্র-জনতা

ছবি

বরিশালে আমু-সাদিকের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিলো ছাত্র-জনতা

ছবি

তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

ছবি

লক্ষ্মীপুরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ-হত্যা: কিশোরের ১০ বছরের কারাদণ্ড, অসন্তোষ

tab

সারাদেশ

কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক

দুই বছরের সংস্কারকাজ, সাড়ে ৪ বছর খোঁড়াখুঁড়িতেই শেষ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা

বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দুই বছর মেয়াদি খুলনার কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটির কাজ সাড়ে ৪ বছর ধরে কেবল ‘খোঁড়াখুঁড়িতেই’ সীমাবদ্ধ রয়েছে। এতে সড়কে চলাচল করতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সড়কটিতে দৃশ্যমান কাজ না হলেও ১৭৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মধ্য দিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার বেতগ্রাম পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটারের দৈর্ঘ্যরে সড়কটি খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়কটি সংস্কারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করা। কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই করা হয়নি। সড়কের কোথাও মানসম্মত কাজ হয়নি। দু’এক জায়গায় আগের কার্পেটিংয়ের ওপর নতুন করে কার্পেটিং করা হলেও অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী সরকারের এক প্রভাবশালী এমপির আস্থাভাজন অনভিজ্ঞ এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাগিয়ে নিয়েছিল। তারা মানসম্মতভাবে কাজটি করতে ব্যর্থ হলেও প্রকল্পের টাকা তুলে নিয়েছে। ফলে সরকারি টাকার অপচয়ই হয়েছে শুধু, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চার বছর ধরে সড়কটিতে চলাচল করতে গিয়ে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ পথে যাতায়াতকারী চালকরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে সড়কটি দিয়ে ভালোভাবে যাতায়াত করা গেলেও এখন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। সড়কের আগের কার্পেটিং তুলে দীর্ঘদিন খুঁড়ে রাখায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে নতুন কর্পেটিং করা হলেও সেখানে পিচ উঠে গেছে। বর্তমানে কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়কে নির্বিঘেœ যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। ৬৫ কিলোমিটার রাস্তায় দুই-তিন কিলোমিটার পর পর দুর্ভোগ নিয়ে চলতে হয়। এর চেয়ে প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে সড়কটি দিয়ে ভালোভাবে যাতায়াত করা যেত।

স্থানীয়রা বলছেন, আশির দশকে এ পথে কয়রা থেকে খুলনা জেলা শহরে যাতায়াত শুরু হয়। সে সময় কয়রা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত রাস্তা ছিল কাঁচা। পাইকগাছা থেকে বেতগ্রাম পর্যন্ত ছিল ইট বিছানো রাস্তা। ১৯৯৮ সালের শুরুতে সড়কে বাস চলাচল শুরু হয়। তবে সড়কের প্রশস্ততা কম ও অর্ধশত বাঁক থাকায় যাতায়াতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় চালকদের। ওই সময় থেকে সড়কটি প্রশস্তকরণ ও বাঁক সোজা করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন এ অঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ বছর পর সে দাবি বাস্তবায়নে সড়ক কাজ শুরু হলেও মানুষ এখন হতাশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ কাজ অসমাপ্ত রেখে সড়কের কিছু স্থানে কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়েছে। নির্মাণ শেষ হওয়া কার্পেটিংয়ের বিভিন্ন স্থানে ঢালাই উঠে বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ স্থানে ভারী যানবাহনের চাকায় দেবে গেছে। সড়কের দুই পাশে গাইডওয়াল, প্যালাসাইডিংও মাটির চাপে বেঁকে যেতে দেখা গেছে। কয়রা সদর থেকে বেতগ্রাম পর্যন্ত বাঁকের ৩৪ স্থানে কাজ ফেলে রাখায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পরপর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যান চালকদের। বাঁকের স্থানগুলোতে পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সে স্থান দিয়ে আন্দাজনির্ভর চলতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনাও।

খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ৬৫ কিলোমিটারের সড়ক সংস্কার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারের আবেদনে সময় বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এ সময়েও কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখন আর কাজটি তারা করতে চাইছে না। প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৪ দশমিক ৫০ ভাগ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দের ১৭৮ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে।

৫টি প্যাকেজে বিভক্ত এ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ছিল সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণ, ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ, কালভার্ট নির্মাণ, একশ মিটার নদী শাসন, রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মোজাহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নজরুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে সড়কের ভাঙাচোরা স্থানে খোয়া ফেলে যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চলছে। অন্য কাজ কখন কীভাবে করা হবে জানি না। তবে কর্তৃপক্ষ নতুন টেন্ডার আহ্বান করবে বলে শুনেছি। সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাগর সৈকত বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ যতটুকু করেছে, তা যৌথভাবে পরিমাপ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সেখান থেকেই আসবে।

মানসম্মত কাজ না হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টাকা ছাড় দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, প্রকল্পের পাঁচ প্যাকেজের মধ্যে তারা তিনটি ওয়ার্ক প্যাকেজের (ডব্লিউপি) কাজ যথাযথভাবে করেছেন। সে হিসাবে আগের যিনি প্রকল্প পরিচালক ছিলেন, তিনি অর্থ ছাড়ের সুপারিশ করেন। তবে এ মুহূর্তে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে দরপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

back to top